আগন্তুক: ধারাবাহিক উপন্যাস// পর্ব-৭

FB_IMG_1487255081432
পুকুর পাড় ঘেষে পায়ে চলা দুটি মেঠো পথ চলে গেছে। ডানদিকেরটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল ও কলেজের সামনে দিয়ে পিচের পথে গিয়ে মিশেছে। বামেরটি দু’পাশে নাম না জানা ঝোপকে পাশ কাটিয়ে ঘন জঙ্গলের ভেতর সামান্য এক না দেখা রেখ রেখে আঁধারে হারিয়েছে। এই বেলা শেষের অবেলায় আহসান সেই আঁধারের পথ ধরে হেঁটে চলেছে। দুর্ভেদ্য মানবমনকে সাথে নিয়ে এক নামানুষ নিজের একচিলতে আলো বিসর্জন দিতে চলেছে। এভাবেই প্রতিদিন… জীবনের দিন… দিন দিন প্রতিদিন… দিয়েই চলেছে। তবে তার বিসর্জনের সময় কোনো সন্ধ্যা আরতির সুর ভেসে আসে না। থাকে না কোনো উলু ধ্বনি কিংবা বিষণ্ণ নারীদের চোখের চকমকে আভা। এই জঙ্গলের এক নির্দিষ্ট জায়গায় ওদের আড্ডা। আড্ডা না বলে কয়েকজন অন্ধকারের জীবদের পারষ্পরিক মন্দ-লাগার অনুভবে প্রগলভ হয়ে ওঠা, কিছু কর্কশ ক্ষণকে উপভোগ করার কথা বললে কিছুটা সত্য বলা হবে। আজকাল সত্য কতটা সত্যি হয়ে প্রকট হয়? নিজের মনে ভাবনার এই অংশে এসেই অদূরে মাচার ওপর রায়হানকে দেখতে পায় আহসান। হৃদয়ে এক ভালোলাগা জেগে ওঠে। এই আঁধারে ওরা সাতজন জীব। যাদেরকে আশেপাশের সবাই এই ‘জীব’ই মনে করে। মানুষ হতে পারেনি ওরা কেউ এখনো। তাই মানুষের সমাজে থেকেও নিজেদের জন্য ওরা বেছে নিয়েছে এক ছায়াজীবন।

‘ কিরে বাইঞ্চোত! আমার আগেই চলে এলি?’ আহসানের কথার উত্তরে ওর দিকে তাকায় রায়হান। প্রিয় বন্ধুকে দেখে। ওর মনেও ভালোলাগা দোলা দেয়। দাঁত না দেখিয়ে নিঃশব্দে হাসে। উত্তরে ওর ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ এভাবেই বের হয়-
‘ হুম…। …গির পোলা তোর না আমার আগে আসার কথা। ফোন দিবি বলছিলি, দিছিস?’
– স্যরি দোস্ত! আমার মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না।‘
‘ কবেই বা তোর ছিল?’

দু’বন্ধু মাচার নিচে বেঞ্চের মত করে বানানো বাঁশের মাচায় বসে। উপরে-নিচে এরকম বসার জায়গা বানানো। তিনটা আম গাছকে ঘিরে এই আড্ডাস্থল। নিজেদেরই বানানো। এই সাতজন ভিন্ন বয়সী নামানুষের ভেতর একজন রয়েছে, সে কাঠের কাজ জানে। সে-ই বানিয়েছে। আহসান পাশে বসতেই রায়হান জিজ্ঞেস করে,
‘ মাল কার কাছে?’
– জাহিদের আনার কথা আজ।
একটু বিরক্ত হয় রায়হান। ওর ভ্রু’র কোঁচকানো দেখে আহসান। একটু হাসে নিরবে। ওর এই বন্ধুটি অপেক্ষা করতে একটুও পছন্দ করে না। আর আজ এই জিনিসটাই অনেক্ষণ থেকে করতে হচ্ছে তাকে। প্রসঙ্গ ঘোরাতে রায়হানের কাঁধে হাত রাখে। জিজ্ঞেস করে, ‘ নারিকেলের ছুবা তোর আনার কথা ছিল। এনেছিস?’ কথা না বলে নিজের টি-শার্ট ওপরে তুলে দেখায়। একপলক দেখে আহসান। এরপর দু’বন্ধু আশপাশের নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে খানখান করে দেয় ক্রমশঃ বাড়তে থাকা হাসির এক একটা তীব্র ওয়েভে। রায়হান ওর কোমরে বেল্টের পরিবর্তে নারিকেলের তৈরী দড়ি ব্যবহার করেছে। একই সাথে বেল্ট এবং আগুন ধরাবার কাজে ‘ছুবা’র কাজও করবে।

