গৌতমের অফিস

গৌতমের অফিস

আমার বন্ধু গৌতম মুচি ছিল
তার রোজগার বেশ ভাল
আমরা প্রায়ই তার রোজগারে চা খেতাম

প্রাইমারি পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের
অষ্টম ক্লাসে তার শিক্ষার পরিসমাপ্তি হলে
বাবার ইচ্ছায় পৈত্রিক ব্যবসায় লেগে যায়

বাবা আর ভার বহণে অক্ষম
সংসারের কিছু ভার তোমার কাধে নাও
ভার নিতে গৌতমের আপত্তি ছিল না কিন্তু
বন্ধুদের সাথে স্কুলে দেখা হবে না বলে
কিছুটা মন খারাপ, বাবার সিদ্ধান্ত
আমাদের সাথে শেয়ার করলে আমরাও
বাবার মতের সাথে একমত হই, মাঝে মাঝে
তার অফিস ঘিরে আড্ডা হবে বলে তাকে
আশ্বস্ত করি, আমরা তখন প্রগতির পাঠ নিচ্ছি

স্কুলে আসা যাওয়ার রাস্তায় গৌতম জুতো সেলাই করে
আমরা তার রোজগারে চা পান করি

দীর্ঘদিন পরে আমাদের প্রগতি চিন্তায় ভাটা পরলে
গৌতম তিরোহিত হয়, মুচির পয়সায় চা-পান
আমাদের আত্মায় অভিদংশন করে

গৌতম এখন আমাদের জুতো পালিশ করে
বারো টাকার মজুরীর বদলে বিশ টাকা ছুড়ে মারি
চায়ের টাকা যেভাবেই হউক শোধ করতে হবে
খেজুরে আলাপও আর হয় না

মুচির ছেলের সাথে ক্বচিৎকালে আমাদের বন্ধুত্ব ছিল
অস্বীকার অন্তে আমরা নবজীবনের পথে হাঁটি
আমাদের বৌ’দের মনে আভিজাত্য হানা দেয়
সিংগাপুরে শপিং কিংবা কুয়াকাটায় সূর্যাস্ত
এসব গল্প করতে করতে গৌতম তিরোহিত হয়

গৌতম কোন কালেই আমাদের বন্ধু ছিল না
মুচির পয়সায় পা-চান জীবনেও ঘটেনি

6 thoughts on “গৌতমের অফিস

  1. হ্যা, একসময় মানুষের টাকাপয়সা বেশি হয়ে গেলে যা হয়, তা-ই হয়েছে। হওয়াটাও স্বাভাবিক ! কারণ, আমরা এই পৃথিবীর এক আজব প্রাণী,তাই। 

    হৃদয়স্পর্শী লেখনী পড়ে শুধুই ভাবছি। লেখকে ধন্যবাদ ।

     

  2. জীবনের কিছু গৌরবময় অধ্যায় তুলে ধরে আমাদের কে ধন্য করেছেন কবি। অসাধারনত্বে ভরা প্রতিটি লাইন,

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।