প্রহেলিকা এর সকল পোস্ট

প্রহেলিকা সম্পর্কে

লিখি, পড়ি, ভালবাসি কবিতা!

গল্পের শুরু

শুরুর কথা ভাবি। সেই দিনইতো শুরু হয়েছিলো, যেদিন সূর্য দেবতা ডানা মেলেছিলো আংশিক! যুঁথিবদ্ধ আলো থেকে তুলে এনে বর্তমান; শীতের শেষে পুরনো ওমবস্ত্রের মতো বেচে দিয়েছিলাম সমুদয় ডাকনাম। বেচে দিয়েছিলাম আমিত্বের সুতোয় বোনা সৌখিন জামা আর পরিত্যক্ত চিলেকোঠা। সেদিনইতো শুরু হয়েছিল, যেদিন থেকে আমার আর কোনো ডাকনাম নেই, মাছ বাজারের আঁশটে ঝুড়িটির মতো পড়ে থাকি প্রতিটি মধ্যরাতে। এভাবেই ইথারের ধূর্ত ইশারায় একের পর এক এঁকে চলি প্রতিটি দিনের মৌলিক উড়াল।

না, আমি আজ শুরুর গল্প বলতে আসিনি, এসেছি তোমাদেরকে বিদায়ের কথা জানাতে। আমি আজ আকাশের একমাত্র বার্তাবাহক। জলের খামে পুরে দেয়া প্রতিটি বার্তা পৌঁছে দিতে হবে মাটির গহ্বরে। সেগুনবনে, জোড়াজোড়া সবুজ পাতায় পৌঁছে দিতে হবে নীলের আবেদন। শাহরিক জানালা পেরিয়ে কখনো যেতে হবে যুগল দীঘির পাড়ে কখনো বা অবিশ্রাম জলপ্রপাতে।

অভিযোজন

চলো আলোকে শাসাই
আঁধারের কাছে ফিরে যাই
নরম জলে ভেসে আসছে আদিম তরবারি
চলো স্বেচ্ছায় খুন হয়ে যাই!

অনেকদিন যাইনি কল্যাণী বাগানে,
গভীর থেকে আরো গভীরে
যেখানে গ্রীবাদেশ থেকে বয়ে গেছে মদিরার সম্পান।

খুলে ফেলো, সোনালী চুড়ি
উদোম বুকে সেলাই করা লেবুর ঘ্রাণ…
লাজুক প্রাসাদের সামনে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে চিরল কোমর,
এসো ধরা পড়ার আগেই আজ স্বেচ্ছায় খুন হয়ে যাই।

শব্দনীড় ই-ম্যাগ: নববর্ষ ১৪২৪ সংখ্যায় আপনার লিখা দিন

emag1424

সুপ্রিয় ব্লগারগণ

জীবনের ধর্মানুযায়ী কখনো কখনো সময়ের বৈরিতার শিকার আমাদের হতেই হয়। তবে বৈরিতার করাল গ্রাসে হারিয়ে না গিয়ে কোনো এক জ্বলজ্বলে নব প্রভাতে নতুন করে আবারো সবকিছুকে শুরু করাই হয় সফলতার অন্যরূপ। প্রতিটা জীবনের সাথেই এই সময়ের বৈরিতা অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। তেমনি করে, শব্দনীড়ও এমনি এক সময়ের বৈরিতার শিকার হয়ে মাঝখানে কিছুটা সময় প্রায় নিশ্চল হয়ে পড়েছিল। তবে হারিয়ে যায়নি, সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে নব উদ্যমে আবারো শুরু করেছে পথচলা। শব্দনীড়ের সকল লেখক পাঠকের জন্য এ যেন পরম পাওয়া। বাংলা ব্লগগুলোর এমন দুর্দিনেও অসীম সাহসিকতার সাথে শব্দনীড়ের এই সফলতাকে অভিনন্দন জানাই।

সকলের পদচারণায় যখন মুখরিত এই নীড় তখন আরও একটি সুসংবাদ নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের সামনে। এইতো কিছুদিন হলো; ঋতুর আবর্তে এলো প্রাণের বৈশাখ। আর এই বৈশাখের সকলের আনন্দকে স্মৃতিতে একই সুঁতোয় গেঁথে রাখার প্রয়াসে প্রাণের এই শব্দনীড় হতে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে …
শব্দনীড় ই-ম্যাগ: “নববর্ষ ১৪২৪ সংখ্যা”

