সিয়ামের নীল ঘুড়ি


গ্রীষ্মের ছুটিতে দাদার বাড়িতে বেড়াতে আসল সিয়াম। সে বিকেল বেলা মাঠের ধারে খেলা করতে গেল। তখন তার চোখের সামনে ভেসে উঠল নাটাই হাতে বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা ঘুড়ি উড়াচ্ছে। মাঠে তখন সোনালী রোদ জলমল করছে। গাঢ় নীল আকাশে সাদা-সাদা ছেঁড়া মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। এমনই সুন্দর বিকালে আকাশ ভর্তি লাল, কালো, নীল, সবুজ ঘুড়িসহ আরো কত রকমের ঘুড়ি যে উড়ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কোনো ঘুড়ির লম্বা লেজ, দেখতে অনেকটা সাপের মতো। আকাশে সাপের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। আরো অনেক রকম ঘুড়ি আছে। কোনোটা বিমানের মতো, কোনোটা পাখির মতো, কোনোটা আবার ছিল বাক্সের মতো, কোনটা প্রজাপতির মতো।
সিয়াম লক্ষ্য করলো একটি ছেলে একটি ঘুড়ির মাথায় বাঁশের কঞ্চি বাকা করে তার মধ্যে এক ধরনে প্লাস্টিকের পাতলা পাত লাগিয়ে আকাশে উড়াচ্ছে। সেই ঘুড়ি যখন আকাশে উড়ছে বাতাসে বারি খেয়ে তখন চং চং করে শব্দ করছে। অনেক দূর থেকে সেই শব্দ শোনা যাচ্ছে।
কেউ কেউ একে অপরের ঘুড়ির সাথে সুতা দিয়ে কাটাকাটি করছে। যাদের ঘুড়ি সবচেয়ে উপরে, মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়তে থাকে; তারা খুশিতে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, আমার ঘুড়ি মেঘের দেশে চলে গেছে। আমার ঘুড়ি প্রথম হয়ে গেছে কী মজা… কী মজা… আমার ঘুড়ি সবচেয়ে সেরা ঘুড়ি!
সিয়াম দেখতে পেল এক লাল ঘুড়ির মধ্যে নীল ঘুড়ির ভীষণ লড়াই চলছে। এ দেখে সিয়ামেরও ঘুড়ি উড়ানোর শখ জাগছে। আকাশে নানা রঙের ঘুড়ি দেখে, আপন মনে ঘুড়ির সাথে কথা বলে সিয়াম। দাদার কাছে তার একটাই আবদার। একটা নীল ঘুড়ি, যেটা সে সবচেয়ে উঁচুতে ওড়াবে! মেঘের অনেক কাছে তার নীল ঘুড়িকে সে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। নীলকাশ আর নীল ঘুড়ি একাকার হয়ে যাবে।
দাদা ভাই, আমাকে একটা নীল ঘুড়ি ও নাটাই এনে দাও না! গ্রামের ছেলেরা ওড়ায় আর আমি তা চেয়ে চেয়ে দেখি।
– তুমিতো শহরের ছেলে গ্রামের ছেলেদের সাথে তুমি পারবে না।
– আমি পারব দাদা ভাই।
– ঠিক আছে আমি কালই বাজার থেকে তোমার জন্য একটি ঘুড়ি নিয়ে আসব।
দাদা ভাইয়ের ঘুড়ি কিনে দেয়ার শুনে সিয়াম খুব খুশি হলো। এবার সে যে ক’দিন এখানে আছে সেকদিন আনন্দে ঘুড়ি উড়াবে।
পরদিন সিয়ামের দাদা ভাই বাজারে থেকে সুন্দর একটা নীল রঙের ঘুড়ি ও নাটাই কিনে এনেছে। আর এক রিল নাইলনের সুতো। কেমন জ্বলজ্বল করছে সুতোটা। ঝিলমিল করছে রোদে। দাদা ভাই ওগুলো এনে সিয়ামকে বললো, কইরে আমার দাদা ভাই! এই দেখো, তোমার জন্য কী এনেছি।
সিয়ামতো নীল ঘুড়ি দেখে খুশিতে আত্মহারা। সে বললো, দাদা ভাই এত সুন্দর ঘুড়ি!
– হ্যাঁ দাদা ভাই, তুমি আমার আদরের নাতী। সবচেয়ে সেরাটাই তো তোমাকে দেব, তাই না!
– দাদা ভাই তুমি খুব ভালো। বলেই সিয়াম দাদা ভাইকে একটি চুমো দিল।
বিকেল বেলা সিয়াম দাদা ভাইকে নিয়ে মাঠে গেল ঘুড়ি উড়াতে। দাদা ভাই সিয়ামের ঘুড়িটি আকাশে উড়িয়ে দিল। এরপর সিয়ামের হাতে নাটাই ধরিয়ে দিল। সিয়াম সুতা ছাড়ে আবার নাটাই ধরে টান দেয়। আবার সুতা ছাড়ে আবার নাটাই ধরে টান দেয়। একবার এদিকে টান দেয়। আবার ওদিকে টান দেয়। এইভাবে ঘুড়ি আস্তে আস্তে উপরে উড়ছে। একেবারে মেঘের দেশে মিশে যাচ্ছে। একবার মেঘের দেশে হারিয়ে যাচ্ছে আবার ভেসে বেড়াচ্ছে। তখন সিয়াম লাফিয়ে বলে উঠল, আমার ঘুড়ি প্রথম হয়েছে। আমার ঘুড়ি সেরা ঘুড়ি।
সিয়ামের ঘুড়ি উড়ানো দেখে আশে পাশের অন্য সকল ছেলেরা তখন তাকিয়ে দেখছে।

