প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দ


গত দীর্ঘ ৯ মাস ২ দিন আমার স্ত্রীর গর্ভের ভেতর বেড়ে উঠছিল একটি প্রাণের অস্তিত্ব। যা আমাকে বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। আমি একটা নতুন জগতের সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম। দিন দিন আমি আমার স্ত্রীর পরিবর্তন কাছ থেকে লক্ষ্য করেছিলাম। যা আমাকে একটি নতুন জগতের সাথে পরিচয় করে দিচ্ছিল। প্রতিদিন রাতে শুয়ে অনাগত সন্তানের অপেক্ষায় দিন গুনতাম। আর ভাবতাম কেমন হবে আমার সন্তান। ছেলে না মেয়ে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ ছিল না। আল্লাহ যা দেন তাতে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম এবং অপেক্ষায় ছিলাম একটি সুস্থ্য সবল সন্তানের আশায়। শত কষ্টের মাঝেও আমার স্ত্রীর চোখে-মুখে আনন্দের উচ্ছ্বল ঢেউ দেখতাম। তার চেহারা দেখে আমার চোখে মুখে আনন্দের ঢেউ খেলে যেত।
আমার অনাগত সন্তানের বয়স যখন আট মাস তখন আমি আল্ট্রানোগ্রাম করিয়ে জানতে পারলাম আমার সন্তানটি মেয়ে হবে। অনেকে মেয়ে সন্তানকে অবহেলা করে। আমি মেয়ে সন্তানের সু-সংবাদটি পেয়ে এত খুশি হয়েছি যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি সারাক্ষণ আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করছি আমার সন্তানকে যেন সুস্থ্য দেহে ভূমিষ্ঠ করে।
অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখ রাত ১০:০০টার পর থেকে আমার মেয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আনন্দ বার্তা দিচ্ছিল। আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলো। এক দিকে প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দ আমার বুকের ভেতর তোলপাড় করছিল, অন্য দিকে আমার স্ত্রীর অসহনীয় যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছিল তা দেখে আমার হৃদয়টা কষ্টের দাবানলে জ্বলছিল। আনন্দ লাগছিল এই ভেবে যে, আল্লাহর অশেষ কৃপায় যে কোন মুহুর্তে আমি আমার মেয়ের মুখ দেখতে পাব। মাঝে মাঝে আমার স্ত্রী বলছিল ‘আমি মনে হয় মরে যাব। আমাকে মাফ করে দিও।’ আমি তাকে বার বার একই সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম যে, এ ধরনের অলক্ষণে কথা বল না। তোমার কিচ্ছু হবে না। একটু ধৈর্য ধর।
পরিশেষে ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২ খ্রীষ্টাব্দ, ২১ শাওয়াল ১৪৩৩ হিজরী, ২৫ ভাদ্র, ১৪১৯ বাংলা, রোজ রবিবার, সময় সকাল ৭:৩০ মিনিটে ভুমিষ্ঠ হলো আমার প্রথম কন্যা সন্তান। আমি তখন তার মুখ দর্শন করে তাকে কুলে নিলাম। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, সত্যি সত্যি আমি বাবা হয়েছি। আমি তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পর আমার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফিরে এসেই সে মেয়েকে কুলে নেয় এবং তার পিঠে হাত বুলিয়ে আনন্দের বার্তার জানান দেয়।

আমির ইশতিয়াক সম্পর্কে

আমির ইশতিয়াক ১৯৮০ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার ধরাভাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শরীফ হোসেন এবং মা আনোয়ারা বেগম এর বড় সন্তান তিনি। স্ত্রী ইয়াছমিন আমির। এক সন্তান আফরিন সুলতানা আনিকা। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন মায়ের কাছ থেকে। মা-ই তার প্রথম পাঠশালা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন মাদ্রাসা থেকে আর শেষ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। তিনি লেখালেখির প্রেরণা পেয়েছেন বই পড়ে। তিনি গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও সাহিত্যের সবগুলো শাখায় তাঁর বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। তাঁর বেশ কয়েকটি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো- এ জীবন শুধু তোমার জন্য (২০০৩) ও প্রাণের প্রিয়তমা (২০০৬)। তাছাড়া বেশ কিছু সম্মিলিত সংকলনেও তাঁর গল্প, কবিতা ছাপা হয়েছে। তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় গল্প,কবিতা,ছড়া, ভ্রমণ কাহিনী ও কলাম লিখে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুক গ্রুপে নিজের লেখা শেয়ার করছেন। তিনি লেখালেখি করে বেশ কয়েটি পুরস্কারও পেয়েছেন। ফেসবুক লিংক- https://www.facebook.com/amirhossain243 ই-মেইল : [email protected] ব্যক্তিগত ব্লগসাইট: http://amirishtiaq.blogspot.com

4 thoughts on “প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দ

  1. আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কন্যা সন্তানের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা। মহান আল্লাহতাআলা তাকে দীর্ঘজীবি করুন। আমিন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।