রবীন্দ্রনাথের মুক্তি চাই

রবীন্দ্রনাথের মুক্তি চাই

রবীন্দ্রনাথ মগ্ন ছিলেন বর্ষায়। অবশ্য বসন্ত বন্দনাও কম করেন নি। তাই বর্তমানে পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা সাজসাজ রবে বসন্ত উদযাপন করে জেনে ‍তিনি যতটা খুশী হলেন তার চাইতে বেশী বিস্মিত হলেন। বিস্ময় নিবারণের জন্য ভগবানের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে তিনি বসন্তের আগের রাতে ঢাকার পথে পথে ঘুরতে এলেন। রবীন্দ্র সরোবরের কাছে এক বাড়ির কাছাকাছি দাঁড়াতে লেবুর ঘ্রাণ পেলেন।

হিম হিম হাওয়া, রাতের নির্জনতা আর লেবুর ঘ্রান মিলেমিশে এক অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি করলো কবির মনে।তিনি উপরের দিকে তাকাতেই দেখলেন দোতালার এক ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে লেবুর ঘ্রাণটা আসছে। টবে থিরথির করে কাঁপছে লেবুর পাতা। ক’টা পাতা কি এক বিষণ্নতায় ঝরেও গেছে- নিচের গেটের কাছে এলোমেলো পরে আছে। তিনি দুটো পাতা তুলে নিলেন।

লেবু কঁচলালে তেতো হয়, কিন্তু লেবু পাতা কচলালে ঘ্রাণ আসে- লেবুর ঘ্রাণ। কবি লেবু পাতা কঁচলে ঘ্রাণ নিচ্ছেন আর হাঁটছেন। ধানমন্ডি থেকে হাঁটতে হাঁটতে সাইন্সল্যাবের মোড়টা ঘুরতেই টহল পুলিশের মুখোমুখি-
: এই যে বুড়া চাচা, থামেন-
: আমাকে বলছেন?
: আপনারে কইতাছি না তো কারে কইতাছি, আর কেউ আছে..
: জ্বি, বলুন-!
: বুড়া মানুষ হয়া এতো রাইতে রাস্তায় কি করেন?
: বসন্তের আগের রাতে বেড়াতে এসেছি, আমি রবীন্দ্রনাথ..

‘আমি রবীন্দ্রনাথ’ কথাটা শুনেই টহল পুলিশের দলটা হেসে উঠলো, এরপর একজন রসিকতা করে বললো-
: রবীন্দ্রনাথ বা বাবান্দ্রনাথ?
: বাবান্দ্রনাথ মানে?
: ন্যাকা, কিচ্ছু বুঝেন না! আপনি কি বাবা মানে ইয়াবার ব্যবসা করেন না কি! এখন সাপ্লাই দিতে বের হইছেন!
: বাবা মানে পিতা হয় জানতাম, ইয়াবা কি- এটাই তো জানা নেই..

টহল পুলিশের দল থেকে দুজন অতি উৎসাহে রবীন্দ্রনাথের দেহ তল্লাশি করতে শুরু করলো। এক্কেবারে চিরুনি তল্লাশি। মানে তাদের আঙুলগুলোকে চিরুনি বানিয়ে রবীন্দ্রনাথের দাড়ি গোফেও তল্লাশি চালালেন কিন্তু ইয়াবা তো দূরের কথা, ক’টা পাকা দাঁড়িও ঝরলো না। টহল পুলিশের দলটির মধ্যে একটা হতাশভাব চলে এলো।

রবীন্দ্রনাথ বিমূঢ় দাঁড়িয়ে রইলেন- কি আশ্চর্য! আগামীকাল সকালেই তাকে পূঁজো করা শুরু হবে, অথচ আগের রাতে তাকে মাদক ব্যাবসায়ী মনে করে তল্লাশী! ঘোর ভেঙে দু’পা এগুতেই- টহল পুলিশের দলনেতা আবার তাকে ডাক দিলেন-
: এই যে বুড়ামিয়া, একটু সামনে আসেন তো!

রবীন্দ্রনাথ সামনে আসতেই তার হাত ধরে দলনেতা বললেন-
: হাতের মধ্যে এইটা কি কচলাইতাছেন?
: লেবুপাতা।
: লেবুপাতা কচলাইতাছেন ক্যান! পিনিক হয়!
: পিনিক কি!
: ওরররে বুড়ামিয়া! তুমি তো দেখি সেয়ানা মাল! পিনিক চিনো না!
: সত্যিই চিনিনা, পিনিক কি কি?

দল থেকে একজন বলে উঠলেন- থানায় নিয়া পাছার মধ্যে কয়টা লাগাইলেই বুঝবা পিনিক কারে কয়! রবীন্দ্রনাথ ছলোছলো চোখে তাকিয়ে আছেন, দলনেতা বললেন-
: লেবুপাতা কচলায়া কচলায়া ঢাকা শহরের মধ্যে মাঝরাতে হাঁটতাছেন, সন্দেহজনক। চলেন থানায় চলেন।

রবীন্দ্রনাথ কিছু বলবার আগেই দলটি তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গাড়িতে তুলে নিলো।
.
বসন্তের প্রথম সকালে টিভি চ্যানেলগুলোতে একের পর এক অনুষ্ঠান। পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় বসন্ত বন্দনা। ঢাকা শহরের ক’শ বছরের বাঙালির আজ হাজার বছরের ঐতিহ্য পালনের হুল্লোড়। এসবের মধ্যে পত্রিকার ভিতরের পাতার ছোট্ট সংবাদটি প্রায় সবারই চোখ এড়িয়ে গেলো- ‘লেবুর ঘ্রাণযুক্ত গাঁজা সহ এক বৃদ্ধকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবীন্দ্রনাথ নামে ঐ বৃদ্ধকে মাঝরাতে সাইন্সল্যাব সড়কে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময়ে আটক করে পুলিশ। …..।’ কেউ জানলো না, বসন্তের প্রথম সকালে হাজতখানায় বসে কবিগুরু আবৃত্তি করছেন- আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে/খুশিতে ঠেলায় ঘোরতে এ জীবনে/কট খেয়ে গেছি হায়, কখন যে ছাড়ে… ধুর্বাল… কখন যে ছাড়ে! ধুর্বাল…. ধুর্বা… লললল। মাঘমাস ঠেসে গেছে.. কোকিল ফেঁসে গেছে.. বসন্ত এসে গেছে… ধু…. র্বাআআআ.. ল.. ধু…. র্বাআআআ.. লল.. ধু…. র্বাআআআ.. ললল।

5 thoughts on “রবীন্দ্রনাথের মুক্তি চাই

  1. রবীন্দ্রনাথের মুক্তি চাই। মুক্তি দিতে হবে। ধামাচাপা চলবে না। মুক্তি চাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।