গূঢ়গম্ভীর গ্রন্থ

বিজ্ঞজন কহিলেন পার’তো গূঢ়গম্ভীর বিষয়ে একখানা মোটাসোটা গ্রন্থ রচনা কর। এলেবেলে যাহা লিখিবার হুমায়ুন আহমেদ দুই হাতে লিখিয়া গিয়াছেন। তোমার না লিখিলেও চলিবে।

বলিলাম, “স্পনসর পাইলে সাড়ে চারিশত পাতার একখানা গূঢ়গম্ভীর গ্রন্থ লিখিয়া দিতে পারি। এই গ্রন্থ বিক্রয় করিয়া স্পনসরের অর্থ মুনাফা সমেত ফিরত আসিবে- শতভাগ লিখিত নিশ্চয়তাও দিতে পারি।”

বিজ্ঞজন সন্দেহযুক্ত মন আর বিষ্ময়যুক্ত দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসিলেন, “গূঢ়গম্ভীর গ্রন্থ রচনা করা কি এতই সহজ?”

বিনয়ের সহিত উত্তরিলাম, “সকলের নিকট সহজ নহে, কাহারো কাহারো নিকট অতি সহজ বটে। আজকালের কিছু কিছু গূঢ়গম্ভীর গ্রন্থ পড়িয়া আমার দৃঢ় আত্নবিশ্বাস জন্মাইয়াছে।”

বিজ্ঞজন কি বুঝিলেন তিনিই জানেন। অতিশয় মনযোগ সহকারে জিজ্ঞাসিলেন, “তোমার গূঢ়গম্ভীর পরিকল্পনা কিরুপ?”

কণ্ঠে সকল গাম্ভীর্য আনিয়া বলিলাম, আমার গ্রন্থের নাম হইবে “নান্দনিকতা ও খাদ্যপ্রানঃ রবীন্দ্র দর্শনে রেসিপি ভাবনা।” এই পুস্তকের ৩২৫ পৃষ্ঠা ভরিয়া কেকা ফেরদৌসীর সাক্ষাতকার থাকিবে। ২৮ পৃষ্ঠা জুড়িয়া দন্ত ভাঙ্গিয়া যায় এমন ভাষায় নান্দনিকতা আর খাদ্যপ্রাণ বিষয়ে আলোচনা থাকিবে, যেন অসীম সাহসী পাঠক তিন পৃষ্টা পাঠ করিবার পরে চতুর্থ পৃষ্ঠা পাঠ করিবার দুঃসাহস না পায়। ৬০ পৃষ্ঠা জুড়িয়া থাকিবে প্রাণময় খাদ্য আর খাদ্য গ্রহন করিবার কালে কিরুপ রাবীন্দ্রিক/নান্দনিক বাঙ্গালী পোষাক পরিধান করিতে হইবে তাহার রঙ্গীন ছবি। অবশিষ্ট ৩০ পৃষ্ঠা জুড়িয়া থাকিবে কোন খাদ্য গ্রহনের সময়ে কাহার কন্ঠে রবীন্দ্রনাথের কোন গান শ্রবণ করিতে হইবে ও কোন মিউজিক ভিডিও দেখিতে হইবে তাহার তালিকা।”

বিজ্ঞজন ততধিক গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসিলেন, “তোমার ধারনা এই পুস্তক লোকে কিনিবে? কেনো কিনিবে!”

আত্নবিশ্বাসের সহিত বলিলাম, “অবশ্যই কিনিবে। কারন ইহাতে রবীন্দ্রনাথ আছেন, গূঢ়গম্ভীর নান্দনিকতা আর বিজ্ঞানময় খাদ্যপ্রাণ আছে, রেসিপি আছে, ফ্যাশান আছে, শোবিজ মানে সঙ্গীত আর মিউজিক ভিডিও আছে, তাতপর্যময় বাঙ্গালীত্ব আছে। এইসব লইয়া যদি বিশ-ত্রিশ’টা টিভি চ্যানেল বছরের পর বছর চলিতে পারে, দৈনিক পত্রিকা/সাপ্তাহিক/পাক্ষিক ম্যাগাজিনের সাহিত্য পাতা/ লাইফস্টাইল/ফ্যাশন/পুষ্টি/ঐতিহ্য বিভাগ অনায়াসে দশকের পর দশক চলিতে পারে তবে সকল কিছু লইয়া এক মলাটের ভিতর আমার রচিত গূঢ়গম্ভীর গ্রন্থ লোকে কিনিবে না কেন! আলবাত কিনিবে, লাইন ধরিয়া কিনিবে।”

বিজ্ঞজন প্রসন্ন চিত্তে বলিলেন, “আমি স্পনসরের ব্যাপারে মোবাইল কোম্পানী আর মসলা উতপাদনকারী কর্পোরেট কোম্পানীর সহিত যোগাযোগের চেষ্টা করিবো। এই পরিকল্পনা লইয়া আর কাহারো সহিত আলাপ করিওনা, গোপন রাখিও।”

আপনারা আমার নিকটজন বলিয়া সবিস্তারে জানাইলাম। তাহা ছাড়া এই বাজারে সাড়ে চারিশত পৃষ্ঠার একখানা গ্রন্থ কিনিবার জন্য পূর্ব প্রস্তুতির একটা ব্যাপার আছে, হোক না তাহা গূঢ়গম্ভীর গ্রন্থ।

22 thoughts on “গূঢ়গম্ভীর গ্রন্থ

  1. গূঢ়গম্ভীর গ্রন্থ এমন হইলে আমি নিঃসন্দিহান … ইহা ব্যাপক হারে চলিবে লিশ্চিত। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yes.gif

  2. যাদেরকে দেওয়া হলো, এই সু-নীড়ে তাদের বিচরণ করার অভ্যাস আছে বলে হয়না। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yahoo.gif

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_dance.gif

  3. আমার গ্রন্থের নাম হইবে “নান্দনিকতা ও খাদ্যপ্রানঃ রবীন্দ্র দর্শনে রেসিপি ভাবনা।” এই পুস্তকের ৩২৫ পৃষ্ঠা ভরিয়া কেকা ফেরদৌসীর সাক্ষাতকার থাকিবে। ২৮ পৃষ্ঠা জুড়িয়া দন্ত ভাঙ্গিয়া যায় এমন ভাষায় নান্দনিকতা আর খাদ্যপ্রাণ বিষয়ে আলোচনা থাকিবে, যেন অসীম সাহসী পাঠক তিন পৃষ্টা পাঠ করিবার পরে চতুর্থ পৃষ্ঠা পাঠ করিবার দুঃসাহস না পায়।

    গ্রন্থখানি পড়িবার প্রত্যাশা করি হরবোলা আবু সাঈদ ভাই। :)

  4. গূঢ়গম্ভীর এ গ্রন্থখানার জন্য আপনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কারও লাভ করিতে পারেন ।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_bye.gif     

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।