ওসি আফজল তখন ফুলপুর থানার সেকন্ড অফিসার। উত্তরপাড়ার হারিসুদ্দীনের দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছেলেটা আত্নহত্যা করেছিল। গাছ থেকে লাশ নামানোর পরে পকেটে একটা চিঠি পাওয়া গিয়েছিল, গোঁটা গোঁটা অক্ষরে লেখা- “ওসি সাহেব, সালাম নিবেন। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমার মেট্রিক পরীক্ষার ফিসের জন্য ফসলী জমিটা বন্ধক দিলে দুইবোনের বিয়ে দিবে কিভাবে! বাবার দিনমজুরীর টাকায় কি আর সংসার চলবে! ওসি সাহেব, পোস্টমর্টেম ছাড়া আমার লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েন। আমরা খুব গরীব, দয়া কইরেন। সবাই পারলে আমারে মাফ কইরেন, বাবারে সান্ত্বনা দিয়েন।
ইতি, ফজলউদ্দীন।
সেকন্ড অফিসার আফজল এই ঘটনার তদন্ত অফিসার। পুলিশের চাকরীতে এমন চিঠিকে পাত্তা দিলে লস। আত্নহত্যা, খুন জমি দখলের মামলা মানেই ধান্দা। পার্টির কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা আদায়ের সুযোগ। তার আর থানার পেট ভরাতে এবং তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে লাশ নিতে ও ফেরত আনতে হারিসুদ্দীনের যে টাকা ব্যায় করতে হয়েছিল তা দিয়ে দুইবার মেট্রিক পরীক্ষার ফিস পরিশোধ করা যেত।
তিন দিন পরে আফজলের নাইট ডিউটি। ঝুম বৃষ্টি। নীরব থানা। তিনি চেয়ারে বসেই ঘুমোচ্ছেন। কি এক অস্বস্তিতে ঘুম ভেংগে যেতেই দেখলেন সামনের চেয়ারে ভয়ার্ত মুখে একজন বসে আছে।
: কি চাই?
: স্যার, ময়নাতদন্ত ছাড়া যদি লাশটা দাফনের সুযোগ দিতেন?
: কোন লাশ! কার লাশ?
: স্যার, আমার লাশ, হারিসুদ্দীনের ছেলে ফজলউদ্দীনের। কাটাকাটিরে খুব ডরাই।
আফজল এবার ছেলেটাকে চিনতে পারলেন এবং জ্ঞান হারালেন।
সেকেন্ড অফিসার আফজল এখন জাদরেল ওসি। বিভিন্ন এলাকায় পোস্টিং নিয়েছেন, কাজ করেছেন। ফজলউদ্দীন তার পিছু ছাড়ে নাই। নাইট ডিউটিতে সে প্রায়ই আসে- ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের অাঁকুতি নিয়ে। আহা, ছেলেটা সত্যিই শরীরের কাটাছেড়া ভয় পেত, খুব ভয় পায়।
দুর্দান্ত