Divider 7a

শব্দনীড়ের সকল নিবন্ধিত ব্লগার এই লিটলম্যাগের সংকলনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আসুন সকল ব্লগারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আরো প্রাণবন্ত করি তুলি এই আয়োজনকে। ই-লিটলম্যাগ সম্পর্কিত বিস্তারিত উল্লেখ করা হলোঃ

search_btn* লেখার বিষয়বস্তুঃ উন্মুক্ত
aaa_2

stock-vector-tick-sign-36206047 * লেখা জমা দেবার বিভাগসমূহঃ
aaaaa2013

red ০১. অনুগল্প।
red ০২. ছোট গল্প।
red ০৩. গল্প।
red ০৪. রম্যরচনা।
red ০৫. কবিতা।
red ০৬. ছড়া ও পদ্য।
red ০৭. কবিতা বা সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ।
red ০৮. শিশুতোষ সাহিত্য।
red ০৯. ভ্রমণ কাহিনি।
red ১০. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্মৃতিকথা।
red ১১. চিঠি।

Prog * তিনটি বিভাগে একটি করে মোট তিনটি লেখা জমা দিতে পারবেন।
Prog * লেখার লিংক মন্তব্যের ঘরে উল্লেখ করে লেখা জমা দিতে পারবেন।
Prog * ই-মেইলের মাধ্যমেও লেখা জমা নেয়া হবে।
Prog * ই-মেইলঃ [email protected]

stock-vector-tick-sign-36206047 *লেখা জমা দেয়ার শেষ তারিখঃ ১০ই মে ২০১৭।

তবে আর দেরি কেন! লিটলম্যাগকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রকাশ করে ফেলুন আপনার সেরা লেখাটি। সকলের জন্য অশেষ শুভকামনা এবং ধন্যবাদ। শুভ ব্লগিং।

story

একটি প্রস্তাবনা

আমরা সকলেই অবগত আছি, সময়ের বৈরিতাকে পাশ কাটিয়ে, নব উদ্যমে পথ চলতে শুরু করেছে এই প্রিয় শব্দনীড়। লেখক পাঠকের মেলবন্ধনে এই নীড় এখন মুখরিত। তবে কেন আর নিরবতা! আসুন সকলে মিলেই মেতে উঠি উল্লাসে।

কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের পাঠকের কাছে ই-ম্যাগ এখন সর্বাধিক জনপ্রিয়। যা অতি সহজেই পৌঁছে দেয়া যায় পাঠকের দ্বারপ্রান্তে। আর তার ভিত্তিতেই এবারে শব্দনীড় থেকে প্রকাশিত শব্দতরীর ই-ম্যাগ প্রকাশের প্রস্তাব রাখছি। সবে যেহেতু এলো প্রাণের বৈশাখ, সংখ্যাটি হতে পারে কোনো বৈশাখী সংখ্যা। এবার আসুন সহব্লগাররা মিলে নির্ধারণ করে ফেলি কি হবে শব্দতরী ই-ম্যাগের বৈশাখী সংখ্যার নাম।

সকলকে নাম প্রস্তাবের আহ্বান জানাই।
আমার প্রস্তাবিত নামঃ

১। শব্দনীড় ই-ম্যাগ
২। শব্দতরী ই-ম্যাগ

সংখ্যাঃ
১। প্রাণে বাজে বৈশাখী মাদল
২। প্রাণের বৈশাখ

শব্দনীড়ে আমরা একটি বাক্য সবসময়ই দেখতে পাই, “নক্ষত্ররা হাতে হাত রেখে হয় ছায়াপথ”। আর তাই এই উদ্যোগকে সফলরূপে বাস্তবায়ন করতে, সকলের আন্তরিক মতামত আশা করছি।

টুকরো কথন

17191797_1302567229839296_5992445827761947615_o

কাল রাতে—ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ।

জীবনান্দের বিমুগ্ধ এ চরণগুলো আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে আমাকে। অদ্ভুত বায়না ধরে ধরে বারবার মনে পড়ে। আনন্দ কিংবা ব্যথার সমারোহে। এ যেন অমোঘ প্রেম, নিঃশব্দে এসে কড়া নাড়ে। কালেভদ্রেও যাকে নিয়ে ভাবার ফুসরত নেই তবুও যদি অযাচিত মনে পড়ে তাকে প্রেম ছাড়া আর কি’বা বলা যায়!

