এম এ বাসেত এর সকল পোস্ট

এম এ বাসেত সম্পর্কে

সাংবাদিক এম.এ. বাসেত গত ১৯৮৫ খ্রি. তেঁতুলিয়া সদরের বারঘরিয়া গ্রামের এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. নিজাম উদ্দিন, মাতার নাম মোছা. আয়েশা খাতুন। পরিবারে ৬ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। শৈশবে তেঁতুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পাসের পর কালান্দিগঞ্জ ফাযিল মাদরাসা থেকে দাখিল/এসএসসি সমান বোর্ড পরীক্ষায় ১৯৯৯ খ্রি. দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ২০০৩ খ্রি. তেঁতুলিয়া ডিগ্রী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচ.এস.সি বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ ২.৫০ পেয়ে সাফল্যের সংগে উত্তীর্ণ হন। ২০০৭ খ্রি. সালে মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ পঞ্চগড় (পঞ্চগড় এম আর কলেজ) থেকে ইতিহাস বিভাগে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় ২য় শ্রেণিতে এবং ২০০৮ খ্রি. রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে মার্স্টাস ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি শৈশবে কবিতা ও ছোট গল্প লিখার মধ্যে দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় ২০০০ সালে দিনাজপুর জেলার পাবর্তীপুর উপজেলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক উত্তরের আলো পত্রিকার মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সাল থেকে দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে অদ্যাবধি কাজ করে আসছেন। এছাড়া ২০০৪ সালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিনি দৈনিক করতোয়া পত্রিকার উপসম্পাদকীয় পাতায় বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত কলাম লিখে আসছেন। ইতোমধ্যে তাঁর অর্ধশতাধিক কলাম প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায়, শিক্ষা তথ্য পাবলিকেসন্স থেকে তাঁর লিখা ‘‘ লাল সবুজের পতাকা হাতে যুদ্ধা ফিরে ঘরে” এবং ”স্মৃতির কাছে’’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ বই প্রকাশ হয়েছে। তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋণ সহায়তা নিয়ে ২০০১ সালে তেঁতুলিয়া উপজেলায় জেনুইন কম্পিউটার কমপ্লেক্স নামে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার চালু করেন। পরবর্তীতে উক্ত ট্রেনিং সেন্টারটিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার এডুকেশন (বিসিই) তেঁতুলিয়া শাখা হিসেবে রুপান্তর করেন এবং পরিচালক ও ট্রেইনার হিসেবে বেকার-যুবক/যুব মহিলা ও ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মনির্ভরশীল প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। তিনি ২০০৪ সালে পঞ্চগড় জেলার শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

স্বর্গের দেশ

ঘুষ-দুর্নীতি দেশে যা কিছু কালো
দূর হোক আঁধার জ্বালাব আলো
সৎ সংঘ গড়ি দেশ চালাব ভালো
নতুন এক বাংলা প্রজন্মকে দিব।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাবে সুন্দর দেশ
মিলেমিশে গড়ি ভুলে যাব রেশ
দলাদলি সংঘাত সব হোক শেষ
দশে মিলে গড়ি এই বাংলাদেশ।

বেকারত্ব দূর হোক উন্নত শির
জাতি মুক্তি পাবে শান্তির নীড়
নারীর পথচলা নিরাপদ দেশ
বাংলা স্বাধীন নাই কোন ভেদ।

সম্ভাবনা ভরপুর স্বাধীন এক দেশ
জনসেবা করবো সৎ মনো বেশ
প্রভুর শক্তি হোক নিয়মিত ক্যাশ
স্বাধীন বাংলা হবে স্বর্গের দেশ।
১৪-০১-১৮

শীত সরগম

পঞ্চাশ বছর পর দেশে শীতের সেরা তেঁতুলিয়া
সংবাদে হৈচৈ শিরোনাম উত্তরজনপথের শীত
আত্মীয় স্বজনের খোঁজ তোরা কেমন আছিস
ঠান্ডা নিবারণে বেশি জামাকাপড় পড়ে নিস।

আঠারো সালের আট জানুয়ারী স্মরনীয় দিন
উনিশশত আটষট্টি সালে শ্রীমঙ্গল শীতে মিল
দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি ছিল ঠান্ডার আভাস
মিডিয়ায় সরগম তেঁতুলিয়ায় তীব্র ঠান্ডা তাপ।

গরীব দুখীর কষ্ট শীত নিবারনে নাই মোটা বস্ত্র
জরুরী ত্রাণ লাগবে বিত্তশালীরা এগিয়ে আসো
জনপ্রতিধি বিপাকে ত্রাণ সংকট ভোট বিফলে
দিগি¦দিক ছুটাছুটি এলাকায় ত্রাণ দিতে হবে।

