বাবার স্পঞ্জের স্যান্ডেল

15000673_893622927439930_4878078832832409951_o
বাবুটা!
খেলনাটা কিনে দেই নাই বলে কি গাল ফুলিয়ে আছ এখনো? ভিতরে ভিতরে ফুঁসছ নিশ্চয়ই। আমার-ই মত।
তোমার মা তুমি দুষ্টুমি করলে কি বলেন তোমাকে-আমাকে নিয়ে?
‘ও প্লাস না! বাপের রক্ত। স্বভাব চরিত্র ও বাপের মত হবে না তো কি।’- এমনই তো বলতো সে, মনে পড়ে বাবুটা?

খেলনা টা কিনে দেব তো। আর কিছু দিন। তুমি কি ক্যালেন্ডার দেখতে শিখেছ, বাবুটা?

হাসছ, বাবার কথা শুনে? ‘পাগলা বাবা আমার’ এমন ভাবছ না তো? তুমি কি কখনো এভাবে ভাবো, বাবুটা? বাবাকে নিয়ে!

তুমি হাসো বাবার কথা শুনে। আর গ্রিলের ওপারে গেলেই বাবাকে নিয়ে হাসেন অন্য মানুষেরা। তোমার সামনে থেকে সরে গেলে, বাবা ও কি অন্য মানুষ হয়ে যান?

তোমার
তোমার মায়ের
তার মায়ের
তোমার বাবার মায়ের?
এভাবে সবার আড়াল হলে তোমার বাবা মানুষটা কেমন হয়ে যায়?

তুমি জানবে না। এখন। সামনে জানবে। প্রচুর সময়। বাবা জানবেন না। সময় নেই। তাই তোমাকে বলা। তুমি যেদিন জেনে-বুঝে অনুভবে বাবা মানুষটিকে দেখবে, সেদিন -ই তুমি আমাকে দেখবে।

তুমি কি কখনো আমাকে দেখতে চেয়েছ? এভাবে ভাবতে তোমার কেমন লাগছে, বাবুটা?

এই শহর। এখানে প্রচুর অলি-গলি। এই অলিতে গলিতে, গ্রিলের ওপারে চলে যেতেই, বাবারা ক্রমশ: ভিন্ন মানুষে পরিণত হন। এখানে রাক্ষুষী সন্ধ্যা নামে। সেখানে বাবারা ছায়ায় হারিয়ে যান। নিজেদের কায়া হারিয়ে খুঁজে ফেরেন। শ্রেফ তোমার জন্য, বাবুটা! এই বাবা হেটে চলে। সবার মত কায়ার খোঁজে।

বড্ড বন্ধুর পথ। একজন বাবা বছর তিন আগে, এক জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনেছিলেন- নব্বই টাকা দিয়ে। এক পাটির তলায় ছিদ্র হয়েছে। মন খারাপের বিকেলগুলিতে, কালো রাজপথ সেই ছিদ্র দিয়ে আকাশ দেখে নির্ভার হতে চায়।

পথে কাঁটা বিছানো। কতটা জানো?
সমগ্র বিশ্ব যন্ত্রণার পেরেক বিছিয়ে বাবাকে স্বাগত জানায়। নিরবে।

বাবা আরও নিরবে হেঁটে চলেন। নিঝুম নিমগ্ন সুখে। তুমি কি অনুভব করছ, এখন বাবুটা? বাবাকে!

বাবুদের নিজেদের যদি কোনো জাদুঘর থেকে থাকে, তবে সেখানে সবার আগে- বাবার এক জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল শোভা পাবে!
শুধু তোমার জন্য বাবুটা! সমগ্র বিশ্ব পায়ে দলিয়ে হেটেছেন তোমার বাবা.. অণুক্ষণ যন্ত্রণা সয়েছেন। তবু হেঁটেছেন। থামেন নাই।

তুমি কি গ্রিলের ওপার থেকে এখন বাবাকে দেখছ?
তুমি কি ‘আমাকে’ দেখতে পাচ্ছ!

খেলনা টা কিনে দেবো তো বাবুটা!
সপ্তাহটা ঘুরুক…।।

★ ছবিঃ Akm Azad

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

13 thoughts on “বাবার স্পঞ্জের স্যান্ডেল

  1. আপনার লেখার সম্পর্কে নতুন করে কিছুই বলার নেই।
    শুধু বলবো অসাধারণ।
    শুভেচ্ছা জানবেন

  2. কী অসামান্য মায়াভরা লিখা। বাবা হৃদয়ের আকুল করা কথা গুলোন কী অসাধারণ করেই না প্রকাশ করেছেন !! সহজ ভাষায় একটাই কথা বলি …
    জীবনের আবেগ যোগের লিখায় আপনি অদ্বিতীয়। আপনার প্রতিটি লিখনই আপনি নিজের অনুভূতি মিশিয়ে পাঠকের সামনে তুলে আনেন। পাঠক নিজেকে ভাবতে পারেন।

    গ্রেট মি. মামুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. আমি যখন ভাবতে শিখলাম, অনুভবক্ষম হলাম, নিজের অনুভূতি অক্ষরে প্রকাশ করতে গিয়ে- এক বিশাল প্ল্যাটফরম দেখতে পেলাম। লেখক হিসেবে নিজেকে অনুভবের রাস্তায় সামনে রেখে, অপরের হৃদয়ের ব্যবচ্ছেদ করা শুরু করলাম। এভাবেই এখনো কেবল রাস্তার শুরুতে, যেতে হবে আরো বহু-বহুদূর। দোয়া করবেন।

      অনেক ভালো থাকুন।
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_dance.gif
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  3. জনাব মুরুব্বি যখন এত্ত কিছু বলে তাহলে আমি আর কি বলি! আর কিছু বলার নেই মামুনভাই।

    1. আমাদের সবার হৃদয় একসূত্রে বাধা প্রিয় খালিদ ভাই।
      তাই অনেক কিছু না বলতেই কিভাবে যেন বুঝে এসে যায়।
      অনেক ভালো থাকুন।
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cool.gif

  4. “বাবুদের নিজেদের যদি কোনো জাদুঘর থেকে থাকে, তবে সেখানে সবার আগে- বাবার এক জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল শোভা পাবে!“
    বাবার গল্প পড়লাম মিতা। বাবার দায়িত্ব অনেক। বাবুরা তখনি সেটা বুঝতে পারে, যখন তারা নিজেরা বাবা হয়।
    শুভেচ্ছা এবং শুভ কামনা রইলো সতত।

    1. হ্যা মিতা, সহমত-বাবার দায়িত্ব অনেক। বাবা হয়েই অনুভবে এলো।
      ভালো থাকুন।
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  5. মামুন ভাই, সত্যি কথা বলতে কি অনুভবে হারিয়ে গেলাম…মনে হচ্ছে বাবা না হয়ে বাবু হই…পাগলের প্রলাপ। শুভ কামনা রইলো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. অনেক ধন্যবাদ প্রিয় মনা ভাই।
      হ্যা, বাবু হতে পারলে মন্দ হতো না। বাবাকে আরো একটু ভালোভাবে চেনার সুযোগ পেতাম, আরো কিছু ভালোবাসা দিতে পারতাম।
      হায় সময়!
      একবার চলে গেলে ফিরে না আর। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cry.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।