শেষবার যখন দেশে গিয়েছিলাম তখনই অনুভব করেছিলাম, কোথায় যেন জীবনের তাল কেটে গেছে। অথচ অকালিক ছন্দপতনের মাঝেও দিন কেটে যাচ্ছে তরতর করে। অনেকটা জোর করেই ধুলো পড়া বইগুলোর গায়ে হাত রাখলাম। সাথে সাথেই শুরু হলো আকাশে দুদ্দাড় মেঘের আনাগোনা। এই বুঝি বৃষ্টি নামবে। মেঘে মেঘে বিদ্যুতের ঝলকানি, ম্লান হয়ে এলো সুর্যের আলো। কালো হয়ে আসা আকাশটাকে মনে হলো বিষন্নতার চাঁদরে ঢাকা কোনো চঞ্চল যুবতী। এইতো সময় খোলা আকাশের নিচে, ছাদের এক কোণে বসে সমরেশকে হাতে তুলে নেবার। আহা কি আনন্দ!

সেদিন সমরেশের পঞ্চমীর চাঁদকে পাশে রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে গেলো। মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়াটা অনেকের কাছে অস্বস্তিকর মনে হলেও আমার কাছে এ যেন সৌভাগ্য মনে হয়। রাতের আয়নায় নিজেকে দেখার সময়। রাতের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সময়।

রাতেরও একটা নিজস্ব ধ্বনি আছে, শব্দ আছে। মাঝরাতে চুপচাপ নিস্তব্ধতার মাঝে আরো নিশ্চুপ থেকে সেই শব্দ শুনি। মনে হয় পৃথিবীর বাহিরে কোথাও ধূলিঝড় হচ্ছে। আর আমি সেই বাতাসের ঘূর্ণির শব্দ শুনছি। মোহিনীশক্তিরূপে সে শব্দ আমাকে ডাকে। ইচ্ছে হয় ঘরের কপাট পেরিয়ে সেই শব্দের পিছু নেই, হারিয়ে যাই কোনো অপার্থিব জগতে। কখনো দৌঁড়ে যেতে ইচ্ছে করে খোলা মাঠের মাঝে। মনে হয়, সেই মাঠ জুড়ে শব্দটা ছুটে বেড়াচ্ছে অবোধ শিশুর মতো। মেঘাকাশে ভাসা ভাসা চাঁদের আলোর নিচে কুয়াশার সমাবেশ, মধ্যমণি হয়ে আছে সেই শিশুটি!

আবার নিজেকে দেখি, চারিদিক থেকে ঘিরে থাকা ধোঁয়াশার মাঝখানে। যেখানে পায়ের নিচে পানি আর পানির নিচে ছোট ছোট গাছ। অবাক চোখে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার যেনো সেই রাতের শব্দ শুনতে পাই। এবার সেই শব্দের পেছনে পেছনেই বেরিয়ে পড়ি ভিন্নজগতের টানে।

তুই সমগ্র -১

// হঠাৎ দেখায় //

ভালবাসি শুনলে, এখনো কি তোমার চোখ হয় বিশাল চত্বর?
ওপারের বাসের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে থাকে ফেনিল ঠোঁট-
তনু চিবুক, টিকেট কাউন্টারে বিছিয়ে দাও চুলের পাটি?
হাত হয় সুদীর্ঘ চামড়ার সেতু, হাররোজ-
টোলের জন্য থামায় কব্জিচুড়ি, নখের পালিশ?

এখনো কি বুকের জমিন চিরে জংশন গড়ো,
ভালবাসি শুনলেই, বাজাও সোনালী হুইসেল-
না’কি বীজতলায় দাও সেঁচ; ফলাও সুরেলা ব্যথাদল?

এখনো কি গাছে গাছে ফুল দেখে বায়নায় থামো,
ভালবাসি শুনলেই, বলে উঠো “পাতালে নামো”?