ইতোমধ্যে সূর্য ডুবে গেছে। এই ঘন জঙ্গলের সরীসৃপ জাতীয় প্রানীগুলোও এই সাতজনের শরীরের ঘ্রাণ চিনে। পারতপক্ষে ওগুলিও এই জায়গাটিকে এড়িয়ে চলে। যেভাবে সমাজের ‘ভদ্র মানুষগুলি’ এড়িয়ে চলে সেভাবে নয়। সরীসৃপদের ভেতরে ভয় এবং কিছুটা মমতার মিশেলে দূর্বোধ্য একটা কিছু থাকে। তবে ভদ্র মানুষদের ভেতরে কেবলি ঘৃণা থাকে। তাই এই সাতজন নামানুষ সবসময়েই ভদ্র লোকদের আবাসভূমি এড়িয়ে চলে। যদিও ওদের পরিবারের বাকীরা সেই সমাজে বাস করেন। এরা যার যার পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন… আউটসাইডার! দু’জন অন্ধকারের জীব আরো পাঁচজন জীবের আগমনী বার্তা শুনবার অপেক্ষায় বড্ড উন্মুখ হয়ে থাকে। এদের পরিচয় যথাসময়ে জানা যাবে।
… … …

জাহিদ অরুণাপল্লীর একটু উপরের ঢালের কাছে ভ্রাম্যমান পুলিশ দলের চেকিংয়ের সামনে পড়ল। কলমা থেকে রিক্সায় এই পর্যন্ত ভালোই এসেছিল। সি এন্ড বি পার হলেই এমএস হলের সামনের ভার্সিটি গেট দিয়ে ঢুকে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু তার আগেই বিপত্তি। পকেটে জিনিস। ইদানিং এই এলাকায় পুলিশের নজরদারী একটু বাড়াবাড়ি রকমের দৃষ্টিকটু।

দৃষ্টিকটু? হাসি পায় ওর। হ্যা, অন্ধকারের বাসিন্দা সে। ওর কাছে দৃষ্টিকটু বৈকি! ভাবনায় পলকের তরে আশপাশ সহ সবকিছু বিস্মৃত হয় সে। তাই হাবিলদারের প্রশ্ন প্রথমে সে শুনতে পায় না। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া একটা মোটরবাইকের হর্ণের আওয়াজে ওর সম্বিত ফিরে। ওর দিকে তাকিয়ে হাবিলদার দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করে,
‘ আপনাকে নামতে বলেছি আমি।’ রিক্সা থেকে নামতে নামতে বলে জাহিদ,
– স্যরি, আমি শুনতে পাইনি।
উত্তরে কিছু না বলে আবারো হাবিলদার জানতে চায়,
‘ কোত্থেকে আসছেন? ‘
কি বলবে ভাবে জাহিদ। এরা চেক করতে পারে, আবার না ও করতে পারে। তবে সে সত্যি কথাটাই বলবে মনঃস্থির করে। অকপটে জানায়,
– কলমা থেকে আসছি। গাঁজা কিনতে গেছিলাম।

