আকীল আকতাব অনলাইন এক্টিভিস্ট ও লেখক। জেনারেল ডাইরি অর্থাৎ জিডি করার উদ্দেশ্যে তিনি কাশীপুর সদর থানায় হাজির হয়েছেন। একটু অপেক্ষার পরে সেকন্ড অফিসার রুহুল আমিনের মুখোমুখি হলেন-
: একটা জিডি করতে চাই?
: সমস্যাডা কি?
: অচেনা ফোন নম্বর থেকে গত দুই মাস ধরে মেরে ফেলার হুমকী দেয়া হচ্ছে।
: কারে মাইরা ফেলার হুমকী?
: আমাকে।
: খামাখা খামাখা হুমকী দিবো কেন? আপনে অগো কি করছেন?
: জানিনা। আমি অপ রাজনীতি, দূর্ণীতি আর ধর্ম ব্যাবসার বিরুদ্ধে লিখি, এবং…
: ও বুঝছি, আপনে নাস্তিক, খোঁচাখোঁচি করলে তো কোপানি খাইবেনই।
: আমি নাস্তিক না, তবে নাস্তিকদের কোপানো কি আইনসম্মত! নাস্তিকরা কি এই দেশের নাগরিক…
: আরে থামেন, থামেন, সরকারের বিরুদ্ধে লিখেন না তো?
: কিছু লেখা তো সরকারের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই যায়। সরকারের আকাম-কুকামের বিষয়ে লিখি।
: এই কাজ করার দায়িত্ব আপনারে কে দিছে?
: রাষ্ট্রের সংবিধান দিয়েছে।
: তবে পকেটে সংবিধান নিয়া ঘুরবেন। হামলা হইলে সংবিধান আপনারে রক্ষা করবো হো: হো: হো:, হামলাকারীগো সংবিধান দেখায়া কইবেন হামলা সংবিধানসম্মত না হো: হো: হো: হো:
: এখানে হাসার মত কি হলো?
: ভাই, একটা কথা কই- মন দিয়া শুনবেন। জিডি কোন নিরাপত্তা দিবোনা।
: মানে?
: আপনি যে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন জিডি তার রেকর্ড মাত্র। আপনারে আমরা বড়জোড় এই থানা এলাকায় এক সপ্তাহের নিরাপত্তা দিতে পারুম। তার বেশী না। আপনি তো আর ভি আই পি না। এছাড়া আরো সমস্যা আছে।
: কি সমস্যা?
: আপনে সরকারের বিরুদ্ধেও লিখেন। আপনারে নিরাপত্তা দেয়া কি ঠিক হইবো!
: তবে কি ঠিক হবে?
: আপনারে তো এখনই তথ্য আইনের ৫৭ ধারায় গ্রেফতার কইরা রিমান্ডে নেয়া উচিত।
: ভয় দেখাচ্ছেন?
: না, ভয় দেখাই না। বাস্তব অবস্থা বুঝানোর চেষ্টা করছি।
: এখন করনীয় কি?
: তোওবা তিল্লা করেন। লেখালিখি বন্ধ কইরা দেন।
: লেখা বন্ধ করলেই আমি নিরাপদ?
: না, একবার যখন লিস্টে নাম উঠছে তখন কখনই নিরাপদ না। আল্লাহর কাছে সাহায্য চান।
: তার মানে আপনাদের করার কিছু নাই?
: ভাই, চা আনাই, চা খান। নিজের ভাই হিসেবে বলছি- বিদেশে চইলা যান। যত দ্রুত যাইবেন তত ভালো।
: ভাই হিসেবে এই উপদেশ!
: ভাই, আমি আপনারে চিনি। গত ছয়মাস ধইরা ফেসবুক স্ট্যাটাস, ব্লগ আর নিউজ সাইটে আপনার প্রত্যেকটা লেখা ফলো করি।
: তাই না কি? ফলো করেন কেন?
: আপনে থানার লিস্টে আছেন। যে কোন দিন আটক করা হবে। আমি চাইনা কোন ঝামেলায় পরেন।
: আমার প্রতি এত দরদ?
: আপনি যা লিখেন তা সবাই জানে। কিন্তু সবাই বলার সাহস পায় না। আপনার সাহস আছে- এটারে সম্মান করি। তাড়াতাড়ি বিদেশে ভাগেন।
: ভিসা কি এতই সহজ?
: আপনাদের জন্য তো জার্মানী আর আমেরিকা ভিসা নিয়া বইসা আছে হো: হো: হো: হো: হো:
: তাই?
: রসিকতা করলাম। দেশ ছাড়তে না পারলে পার্টির ক্যাডাররা আপনারে খরচ কইরা ফেলব, তা না হইলে পুলিশ রিমান্ডে নিয়া বারোটা বাজায়া দিব।
আকীল আকতাবের আর জিডি করা হয়না। তিনি থানা থেকে বেরিয়ে আসেন। বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকেন। পা টলে। শরীর ভিজে ওঠে ঘামে। মনে হতে থাকে ঘাতকের দল অনুসরণ করছে। যে কোন মুহুর্তে ঘাড়ে পরবে চাপাটির কোপ, পিঠ বিদ্ধ করে চলে যাবে ঘাতক বুলেট।
আকীল আকতাব। …. অ সা ধ র ণ।
ভাষা হারিয়ে ফেলেছি….তবে এটুকু বলতে পারিঃ এক কথায় অসাধারণ।
** সমসাময়িক বাস্তবতা…
ভালো থাকুন নিরন্তর।
বাস্তব সম্মত লেখা …বর্তমানে এমন লেখার প্রয়োজন ।