মোহের পাণ্ডুলিপি

হে প্রণয়ের ঝড়, তালুর ম্যাজিকে নেমে এসো
আবহাওয়াবিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে,
অলৌকিক প্রলয়ে ভাসাও ক্ষুধার্ত শহর।

লণ্ডভণ্ড করো, কপাল জুড়ে ধ্বংস আঁক
চোখের মাঝে তুলো ঘুমের সারেগামা।

কে শুনে এ আকুতি! আর তাই ঘুম বাদ দিয়ে একলা একলা হাঁটি,নির্ভাবনায়। মাঝে মাঝে ভ্যাপসা গরম এসে সঙ্গী হয় ক্ষণিকের। বুঝতে পারি আমি এবং আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো সকলে আলাদা আলাদা করে বাঁচি। ডাহুক ডাকা রাতে ঝরা পাতাদের মর্মরে বিলিয়ে দেই সর্বস্ব। যেমন করে বাহাড়ী রঙেরা বিলিয়ে দেয় নিজেদের অন্ধকারে। আমি বলি নিবিড়ে গ্রাস করে নেয়া তোমরা যাকে বলো আত্মসমর্পণ! তোমাদের কথা শুনে হঠাৎ থমকে যাই, তারপর আবার নিজেই বলে উঠি

বিশ্বাস করো তুমি, বিশ্বাস করো তোমরা
আমি কেবল এসেছি মায়ার জোগাড়ে,
তোমাদের হরেক বর্ণের ত্বকের আড়ালে
লুকিয়ে থাকা ঘূর্ণায়মান সেই চাকার সন্ধানে
এর চেয়ে আর বেশি কিছু ভেবো না যেন!
চাইলে ছড়াতে পারো বিষাক্ত শেকড়।

যতোবার মরি ঠিক ততোবার বেঁচে উঠি
কেবল প্রতিবার মৃত্যুর আগে,
ক্রুশকাঠে কষি গোপন সরল।

এরপরই ভোর এলে পালটে যায় দিনলিপির পৃষ্ঠা। আলোতে ঢেকে দিয়ে রাতের অন্ধকার, সামাজিক রোদে খুঁজি বিরল উষ্ণতা। হাহাকার ভুলে গল্পকার হয়ে বেরিয়ে পড়ি চরিত্রের সন্ধানে। নকশীকাঁথার মতো, মিহি সেলাইয়ে বুনে যাই প্রতিটি সময়ের সংলাপ; গড়ে তুলি মোহের পাণ্ডুলিপি। কারা যেন এসে সেই ভোরে কড়া নাড়ে। তাদের তখন অস্ফুটে বলি

দূষিত জলে সেরে নিয়ে শেষের স্নান
আজই হারিয়ে যাব দরদী আগুনে,
তোমরা বরং কাল এসো, কড়া নেড়ো!

কি অদ্ভুত মায়ায় মৃত্যুর কথা ভাবতেই বেঁচে উঠি, শিরদাঁড়া থেকে খসে পড়ে বিউগলের সুর। ঠিক তখনই টের পাই আমি এবং আমার মাঝে সৃষ্টি হওয়া এক দূরত্বের সেতু। মৃত্যুর কথা ভেবেই হয়তো সফেদ পৃষ্ঠায় আঁচড় কেটেছিলাম কখনো

আজকাল সাধ করেই সব ভুলে যাই;
শিলাঘাতে খসে পড়া পলেস্তারার দিন,
ছয় জানালা খোলা রেখে, চৌকাঠ পেরুলে-
বাতাসে কবে উড়েছিলো লিখিত ভাষণেরা,
কোন চায়ের কাপে ভিড়েছিলো চুমুকের পয়গাম।
কতটুকু পারি, কতটুকু আর লুকানো যায়!
শাওয়ারে বেড়িয়ে আসে আস্তিনে লুকানো দাগ।

আবারো তোমরা আত্মসমর্পণ বলছো? বলেইতো দিয়েছি এ যেন নিবিড় গ্রাস। তোমরা পারোও বটে।

খালে-বিলে, ফসলের মাঠে নেমে এলে বন্যার জল-
তোমরাই তোলপাড় বাঁধাও বেশি,
সমুদ্র ভেবে মুহূর্তেই হয়ে উঠো স্বভাব পর্যটক,
বন্যার কাছে তুলে ধরো ঢেউয়ের দাবী!

কতকিছুই না খুঁজো তোমরা এই অবসরে,
বালুকা সন্ধ্যায় ভেসে আসুক ভেঁপুর টান,
তীরঘেঁষে গজিয়ে উঠুক ঐতিহাসিক ঝাউবন
একটু আড়ালও চাই; চুম্বন ছাড়া কি জাগে শিহরণ!

