পর্ব-১১
শীতের সকাল। চারদিকে ঘন কুয়াসা। এই কুয়াসার ভেতর দিয়ে ঘুরতে মিলু খুব ভালবাসে। চারপাশের আবছা পরিবেশটা তার চোখের সামনে এনে দেয় এক অলৌকিক জগতের চিত্রাবলী। অস্পষ্টতার ভেতরে সে যেন খুঁজে পায় কোনো এক সুস্পষ্ট সৌন্দর্য্য।
কুসুমকুমারী ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এসে যখন দেখেন আজ খুব কুয়াসা পড়েছে- তখন তিনিই মিলুকে ডেকে দেন ঘুম থেকে।
বলেন- ভাল করে কান মাথা ঢেকে বের হও। নয়তো ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
মিলু সেই ধুসর কুয়াসার ভেতর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে উঠোনে আর এক অতীন্দ্রিয় আনন্দ অনুভূতিতে রোমাঞ্চিত হয়ে সুর করে পড়ে চলেছে –
‘O Mary, go and call the cattle home,
And call the cattle home,
And call the cattle home
Across the sands of Dee;’
The western wind was wild and dank with foam,
And all alone went she.’
প্রহ্লাদ গোয়ালা প্রতিদিনের মত আজও দুধ দিতে এসেছে। সে মিলুর সুর করে বলা কথাগুলো শুনে এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। বড় ভালো লেগে যায় তার। তাই দুধ নেবার জন্য কাউকে না ডেকে সে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মিলুর দিকে এবং নীরবে শুনতে থাকে।
মিলুর আবৃত্তি শেষ হতেই গোয়ালার মুখ থেকে যেন অবচেতনভাবেই বেরিয়ে আসে-
-তুমি দেহি সুন্দার করগে পড়তে পারো খোকাবাবু।
মিলু হঠাৎ কথার শব্দে চমকে উঠে দেখে আবছা কুয়াসায় তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রহ্লাদ গোয়ালা।
– ও গোয়ালা কাকা, তুমি ? আমি তো ভড়কে গেছিলাম।
মিলু বলে।
– তুমার পড়াডা আমার খুব ভালোই লাগচে খোকাবাবু। হেইডাই মুই খারাইয়া খারাইয়া শুনতে আছিলাম। আর এট্টা পড়বা?
-তুমি শুনবে? তাহলে তো পড়তেই হবে।
বলে মিলু শুরু করে –
আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে
প্রভাতপাখির গান!
না জানি কেন রে এত দিন পরে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ
রুধিয়া রাখিতে নারি।
মিলুর হঠাৎ উচ্চকন্ঠস্বর শুনে বাড়ির অনেকেই চলে আসেন সেখানে।
পড়া শেষ হলে গোয়ালা বলল – ভারি সুন্দার পড়তে পারো তুমি। আমারে এইরাম মাঝে মধ্যে শুনাইবা তো খোকাবাবু?
মিলু হ্যাঁসূচক ঘাড় নাড়ে। – অবশ্যই শোনাব গোয়ালা কাকা।
আবেগে যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে গোয়ালা। বলে – তুমি মেলা বড় হইবা খোকাবাবু। মুই তোমারে আশিব্বাদ দেতে আচি।
কুসুমকুমারী আর সত্যানন্দ পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। ওদের দিকে তাকিয়ে গোয়ালা আবার বলে – কাগো পোলো দ্যাখতে হইব না কত্তামা? মুই কয়ে দিলাম আপনে গো এই পোলায় দশজনার একজন হইব।
ছেলের গর্বে মায়ের বুক ভরে ওঠে এক নির্মল আনন্দে।
বাহ্। এই পর্বটি সত্যিকারার্থেই অসামান্য হয়ে উঠেছে। অভিনন্দন প্রিয় কবি।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই দাদা
