মধ্যবিত্ত কর্তাবাবু
টানাটানির মধ্যবিত্ত সংসারের চালক কর্তাটি বিজ্ঞানের বিস্ময়, অর্থশাস্ত্রের রহস্যময় গণিত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি একমাত্র তিনিই পরস্পরবিরোধী তত্ব ‘সার্ভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট’ আর ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’র প্রকৃষ্ট উদাহরণ, দেওয়ানবাগী আর মার্ক্সবাদীর সুষম সমন্বয়।
সংসারের চাকা টানতে টানতে কর্তাটি স্বৈরাচারের মত শিখে ফেলেন কোথায় চুপ থাকতে হয়, কোথায় সরব, কোথায় চালতে হয় গুটির চাল। মাছ বাজারে দরদামে যতটা উচ্চকণ্ঠ ও আপোষহীন, বাকীর খাতা খোলা মহল্লার দোকানে তিনি ততটাই ম্রিয়মান, বিনয়ের সাক্ষাৎ অবতার। পাতে পরা মাছের টুকরোটি পালা করে সন্তানদের পাতে তুলে দেবার চালে তার দক্ষতা প্রশ্নাতীত। মাসের কত তারিখে বেতন না পেলে দুনিয়া নরক হয়ে যাবে তা মনে রাখলেও দুনিয়া বদলে দেবার লালিত স্বপ্ন ভুলে গেছেন ঘাড়ে জোয়াল পরার দিনে। দৌড়বিদ বা ছানিচোখের বৃদ্ধের মত, যখন যেভাবে প্রয়োজন- এড়িয়ে যান ডাস্টবিন ও দাবির মিছিল। তিনি দারুণ উন্নাসিক। এই উন্নাসিকতা অভিজাত, যেনো নিশিকাণ্ডে নির্বাচিত সাংসদ এড়িয়ে যাচ্ছেন দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা।
মধ্যবিত্তের টানাটানির সংসারের দঁড়িতে হাঁটতে হাঁটতে কর্তাটি শিখে যান অত্যাবশ্যকীয় যোগ ব্যায়াম, প্রণায়াম। ঘাড় উঁচু করে পত্রিকার পাতা, সন্তানের পরীক্ষার রিপোর্টকার্ড, পুরানো শার্টের কলারের দাগ চোখের সামনে ধরে দেখেন, ওই উঁচু ঘাড়টিই বুক পকেটে গুঁজে নেন বাসের ভেতর, বসের সামনে, সকল অক্ষমতার মুখোমুখি বসে। সংসারের, পোষ্যদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তার মত মন্ত্রবিদ আর নেই– তিনি জানেন কোন খাবার সস্তা হলেও পুষ্টিকর, অধিক খাদ্যে কতটা স্বাস্থ্যক্ষয়, কোন রোগে কোন ওষুধ। টানাটানির সংসারের কর্তা নন, মন্ত্রী এক, কে না জানে মন্ত্রী মাত্রই সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞানের পাইকারি ও খুচরা আড়ত।
ম্যাজিশিয়ান জানেন না- কিভাবে দু’টো শার্ট আর তিনটা প্যান্টে পার করে দিতে হয় পাঁচ ছ’বছর, শুক্রবারের জুম্মার জামাতে কিভাবে লুকোতে পাঞ্জাবীর বোগলের নিচে সেলায়ের দাগ, এক জোড়া জুতোয় কাটাতে হয় বছরের পর বছর। এসব ম্যাজিক মোটেই সহজ নয়, অথচ হাততালির প্রত্যাশা না করেই কি অবলীলায় দেখিয়ে যান কর্তা। মাসিক ১০টাকা আয় দিয়ে কিভাবে চালাতে হয় ১০০টাকার সংসার- এই মন্ত্র তিনি ছাড়া আর কেই বা জানেন!
এক একটা দিনে, এক একটা রাতে, এক একটা দিনের বা রাতের এক একটা মুহুর্তে আপন দীর্ঘশ্বাস গিলে কর্তা ভাবেন- আর তো লাগেনা ভালো এই ম্যাজিশিয়ানের জীবন, যোগ-ব্যায়ামের কৌশল। মরার আগে এ জীবনে আসুক সুদিন। আহা শরীরে জমুক কিছুটা মেদ, রক্তে বাড়ুক কোলেস্টেরল।
এ জীবনে আসুক সুদিন। শরীরে জমুক কিছুটা মেদ, রক্তে বাড়ুক কোলেস্টেরল।
অসাধারণ অণুগল্প। শুভেচ্ছা জানবেন হরবোলা ভাই।
অসামান্য অণুগল্প ভাই।
অসামান্য অণুগল্প।
মুগ্ধতা।
* মধ্যবিত্ত কর্তাবাবু


সুন্দর লিখেছেন।
সুন্দর লিখেছেন দাদা। আমি কিন্তু আপনার লেখার একজন ভক্ত। তবে সময়তে সময় আমাকে সময় দিতে চায় না বলে আপনার লেখা ভীষণ মিস করি। তবু্ও পড়ি। কিন্তু মন্তব্য করতে পারি না। তাই দুঃখপ্রকাশ করছি। শুভকামনা থাকলো দাদা।
শুভকামনা থাকলো দাদা।