ধীরে ধীরে তোমাদের স্লোগান বাড়ে; তখনো-
বধির দেয়ালের মতো আমি দাঁড়িয়ে থাকি।
আমার চেয়ে কেই’বা আর বেশি জানে;
বন্যার জল নেমে গেলে বাঁকেরাই কেবল মাথা তুলে!

তাই বলে আক্ষেপ নেই কোনো। আকাশে দোল খায় প্রগাঢ় অন্ধকার, কানাগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে অচল সুর। আনন্দের পায়ে শেকল দিয়ে, চেনামুখগুলো অচেনা হয়েছে সেই কবে! অথচ আশ্চর্য এক বায়না ধরে বালিয়াড়িতে এখনো পড়ে আছে এক বিকালের সমস্ত আয়োজন। যখন ফিকে হয়ে আসে দিনের মলাট, আয়োজনের দীর্ঘ তালিকা হয়ে উঠে রাতের বেসাতি। আর এভাবেই নীলের বিদ্রোহে কখনো কখনো হয়ে উঠি জুয়াড়ি কখনো’বা অবুঝ পথিক ।

অন্ধকারে আলো খুঁজি না
বরং আরো গাঢ় হও – হে পথ
কালো পোশাকেই না’হয় নিজেকে মোড়াও
সাথে মোড়াও ভাসমান জনপদ।

আমিতো পথিক হয়েছি, কোথায় হে পথ
নরম মৃত্যু ঘুম পাড়িয়ে রেখেছো ধূলোবুকে?

দুটো অণুগল্প

হঠাৎ চিঠি

কলিংবেলটা বেজে উঠলো। একটা চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলো পোস্টম্যান। খামের উপরে গোটাগোটা অক্ষরে লেখা আমার ভালো নাম, ঠিকানা।

এদিক ওদিক তাকালাম। খাম খুলতেই, পরিষ্কার বাংলা ভাষা, জড়তা নেই ” ছাইপাঁশ লিখে আর কারো সাথে জড়াওনি নিশ্চই!” সদ্য উদিত সূর্যটা যেন লাল হতে হতে সশব্দে ফেটে পড়ছিলো।

“এই কে এলো গো?”
“কেউ না” বলেই খামটা চালান করে দেই বুক পকেটে। কপালে চিকণ ঘামের রেখা মুছতে গিয়ে টের পাই হাতে লেগে থাকা দোলনচাঁপার সুবাস।

সমর্থন

-দ্যাখেছিস এলাকার নতুন ভাড়াটিয়া; সালামটা পর্যন্ত দিলো না। শালা ছোট লোকের বাচ্চা।

-ঠিক ভাই ঠিক!

-আবার সে ওই টেবিলে বসেছে, যে টেবিলে বসে আমি প্রতিদিন চা খাই। শালাতো ফকন্নির বাচ্চা।

-ঠিক ভাই ঠিক।

-চল শালার ঘাড় ধরে তুলে দিয়ে আমরা বসি।

-ঠিক ভাই ঠিক।

কথা শুনে নতুন ভাড়াটিয়া উঠে দাঁড়াল। তারপর ভাড়াটিয়া মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলে পাশের টেবিল থেকে মৃদুস্বরে কেউ বলে উঠেঃ
কি দুনিয়ার আজব খেলা
বাপেরেও “ভাই” ডাকে পোলা

বাদামী বেবুন

ভাঁজ করা রাতে, হেঁটে যাই পথে
পকেটে বাজে মুদ্রার ধুন
চুপি চুপি এসে মানুষের বেশে
বন্ধু হয় শত বাদামী বেবুন।

পাশাপাশি হাঁটে স্বর্গের ঘাটে
সুর তুলে আনকোরা,
দিন কিছু গড়ালে, শেষ মুদ্রা ফুরালে
ভালবেসে গুঁজে দেয় বিষের ছোরা।

না আমি না সমুদ্র

(১)

IMG-20151213-WA0001

আঁধারের মাঝে নিঃশব্দে লিখে রাখি সমস্ত বার্তা,
কোনো আকালিক সূর্যাস্তের পর নিমগ্ন পাঠে
হারিয়ে যাই লোকালয় ছেড়ে, পাথর উল্লাসে।

(২)

IMG-20150914-WA0002

যে জলের আস্তরে ভাসে পালকের তাপ
বুকের নিরালায় বুনে পলির কাঁথা;
আজ সেই জলস্নানেই খোঁজে ফেরে শুদ্ধতা!

