১.
লেখালিখি মোটেও কঠিন কাজ নয়। যার অক্ষরজ্ঞান আছে সে’ই লেখালেখি করতে পারেন। কারণ, মানুষ মাত্রই পরস্পর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে, গল্প বলে, ঘটনা বলে, এমন কি প্রতিটি মানুষই নিজের সাথে কথা বলে- এগুলোই লিখুন। নিজে লিখুন, নিজের মত করে লিখুন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে- লেখালিখিকে তবে কঠিন কাজ বলা হয় কেনো। এই উত্তর দেবার আগে একটা উদাহরণ দেই- ছোটোবেলায় আপনার যে বন্ধুটি বাই সাইকেল চালিয়ে ভাব নিতো, সেও বলতো বাইসাইকেল চালানো সহজ, কিন্তু ব্যালেন্স রাখা কঠিন। অর্থাৎ ঘুরিয়ে বলা যে, বাইসাইকেল চালানো সহজ কম্ম নয়। মনে করে দেখুন, প্রথম যেদিন কাঁপা কাঁপা হাতে সাইকেলের হ্যাণ্ডেল ধরেছেন ওইদিন প্রথম দুই চক্কর খুব ভয় লেগেছে, তৃতীয় চক্কর থেকে ভয় কেটেছে আর পঞ্চম চক্করে গিয়ে তো মনে মনে বলেছেন- এটা এতো সোজা! লেখালিখির বিষয়টাও ঠিক তাই- প্রথমে ক’পাতা লিখুন, এরপর নিজেই বুঝবেন লেখালেখি কতটা সহজ।
কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসছেন, আর মনে মনে বলছেন- ‘ওরে গর্দভ মোটিভেশনওয়ালা, লেখালিখি যদি এতোই সহজ হোতো তবে লেখকরা এমন ভাব নেয় কেনো যে লেখালিখি খুব কঠিন।’ খুবই সহজ উত্তর, পেশার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়ানো মোটেও কাজের কথা নয়, ‘কে হায় টিপস বলে নিজের পেটে লাথি কষানোর সুযোগে দানে ভালোবাসে!
এবার খুব বিজ্ঞের মত কেউ কেউ প্রশ্ন করবেন- ‘লেখালিখি যদি এতোই সহজ তবে তবে ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নেই কেনো! প্রতিটা পরিবারে পারিবারিক নজরুল নেই কেনো!’ বিনয়ের সাথেই বলছি- এটি ভুল প্রশ্ন, ভুল উদাহরণ। প্রথমত, রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন তার নিজের লেখা, আপনাকে লিখতে হবে আপনার নিজের লেখাগুলো। দ্বিতীয়ত, ঘরে ঘরে লেখক জন্মানোর মূল বাঁধা হচ্ছে ‘লেখালিখি কঠিন কাজ’ এই মানসিকতা।
এই পর্যন্ত যেহেতু পড়েছেন সেহেতু নিচের টুকুও পড়ুন, কাজে দিবে-
১. খোদ বিশ্বকাপ ফুটবলে কয়েক শো ফুটবলার খেলেন, কিন্তু ফোকাস থাকে বড়জোড় বিশ পঁচিশ জনের ওপর। এর মানে কিন্তু বাকীরা ফেলনা নন। লেখক হিসেবে বিশেষ হয়ে উঠতে হলেও একটু বাড়তি সময় দিতে হবে, ভাবতে হবে, পড়তে হবে, এবং সবথেকে বড় বিষয় হোলো- প্রশ্ন করতে হবে, তুলতে হবে।
২. যে বিষয়ে লিখবেন সে বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান যতটা বেশী পারা যায় ততটা অর্জন করুন, অভিজ্ঞতা নিন। তারপর লিখুন। ড্রইং রুমে বসে বিপ্লবের গল্পটা লেখা যায়, অনেকেই লিখেন। কিন্তু যে মিছিলে ছিলো, আন্দোলনে নির্যাতনের শিকার হয়েছে সে যখন বিপ্লবের গল্পটা ড্রইং রুমে বসে লিখবে, তাতে রাজপথের উত্তাল ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। আর দশটা গল্প থেকে তা বিশেষ হয়ে উঠবে।
৩. লেখক হবার জন্য এবং লেখার জন্য- এ দুটো ক্ষেত্রেই লেখকের দরকার নিজের সাথে কথা বলার অভ্যেস গড়ে তোলা। প্রতিদিন নিজের সাথে কথা বলুন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বলুন। নিজেকে সময় দিন।
শেষে একটা অনুরোধ, আমার মত অধম এই কথাগুলো বলছে বলে যদি মানতে দ্বিধা জাগে, তবে ভাববেন- এ কথা মার্ক টোয়াইন বলে গেছেন, অথবা শেক্সপিয়ার বা রবীন্দ্রনাথ। এতেও সংকোচ লাগলে ভাবুন না হয় এ জবানী (জাওয়ানি নয়) সবিতা ভাবির।
প্রথম যেদিন কাঁপা কাঁপা হাতে সাইকেলের হ্যাণ্ডেল ধরেছেন ওইদিন প্রথম দুই চক্কর খুব ভয় লেগেছে, তৃতীয় চক্কর থেকে ভয় কেটেছে আর পঞ্চম চক্করে গিয়ে তো মনে মনে বলেছেন- এটা এতো সোজা! লেখালিখির বিষয়টাও ঠিক তাই- প্রথমে ক’পাতা লিখুন, এরপর নিজেই বুঝবেন লেখালেখি কতটা সহজ। ___ দারুণ কনসেপ্ট।
ভালো বললেন । ভালো লাগলো ।
কথায় পজেটিভ যুক্তি আছে।
দারুণ আলোচনা।
যার অক্ষরজ্ঞান আছে সে’ই লেখালেখি করতে পারেন। মানুষ মাত্রই পরস্পর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে, গল্প বলে, ঘটনা বলে, এমন কি প্রতিটি মানুষই নিজের সাথে কথা বলে।
সুন্দর লেখা । সবার জন্য উপযোগী । শুভকামনা, শুভ ব্লগিং ।