মোহের পাণ্ডুলিপি

হে প্রণয়ের ঝড়, তালুর ম্যাজিকে নেমে এসো
আবহাওয়াবিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে,
অলৌকিক প্রলয়ে ভাসাও ক্ষুধার্ত শহর।

লণ্ডভণ্ড করো, কপাল জুড়ে ধ্বংস আঁক
চোখের মাঝে তুলো ঘুমের সারেগামা।

কে শুনে এ আকুতি! আর তাই ঘুম বাদ দিয়ে একলা একলা হাঁটি,নির্ভাবনায়। মাঝে মাঝে ভ্যাপসা গরম এসে সঙ্গী হয় ক্ষণিকের। বুঝতে পারি আমি এবং আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো সকলে আলাদা আলাদা করে বাঁচি। ডাহুক ডাকা রাতে ঝরা পাতাদের মর্মরে বিলিয়ে দেই সর্বস্ব। যেমন করে বাহাড়ী রঙেরা বিলিয়ে দেয় নিজেদের অন্ধকারে। আমি বলি নিবিড়ে গ্রাস করে নেয়া তোমরা যাকে বলো আত্মসমর্পণ! তোমাদের কথা শুনে হঠাৎ থমকে যাই, তারপর আবার নিজেই বলে উঠি

বিশ্বাস করো তুমি, বিশ্বাস করো তোমরা
আমি কেবল এসেছি মায়ার জোগাড়ে,
তোমাদের হরেক বর্ণের ত্বকের আড়ালে
লুকিয়ে থাকা ঘূর্ণায়মান সেই চাকার সন্ধানে
এর চেয়ে আর বেশি কিছু ভেবো না যেন!
চাইলে ছড়াতে পারো বিষাক্ত শেকড়।

যতোবার মরি ঠিক ততোবার বেঁচে উঠি
কেবল প্রতিবার মৃত্যুর আগে,
ক্রুশকাঠে কষি গোপন সরল।

এরপরই ভোর এলে পালটে যায় দিনলিপির পৃষ্ঠা। আলোতে ঢেকে দিয়ে রাতের অন্ধকার, সামাজিক রোদে খুঁজি বিরল উষ্ণতা। হাহাকার ভুলে গল্পকার হয়ে বেরিয়ে পড়ি চরিত্রের সন্ধানে। নকশীকাঁথার মতো, মিহি সেলাইয়ে বুনে যাই প্রতিটি সময়ের সংলাপ; গড়ে তুলি মোহের পাণ্ডুলিপি। কারা যেন এসে সেই ভোরে কড়া নাড়ে। তাদের তখন অস্ফুটে বলি

দূষিত জলে সেরে নিয়ে শেষের স্নান
আজই হারিয়ে যাব দরদী আগুনে,
তোমরা বরং কাল এসো, কড়া নেড়ো!

কি অদ্ভুত মায়ায় মৃত্যুর কথা ভাবতেই বেঁচে উঠি, শিরদাঁড়া থেকে খসে পড়ে বিউগলের সুর। ঠিক তখনই টের পাই আমি এবং আমার মাঝে সৃষ্টি হওয়া এক দূরত্বের সেতু। মৃত্যুর কথা ভেবেই হয়তো সফেদ পৃষ্ঠায় আঁচড় কেটেছিলাম কখনো

আজকাল সাধ করেই সব ভুলে যাই;
শিলাঘাতে খসে পড়া পলেস্তারার দিন,
ছয় জানালা খোলা রেখে, চৌকাঠ পেরুলে-
বাতাসে কবে উড়েছিলো লিখিত ভাষণেরা,
কোন চায়ের কাপে ভিড়েছিলো চুমুকের পয়গাম।
কতটুকু পারি, কতটুকু আর লুকানো যায়!
শাওয়ারে বেড়িয়ে আসে আস্তিনে লুকানো দাগ।

আবারো তোমরা আত্মসমর্পণ বলছো? বলেইতো দিয়েছি এ যেন নিবিড় গ্রাস। তোমরা পারোও বটে।

খালে-বিলে, ফসলের মাঠে নেমে এলে বন্যার জল-
তোমরাই তোলপাড় বাঁধাও বেশি,
সমুদ্র ভেবে মুহূর্তেই হয়ে উঠো স্বভাব পর্যটক,
বন্যার কাছে তুলে ধরো ঢেউয়ের দাবী!