পকেট থেকে নিজেই চারটা পঞ্চাশের ছোট পোটলা বের করে হাবিলদারের দিকে বাড়িয়ে ধরে। টহল পুলিশের বাকী সদস্যরা হাবিলদারের দিকে তাকায়। হাবিলদার একটু ধান্দায় পড়ে যায়। এভাবে সরাসরি কেউ বলে না সাধারণত। সে কি করবে ভাবতে কিছুটা সময় নেয়। পাশ দিকে হেঁটে যাওয়া সাধারণ মানুষ কৌতুহলী হয়ে উঠছে। তবে কেউ থামছে না। এরা এরকমই। দূর থেকে দেখবে, মজা নেবে, তবে কাছে আসবে না। পুলিশ বলে কথা। হঠাৎ হাবিলদারের মনে হয়, পুলিশ বলে এরা আসে না সেটা ভয়ে না ঘৃণায়? তবে উত্তরটা জানার আগেই তার ভিতরের কর্তব্যবোধ মাথাচাড়া দেয়। আইন বলে একে ছাড়া যাবে না। আবার সে যেখান থেকে পুরিয়াগুলি সংগ্রহ করেছে, সেখানের বিক্রেতাকেও আইনের আওতায় আনতে হয়। কিন্তু সে জানে এটা সম্ভব না। আইনের ফাঁক ফোকর গলে সিস্টেমের ভেতরের অসাধু মনোভাবে লালন হওয়া কিছু কর্তা ব্যাক্তিদের অর্থলিপ্সু মনোভাব আর প্রভাবশালীদের পদলেহন মনোবৃত্তির জন্য অপরাধের মূল পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না। বিনাশ তো বহু দূরের কথা। সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র নেতারা তাদের কর্মীদের ব্যাপারে বড্ড সচেতন। এই যুবকটি তাদের কেউ একজন কিনা কে জানে। ধরে নিয়ে গেলে মোবাইলের পর মোবাইল আসবে। অনেক ভেজাল। আবার ছাড়তেও মন চাইছে না। কিছু টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া যায়। তবে তাতেও অনেক ভেজাল। নিজের উর্দির ভেতরের সাধারণ মানুষটা আজো মরে নাই। তাই হাবিলদার কষ্ট পেতে থাকে। শেষে বলে,
‘ আপনাকে ধরে নিয়ে যাবার পরে অনেক ফোন আসবে। তার চেয়ে এখনই ফোন করান কাউকে দিয়ে, আপনাকে ছেড়ে দেই।’

জাহিদ অবাক হয়। পকেট থেকে মোবাইল বের করে.. তখনও অবাক ভাবটা কাটে না ওর। ভাবে পুলিশটা কি মজা করছে ওকে নিয়ে।

হলে নিজের রুমে বসে কালকের প্রোগ্রাম নিয়ে ভাবছেন তিনি। সেই সাতজন অন্ধকারের জীবদের ‘ ভাই’। বেকার এই ছেলেদেরকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে খাটান, কাজে লাগান। তবে নিজের রাজনৈতিক খোলসের বাহিরে বের হলে একজন মানুষ হিসাবে তিনি তার হৃদয়ে ওদের জন্য মমতাও অনুভব করেন। আর রায়হান ওনার স্যারের ছেলে। ভার্সিটিতে তার শিক্ষক ছিলেন রায়হানের বাবা। টেবিলের ওপর চার্জে রাখা মোবাইলের রিং টোনের শব্দে বিরক্ত হন। অনিচ্ছা সত্তেও মোবাইল হাতে নেন। চার্জারের পিন আলাদা করতে করতে ভাবেন, ‘ ইচ্ছা অনিচ্ছায়ও নেতাদেরকে অনেক কিছু করতে হয়’। ডিসপ্লেতে জাহিদের নাম দেখে একটু আগের কুঁচকানো ভ্রু আরো বেঁকে যায়, তবে মনটা আনন্দের এক পল্কা হাওয়ায় জুড়িয়ে দিয়ে যায়। নেতারা এমনই। তাদের বুঝা দায়। তারা যেভাবে দেখান, ভেতরে আসলে তেমন তারা নন। কল রিসিভ করেন। ওপাশের কথা শুনেন। শেষে বলেন,
‘ তোরা আর শুধরাইলি না। কতটুকু গাঁজা? ‘

হাবিলদার কথা শেষ করে জাহিদের হাতে মোবাইল ফেরত দিয়ে দেয়। মাছি তাড়াবার ভংগিতে জাহিদকে চলে যেতে বলে। রিক্সায় ওঠে জাহিদ। রিক্সাওয়ালা এতক্ষণ পরে স্বাভাবিক হয়। বিপদ কেটে গেছে টের পায়। নিম্নশ্রেণীর অনেক প্রাণীর মত এই বিত্তহীনেরাও আগাম অনেক কিছু অনুভব করে। সেটা ঐ প্রানীকূলের মত একই ক্লাশের বলেই কি?
টহল পুলিশের যার হাতে পুরিয়া চারটি সে ওদের হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করে,
‘ ওস্তাদ, এগুলা কি করবো?’
হাবিলদার জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ কি আর করবি, যার মাল তাকে দিয়ে দিবি।’

