লেখকেরা কখনও কখনও ‘মৃত লেখকজীবন’ রোগে আক্রান্ত হন। তখন একটা শব্দও আর নিজের মতো লেখা সম্ভব হয় না। শব্দ উঁকি দিলেও সামনে আসেনা কিংবা অনুভবের ক্রম অনুসারে নিজ নিজ জায়গা দখল করে না।
এসময় পুরনো লেখাগুলি থেকে নিজের প্রিয় গল্পগুলি আবার পোষ্ট করা যেতে পারে। নিজেই নিজের লেখা পড়ে আবারও নতুন করে লিখতে শুরু করা।
________________________________________________
‘এই বসন্তে তুমি ভালো থেকো’ কাব্যগ্রন্থটি মিলিকে এনে দিয়েছিলো বইমেলা থেকে। দু’টি বই-ই কবিতার। মেলায় গিয়ে একেবারে খালি হাতে আসবে? তাই… নেয়া। ওর একটি এখন হাতে মিলির।
বিকেল বেলাটা মিলি বাবুদেরকে নিয়ে ব্যস্ত। সবসময়েই। এভাবেই দেখছে সে। বারান্দার বাইরেটা বাউরি বাতাসে উন্মাতাল।
এখন তো বসন্ত। মন নিরবে বলে। মিলির চুল উড়ছে। বাতাসে। বারান্দায় আসে শিহাব। মিলি তাকায় একপলক শিহাবের দিকে। আরেক পলক হাতের বইটির দিকে। এরপর আবার.. ওর নিজের দিকে। আপন মনে। একা একা।
ফিরে আসে শিহাব। ড্রইং রুমে। শিহাব ও.. একা একা।
দীর্ঘশ্বাস.. লুকাতে চায় কি?
মিলি কি চায়? শিহাব কি জানে?
একসাথে থাকার আজ কতগুলি বছর পার হলো.. ভাবে একবার। মনের একটা অংশ সংখ্যাগুলিকে অদৃশ্য ডিসপ্লেতে দেখালেও, অপর অংশটুকু বিস্ময়কর ভাবে নিশ্চুপ থাকে। নির্লিপ্ততা? অনাগ্রহ?
হবে হয়তো।
শেষে.. সম্পূর্ণ মনের মালিক শিহাব আগ্রহ হারায়। কবিতার ভিতর হারিয়ে যেতে যেতে মাত্র একবার নিজেকে ছোট্ট একটি প্রশ্ন করে,
-আজ মিলিকে নিয়ে পড়লে যে বড়?
…
মিলি বারান্দায় বসে নীলাভ মেঘগুলির দ্রুত আকাশটিকে দখল করাটা দেখছিলো.. মানুষটা এসেও বসলো না একটু.. পাশে। বসতে পারতো তো?
– ডেকেছিলে কি? তুমিও তো.. পারতে.. ডাকতে?
মনের প্রশ্নে কিছুই হয়না মিলির। এতগুলি বছর একসাথে কাটিয়েও কেনো এতো ডাকাডাকি? এই অনুভবটুকু জাগে কেবল। সে কি চায়, শিহাব কেনো আজও বুঝে না!?
-তুমি বুঝো?
একঝলক উন্মাতাল বাতাস চোখে-মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ায় চোখ বুজে আসে মিলির। তাই মনকে চোখ রাঙ্গাতে পারে না। চোখ খুলবার আগেই ভিতরের রুম থেকে শিহাবের ভিতরের অন্য আরেক শিহাবের উদাত্ত গলার আওয়াজ ভেসে আসে,
” আমাকে ছুঁতে পারোনি তুমি কখনও, আমিও না তোমাকে,
একটু উষ্ণতার আশায় ত্রিশ বছর কাটিয়ে অবসন্ন আমি
এখন স্মৃতির উঠোনে দাঁড়িয়ে ছুঁয়ে দেই তোমাকে কারণে
অকারণে, এসবে আর কারো কিছুই যায় আসেনা এখন!” *
দুই বাবু ওদের বাবার গলার আওয়াজ পেতেই এক ছুটে ভিতরের রুমে।
মিলি সেই একা একা। নিজের ঘরের ভিতরে বাহিরে..সর্বত্র.. একা একা।
দমকা বাতাস মিলির চুল নিয়ে খেলা করে। ওকে ছুঁয়ে যায়.. উষ্ণ করে? বাতাস কি শিহাবের হাত? যাদুকরী!
মিলিরা একা একা.. শিহাবরা থেকেও?
জীবন কি তবে অনুভূতির ভাঙ্গাচুরা খেলায় যার যার ভূমিকায় অভিনয় করার এক প্ল্যাটফরম!
হয়তো..।
এইতো জীবন।
সবাইকে নিয়েও একা থাকা?
_________________________________________
* কবিতা: ত্রিশ বছর পর- কাব্যগ্রন্থ: এই বসন্তে তুমি ভালো থেকো
কবিঃ নাসির আহমেদ কাবুল
"লেখকেরা কখনও কখনও ‘মৃত লেখকজীবন’ রোগে আক্রান্ত হন। তখন একটা শব্দও আর নিজের মতো লেখা সম্ভব হয় না। শব্দ উঁকি দিলেও সামনে আসেনা কিংবা অনুভবের ক্রম অনুসারে নিজ নিজ জায়গা দখল করে না।
এসময় পুরনো লেখাগুলি থেকে নিজের প্রিয় গল্পগুলি আবার পোষ্ট করা যেতে পারে। নিজেই নিজের লেখা পড়ে আবারও নতুন করে লিখতে শুরু করা।"
এমন পার্টিসিপেশন বা রিমেক প্রত্যেক লিখকেরই করা উচিত মি. মামুন। অভিনন্দন।
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভেচ্ছা…

লিখাটি আমার সুপরিচিত। দারুণ মহ. আল মামুন ভাই।
জি কবিদা'। পুরনো লেখা এটি। ধন্যবাদ আপনাকে।

বর্ণনা ভীষণ প্রাণবন্ত। যেটা আপনার লেখায় বরাবরই পাই প্রিয় গল্প দা।
ধন্যবাদ রিয়া দিদি। আপনার অনুভব প্রেরণাদায়ক।

এখন তো বসন্ত। মন নিরবে বলে।
জি, এখন বসন্ত। আপনি কি অনুভব করেন?
ধন্যবাদ। স্বাগত আমার ব্লগে।