শিহাব আর কণা। পারিবারিকভাবে বিবাহিত জীবনের ঊনিশ বছর পার করেছে গেলো মাসে। নিরবচ্ছিন্ন ‘না সুখ-না দুঃখ’ টাইপের বৈবাহিক জীবনে অভ্যস্ত। ভালোই চলছিলো।
দু’জনে যার যার স্বচ্ছল বাবা’র সাথে থাকাকালীন জীবনে কষ্ট তেমন অনুভব করে নাই। এভাবে চলতে চলতে একদিন নিজেদের সেই জীবন থেকে আরেক মধ্যবর্তী জীবনে প্রবেশ করে তারা।
শিহাবের নিজস্ব কিছু ভাবনা-চিন্তা এবং লাইফস্টাইলের কারণে, শিহাব-কণার বৈবাহিক জীবন সেভাবে সমৃদ্ধ হয় নাই। এই না হওয়াটা অর্থের নিরিখে। যাইহোক, এর ভিতরেই ওদের সন্তান এলো। তাদের নিয়ে ভালোবাসায় মাখামাখি চারজনের সময় এক প্রকার কেটেই যাচ্ছিলো।
হঠাৎ কণা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোনোরুপ আভাস ছাড়াই। অসুখ-বিসুখ বলে ক’য়ে আসবে এমনও তো না।
এক সকালে বাসে শিহাব-কণা পাশাপাশি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বিবাহিত জীবনের ঊনিশ বছরে এমন পর্যায়ের মুখোমুখী দু’জনের কেউই আগে হয়নি। আগে তো টুকটাক জ্বর-সর্দি টাইপ ছাড়া ‘রোগ মহাশয়’ এভাবে সামনে আসেন নাই।
জানালার পাশে কণা। বাসের ডান সারিতে। পাশে শিহাব। জানালার দিকে ঘাড় কাত করে আছে কণা। ওর দিকের রাস্তার পাশের দ্রুত ধাবমান গাছপালা, বাড়ি, দালান-কোঠা দেখছে। কিছু ভাবছে? কি ভাবে সে?
জানালা ভেদ করে আসা মধ্য নভেম্বরের শীতের মায়াবী কোমল রোদ মাখা কণাকে শিহাবের কাছে বড্ড নরম মনে হলো। ওর হাতের ‘পর নিজের হাত রাখে শিহাব। কণা ফিরে তাকায়। শিহাব বলে,
-কি ভাবো?
– কিছু না।
কণার কোমল হাতে শিহাবের হাত অপেক্ষাকৃত দৃঢ় হওয়ায় কণা শিহাবের চোখের দিকে তাকায়। নিরবে কি কণাকে আস্বস্ত করতে চায় শিহাব? তাই কি হাতের এই অপেক্ষাকৃত দৃঢ় স্পর্শ! কণা মৃদু হাসে। শিহাব ও তাকায়। কষ্টেরা কি কণার চোখে ভাসে?
‘ভয় পাচ্ছ?’- জানতে চায় শিহাব।
উত্তর না দিয়ে শিহাবের হাতও একই দৃঢ়তায় স্পর্শ করে কণা। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। উত্তর খোঁজে? সময় নেয়? উত্তর জানে না বলেই কি?
শেষে শিহাবের দিকে ফিরে একপলক দেখে। ম্লান হেসে জানতে চায়,
– বায়োস্পি করতে কি ব্যথা লাগে?
সামনের দিকে ফিরে শিহাব। দূরে রিয়ার ভিউ মিররে ড্রাইভারের চেহারা দেখা যাচ্ছে। আরো দু’এক যাত্রীর মুখের কিছু অংশ। উইন্ডস্ক্রিণ ভেদ করে সকালের রোদেলা আকাশ, অন্য ধাবমান যানবাহনের এলোমেলো চলন্ত দৃশ্য- এসব দেখা দিলেও শিহাব অন্য কি যেন দেখে।
ওর পাশের মেয়েটি আবারো ডানে কাত হয়ে বাইরের দৃশ্য দেখায় মগ্ন। প্রশ্ন করে উত্তরের অপেক্ষা না করেই মুখ ফিরিয়েছে সে। উত্তর জানতে চায় না বলে?