আর দাঁড়ায় না সে। সামনের দিকে হাঁটা দেয়। পুলিশ কন্সটেবলটি পুরিয়াগুলি জাহিদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে কঠিন চোখে তাকায়.. যেন নিরবে বলতে চায়, ‘ পরের বার.. ‘। জাহিদ বাংলা পাচের মত মুখ করে মালগুলি হাতের মুঠোতেই রেখে দেয়। রিক্সা ক্যাম্পাসের দিকে আগায়। চকিতে জাহিদ ভাবে, অনেক দেরী হয়ে গেল, রায়হান এতক্ষণে চেইতে ফায়ার হয়ে আছে। তবে আজ যে মাল সে এনেছে, ঘ্রান শুকেই রায়হান সব রাগ ভুলে যাবে। জীবনের সময়গুলো এই সাতজনের জন্য এখন কেবলি একটু ভালো গাঁজার সন্ধানে ব্যাপৃত হওয়াতেই সার্থকতা খুঁজে বেড়ায়। অথচ অন্যরকম ও হতে পারত! পড়ন্ত বেলায় রিক্সায় বসে নিজের অদৃশ্য ছায়ার পানে তাকিয়ে থেকে এক আঁধারের জীব আরো অন্ধকারের অপেক্ষায় থাকে। রিক্সাটি ততোক্ষণে এমএস হলকে ছাড়িয়ে দু’ পাশের গাছগুলির মাঝ দিয়ে বয়ে চলা কালো পিচের বুকের ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে এগিয়ে যায়।
… … …

রায়হান ক্রমশ: উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। আহসান ওর নাকের ওপরটা লালচে এবং ঘামে ভেজা দেখতে পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে না। ও জানে কি করতে হবে। গাঁজায় যদিও ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম’ নেই, কিন্তু অনুভূতির গভীরে লুকানো মনের প্রতিদিনের সময়ের নিরবচ্ছিন্ন চাহিদা, এই সিম্পটমের থেকেও ভয়ানক। নিশ্চুপ থাকে আহসান। এই সময়ে নিরবতাই ভালো ফল এনে দেয়।

রায়হান বাবা- মা আর ভাইয়ের সাথে পাশেই থাকে। ওর বাবা এই সাথের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বাবার কথা মনে হতেই চোয়ালের দু’পাশ শক্ত হতে থাকে। জেদ?
জনকের প্রতি অভিমান?
অতিরিক্ত ভালোমানুষ বাবার নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখে নিজের ভিতরের চাওয়াগুলোর পূরণ না হওয়াতে তৈরী হওয়া ভালোবাসায় মাখামাখি নিরন্ত অভিমানে কুহকী প্রহর গোনা?

সে, আহসান আর জাহিদ ভিন্ন সাবজেক্ট নিয়ে এখান থেকেই স্নাতোকোত্তর করেছে আজ দু’ বছর হলো!
‘ ওহ মাই গড!’ বলেই উঠে দাড়ায়। ‘ দুই বছর?’ বলে আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে। আহসান অবাক হয় না। হয়.. এরকম প্রায়ই ওদেরকে শুনতে হয়। ওরা বুঝে। তবে বাবা- ছেলের মাঝে কখনো দূরত্ব এনে দেয়, এমন কিছুই এরা করে না, কেবল নিশ্চুপ থাকে। আর তাতেই অনেক কিছু প্রকাশ পায়। রায়হান কিংবা দিন দিন প্রতিদিন এক একজন রায়হানের জায়গাটা দখল করে। অভিযোগ বুকে নিয়ে পাল্টা অভিযোগগুলিকে ধরাসায়ী করতে এরা বড্ড সিদ্ধহস্ত।

‘ মাদারচোদ কি করে এতক্ষণ। শালায় মোবাইলটাও অফ করে রাখছে কেন? এবার আক্ষরিক অর্থেই সে ফেটে পড়ে।
– মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেছে মনে হয়।
আহসান উত্তর দেয়। ভ্রু- কুঁচকে রায়হান যখন কথা বলে ওকে বড্ড বাবু বাবু দেখা যায়। আহসান একটা বাবুর প্রতি অপার মায়ায় জড়িয়ে তাকিয়ে থাকে। এই মায়া একদিনে হয়নি। ওরা এই সাতজন নেংটাকালের বন্ধু। সময়ের ঘ্রাণে জড়ানো অনুভূতিতে মেখে মেখে ওরা বন্ধু হয়েছে। একদিন বা কিছু দিনে নয়।
রায়হান বলতে থাকে,
‘ বালের মোবাইল ইউজ কর তোমরা, নাহ? তোমার ব্যালেন্স নিল থাকে সবসময়, আর ঐ…উয়ার পো’র চার্জ থাকে না।’
– ওর না, ওর মোবাইলের।
গম্ভীরভাবে আহসান শুধরে দেয়।

