“কোন অমরার বিরহিনীরে চাহনি ফিরে
কার বিষাদের শিশিরনীরে এলে নাহিয়া”
নিঃসঙ্গ শীতে কুয়াশায় খোলা ছাদে শিহাব একা। শুনছে এক প্রেমিক পুরুষের হৃদয় নিঙ্গড়ানো প্রেম-নির্যাস! সেই সাথে নিজের স্ট্যাটাস আপডেট করছে…
“আমি গত ঊনিশটি বছর এক নিভৃত জীবনযাপন করে চলেছি। প্রথমে এক নামানুষে পরিণত হয়েছি। এরপর ছায়ামানুষ। তবে একজন মানুষ হতে চেয়েছিলাম। এরপরে একজন শিহাব। এরপর ধীরে ধীরে একজন হামানুষ।
আমি আমার কাছের মানুষদের সাথে আমার সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন যত্ন অনুভব করি নাই, সম্পর্কগুলির যত্ন করি নাই। তাই আমি কিছুই হতে পারি নাই। একজন সন্তান- ভাই- স্বামী- বাবা… কিছুই না। সব থেকেও কিছুই নাই আমার। পারুও নাই। যার জন্য সবকিছু নাই হলো, সে কোথায়?
সবাই নাই হয়ে যায় কেন?
আমি যখন অনুভব করলাম, আমি কিছুই হতে পারব না, নিজেকে একটু একটু করে চিনতে শুরু করলাম।
একদিন
এক গোধুলিবেলায় আমার স্রষ্টাকে বললাম,
– তুমি আমাকে কিছুই হতে দিলে না। তবে কেন এত অনুভূতি দিয়েছ? আর দিলেই যখন, তা প্রকাশ করার ক্ষমতাও আমাকে দাও।
তিনি আমাকে দিলেন। তিনি কাউকেই নিরাশ করেন না। চাইতে জানলেও দেন, না জানলেও দেন। দেওয়াই তার কাজ। আমি লিখবার ক্ষমতা আমার স্রষ্টার কাছ থেকেই চেয়ে নিয়েছি। অনেকেই লেখেন। তারা সবাই অনুভূতি সম্পন্ন। তবে সবাই প্রখর অনুভূতি সম্পন্ন নন।
আমার স্রষ্টা আমাকে শেষের দলে রেখেছেন। নিজেই বললাম বলে ক্ষমা চাইছি।
অনুভূতির প্রখরতায় প্রতি মুহুর্তে অবর্ণনীয় কিন্তু বোধ সম্পন্ন বেদনায় ক্লিষ্ট হই আমি। কষ্টকর মুহুর্তগুলি আমাকে লিখবার তাড়নায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। জীবন জীবিকার গোলামির কেড়ে নেয়া, আমার সোনালী সময়গুলো, কি অবলীলায়ই না নষ্ট হয়। আমি একই সময়ে আমার ব্রেইনে দুই ‘প্যারালাল অনুভূতি অনুভবক্ষম’ একজন লেখক। অতিরিক্তটি আমি স্রষ্টার থেকে চেয়ে নিয়েছি।
মানুষের হৃদয় আমার বিচরণস্থল। হৃদয় জীবনের কথা বলে। আর জীবনের পথেই মানুষ চলে। ‘হৃদয় ওরিয়েন্টেড’ এক কর্মশালার শিক্ষানবিশ কারিগর আমি। দক্ষ থেকে দক্ষতর… আরো অনেক দক্ষ হতে চাই। আমার হৃদয় এক ‘প্যান্ডোরার বাক্স’। সেখানে আশা আমার একমাত্র ভেলা।
তবে কি আমি একজন আশাবিলাসী?
শুধু অনুভূতি, তা যত প্রখরই হোক না কেন, লেখক হওয়া অনেক কঠিন। পাঠকের চিন্তা-ভাবনার সব থেকে সরল পথটি ধরে, গল্পকে অল্প অল্প করে সামনে নিতে না জানলে, পাঠক আগ্রহ হারাবেন। সহজবোধ্য- ছোট ছোট- অতি ‘ফ্যামিলিয়ার’- জীবনের চোখে পড়া বা না পড়া, এমন সব অণুমুহুর্তগুলোকে একজন দক্ষ চিত্রকরের মত পাঠকমনে চিত্রায়ণ করতে হবে, করতে জানতে হবে।
আমি কি জানি?
আমি কি একজন দক্ষ চিত্রকর হতে পেরেছি?
পারু জানতো, সে থাকলে বলতো।
বলতো?
আমি লিখবার ক্ষমতা আমার স্রষ্টার কাছ থেকে চেয়ে নেয়াতে, অন্য কিছু চাইতে আমার ভীষণ লজ্জা করে।
না হলে আমি পারুকে চাইতাম! ”
… …
পারু হারানোর বেদনার মত, জীবনে কিছু না কিছু অতৃপ্তি থেকেই যায়। শিহাব ভাবে ওর নিজের জীবনের গল্প..
“আমার অনেক গল্প আছে
নষ্ট গল্প অল্প স্বল্প? তা ও আছে-
গল্পের ফেরিওয়ালা আমি
ফেরি করে বেড়াই আনন্দ-বেদনা
কখনো বা দু:খের মোড়কে কষ্ট।
কখনও বা স্বপ্নের ফেরিওয়ালা আমি
দু:স্বপ্নের রাতকে বানাই স্নিগ্ধ সকাল
আমার অনেক গল্প আছে
দু’একটা হয়তো বা নষ্ট।
এক শব্দকারিগর আমি
যার ছিলো অঢেল গল্প
এখন নিজেই সে এক নষ্ট গল্প।”
#অতৃপ্তি_অণুগল্প_৪৬১
★ রবি ঠাকুরের গানের কলি
লিখাটি পড়লাম আর ভাবলাম … নিঃসঙ্গ শীতে কুয়াশায় খোলা ছাদে শিহাব একা।
চমৎকার মি. মামুন। গুড জব।
অসাধারণ একটি মুহুর্ত ভাইয়া! এরকম অনেক অনেক সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে শিহাবের।
ধন্যবাদ আপনাকে।
“কোন অমরার বিরহিনীরে চাহনি ফিরে
কার বিষাদের শিশিরনীরে এলে নাহিয়া
কী অসাধারণ কথা। মন আনমনা হয়ে যায় গল্প দা।
কবিগুরুর গানগুলির ভিতরে এই গানটি আমার অনেক অনেক প্রিয়।
আপনার অনুভূতি জেনে ভালো লাগলো প্রিয় দিদি। শুভেচ্ছা…
অভিনন্দন মহ. আল মামুন খান।
ধন্যবাদ প্রিয় কবি দাদা।
ভালো থাকুন এই কামনায়…

* লেখকের জন্য শুভ কামনা সবসময়…


ধন্যবাদ।
আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা।