মামুনের দুইটি অণুগল্প

কাছে থাকায়ই সুখ?

দস্যুরাণী সিনেমাটি দেখে ছেলেবেলায় শাবানাকে বিয়ে করব ভেবেছিলাম। খুলনার বৈকালি সিনেমা হলে বন্ধু শফিককে সাথে নিয়ে থার্ড ক্লাশে দেখেছিলাম কয়েকবার। পঁচাত্তুর পয়সা টিকেট ছিল এক একজনের!

একটু বড় হলাম, সুবর্ণা মোস্তফাকে ভালোবাসলাম নাটক ‘সংশপ্তক’ দেখার সময়ে। আর কিছুকাল পরে জুহি চাওলার সাথে প্রেম করতে ইচ্ছে করল। ‘স্কুলের গন্ডী পার করা কলেজে পা দেবে দেবে’ এমন এক আমি ছিলাম তখন। ভার্সিটিতে এসে দেবীর সাজে শ্রীদেবীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পেতে চাইলাম। কত বিচিত্র ছিল আমার চাওয়াগুলি, নাহ?

আর কাকে যেন ভালোবাসতাম :) আজ আয়নায় বিস্মৃত মুখ- ভুলে গেছি দুঃখ!
ভালোবাসায় কি সুখ?

মা আর বউ তাদের ভালোবাসা দিয়ে ‘ভালোবাসা’কে হারিয়ে দিয়েছে… তাড়িয়েছে? সময়ের ঘ্রাণে পলাতক ভালোবাসা বিস্মৃতিতে কি একটু আধটু জ্বালা ধরায়, এখনও?

মায়ের আঁচলের নরম কোমল ঘ্রাণ.. বউয়ের শরীরের আধো ভালোলাগাময় ঘ্রাণ… আর দুই কন্যার আদর আদর বাবু ঘ্রাণে ‘পলাতক ভালোবাসা’র ঘ্রাণ আজ বড্ড অচেনা!

কাছে আছি আমি.. কাছে থাকায়ই সুখ?
_____________________________

চলে যাবার গল্প

প্রথম বর্ষে পড়ার সময়েই বাংলা চার সংখ্যা’র আকৃতি নিয়ে মেয়েটি শাটল ট্রেন থেকে নেমে শিহাবের দশদিক আন্দোলিত করে ভালোলাগায় ভাসিয়ে নিয়ে গেলো! এর মাত্র ছ’মাস পরেই আরেক বিষণ্ণ বিকেলের ট্রেনে শিহাবের ন’দিক তমসাচ্ছন্ন আঁধারে ডুবিয়ে সে একবারও পিছু না চেয়ে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের নিঃসংগ যাত্রী হলো।

আর ফিরে এলো না শিহাবের কাছে.. ওর প্রিয় সবুজ পাহাড়ী ক্যাম্পাসটিতে। পাশাপাশি বসে থাকার নিশ্চুপ মৌণতার নিঝুম নিমগ্ন সুখের অনুভবে প্রগলভ হওয়া হয়ে ওঠে নাই কখনও আর। এক জীবন কতটুকু সময়?

একটা গল্প রয়েছে নির্ঘাত। দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর পর আরেক মিলনমেলায় এসে একই জায়গায় অন্য আরো অনেক কিছু নস্টালজিয়ায় ভোগালেও, আজও মেয়েটির সেই চলে যাবার গল্পটা শিহাবের জানা হলো না।

একটা শেষ না হওয়া গল্পের শেষটা জানতে আজও ব্যাকুল শিহাব। সব দিক খালি.. অচেনা আমি আর তুমি।

কিন্তু.. কোথায় তুমি?

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

6 thoughts on “মামুনের দুইটি অণুগল্প

  1. দুটি দারুণ অণুগল্প মহ. আল মামুন ভাই। শুভেচ্ছা রইলো। :)

  2. শিহাব আমার ভীষণ পছন্দের একটি চরিত্র। শিহাব সংশ্লিষ্ট যে কোন লিখাই আমার কাছে ভালো লাগে। দুটো অণু লিখা পেয়ে আনন্দিত হলাম মি. মামুন। :)

    1. আপনার ভালো লাগা শিহাব এবং লেখক-উভয়ের জন্যই আনন্দদায়ক। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।