ঝি ঝি পোকা ডাকছে? রায়হানের এমন মনে হয়। আবার বাবার কথায় ফিরে যায়। একার সাথে একার কথা বলার এক অদ্ভুত রোগ এই সাতজনের। ব্রেইনের কোষে কোষে অনুভূতিদের নিজেদের ভেতরে যে অনুভব অনুভূত হয়, সেখানে অনেক আলোচনায় অংশ নেয় এরা যার যার মত। বাবা চাননি এখানে তার পরিচয় ব্যবহার হোক.. তার ছায়ায় ছেলে বড় হোক। বাবা কি চেয়েছিলেন ছেলে নিজের মত করে তার থেকেও বড় হোক? সবসময় বড়-ই বা হতে হবে কেন? বাবা কোনো সুপারিশ করলেন না কিংবা লাখ দশেক টাকাও দিলেন না। বছরগুলি পিতা- পুত্রের নীরব স্নায়ু যুদ্ধে কেটে গেলো। প্রশাসনিক অফিসারের চাকরিটা হতে পারত.. অতি সহজে। হলোই না। বাবা রাজনীতি পছন্দ করতেন না। রায়হান সেন্ট্রাল এর ভাইয়ের অনেক কাছের মানুষ হয়ে গেল। বাবা ধুমপান অপছন্দ করেন। সে নিয়মিত কল্কিসেবী হয়ে পড়ল। বাবার সুনাম নষ্ট করতে করতে রায়হানের আরেক পৃথিবীর বাসিন্দা হবার প্রতিটি পদক্ষেপ কি ওকে কাছের মানুষদের থেকে এক পা করে করে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল না? সে কি একবারও টের পেল না? বাবা ও কি বুঝেছিলেন? তিনিও কেন টের পেলেন না? ওর সাথের অন্য বন্ধুরা তরতর করে উঠে যাচ্ছিল, ওর মনের সেই কষ্টটুকু কেন বাবা অনুভব করতে চাইলেন না? নাকি বাবা অনুভব করেছিলেন! কিন্তু সে নিজেই বাবার প্রকাশকে বুঝতে পারেনি? বাবা নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু ছেলের জন্য নিজেকে পাল্টান নাই।

‘ এজন্য তো তোমার বাবার জন্য গর্ব করা উচিত!’
ব্রেইনের এক অংশের প্রশ্নের উত্তরে রায়হান আনমনে ‘ হুম’ বলে। চেতন মনের অবচেতনে অচেতন খেলায় জড়িয়ে যায় রায়হান। সে আলো হতে পারে নাই। তাই অন্ধকার হয়েছে। ও কিছু হতে পারে নাই দেখে পারুও ছেড়ে চলে গেছে!

‘ পারু আবার এই মুহুর্তে এলো কোত্থেকে?’
প্রচন্ড বিরক্তিতে আহসানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আমার মোবাইল দিয়ে কল করে দেখ বাইনচোত মোবাইল খুলছে কি না? খুললে জিগা আর কতক্ষন লাগবে আসতে? ‘

( ক্রমশ:)

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

7 thoughts on “আগন্তুক: ধারাবাহিক উপন্যাস// পর্ব-৭

  1. চেতন মনের অবচেতনে অচেতন খেলায় জড়িয়ে যায় রায়হান। সে আলো হতে পারে নাই। তাই অন্ধকার হয়েছে।

    * মামুন ভাই, আপনার লেখা বেশ ভালোই লাগে।
    ভালো থাকুন সবসময়…

    1. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় ভাই।
      আপনার ভালোলাগা লেখার প্রেরণা হলো।

      শুভেচ্ছা
      ভালোবাসা নিরন্তর জানবেন।
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  2. হুম… আলাদা একটা গল্প মনে হলো! অন্ধকারের জীবদের গল্প। অনেক গুলো গল্প মিলে একটা উপন্যাস কিনা!

    শুভেচ্ছা সেই সাথে শুভ সকাল মিতা।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. আলাদা মনে হলেও উপন্যাসের একটা অংশে চরিত্রগুলি ভূমিকা রাখবে।

      ধন্যবাদ মিতা। সাথে থাকার শুভেচ্ছা গ্রহন করুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  3. আগন্তুক এর সপ্তম খণ্ড পড়লাম মি. মামুন। ধারাবাহিক শেষ হোক তারপর প্রতিক্রিয়া।
    পাঠক হিসেবে বরাবরই পাশে থাকছি। শুভ সকাল মি. মামুন। :)

      1. ভালো লাগল। এবং আপনার বই মেলায় বই। পাওয়া যাবে কত নম্বর স্টলে। আমি আছি

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।