বিস্মরণ_অণুগল্প_৪১৮

শপিং মল থেকে বের হবার পথে পরিচিত হাজারো অচেনা শরীরের ভিড়ে খুব কাছের হারানো একজনের, শরীর ছুঁয়ে ভেসে বেড়ানো পরিচিত সুগন্ধি দূরের কারো কথা মনে করিয়ে দেয়। কখনো কখনো একটা পরিচিত মানুষ কিভাবে একটা পারফিউম হয়ে যায়! ভেবে বিস্মিত হবার পাশাপাশি, একটু কি ব্যথিতও হয় মন? সামনে একটু হেঁটে ডানপাশের ওয়েস্ট পেপার বিনে নিজের গোটা মনটাকে-ই ফেলে বাইরের আলোয় দৃশ্যমান শিহাবের নিজেকে বড্ড নিশ্চিন্ত মনে হয়। তারপরও ঘ্রাণটুকু আরো অনেকক্ষণ সাথে জড়িয়ে থাকে ওর মনে।

পার্কটাকে বামে রেখে, দুই সারি শিরিষ গাছ দু’পাশে রেখে মাঝ দিয়ে পথ। ইটের সলিংয়ের ওপর হাল্কা পলেস্তারা পারেনি যেমন জুতোর শব্দকে আরো মোলায়েম করতে, তেমনি পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলির গোমর বন্ধ রাখতেও। আজকাল সবাই সব জানে। তবে কতটুকু মানে?

পাশাপাশি অনেকগুলি বেঞ্চের একটায় একজন একা। বসে আছে। দৃষ্টি সামনে.. মন হারিয়েছে দূরে কোথায়ও।
কোথায়?
মেয়েটি নিজেও জানে কি?

চমৎকার শাড়ি। স্লিম ফিগারে বেশ মানানসই। কপালের লাল টিপ শেষ বিকেলের আলোকচ্ছটায় চেহারাকে উজ্জ্বল, আরশির চকচকে আভার মত রাঙিয়ে তুলেছে! সামনে দু’পাশ থেকে ছেড়ে দেয়া চুল বাতাসে উড়ছে। খোঁপার সাদা জবা অতিরিক্ত শুভ্রতায় শিহাবকে ধাধিয়ে দেয় পলকের তরে। তবে দ্বিতীয় পলক পরতেই পরবর্তী প্রহর থেমে যায়। নিঃসঙ্গ মেয়ে আপন মনে হাসে। একা একা। একটু বেঁকে থাকা ঠোট অস্ফুট বেদনায় ধীরে ধীরে মেলে যায়। সারিসারি মুক্তোদানার ঝলকে আবারো প্রহর থেমে যায়। হাসছে নীরবে। অথচ ওর দু’চোখে রাজ্যের বিষন্নতা দেখতে পেয়েছে শিহাব। সামনে দিয়ে পাশ কাটানোর সময়। খুব পরিচিত কিন্তু ঠিক কিসের মতো ঘ্রাণ কেন জানি মনে পড়তে চায় না। অথচ শপিং মল থেকে বের হবার সময়ও নামটা মনে ছিল.. পারফিউমটার।

আর পারফিউমটা যার শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে সুগন্ধি হয়ে ভাসতো বাতাসে, সেই মেয়েটির নামও এখন মনে আসছে না।

মনটা যে ওয়েস্ট বিনে ফেলে এসেছে, ভুলে যায় শিহাব।।

বিস্মরণ_অণুগল্প_৪১৮

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

6 thoughts on “বিস্মরণ_অণুগল্প_৪১৮

  1. শিহাব পর্বের আজকের অনুভূতি পড়লাম। প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে লিখার কন্টেন্ট চমৎকার মনে হলো। অভিনন্দন মি. মামুন। আশা করবো ভালো আছেন। শুভ সকাল। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. আপয়ান্র এই পর্বের অনুভূতি জেনে অনেক প্রেরণা পেলাম ভাইয়া।

      ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. ধন্যবাদ রিয়া দিদি।

      শুভেচ্ছা রইলো…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. জি, উচিৎ ছিলো। 

      ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে আপনার সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।