মামুনের অণুগল্প : সেতু

2757

★ অনেক দিন পরে ওরা দু’জন একসাথে টিভি দেখছে। কণা আর শিহাব। এখন তো ভারতীয় চ্যানেলগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য। আর শিহাবের পরিবারে বউ আর ছেলেমেয়ের। এদের ভিড়ে কদাচিৎ নিজের দেশীয় চ্যানেলগুলোতে পাঁচ দশ মিনিট একটু ঢু’ মারতে পারলেও নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান ভাবে শিহাব।

স্টার প্লাস নামের একটি চ্যানেলে সিরিয়াল চলছে। একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে কেন্দ্র করে তাঁর স্বামী এবং স্বামীর পরিবারের বাকী সদস্যদের বউটির প্রতি তাদের কর্মকাণ্ড দেখাচ্ছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ কণা বলে,
– আমার ভাগ্যে এমন আন্তরিকতা জুটলো না । দু’বার মা হলাম, সময়গুলো এমনি এমনিই চলে গেলো। অবহেলায় আর অনাদরে।

কণা কি বুঝাতে চাইছে শিহাব ভালোভাবেই উপলব্ধি করে। অন্য সব বিষয়ের মতো যে কোনো প্রসঙ্গে শিহাবের মৃত বাবা-মা কে টেনে না আনলে কণার দিন কেনো জানি ভালো যায় না। এক সাথে থাকলে কোন্ পরিবারে একটু আধটু টক্কর কিংবা মনের অমিল হয় না? কিন্তু সেগুলোকে সামনে এনে বার বার কাউকে আঘাত করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? শিহাব ভাবে। আজ কেনো জানি ওর মাথার তাঁর ছিড়ে যায়। প্রচন্ড এক ক্রোধ ওকে পেয়ে বসে। আজ কিছু একটা ঘটেই যেতো। ঠিক ঐ মুহুর্তে যদি ছোট মেয়ে রুপা বাবার কাছে না আসতো।

মেয়ে হুবহু মায়ের কপি। উপরের ঠোঁটের ডান পাশের তিলটিও কণার মত। মেয়েকে দেখে ধীরে ধীরে শান্ত হয় শিহাব। মেয়ে বাবার পাশে বসে। বাবার পাতলা হয়ে আসা চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। কেমন ঘুম ঘুম অনুভবে একটু আগের ক্রোধের শেষ অংশটুকুও জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। কণার দিকে ফিরে তাকায়। তিল সমৃদ্ধ ওর তিলোত্তমার প্রতি কেন জানি প্রচন্ড এক ভালোবাসা জেগে ওঠে। টিভি পর্দার দিকে নিবিষ্ট কণার ঝগড়াটে মুখচ্ছবিও শিহাবের আরো ভালো লাগে। অথচ একটু আগেই কল্পনায় ওকে মেরে ধরে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছিলো।

ভাগ্যিস রুপা এসেছিল। সংসারে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখতে কাউকে না কাউকে তো নিরব হতেই হয়। শিহাব সব সময়ে নিরবতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু কতক্ষণ এবং কতবার? তবে যখনই সীমা পার হয়ে এপার ওপার কিছু একটা করার ভাবনায় পেয়ে বসে, তখন মেয়েদের অস্তিত্ব টনিকের মতো কাজ করে। শান্ত করার এক আশ্চর্য নিদ্রাকুসুম তেলের মতো। ওদের দু’জনের মাঝে মেয়ে দু’জন সেতুবন্ধনের কাজ করে।

মামুনের ৫০টি অণুগল্প // গল্প নং-৫

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

2 thoughts on “মামুনের অণুগল্প : সেতু

  1. অণুগল্পটি পড়ে মুগ্ধ হলাম প্রিয় বরেণ্য মি. মামুন। অসংখ্য ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার মুগ্ধতা লেখার পাথেয় হলো জানবেন।

      ভালো থাকুন সবসময়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।