আক্কেল সেলামী

873947

শীতের কোনো এক সন্ধ্যা! বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম যাবো, আমার অনেকদিনের ইচ্ছা বিনা টিকেটের যাত্রীদের মত আমিও ট্রেনে যাই। তাই ভাইয়ের গাড়িতে না গিয়ে চলে গেলাম ফেনী রেল ইস্টিশনে। অপেক্ষার প্রহর শেষে ১৮:০৫’র ট্রেন আসলো ১৯:১০টায়। টিকিট ছাড়াই উঠে পড়লাম ‘ঠ’ বগিতে। ভিতরে দেখা হল আমার এক বন্ধুর সাথে। সে সিলেট থেকে তার স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছে। তাদের সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে ট্রেন ছেড়ে দিল। আমি যে বিনা টিকেটের যাত্রী তার বৌর সামনে কেমনে বলি তাই সিগারেট খাওয়ার নাম করে আমি চলে এলাম দরজার পাশে। শীতের সন্ধ্যা বেলার বাতাস লাগছে; আমি চাদর মুড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছি আর কল্পনার রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে দিলাম। হঠাৎ চা ওয়ালার ডাক; আমার ঘোর কেটে গেলো। এক কাপ চা খেয়ে দরজার পাশে পা দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লাম। জোৎস্না রাতে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগে মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ অনুভব করলাম আমার পিঠের সাথে নরম কি যেন লাগছে, পিছনে তাকাতেই দেখলাম তিনটা মেয়ে আমার মাথার উপর দিয়ে বাহিরে উঁকি দিতে চেষ্টা করছে। আমি কিছু না বলে বাহিরের দিকে মনোনিবেশ করলাম। তারা আমাকে উঠানোর জন্য কখনো গণ্ডার ( ঠান্ডা পড়ছিল) আবার কখনো চাচা ( চাদর মুড়িয়ে বসেছিলাম) বলে কটূক্তি করছিল। অনেক চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে নরম সুরে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকছিল। আমিও নাছোড় বান্দা, শুনেও না শোনার ভান করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। শেষ মেশ উপায় না পেয়ে আমার পিঠের উপর হাত রেখে ডাকছিল। তারপর আমি উঠে জানতে চাইলাম-

কি সমস্যা?
আমরা দরজার সামনে দাঁড়াবো, আপনি সরেন।
আমি বললাম- মাইয়াদের ইয়েনে আইয়ুন নিষেধ।
আন্নেরা ইয়েনতুন যান।
একজন বলল-
আমরা এইখান থেকে যাব না, any problem?
আমি- ইংরাজি বুঝিনা, বাংলায় কন।
তারা হাসতে হাসতে আমাকে ক্ষেত, পাগল-ছাগল বললো, আমরা না গেলে আপনার কি সমস্যা?
আমি- আঁরতুন সিট নাই, হিল্যেই আঁই ইয়নে বইছি।
তারা- আমাদের সিটে গিয়ে বসেন।
আমি – না।
তারা- তাহলে আমাদের পিছনে দাঁড়াই থাকেন।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
তারা ইংরেজি বাংলা মিশ্রণে ছেলেদের নিয়ে বকবক করেই চলছে।

[১৫মিনিট পর]
আমি – এইযে আপনারা সরেন।
একজন- No.
আমি ইংরেজীতে কয়েকটা বাক্য তাদের উদ্দেশ্যে বললাম।
তাদের একজন- বাহ্ ! বেশি চালাক।
আমি- চেষ্টা করছি, এখন চলে যান।
আবার তারা ভুলভাল ইংরেজী বলছে।
আমি – আপনারা কি করেন?
অনেক ভনিতার পর তাদের একজন- আমি JSC দিলাম, উনি আগ্রাবাদ মহিলা কলেজে HSC 1st year আর অন্যজন অনার্সে ভর্তি হবে। আপনি কি করেন?
আমি – এম.এ, এল.এল.বি পড়ছি।
তারায় মাথায় হাত দিয়ে ভাইয়া অনেক ডিস্টার্ব করেছি, sorry..
আমি – its ok.
চলে গেলো তারা।

আমি সিগারেট ধরালাম আর মনে মনে হাসলাম, এই বয়সের মেয়েরা বুঝি পাখির বাসায় পাখা গোছানো ছোট পাখির মত উড়াউড়ি করতে চায়, এক পর্যায় হঠাৎ করে নিচে পড়ে যায়। যাইহোক, কিছক্ষণ পরে আসলো দুইজন। ( মনে হচ্ছিল ৩০ কি ৩২ বছরের দুইজন মোহনীয় মহিলা)
না তারা মহিলা নয় হিজড়া।
হিজড়া- এই দাঁড়া, দাঁড়া আমার পেয়ারে লাল।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
হিজড়া এসে আমার একদম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো-
টাকা দে; নইলে তোর ঠোঁট কামড় ধরবো।
আমি তাড়াতাড়ি একশ টাকা বের করে দিলাম।
টাকা নিলো না। আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো আমি কি শুরু করবো?
আমি ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য দুইশত টাকা দিলাম। তারপর আমার গালে একটা টোকা দিয়ে চলে গেল।

ট্রেন ও এসে ইস্টিশনে থামলো। ৮০ টাকা দিয়ে টিকেট না করে ২০০ টাকা হিজড়া কে দিতে হলো।

ইকরামুল শামীম সম্পর্কে

ইকরামুল হক ( শামীম ) পেশা : সমাজকর্মী, লেখক ও আইনজীবী । জন্মস্থানঃ ফেনী বর্তমানঃ ঢাকা, বাংলাদেশ স্ট্যাডি ব্যাকগ্রাউন্ডঃ ১.মাস্টার্স ইন ভিক্টিমলজি & রেস্টোরেটিভ জাস্টিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২. মাস্টার্স ইন পলিটিক্যাল সাইন্স। ৩. ব্যাচেলর ডিগ্রী অব সোশ্যাল সাইন্স। ৪. ব্যাচেলর অব 'ল'। কর্মঃ ১. ফাউন্ডার, বাংলাদেশ রেস্টোরেটিভ জাস্টিস সোসাইটি. ২. জুনিয়র ল'ইয়ার, জেলা জজ কোর্ট। ৩. এক্স এ্যাস্ট. কো-অর্ডিনেটর, বিশ্ব সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী সংস্থা, বাংলাদেশ। ৪. এক্স- ট্রেইনার(HIV & DOWRY), টালফ অর্গানাইজশন, বিডি। বর্তমানে তিনি " ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা এবং অপরাধীদের সংশোধন" নিয়ে কাজ করছেন। রাজনীতিঃ দেশপ্রেম। প্রিয় লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু গুন। সখঃ ভ্রমণ করা, কবিতা পড়া এবং দাবা খেলা।

1 thought on “আক্কেল সেলামী

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।