আশপাশ বিস্মৃত হয় শিহাব। কোথায়ও কেউ নেই। সে আর কণা। মুহুর্তে বিগত ঊনিশটি বছর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুমুহুর্ত সমেত সামনে হাজির হয় শিহাবের। এই বছরগুলিতে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেক কষ্টই দিয়েছে শিহাব কণাকে। কিছুটা নিজের প্রকৃতিগত কারণে, কিছুটা পারিপার্শ্বিকতার জটে পড়ে।
ঊনিশ বছর ধরে এত ব্যথা সহ্য করা মেয়েটি আজ কিনা জানতে চাইলো, আ্যানেশথেশিয়া দ্বারা নিজের শরীরের সামান্য কোষ নিতে গেলে সে ব্যাথা পাবে কিনা! আহ!
আসলেই কি এটাই জানতে চাইলো কণা? সে কি শিহাবের থেকে শক্তি পেতে চাইলো? শিহাব কি কণার শক্তি হতে পারবে? পেরেছে কি বিগত দিনগুলিতে?
মহাসড়ক ধরে এক চলন্ত বাসে, মধ্য নভেম্বরের এক শীতের সকালে, শিহাবের পাশে বসা মেয়েটিকে হঠাৎ ওর কাছে ঊনিশ বছর আগের কণা মনে হয়। মায়াবী কোমল, বড্ড নরম! ভালোলাগারা যেন মুহুর্তে প্রজাপতির ডানায় ভর করে ভালোবাসার আগুনে পুড়ে পুড়ে প্রেম হয়ে ওঠে।
কণার হাত নিজের আরো কাছে টেনে নেয়। ওর হাতে আলতো চাপ দিয়ে নিরবে উত্তর দেবার চেষ্টা করে সাথেই আছে। কণা কি বুঝে?
নিজের পাওয়ার গ্লাস ঝাঁপসা হয়ে ওঠে শিহাবের। গলার কাছে কিছু একটা আটকে আসে। বুকের কাছটায় চিনচিন আলোড়ন চাপচাপ অনুভব নিয়ে হাজির। চোখ ভিজে আসে শিহাবের। বাতাস কণার চুল নিয়ে খেলছে, সেদিকে তাকিয়ে থেকে ভাবে শিহাব, ‘কিছুই করতে পারলাম না তোমার জন্য’।
এক জীবনে একজন শিহাব, কেনো একজন কণার জন্য কিছু করতে পারে নাই ভেবে ভেবে ক্লান্ত এক শীতের সকাল, মুহুর্তে এক বিষন্ন মধ্য দুপুরে পরিণত হয়। পতিত অতীত ভয়ংকর ভবিষ্যৎকে সামনে নিয়ে অসহায় বর্তমানকে ওলটপালট করে চলে।।
_______________________________
#এখন_আমার_বেলা_নাহি_আর_অণুগল্প_৪৯০
প্রিয় চরিত্র শিহাব এর সাথে দেখা হয়ে গেলো। অণুগল্পের জন্য অভিনন্দন মি. মামুন। শুভ সকাল।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভেচ্ছা নিরন্তর… ভালো থাকুন সবসময়।

অভিনন্দন গল্প দা। অনবদ্য সব গল্প উপহার বেশ ভাল লাগে আমার।
ধন্যবাদ রিয়াদি'
আপনার অনুভব ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা….
বিষণ্নতায় মোড়ানো আমাদের জীবন চরিত। শুভেচ্ছা মহ. আল মামুন ভাই।
খুব সুন্দর বলেছেন, 'বিষন্নতায় মোড়ানো জীবন চরিত'! অনবদ্য লাগলো।
ধন্যবাদ।

* প্রিয় লেখক, শুভ কামনা সবসময়…
ধন্যবাদ দিলওয়ার ভাই।
শুভেচ্ছা…