তারিখ: ২৭/১২/২০১৫

আমির ইশতিয়াক সম্পর্কে

আমির ইশতিয়াক ১৯৮০ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার ধরাভাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শরীফ হোসেন এবং মা আনোয়ারা বেগম এর বড় সন্তান তিনি। স্ত্রী ইয়াছমিন আমির। এক সন্তান আফরিন সুলতানা আনিকা। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন মায়ের কাছ থেকে। মা-ই তার প্রথম পাঠশালা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন মাদ্রাসা থেকে আর শেষ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। তিনি লেখালেখির প্রেরণা পেয়েছেন বই পড়ে। তিনি গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও সাহিত্যের সবগুলো শাখায় তাঁর বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। তাঁর বেশ কয়েকটি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো- এ জীবন শুধু তোমার জন্য (২০০৩) ও প্রাণের প্রিয়তমা (২০০৬)। তাছাড়া বেশ কিছু সম্মিলিত সংকলনেও তাঁর গল্প, কবিতা ছাপা হয়েছে। তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় গল্প,কবিতা,ছড়া, ভ্রমণ কাহিনী ও কলাম লিখে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুক গ্রুপে নিজের লেখা শেয়ার করছেন। তিনি লেখালেখি করে বেশ কয়েটি পুরস্কারও পেয়েছেন। ফেসবুক লিংক- https://www.facebook.com/amirhossain243 ই-মেইল : [email protected] ব্যক্তিগত ব্লগসাইট: http://amirishtiaq.blogspot.com

4 thoughts on “সিয়ামের নীল ঘুড়ি

  1. ছোটবেলায় ঘুড়ির পেছনে দৌড়ানোর কথা মনে পড়ে গেল!

  2. শিশুতোষ। শিশুদের গ্রহণ করবার মতো লিখা পড়লে লিখার সাথে পাঠকের এক ধরণের মনো-যোগাযোগ তৈরী হয়ে যায়। পাঠক গল্প বিষয়বস্তুতে নিজেকে খুঁজে ফেরেন।

    নির্দোষ লিখাটি হয়ে উঠে পাঠক জীবনের নস্টালজিয়া অথবা আয়না।
    সিয়ামের নীল ঘুড়ি তার ব্যতিক্রম নয়। সুন্দর। লিখায় প্যারার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। :)

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।