কতকিছুই না খুঁজো তোমরা এই অবসরে,
বালুকা সন্ধ্যায় ভেসে আসুক ভেঁপুর টান,
তীরঘেঁষে গজিয়ে উঠুক ঐতিহাসিক ঝাউবন
একটু আড়ালও চাই; চুম্বন ছাড়া কি জাগে শিহরণ!

ধীরে ধীরে তোমাদের স্লোগান বাড়ে; তখনো-
বধির দেয়ালের মতো আমি দাঁড়িয়ে থাকি।
আমার চেয়ে কেই’বা আর বেশি জানে;
বন্যার জল নেমে গেলে বাঁকেরাই কেবল মাথা তুলে!

তাই বলে আক্ষেপ নেই কোনো। আকাশে দোল খায় প্রগাঢ় অন্ধকার, কানাগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে অচল সুর। আনন্দের পায়ে শেকল দিয়ে, চেনামুখগুলো অচেনা হয়েছে সেই কবে! অথচ আশ্চর্য এক বায়না ধরে বালিয়াড়িতে এখনো পড়ে আছে এক বিকালের সমস্ত আয়োজন। যখন ফিকে হয়ে আসে দিনের মলাট, আয়োজনের দীর্ঘ তালিকা হয়ে উঠে রাতের বেসাতি। আর এভাবেই নীলের বিদ্রোহে কখনো কখনো হয়ে উঠি জুয়াড়ি কখনো’বা অবুঝ পথিক ।

অন্ধকারে আলো খুঁজি না
বরং আরো গাঢ় হও – হে পথ
কালো পোশাকেই না’হয় নিজেকে মোড়াও
সাথে মোড়াও ভাসমান জনপদ।

আমিতো পথিক হয়েছি, কোথায় হে পথ
নরম মৃত্যু ঘুম পাড়িয়ে রেখেছো ধূলোবুকে?

17 thoughts on “মোহের পাণ্ডুলিপি

  1. বাহ্। কী অসাধারণ ভাবেই না লিখাটিকে সাজিয়েছেন। খুউব সুন্দর।
    এমন পরিপাটি পোস্ট দেখলে কার না ভালো লাগে। গ্রেট। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. আপনি বললে সাহস পাই শ্রদ্ধেয় জামান ভাইয়া। সতত সুন্দর থাকুন।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    2. আমি বরাবরই বলি … আপনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান।
      শব্দনীড়কে আরও আরও বেশী করে ভালোবাসুন স্যার। শব্দনীড় কৃতজ্ঞ থাকবে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    3. এভাবে বলে লজ্জা দিবেন না শ্রদ্ধেয়। এই নীড়কে অস্বীকার করার মত না। দায়তো অবশ্যই রয়েছে আমারও। দোয়া করবেন, কিছু করার পরিকল্পনাটা যাতে সম্পন্ন করতে পারি শীঘ্রই।

  2. অন্ধকারে আলো খুঁজি না
    বরং আরো গাঢ় হও – হে পথ
    কালো পোশাকেই না’হয় নিজেকে মোড়াও
    সাথে মোড়াও ভাসমান জনপদ।

    আমিতো পথিক হয়েছি, কোথায় হে পথ
    নরম মৃত্যু ঘুম পাড়িয়ে রেখেছো ধূলোবুকে?

  3. অসাধারণ উপস্থাপন।
    অনবদ্য আপনার লেখার হাত।
    পড়ে মুগ্ধ হলাম।
    শুভেচ্ছা নিবেন।

  4. ‘মোহের পাণ্ডুলিপি` মোহ জাগিয়ে দেয় অনায়াসে কবি!
    যে নেশার মোহে রেখে যাই অদৃশ্য অনুভূতি…
    শুভেচ্ছা জানবেন সতত।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।