হিমালয়ের শিরশিরি বাতাস হাঁড় কাঁপানো শীত
নারী শিশু সবাই কাবু দেশ হলো শীতে জবুথবু
সর্দিজ্বর কফকাঁশি এখন সবার বাড়ি বাড়ি
হাসপাতালে সেবা দিতে ডাক্তারের ফাঁকি।

পরিষদ চত্বরে উন্নয়ন মেলা অন্যপাশে বিজয় মেলা
আমজনতার ভিড়ে জটলা চৌরাস্তার তেঁতুলতলা
হিমালয়ের শীত যেনো কারো ঘরে আনন্দ মেলা
নানা-নাতীর গল্প ভারী শীতের দেখছি খেলা।
১২-০১-২০১৮

অভিমানে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ (পুর্ব প্রকাশের শেষ অংশ)

সাজেদুল বাড়ি থেকে বের হওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলো। একদিন বাগানের ম্যানেজার জিজ্ঞাস করল; তুমি কোন শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছ। স্যার, ৬ষ্ঠ শ্রেণী, পড়া শোনার ব্যাপারে মা’র সাথে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। ম্যানেজার, দূরত্ব তাকে অফিসে কাজ দেয়ার কথা মনোস্থ করেন। কিন্তু উপর্যুক্ত শিক্ষার অভাবে তাও হলো না। এখন বাগানের কাজ তাকে ভাল লাগছে না। কিন্তু কী করবে ?। সঠিক খাওয়া নেয়ার অভাবে তার শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। একদিন জ্বরে ভীষন অসুস্থ হলো। কাকা বাবু গ্রামের ডাক্তারকে বলে জ্বরের ঔষধ এনে দিয়েছে। কিন্তু ঔষধ খেয়েও শরীরের অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না। সাজেদুলের শরীরে প্রচন্ড জ্বর, মাঝে মাঝে মা-মা বলে মৃদু স্বরে কাতরাচ্ছে। কাকা বাবু সপ্তাহ ধরে সাজেদুলকে নিয়ে মহাবিপদে। এ যেনো মরার উপর খরার ঘাঁ। কারণ কাজে না গেলে তারও চলার সমস্যা। কিন্তু সাজেদুলকে অসুস্থ রেখে কাজে যেতে পারছে না। আজ বাগানে গিয়ে ম্যানেজারকে সাজেদুলের অসুস্থতার কথা জানাল। ম্যানেজার সব শোনে রহিম মিয়াকে বলল; ছেলেটির বাড়ির ঠিকানা জান ? স্যার, তার মুখে শুনেছি। তাহলে ছেলেটিকে বাড়িতে পৌছে দাও। ম্যানেজার স্যারের কথা শোনে রহিম মিয়া নীরবে দাঁড়িয়ে থাকল। সাজেদুল কে বাড়িতে পৌছে দেবার খরচের টাকা তার পকেটে নাই। ম্যানেজারের জিজ্ঞাসা; রহিম মিয়া আর কী কিছু বলবে? স্যার কিছু টাকা লাগবে। ম্যানেজার কত? স্যার-দু’হাজার। ম্যানেজার সাহেব তাকে টাকা দিলেন। এখন সাজেদুলকে বাড়িতে পৌছে দেবার পালা। কিন্তু সাজেদুল খুব অসুস্থ; তাকে নিয়ে ঢাকায় যেতে ভয় পাচ্ছে। রহিম মিয়া মেসে এসে সাজেদুলকে বলল চল তোমাকে বাড়িতে পৌছে দেই। কাকা বাবুর মুখে বাড়িতে ফেরার কথা শোনে সাজেদুল মুচকি হাসি দিল। সে কিছুক্ষণে মধ্যে শরীরে মোচর-টোচর দিয়ে উঠে দাঁড়াল। রহিম মিয়া সাজেদুলকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ট্রেনে রওনা হলো। সন্ধ্যায় কমলাপুর স্টেশনে নেমে টেক্সিক্যাপে আদাবরে সাজেদুলের বাড়িতে গেল। টেক্সিক্যাপ ছেড়ে গেটে দাঁড়াল দারোয়ান গেট খুলে দিল। দ্বিতলা থেকে ছোট বোন সৌরভি উঁকি দিয়ে দেখল দু’জন লোক এসেছে। কলিং বেল চাপ দেয়া মাত্রই সৌরভি ঘরের গেট খুলে দিল। কয়েক বছর পরে হারানো ভাইকে ফিরে পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কাঁদতে লাগলো; আর জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগল মা ভাইয়া এসেছে। ছেলে সাজেদুলকে দেখে তার অসুস্থ মা বিছানা থেকে উঠে তাকে বুকে জড়িয়ে চুমু খেতে লাগল। কিন্তু ভুইয়া সাহেব খুব অসুস্থ। বিছানায় শুয়ে ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে উপরে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে! সাজেদুল বাড়িতে ফিরেছে তাও বুঝতে পারছে না। ছেলে হারানোর শোকাতুর ভুঁইয়া সাহেব। এদিকে দোকানের কর্মচারীদের হাতে ব্যবসার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে।

