ডিজিটাল_ভালোবাসা

ডিজিটাল_ভালোবাসা

ভালোবাসা যুগে যুগে নিজস্ব রূপে
পাড়ি দিয়েছে হৃদয়ের তেপান্তর
চলুন দেখে আসি আজ
কেমন ছিল ভালোবাসার সেই যুগীয় রুপান্তর?

একটা সময় ছিলো যখন কেউ ভালোবাসার জন্য
‘দুরন্ত ষাড়ের চোখে লাল রুমাল’ বেঁধে দিতেও দ্বিধা করেনি!
প্রেয়সীর জন্য ‘বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে এনেছে ১০৮ টি নীল পদ্ম’!
সেই ভালোবাসা এখন
ডিজিটাল যুগের ভার্চুয়াল জগতে এসে ধুঁকছে অবিরত!

আমাদের অ্যানালগ সময়ে
নীল খামে নীল কাগজে হৃদয়ের কথাগুলো
যরীন হরফে লেখা থাকতো!
কুহকী প্রহর অণুক্ষণ উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ভেসে ভেসে
পাশের বাড়ির সেই মেয়েটির ছবিই
হৃদয়ে কেবলি আঁকতো!

অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশের সেই দৃষ্টিভঙ্গি এখন
বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে!
বিনিদ্র রজনী জেগে জেগে প্রিয়াকে এখন
ভালোবাসার পংক্তিগুলো আর লেখা হয় না।
অনিশ্চযতার দুরু দুরু বুকের কাঁপুনি এখন
এসএমএস আর ইনবক্সে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে।

এখন আর বাড়ীর ছাদে কিংবা খোলা মাঠের
বিস্তীর্ণ ধানি ফসলের ভিতর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে-
প্রেয়সীর খোঁপায় জড়ানো বেলী ফুলের তাজা নির্যাস
মনকে আকূল করার সময় পায় না।
চিঠি চালাচালির সেই উত্তেজনা এখন অ্যানালগ যুগের দামী এন্টিকস!
প্রেয়সীর বুকের সাথে সাময়িক মিশে থাকা সেই নীল খাম
প্রিয়ার পরিচিত সুবাস এখন আর বয়ে বেড়ায় না।

এখন মাংসল হৃদয়ের যান্ত্রিক কথাবার্তা
কী-বোর্ডের ইলেক্ট্রনিক ঘ্রাণকে সাথে নিয়ে স্কাইপের দ্বারস্থ!
কালো অক্ষরে হৃদয়ের লাল অনুভূতি এখন
ভালোবাসার ‘সিম্বোলিক কনভার্সনে’ই তৃপ্তির স্বাদ আস্বাদনে ব্যস্ত!
দামী রেস্টুরেন্টে উচ্চ কোলেস্টরেল যুক্ত খাবার
আর দামী গিফটের পিছনে নিরন্তর ছুটে চলে ডিজিটাল ভালোবাসা।

প্রযুক্তি স্থানিক দূরত্ব কমালেও
মনের দূরত্ব বাড়িয়েছে
দু’জনের কাছে আসাটা আগে ছিল বড্ড কঠিন!
তবে মনের দূরত্ব ছিলো না সেথায় একটুও।
এখন সহজে কাছে আসে হৃদয়গুলি
দুই মেরুতে অবস্থান ও নেয় পলকে।
মেকি ‘সিম্বোলিক’ ভালোবাসার ভিতর এখন আর প্রেয়সীর বুকের চাঁপা ফুলের ঘ্রাণ নেই!
সেখানে শুধুই যান্ত্রিক ঘ্রাণ আর ছলনার ইতিহাস।

এখন কবিগুরু ও নেই
ভালোবাসাও এখন তাঁর মতো ছন্দে ছান্দসিক নয়।
ভালোবাসা কি? এর উত্তরে বলেছিলেন তিনি-
“ভালবাসার কোন কথার
কি বা অর্থ-মানে?
ভালো যারা বেসেছিলো
তারাই ভালো জানে”।

ভালোবাসা এখন যারা ভালোবাসেন তাঁদের নিজস্ব নিগূঢ় অর্থে দীপ্তমান!
বহুরূপী ছদ্মবেশী ডিজিটাল ভালোবাসা
নিরন্তর পোড়াতে জানে কেবলি
জাগায় না কোনও আশা!
এখন.. কেবলি মিথ্যে এ ভালোবাসা।।
_________________________

#ডিজিটাল_ভালোবাসা_শেষ_তৈলচিত্র_কাব্যগ্রন্থ।

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

1 thought on “ডিজিটাল_ভালোবাসা

  1. অসাধারণ কাব্য গাঁথা। অভিনন্দন মি. মামুন। শব্দনীড় এর পাশে থাকুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।