একটা সময় আমার নাকটা নিয়ে আমার নিজেরই অভিযোগের অন্ত ছিল না। আয়নায় দেখে, ছবি তুলে কিংবা শান্ত পুকুরে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে কত কষ্ট পেয়েছি। বন্ধুরা ও বলতো, ‘তোর নাকটা বেশী লম্বা রে’।
বাসায় এসে আম্মাকে বলতাম, কেন আমার নাকটা এতো বড় হল? আরো একটু ছোট নাকওয়ালা বাবু আনলে কি হতো?
আমার বিয়ের বছরে বউকে যেদিন প্রথম দেখতে গেলাম (আমি দেখলাম না আমাকে দেখলো বুঝি নাই), সংকোচ হচ্ছিল সেই নাককে নিয়েই। এর আগে আম্মাকে বলেছিলাম, আমার নাককে প্লাস্টিক সার্জারী করে একটু ছোট করে নিতে চাই। আম্মা শুধু হেসেছিলেন…
একই রকম সংকোচ ছিল বড় চোখের জন্য, অনেকের ভাষায় ‘গরুর চোখ’। আর ছিপছিপে শরীরের জন্য কোনো ড্রেস ‘ইন’ করে পরতে পারতাম না। সবাই কি সুন্দর মাঞ্জা মেরে চলতো। আমি কোনোভাবেই সন্তষ্ট ছিলাম না নিজেকে নিয়ে। এর ভিতরে প্রেমে পড়ে গেলাম!! আমার বউকে দেখে। তখনো কথা বার্তা পাকা হয়নি। নিজেকে কীভাবে সুন্দর দেখানো যায় সেদিকে মন দিলাম…
আকদ হয়ে গেল।
৬ মাস পরে..
বিয়ের অনুষ্ঠান হলো। দিনের বেলা আমার কাজিন মেজর শরীফ এসে বলে, ‘তোকে কালো দেখা যাচ্ছে। চল একটু ফর্সা করে নিয়ে আসি।’ আরো দুই কাজিনের চাপাচাপিতে আগ্রাবাদ লাকী প্লাজার ক্যাফে নেওয়াজের সাথের সেলুনে গেলাম। আমাকে ব্লিচ করে টারমারিক ক্রীম সহ আরো কি কি যেন মুখে লাগালো। কিন্তু গর্দভগুলো হলুদের সাথে কিসের যেন বিক্রিয়া করে ফেলায় আমার মুখের চামড়া পুড়িয়ে ফেললো। প্রচন্ড জ্বলে যাচ্ছিল…।
রাতের অনুষ্ঠান শেষে বউ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আমার মামী একবার স্টেজে এসে আমাকে দেখে বলেছিলেন যে আমাকে নাকি কালো দেখা যাচ্ছে। পরে ছবিতে দেখেছি। আসলেই কালো করে ফেলেছিলো।
বিয়ের পরে এক ফুরফুরে ভাললাগার বাসন্তী হাওয়ায় উড়ে চলছিলাম… বউকে নিয়ে। তখন বাবার হোটেলে… ‘আনন্দ কি আনন্দ এসে গেছে কোকাকোলা’ টাইপের ফুর্তি নিয়ে সারা চিটাগং শহর মাতিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার বাসা হালিশহর কে-ব্লকের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে… বউয়ের আব্বা-আম্মা তখন সিজিএস কলোনীতে থাকেন। আমার যত বন্ধু-বান্ধব সব সেই কলোনীতে। ওদের সাথে আনন্দে ফুরফুরে সময়ে ব্যস্ত থাকতাম।
বউ এসে ‘আমার মনে ফাগুন রাঙ্গালো’। আমার পোশাক-পরিচ্ছদ এবং বেশ-ভুষায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলো। সবার আগেই আমার গোঁফ গায়েব হয়ে গেলো … ইন করে মাঞ্জা দেয়া শিখলাম… প্যান্টের সাথে ম্যাচিং করে শার্ট পরা শুরু করলাম… আরও অনেক কিছু করা শিখলাম।
নিভৃতে আমার বউ আমাকে বলল আমার নাক এবং চোখ দুটোই নাকি ওর কাছে সব থেকে বেশী ভাল লাগে। 😀
আর আমি কিনা…।
১৮ বছর পর…
এখন ভুড়িটা এতো বেশী স্ফীত যে সেই বিয়ের আগের মতো আবার ইন ছাড়া চলা শুরু করেছি… আবার সংকোচ!
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
#সংকোচ_মামুনের_অণুগল্প_৫১৭
আপনার মুগ্ধতা আমার প্রেরণা জানবেন প্রিয় কবিদা'!
শুভেচ্ছা…

নৈমিত্তিক আপনার লিখা পড়ি; মজার কথা হচ্ছে কখনও ক্লান্তি আসে না। বরং ভাল লাগে। অভিনন্দন গল্প দা মামুন।
আপনার অনুভব জেনে খুশী হলাম এবং ভালো লাগলো প্রিয় দিদি। নিরন্তর শুভেচ্ছা…

* মুগ্ধতা রেখে গেলাম…
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই। আপনার মুগ্ধতা আমার জন্য প্রেরণা। শুভেচ্ছা…