কিছুক্ষণ পরই সাজেদুলের মা’ রহিম মিয়াকে অভ্যর্থনা জানালো। সাজেদুল বলল; আমি এতদিন এই কাকার কাছেই ছিলাম। রহিম মিয়া সকালে বাসা থেকে চলে যাবেন। কিন্তু সাজেদুলের মা কোন ভাবেই তাকে যেতে দিবে না। হারানো ছেলেকে সংগে নিয়ে আসায় রহিম মিয়ার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সাজেদুলের বাড়িতে রহিম মিয়ার আতিথিয়তার যেনো কমতি নাই। কিন্তু তাকে বাগানে ফিরে যেতে হবে। সাজেদুলের বাড়িতে তার বাবা-মার অবস্থা দেখে রহিম মিয়ার পুরাতন স্মৃতি ফের মনে পড়ে গেলো। মনে মনে ভাবতে লাগল সাজেদুল তার মা-বাবাকে ফিরে পেলো। কিন্তু আমার মা-বাবা কি বেঁচে আছে? ইত্যাদি চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ল। ইতোমধ্যে সাজেদুল টেবিলে দুপুরের খাবার সাঁজিয়ে নিল। কাকা বাবু গোসল সারেন; দুপুরের খাবার খেতে হবে। রহিম মিয়া দুপুরের খাবার খেয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। আর দ্বিতল ভবনের ছাদ থেকে সাজেদুলের পরিবার একচিত্তে রহিম মিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল; যতদূর চোখে রহিম মিয়া দেখা যায়।# সমাপ্ত

অভিমানে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

# পুর্বে প্রকাশের পরের অংশ #

কাকা বাবুর ঠিকানা পেয়ে সাজেদুলের মনে সাহস হলো। ভাবছে একটি অচেনা শহরে কাকা বাবুর মাধ্যমে একটা কাজ খোঁজে নিতে পারব। মাঝ দুপুরে একটি মোড়ে যাদু করের মজমা দেখল। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়াল। কিন্তু তাকে কিছু ভাল লাগছে না। বেলা যখন ডুবু-ডুবু কাকা বাবুর ঠিকানায় পৌছাল। তখনো কাকা বাবু আসেননি। অচেনা জায়গায় একাকি অপেক্ষামান মনে বড় ভয় হচ্ছে। কিন্তু এখন নতুন করে যাবে কোথায়? সেখানেই অপেক্ষা করতে লাগল। রাত নয়’টার দিকে কাকা বাবু এলো। কাকা বাবু বলল ম্যানেজার আজ দেরিতে বেতন দিয়েছে; এসো ঘরে যাই। ঘরের তালা খুলে দিল। সাজেদুল ঘরে ঢুকে দেখে ঘরের চৌকিতে কোন কাঁথা বিছানা নাই। চৌকির কোণায় ছোট একটি পটলা। চারদিক থেকে মশা গুণগুণ করছে। কাকা বাবু ঘরে ঢুকল। সাজেদুল তুমি রাতে কিছু খেয়েছ? নানা কাকা; আমি কিছু খাইনি। সাজেদুলের পকেটে টাকা-পয়সা নাই। তবু বলল; এখানে আসার আগে হালকা নাস্তা করেছি। রাতে না খেলেও চলবে কাকা। কাকা বাবু আপনি বাজারে যাবেন; কেন? একটি মশার কোয়েল আনলে ভাল হত। এই জংগলে কোয়েল জ্বালিয়ে মশা তাড়ানো যাবে না সাজেদুল! এখানে অল্প টাকায় ঘর ভাড়া পাওয়া যায় না। এই শহরে কেহ-কাউকে বিশ্বাস করে না। গল্পের ফাঁকে রাত বারোটা বেঁজে গেল। তবু সাজেদুলের চোখে ঘুম নাই। মশার কামড়ে সমস্ত শরীরে কাঁথা জড়ায়ে রক্ষা নেই তার। ভাবছে; সেদিন কেন মায়ের সাথে রাগ করে চলে এলাম। সারাটি রাত এভাবে কেটে গেল। সকালে সে কাকা বাবু সংগে নাস্তা খেল। এবার কাকা বাবু’র সংগে বাগানে গেল। সারাদিন বাগানে চা পাতা তোলা ও সেচ দেয়া দেখল। কোন কিছু ভাল লাগছে তার ভাবছে পঞ্চাশ টাকা বেতনে সারাদিন কাজ! কোন দিন শ্রমিকরা দুপুরের খাবার সঠিক সময় পাই না। এখন কী করব; আমাকে কয় টাকা বেতন দিবে; ভাবছে সাজেদুল।

