এক রিয়েল কাহিনী … নারীকথা

এক রিয়েল কাহিনী … নারীকথা

দুই তিন বছর আগের কথা হবে —–ঠিক আবছা কিন্তু স্পষ্ট তাই মেমোরি তে থেকে গেছে বলা যেতে পারে। আসলে জীবনে কাকতালীয় কিছুই নয়—-ঘটনাগুলো কারো না কারো সংগে ঘটেই থাকে।

সবুজ প্রকৃতি ধানক্ষেত বৃষ্টি সবই যেমন আনন্দ দেয় তেমনই ঝড় খরা আমাদের খুব ক্ষতি করে। আনমনা প্রকৃতির খেয়ালের মতই আমাদের ভাগ্য ওঠানামা করছে। কখনও গ্রহর দোষ কখনো বৃহস্পতির যোগ কখনো মহেন্দ্র যোগ ইত্যাদি ইত্যাদি—! কি বলুন তো ভাগ্যটাকে আমাদের নিজেদের তৈরী করতে হবে। সিঙাড়া খাব ভেবে বসে থাকব ভাবলে কেউ মুখে পুরে দেবে না। কিন্তু হয় গিয়ে না হয় চেয়ে খেতে হবে?

অনন্যা খুব সহজ সরল মেয়ে; বাবা মা ভাই বোন নিয়ে সংসার, ক্লাশ টেন অবধি পড়ে ভাবল কি আর হবে পড়ে। সংসারের হাল ধরতে কাজ শুরু করল… টেলারিং শিখে বাড়িতে মেশিন নিয়ে টুকটাক কাজ হতো। কিন্তু গ্রামের দিকে ঠিকঠাক ইনকাম হত না —
সে ভাবল শহরে যাবে — অনেক টাকা ইনকাম করবে—ভাইকে সাহায্য করবে –বাবা মা কে সংসার চালাতে সাহায্য করবে—

একটা মেয়েকে সমাজে নিজের পায়ে দাঁড়াতে কতখানি স্ট্র্যাগল করতে হয় তা আমরা দেখতেই পাই— একটা মেয়ে বড় হলেই বাড়িতে ছেলেদের আনাগোনা লেগে যায়—বয়স্কদের উপদেশে দুইকান উপচে পড়ে? এই ভাবে থাকতে হবে?এই করা যাবে না ওই করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি—

অনন্যার ক্ষেত্রে অনন্যার মা একটু অন্যরকম ছিলেন। অনন্যাকে শহরে কাজ করতে যেতে বাধা দিলেন না! গরিবী মানুষকে সবকিছুই করাতে বাধ্য করায়? যে বয়সে ক্যারিয়ার গড়ার বয়স! হাসি খুশি থাকার খেলাধুলা করার বয়স ! সেই বয়সে শহরের কল সেন্টার শপিং মল যেকোন প্রাইভেট কোম্পানির দোরগোড়ায় দোরগোড়ায় কাজের জন্য ঘুরতে হয়েছে—যন্ত্রনা ধিক্কার কষ্ট সব বুকে চেপে তাঁকে হাসিমুখে কাজ করে যেতে হতো শুধুমাত্র পরিবারের জন্য—
প্রতিটি দিনের সকাল আর সন্ধ্যা তাঁর কাছে শুধু কাজের দিন হিসেবেই চিহ্নিত থাকত …

যাইহোক অনন্যা শহরে একটা ছোট্ট ভাড়ারুমে থাকত — কলসেন্টারে কাজ ও পেল—মোটামুটি যা ইনকাম হত নিজের চলে যেত আর যৎসামান্য টাকা বাড়িতে পাঠাত—বেশ কিছু মাস যাওয়ার পর সে ভাবল তাঁর অনেক টাকা ইনকাম প্রয়োজন — তাই মাঝেমধ্যে নাইট সিফট ও করত—-শরীরে কুলোতো না মাঝেমধ্যে বমি পেটে গ্যাস জ্বর লেগে থাকত —তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাড়ির কথা ভেবে কাজ করে যেত—

নাইট সিফ্ট খুব বেশী করার কারনে শরীর ও পরপর ভেঙে পড়ছিল–!

একদিনের একটা ঘটনা তাঁর জীবন টা তছনছ করে দিল—ঘটনাটি সত্যি মর্মান্তিক চোখে জল আনার মতো। অনন্যার মা ছাড়া আর কোন ক্লোজ ছেলেবন্ধু ছিল না বললেই চলে—অফিসের কলিগ বাড়ীয়ালার ছেলে ট্রাই করত—প্রেম করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় —

সেই দিনটা শনিবার —হাফছুটি—অনন্যা নাইট সিফ্ট ফিরে বাড়ি ফিরছিল— শনিবার —একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরছিল—পোশাকে ঝলমলে ভাব—মন খুব ভালো–বশ বলেছে সোমবার টাকা দেবে—

খাওয়া দাওয়া হয় নি—-ভাবল গিয়ে কি রান্না করবে —একটু ঘুমিয়ে নিয়ে বেলার দিকে রান্না করে খাবে—

এই ভেবে ভেবে অফিস থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি ধরল— কিন্তু আজ মাঝরাস্তায় কিছু দূর যাওয়ার পর ট্যাক্সি আর যেতে চাইল না—অনেক ভাড়া চাইল—ভাড়াবাড়ি একটু ভেতরে —এখন ভ্যান রিক্সা পাওয়া অসম্ভব—শরীর ও খুব দুর্বল লাগছে— এদিকে কেমন থমথমে পরিবেশ— ভয় ও লাগছে—কিন্তু বাড়ি ফিরতেই হবে—–

একটা স্টপেজ পেরিয়ে মোড়ের মাথায় দেখল মাতালদের আড্ডা—দুদিক থেকে তাঁরা মদের বোতল ছোঁড়াছোঁড়ি করছে—নিজেদের মধ্যে নোংরা ভাষায় কথাবার্তা বলছিল– অনন্যাকে দেখে তাঁরা হঠাৎ ই উঠে দাঁড়াল—অনন্যা কিছু বলতে করতে যাবে–বা প্রতিবাদ করতে কিছু করবে সে সুযোগ পেল না—

চারপাঁচজন মিলে জোর করে মুখ বেঁধে জামা কাপড় ছিঁড়তে শুরু করল—
হিংস্র বাঘের মতো তাঁরা অনন্যাকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলল—প্রায় আধঘন্টা ধরে চলল নারকীয় কাজকর্ম–

অনন্যার কথা বলার শক্তি ছিল না— সে প্রায় অর্ধমৃত— সেই অবস্থায় মাতালরা যৌনাঙ্গে বোতল ঢুকিয়ে পালিয়ে যায়। তিনঘন্টা পর মানুষের নজরে আসে—তখন তাঁর শরীর রক্ত ঝরতে ঝরতে এক লাশে পরিনত হয়েছে—-

এই হচ্ছে আধুনিক তার ভয়ঙ্কর পরিণাম—?

পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে অনন্যার পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়ে—একটা ফুলের মতো জীবন অকালে ঝরে যায়—?

আপনারা বলতে পারেন এর জন্য দায়ী কে? অনন্যা? সমাজ? মাতালরা? শাসনব্যবস্থা?????

6 thoughts on “এক রিয়েল কাহিনী … নারীকথা

  1. সমাজে মেয়েদের প্রকৃত নিরাপত্তা নেই কথাটি স্বীকার করতে বাধা নেই। :(

  2. জানিনা এমন কত ঘটনা আমরা জানতে পারি। লজ্জা অনুভব করি। :(

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।