গন্ধ

ফরিদ মুৎসুদ্দী ছোট অফিসের বড়কর্তা। জীবন যাপনে সাদামাটা। সিগারেট, পান বা চায়ের অভ্যাস নেই। সপ্তাহে ছয়দিন মদ খান।

প্রতিদিন তিনি অফিস শেষে ‘মদিরা বার এন্ড রেষ্ট্যুরেণ্ট’-এ যান। ডান দিকের কোনার টেবিলে বসেন। গ্লাসের অর্ধেক বরফকুচিতে ভর্তি করেন। তিন টুকরো লেবু চিপড়ে নেন। গ্লাসে এক পেগ করে ভদকা ঢালেন। ঠান্ডা হবার জন্য দশ মিনিট অপেক্ষা করেন। তারপর ছোট ছোট চুমুক দিয়ে পান করেন। গুনে গুনে চার পেগ।

ভদকার গন্ধ মুখে বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়না। তবু তিনি ঝুঁকি নেন না। মদ খাওয়া শেষে বেশী পেয়াজে মাখানো একপ্লেট বাদাম খান। ওয়েটার কাইয়ূমের কাছে রাখা টুথপেস্ট আঙ্গুলে নিয়ে দাঁতে লাগান। ঘড়ি দেখে পাঁচ মিনিট বসেন। কুলি না করেই বাড়ির উদ্দেশ্যে বার ত্যাগ করেন।

শুক্রবারে তিনি ঘরে থাকেন। পরিবারকে সময় দেন। জুম্মার নামাজ আদায় করেন। দাওয়াতে যান। কোনক্রমেই মদ স্পর্শ করেন না। শুক্রবারে মদিরা বার বন্ধ থাকে, তবে রেষ্টুরেন্ট খোলা থাকে।

এক শুক্রবারে তিনি মদিরা বার এন্ড রেষ্টুরেন্টে হাজির হলেন। প্রতিদিনের মত শান্ত, স্থির। ম্যানেজারকে চার পেগ ভদকা দিতে অনুরোধ করলেন। নিয়মিত কাষ্টমার বিধায় ম্যানেজার তাকে স্টাফ রুমে নিয়ে গেলেন। তিনি চার পেগ খুব দ্রুত খেলেন। বিল পরিশোধ করে বেরুবার পথে ম্যানেজার বাঁধা দিলেন-
: স্যার, যদি কিছু মনে না করেন, আপনি মনে হয় বেশ টেনশ্যানে আছেন! আমি বলতে চাইছি যে…
: আমার তাড়া আছে, হসপিটালে যাব। সংক্ষেপে বলুন।
:স্যার, আপনি মুখ হতে মদের গন্ধ দূর করতে ভুলে গেছেন।
: গন্ধ দূর করার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, আমার মা ঘন্টা দুয়েক আগে… সিটি হসপিটালে… মারা গেছেন। আমি বাসায় …মা..গন্ধ থাকলে আর…
কথা শেষ করতে পারলেন না, অঝোর কান্নায় ভেসে গেলেন।

ফরিদ মুৎসুদ্দী জানেন না, কিছু কিছু গন্ধ দূর করার প্রয়োজনীয়তা কখনও ফুরোয় না। মা’রা মরে গেলেও সন্তানদের মুখের গন্ধ পান- হোক সেটা শিশুকালে পান করানো বুকের দুধের বা বেয়ারা মদের।

5 thoughts on “গন্ধ

  1. মা এর মৃত্যুর পরে তখন হয়তো উনার বারণটাই বেশী মনে পড়ে জীবিত থাকা কালে সেই বারণটাই বিরক্তির কারণ ছিল । 

     

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।