অণুগল্পঃ প্রেম তো ছিল না ছিল শুধু প্রহসন!
_____________________________________________
একজন চিত্রশিল্পী ‘ন্যুড’ চিত্রকর্মকে যেভাবে নিজের দক্ষতায় অসাধারণ শিল্পকর্মে রুপ দিতে পারেন, একজন গল্পকারও অক্ষরের সাথে অক্ষরের পরিমিত মাত্রার মিলনে, আপন দক্ষতায় অনুভবের চাদর পরিয়ে, নগ্নতাকেও শিল্পে পরিণত করতে পারে। আমিও অনেক আগে এমনই এক অপচেষ্টা করেছিলাম। গল্পটি শেয়ার করছি আরো একবার…
_______________________________________________
একটা ছায়া ক্লান্ত হয়ে অপর ছায়ার উপর থেকে নেমে আসে। বাউরি বাতাসে উষ্ণতা পাক খেতে খেতে ঘন হয়… শ্রান্তিতে ভেঙ্গে পড়ে সঙ্গিনীর পাশেই একদণ্ড বিশ্রামে শান্তি খোঁজে যেন মৌণ সময়। আলতো ছুঁয়ে থাকার ভেতরে কি থাকে? সম্পর্কহীন সম্পর্কের মাঝে ভালোলাগা কতটুকু?
আলতো স্পর্শের স্মৃতি হয়তো কারো সবটুকু অনুভুতিকে আচ্ছন্ন করে রাখে এক সেকেন্ড; শেষে বিদ্যুতের মতো ঝাঁকি দিয়ে শরীরের ভিতর দিয়ে কোথাও চলে যায় … কোথায় যায়?
‘ভালোলাগা সুন্দর,
ভালোবাসা আরো সুন্দর,
কারণ –
প্রেম আসে
ভালোবাসায় পুড়ে পুড়ে ..’ – কে যেন একদিন বলেছিল শিহাবকে!
সেই কারো হৃদয়ের উজ্জ্বল আলোয় স্পর্শের নাগালের বাইরে থেকে দেখা ঝিলিক দিয়ে ওঠা হাসিমুখ … বড্ড মনে পড়ে হঠাৎ! কি যেন পর পর স্পষ্ট হতে হতে অস্পষ্ট হয়ে মিলিয়ে যায়। চেনা কিছু ছিলো । চোখ? মুখ? রঙ? ভঙ্গি? ভঙ্গি ! কার মতো !!
কণার!!!
চিন্তাটা বিবশ করে তোলে ওকে। পাশের সম্পর্কহীনার ক্ষীণ কটিতে এক হাত, বেডরেষ্টে অন্য হাত স্থির হয়ে থাকে শিহাবের। আসলে মাঝে মাঝে কোনো হিসাব নিকাশ ছাড়াই দু’জন মানুষ দু’জনের জন্য তীব্র টান অনুভব করে। ঠিক কী কারণে, বুঝা সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় শরীরের যে চাহিদাটুকু তৈরি হয়, তা বুঝা সহজ বলে বোধ হয় মানুষ চট করে শরীরেই জড়িয়ে যায়। আর যত তারা শরীর খুঁড়ে সত্যগুলি খুঁজতে থাকে, তত দিশাহারা হতে থাকে মনটার অসহায়ত্ব দেখে । সে যে কী পেলো না, তা জানার জন্য মাথা আছড়াতে থাকে ঢেউয়ের মতো হাহাকারে; নির্দয় বোধ কিছু বলে না ; ঢেউ গুলি আছড়ে পড়ে ফেনা হয়ে যায় – আবার ঢেউ হয়ে ফিরে আসে – আবার …এভাবেই মানুষ বেঁচে থাকে!
পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকা এক ছায়া এজন্যই কি অপর ছায়ার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে? এই ঝুঁকে পড়ায় ভালোলাগা থাকলেও সেখানে ভালোবাসা ছিল কি? তাই প্রেমও ছিল না… একটুও! ছিল কেবল জৈবিক তাড়নায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রহসন… তৃপ্তির ভান করার মূর্ত উপহাস!
অতৃপ্ত এক ছায়া তৃপ্তির মহাসাগরে ভেসে যাওয়ায় ব্যকূল ছিল… শিহাব হারানো ছায়াসঙ্গিনীর খোঁজে নিজেও ভেসে বেড়াচ্ছিল… অন্দরে… বন্দরে.. অন্তরে অন্তরে… নিরন্তর! অতৃপ্ত রমনী তাই ভেসে বেড়ানো শ্যাওলা ভেবে শিহাবকে আঁকড়ে ধরে। শিহাবও হারানো সঙ্গিনীর চেহারার সাথে কিছু কিছু মিল খুঁজে পেয়ে রমণীর তৃপ্তির উপকরণ হয়।
এভাবেই ছায়ারা সঙ্গিনী হয়ে উঠে… এভাবেই পরিচিত রমনী অপরিচিত কায়ায় ভর করে হৃদয়ের কার্ণিশে ঝুলে থাকে। কিন্তু তারা কায়ায় তৃপ্ত হতেই এই দোদুল্যমান জীবন বেছে নিয়েছে। তাই হৃদয়ের খোঁজ নেবার একটুও প্রয়োজন মনে করে না।
এক হৃদয়বান ছায়া, কায়া হারিয়ে এক ছায়াসঙ্গিনীর কায়ায় মিশে যেতে আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। একসময় ঢেউ হয়ে যায়… ফেনা হয়… আবারো ঢেউ… এভাবেই বেঁচে থাকা! সেখানে ভালোলাগা ভালোবাসায় রুপ নিয়ে প্রেম হয়ে উঠে না। এখানে কেবলি প্রহসন.. আর নৈঃশব্দের মূর্ত উপহাস!
#মামুনের_অণুগল্প
যেখানে শিহাব সেখানে গল্পকারের অনুভূতির সাথে নিজের অনুভূতিও আমি মিশ্রণ করে ফেলি। গল্পের ফরমেট চমৎকার মি. মামুন। অভিনন্দন জানালাম।
আপনার অনুভব সবসময়েই আমার লেখায় প্রেরণা। অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাইয়া। শুভেচ্ছা…

প্রেম তো ছিল না ছিল শুধু প্রহসন!
শিহাব কাহিনী পড়লাম মহ. আল মামুন ভাই।
সাথে থাকার জন্য নিরন্তর শুভেচ্ছা প্রিয় কবিদা'। অনেক ভালো থাকুন কাছের সবাইকে নিয়ে।

গল্পটি পড়লাম প্রিয় গল্প দা।
আপনাকে ধন্যবাদ রিয়া দিদি। শুভেচ্ছা…

আপনি যথেষ্ঠ ভালো লেখেন মামুন ভাই।
ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় বোন। আপনার অনুভব আমার লেখার প্রেরণা হলো। শুভেচ্ছা…