বাহারি মলাটে যখন বন্দি সকল দুপুরি পাপ
সন্ধ্যা না’হয় কেটে যাক পাথরের নিরবতায়,
পবিত্র আজ নাই’বা হলাম; দহন জলে গা পুড়িয়ে!

(৩)

IMG-20150914-WA0000

আমিতো জানি জলের সূত্র,
অস্তাচলের পিঠে লিখে রেখে পরিণয়;
নিঃশর্তে উনুনমুখে মেলে দেই পালকের ভাঁজ!

(৪)

IMG-20150912-WA0033

সময়ের ভারে
শব্দ বেচে কিনেছি
নূতন দিন।

(৫)

IMG-20150912-WA0005

আমি তবুও সুখী সমুদ্র কিনারে,
সকাল বিকালে জল এসে আছড়ে পড়ে
মরা পাথরে খোদাই নামের বানানে!

(৬)

IMG-20150912-WA0003

অধিক প্রাপ্তি তুলনার জন্ম দেয়, আর সেই তুলনার মাঝেই প্রপ্তিগুলো তার উপযোগিতা হারায়।

(৭)

IMAG0041

ধূলোপথেই বেড়ে উঠা, পাঁপড়িতে নেই টুকটুকে লাল ধরা,
তবুও কখনো যদি দূরের বৃষ্টি হাত ছুঁয়ে দেয়
আমাকে কি তুলে নিবে চূঁড়োখোঁপায় গুঁজে দিতে?

(৮)

IMG-20150914-WA0011

কখনো ইচ্ছে করে হেঁটে যাই জলের উপর,
কাঁদামাটি দিয়ে গড়ি নগদ সংসার; শুনেছি সেখানে-
ঝিনুক শরীরে লেগে থাকে সঙ্গমের বিষাক্ত দাগ!

(৯)

rsz_12untitled-min-247x300

বুকে জড়িয়ে ছিল বেনামী অজস্র পাতাদল,
বসন্তের সিংহাসনে অতিথি পাখি সমগ্র,
বাতাসের নিরব মৈথুনে গলিয়ে বুক পাঁজর
আজ কেবল আঁকে শূন্যতার বিরাম চিহ্ন।

ছবির স্থানঃ পার্কির চর, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম এবং
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

রূপান্তর

জানো কি তোমাকে এখন আর পড়তে পারি না। অথচ তোমাকে পড়তে পড়তে কাটাতে চেয়েছিলাম আরো কয়েক জনম। আরাধনা বলো আর যাই বলো, প্রতিটি চরণ থেকে খুঁজে নিতে চেয়েছিলাম মাধুর্য।
তোমাতেই সন্ধ্যাভরে গন্ধ খুঁজেছি। শেষ না হওয়া কবিতায় তোমাকে গুঁজে রেখে পেরিয়ে যেতাম পাতাদের সম্রাজ্য। অন্ধকারের কোলে রাতেরা আশ্রয় নিলে, তোমাকে পড়তে পড়তেই কেটে যেতো হিমঘুম। চরণ জুড়ে লেপ্টে থাকতো মাতাল ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণসমুদ্রে ডুবে মরেছি কতো সহস্রবার! অথচ সেই তোমাকেই আজ আর পড়তে পারি না।

আচ্ছা এখনো কি কাঁদো? কাঁদলে কেমন হও? লাল না নীল; নাকি বারুদের রঙয়ের মতো দেখায়? কষ্ট পাও? কষ্ট পেলে এখনো কি তোমার চোখের রঙ বদলায়? কোঁচকানো কপালে কি রংধনুর দেখা মেলে? খুব দেখতে ইচ্ছে করে।

জানো তোমাকে এখন আর পড়তে পারি না ঠিকিই। কিন্তু তোমাকে পড়তে পারার সময়টুকুতে তোমাকে লিখতে না পারার যে হলুদ যন্ত্রণা আমাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাখতো তারা আমাকে মুক্তি দিয়েছে। আমি এখন অনায়াসে তোমাকে লিখতে পারি। আরাধনা থেকে জন্ম নেয়া মনোবাসনায় গুঁজে দিতে পারি অজস্র শব্দ।