মামুনের_অণুগল্প : কাছে_পাবোনা_জানি_তোমাকে_তো_আর।
তখন খুব দুরন্ত ছিলাম। দলবেঁধে রাস্তার মোড়ে মোড়ে কিংবা গার্লস স্কুলের গেটের রাস্তায় গল্প-আড্ডায় বেশ সময় কেটে যেত। স্কুল ফেরত মেয়েদের দেখে সিটি দেয়াটা বেশ রপ্ত হয়েছিলো। আর নতুন সিগ্রেট ফুঁকতে শিখেছিলাম। সিগ্রেট ফুঁকা একজন রোমিও হয়ে কল্পনার জুলিয়েটের পিছু ধাওয়ায় আমাদের সময় কিভাবে যেন কেটে যাচ্ছিলো। সবাই বখাটে বলতো আমাদের। আর আমি ছিলাম বখাটেদের দলনেতা।
একদিন সেই বখাটে দলনেতার সামনে দিয়ে এক এলোকেশী, নিজের বুকের ওপর দু’হাত ভাঁজ করে, গলির মাথা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে যে কৃষ্ণচূড়া গাছটি ছিলো, ওটার নীচে এসে দাঁড়ায়। কেন জানি হাসছিল সে। তার হরিণী চোখের ওপর এক গোছা উড়ন্ত কালো চুল! শুভ্র দেহে যেন আঁধারের টিপ! এমনই মনে হয়েছিলো সেদিন আমার।
সেদিনই ওড়নাবিহীন সেই তরুনী ঘি ঢেলে দিলো আমার বখাটেপনার উচ্ছলতার আগুনে।
এরপর এক অন্য ইতিহাস…
গলির রাস্তা ধরে পায়ে পায়ে ফিরে চলি… অন্য এক আমাকে দেখি। হাতের সিগ্রেট আনে মুখে বিস্বাদ। গলিগুলো বিস্মৃতির আড়ালে লুকোয় নিঃশ্বাস। সিটিগুলো এখন আর বাজে না মোটেও। অপেক্ষায় বন্ধুরা সব ফেলে দীর্ঘশ্বাস।
আর আমি?
চোখ খুললেই দেখি সেই এলোকেশী, যার তীর্যক চাহনিতে ভাসে অণুক্ষণ রহস্যময় হাসি। হৃদয়ে সুঁই ফোটানো ব্যথায় ভেসে ভেসে অনুভূতির বালুচরে জমে থাকা কষ্টগুলো, একসময় নষ্ট হতে হতে রুপ নেয় নীল অপরাজিতায়!
একদিন সে নিজেই এসে আলাপ করলো। সে এক অসাধারণ অনুভব আমার! সেদিন কত কথা বললো সে। আমি কেবল ওর ঠোঁটের কম্পন দেখছিলাম, শুনছিলাম না কিছুই। ওর শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ, আর ওকে ঘিরে আমার কল্পনার বল্গাহীন ঘোড়া ছুটছিলো অজানা সে কোন তেপান্তরের পানে।
একটা সম্পর্ক তৈরী হলো হঠাৎ করেই। আমাদের দেখা হতো রোজ। কথা হতো। দু’একটা চিঠিও আদান-প্রদান হলো। তখন তো আর মোবাইল ছিলো না। তাই কথাবার্তা সামনাসামনিই যা হতো। আর হতো মনে মনে। যখনই ভাবতাম ওর কথা, মুহুর্তে সে সামনে হাজির। পড়ালেখা মাথায় উঠলো।
তারপর একদিন…
সেই চিরপরিচিত কৃষ্ণচূড়ার নিচে দেখি তাকে ঢেউ খেলানো চুলের এক সুদর্শনের সাথে। মটর বাইকে চড়ে প্রচন্ড গতিতে ধাবিত হয় ওরা আমার হৃদয় মাড়ানো লাল রাজপথ ধরে। সেদিনও সে ওড়নাবিহীন, ভাঁজ করা হাতের নীচে ওর সেই সম্পদটুকু সেদিনও উন্মুক্ত। আর লিলুয়া বাতাসে অস্থির কালো কেশে ঢেকে থাকা একটি চোখ। আমার সামনে দিয়ে সে সেই চোখটি সহ হারিয়ে গেলো… আমি গলির মাথায় দাঁড়িয়ে দূর দূর পর্যন্ত ওদের ক্রমশঃ ক্ষীণ হয়ে আসা বাইকের টেইল লাইটের পানে চেয়ে রইলাম দীর্ঘক্ষণ।
এরপর কি হলো?
আবারো সেই চেনা বন্ধুদের সাথে সিগ্রেট হাতে সেই গার্লস স্কুল.. উল্লসিত গলিতে গলিতে সিটির তীব্রতায় চমকে ওঠে কিশোরীরা! আর চমক উপভোগরত এই আমি… সেই আমি, যার হৃদয়ে সুঁই ফোটানোর ব্যথা। ভালোলাগা পুড়ে পুড়ে প্রেম না হয়েই দীর্ঘশ্বাসের ছাই হয়ে বাতাসে মিলিয়ে গেলো। তারপরও কোনো কোনো বিরহী বিকেলে বিষণ্নতায় পুড়ে যাই আমি। সিগ্রেটের শেষাংশের মতো ক্রমশঃ নিস্তেজ হতে হতে একটা ভাবনাই দোলা দিয়ে যায় আমায়,
‘এক জীবন আসলে কাউকে ভালোবাসার জন্য খুবই অল্প সময়।’
আহ জীবন!
হায় প্রেম!
‘প্রেম বড় মধুর… কভু কাছে কভু সুদূর।’
কোনো কোনো বিরহী বিকেলে বিষণ্নতায় পুড়ে যাই আমি। সিগ্রেটের শেষাংশের মতো ক্রমশঃ নিস্তেজ হতে হতে একটা ভাবনাই দোলা দিয়ে যায় আমায়,
‘এক জীবন আসলে কাউকে ভালোবাসার জন্য খুবই অল্প সময়।’
আহ জীবন!
হায় প্রেম!
‘প্রেম বড় মধুর… কভু কাছে কভু সুদূর।’
হ্যা! প্রেম বড় মধুর ভাইয়া। জীবন প্রেমময়!
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা..

দারুণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন আল মামুন খান। এমনিতে আপনার অণুগল্পের ভক্ত আমি আগে থেকেই। শুভেচ্ছা জানবেন ভাই।
আমার লেখায় প্রেরণা হলো তোমার অনুভব প্রিয় ভাই। ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা..
কিশোর কুমারের অবিষ্মরণীয় এই সুরের রেশ মাথায় গেঁথে গেলো মহ. আল মামুন ভাই। ভালোবাসা।
অসাধারণ এক গান প্রিয় কবিদা'। এক 'মাস্টার পিস'! ধন্যবাদ দাদা। শুভেচ্ছা..

সুন্দর অণুগল্প পড়লাম প্রিয় গল্প দা। ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ রিয়া দিদি। ভালো থাকুন সবসময়। শুভেচ্ছা..
অণুগল্পটি পড়লাম মামুন ভাই।
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা..
