অবিশ্বাসের ভয়
: ভুতে বিশ্বাস করো?
: নাহ, ভুতে বিশ্বাস করিনা। এক্কেবারে না।
: তবে যে ভুতকে ভয় পাও!
আসাদ কাকা তিনবার শাদা দাঁড়িতে আঙুল বুলালেন। এক চুমুকে অর্ধেক গ্লাস পানি খেলেন, এরপর একটা হাই তুলে বললেন-
: বিশ্বাস করিনা বলেই তো ভয় পাই রে, বাবা।
একটু কেশে নিয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন-
: তখন আমার বয়স উনিশ কি বিশ। বর্ষা আরম্ভ হয়েছে মাত্র। যে দিনের কথা বলছি, ওই দিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে। রাতেও টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। ভারী বৃষ্টিতে মাছ নদীর নিচে চলে যায়, তবে এমন টিপটিপ বৃষ্টিকে তারা পাত্তাটাত্তা দেয়না। আমি টেঁটা নিয়ে বের হলাম।
: একা বের হলে? তুমি না ভুত ভয় পাও, কাকা!
: ভুতকে ভয় পাই, কিন্তু বিশ্বাস তো আর করিনা। এমন রাতগুলোতে বোয়াল, শোল আর গজার মাছ বিলের ধারে ঘাপটি মেরে থাকে। এসব মাছ ভুনা দিয়ে ভাত বা খিচুরি খেতে কি যে স্বাদ! তাই প্রায় রাতেই মাছ মারতে বের হতাম।
গল্পটা যেনো খাবারের দিকে যেতে শুরু না করে তাই তাড়াতাড়ি বিস্ময় প্রকাশ করলাম-
: একাই মাছ মারতে গেলে!
: একাই বের হয়েছিলাম। যাওয়ার পথে তোর নিবারণ কাকাকেও ডেকে নিলাম। ওর আবার ভুতে খুব বিশ্বাস। তাই রাতে মাছ মারতে গেলে গলায় রসুনের মালা, হাতে কুপি আর এক টুকরো লোহা সাথে রাখতো। এসব সাথে থাকলে না কি ভুত কাছে আসেনা।
কাকা আরেক চুমুকে গ্লাসের বাকী পানিটুকু শেষ করলেন, এক মুট মুড়ি মুখে পুরে চিবুতে চিবুতে বললেন-
: বিলের ধারে গিয়ে টর্চের আলো ফেলে মন ভরে গেলো। মাছ আছে। টেঁটায় পরপর দুটো বোয়াল মাছ গেঁথে ফেললাম। বিশাল বড় বোয়াল। ওদিকে নিবারণের টেঁটায় বিধেছে একটা শোল মাছ, সাইজে আধ হাত হবে।নিবারণ বড় মাছ মারার জন্য আরও কিছুটা সময় থাকতে চেয়েছিলো, কিন্তু শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি।
: এরপর কি তোমরা ফিরে এলে?
: না ফিরে করবো কি! এ বৃষ্টি তো থামবেনা। ফেরার পথে নিবারণকে একটা মাছ দিলাম। ও দু’টো মাছই চাইলো। বললো, বউয়ের সাথে বাজী ধরেছে যে আজ দু’টো মাছ নিয়েই ফিরবে। বাজিতে হারলে বিপদ, কারণ ওর বউ তন্ত্র সাধন করে। দিব্যি দিয়ে বলেছে দুটো মাছ না আনলে তাকে বলি দিবে।
: তুমি মাছ দিলে?
: মাথা খারাপ! তোদের কাকী আমাকে আস্ত রাখবে ভেবেছিস! নতুন বিয়ে করেছি, বীরত্ব দেখানোর একটা ব্যপারও আছে। তবে নিবারণ নাছোড়বান্দা, ওর গলার রসুনের মালার দিব্যি খেয়ে, লোহার টুকরার দিব্যি খেয়ে, আগুনের ওপর হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করে মাছটা চাইলো। শেষে কিনে নিতে চাইলো। কিন্তু আমি বেঁঁচবো কেনো!
মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করে আমিও বললাম-
: ঠিকই তো! তুমি বেঁচবে কেনো!
কাকা এবার বালিশে হেলান দিলেন, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-
: বাড়ির কাছাকাছি আসতেই নিবারণ একটানে আমার হাত থেকে ছিনিয়ে দিলো দৌড়। পিছু পিছু আমিও দিলাম ছুট। ওকে ধুতি ধরে থামানোর চেষ্টা করলাম, লাভ হলোনা। ধুতি খুলে আমার হাতে চলে এলো। দেখলাম ন্যাংটো নিবারণ দৌড়ে তাল গাছটার ওপর উঠে গেলো।
: তুমি ভয় পাওনি!
নারকোলে ছোটো একটা কামড় দিয়ে আরেক মুঠ মুড়ি মুখে পুরে চিবুতে চিবুতে কাকা বললেন-
: ভয় পাবো না মানে! তখন হঠাৎ মনে এলো নিবারণ তো বিয়েই করেনি। তাছাড়া ও গেছে শহরে, ফিরবে এক সপ্তাহ পর। মনটা খুবই খারাপ হলো, একটা বাড়তি বোয়াল মাছের জন্য এতোগুলো মিথ্যে কথা বললো ভুতটা! শেষে মাছের বদলে ছেড়া ধুতিটা আমার হাতে রেখেই পালালো! একটুও লজ্জাবোধ নেই!
কাকার চোখে চোখ রেখে বললাম-
: তবে যে খুব বললে ভুতে বিশ্বাস করো না!
কাকা রেগে গেলেন-
: একটা বোয়াল মাছের জন্য যে ভুত নিজের পরিচয় গোপন করে, রসুন, লোহা আর আগুন ছুঁয়ে মিথ্যে বলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে! তাকে বড়জোড় ভয় পাওয়া যায়। কিন্তু বিশ্বাস! ইমপোসিবল… নো নো.. নেভার… নেভার…
কাকা উত্তেজিত হলে ইংরেজিতে কথা বলেন। হাই প্রেশারের রোগী কাকাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, মেঘ বিকেলের আবছায়া রোদের আভায় ওই তালগাছের পাতাগুলো স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। হালকা বাতাসে দুলতে দুলতে তালপাতারা খসখসিয়ে যেনো একে অন্যকে বলছে – ‘সত্যিই তো, ভুতকে বড়জোড় ভয় পাওয়া যায়, কিন্তু বিশ্বাস? কাভি নেহি।
একটা বোয়াল মাছের জন্য যে ভুত নিজের পরিচয় গোপন করে, রসুন, লোহা আর আগুন ছুঁয়ে মিথ্যে বলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে! তাকে বড়জোড় ভয় পাওয়া যায়। কিন্তু বিশ্বাস! ইমপোসিবল… নো নো.. নেভার… নেভার…
ভুতকে বড়জোড় ভয় পাওয়া যায়, কিন্তু বিশ্বাস? কাভি নেহি।
শুভেচ্ছা মুরুব্বী ভাই।
হায়রে আসাদ কাকা।
শুভেচ্ছা রিয়া।
মজার লিখা হরবোলা ভাই।
ধন্যবাদ সুমন ভাই।
বিশ্বাসের ভয় থেকে অবিশ্বাসের ভয়ই বেশী মারাত্মক।
সত্য কথা শাকিলা তুবা।
চেনা চেনা দৃশ্যে ভুতু ভুতু লিখা। শুভেচ্ছা আবু সাঈদ ভাই।
চেনা চেনা দৃশ্যে ভুতু ভুতু লিখা। শুভেচ্ছা সৌমিত্র ভাই।