ইতোমধ্যে শ্রমিকদের মুখে শুনেছে এক সপ্তাহ ম্যানেজার বাগানে আসবে না। তবে আমার ভাগ্যে কী কাজ জুটবে না? আমাকে তো একটা কাজ নিতেই হবে। এত’দিন কাকা বাবুর খরচে খেলাম। কাকার মুখে জানতে পারল ম্যানেজার আজ অফিসে আসবে। সাজেদুল মনোস্থ করল বাগানে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে দেখা করার। যদি সামান্য বেতনের একটি কাজ পাই তবে চলতে পারবে। ম্যানেজারের সংগে দেখা করে ছয়শ টাকা বেতনের কাজ পেল। সেখানে কয়েক তার মাস কেটে গেল। কিন্তু তার ভাগ্যের কোন উন্নতি হচ্ছে না। সাজেদুল ভাল কাজও পাচ্ছে না; মনে বড় হতাশা।

সাজেদুল বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মা যেন পাগল প্রায়। বাবা জলিল ভুঁইয়া নিজ ব্যবসার কাজ কর্ম ছেড়ে ঢাকা শহরের আশপাশের জেলাগুলোতে ছেলেকে খুঁজেছে। ছেলে হারানোর কথা বন্ধু বান্ধবকেও বলেছেন। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ মিলেনি। এবার পত্রিকাতে পরপর কয়েকদিন হারানো বিজ্ঞাপন ছাপানো হলো। এতেও ছেলের কোথাও সন্ধ্যান পেল না। সাজেদুল সবুজ সমারোহ চা বাগানের নিবিড় অরণ্যে থাকে। সেখান থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার। পত্রিকা আসলেও হারানো বিজ্ঞপ্তি পড়ার আগ্রহ ক’জন পাঠকের থাকে?। এভাবে দীর্ঘ কয়েক মাস কেটে গেলো। একমাত্র ছেলের কোথাও কোন খোঁজ না পেয়ে ভুঁইয়া সাহেবের মন যেনো নির্বাক। বয়ের ভারে আর ছেলে চিন্তায় চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। মা-বাবার মনে ছেলে হারানো বেদনা কন্যা সৌরভি স্বচোখে দেখছে। কিন্তু কিভাবে ভাইকে খোঁজে পাবে? তবুও মা-বাবাবে সুস্থ রাখার জন্য সৌরভির চেষ্টার কমতি নাই। সৌরভি ছোট্ট হলেও ধর্মপরায়ণ। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বজায় চলা স্বভাব তার শৈশবে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। একদিকে মা-বাবাকে শান্ত¦না দিয়ে সুস্থ রাখা। অন্যদিকে একমাত্র ভাইকে ফিরে না পাওয়ার আকাঙ্খার শেষ নাই। রাতে একাকি জায়নামাজ বিছিয়ে নফল নামাজ আদায় করে দু’আ করে। ভাইকে ফিরে পাওয়ার জন্য ছোট মেয়ের প্রার্থনা প্রত্যক্ষ করে তার মা যেনো প্রাণে শান্তি পান। এদিকে জালাল ভুঁইয়া একমাত্র ছেলের শোকে ব্যবসা গুটিয়ে বসার পথে। শুধুমাত্র কর্মচারীর উপর নির্ভর করায় বেশ লকসানের মুখে পড়েন। কিন্তু তাতেও যেন ভুঁইয়ার দুঃখ নাই। এভাবে সাজেদুলের শোকে পুরো পরিবার যেনো দিনদিন ধ্বংসের মুখে ধাপিত হলো। ( চলবে)

অভিমানে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

সাজেদুল ক’দিন আগে মায়ের সাথে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে অজানা অচেনা শহরে এসেছে। সিলেটের উঁচু ঢিপির উপর বাড়ি, গাছপালা, চা বাগান দেখে তার মন জুড়িয়ে গেছে। দিনের বেলায় বেশ ঘুরাঘুরি করতে শেষ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে কোথায় যাব; কোথায় থাকব ইত্যাদি চিন্তায় শহরের পথ চলছে। অচেনা শহরে কারো সাথে চেনা পরিচয় নাই নিজেকে বড় অসহায় মনে করছে। ভাবছে কেন বাড়ি থেকে মায়ের বোকা-ঝোকা খেয়ে চলে এলাম। তবুও তার অভিমানের কথা যেনো ফুরায় না। সারাদিন শহরের আকাঁবাকা পাহাড়ি পথ হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। খাওয়া-দাওয়া নেই। পথের ধারে নির্জন চৌকিতে বসে ঘুমিয়ে পড়ল। কখন যেনো নির্ভয়ে রাত পোহাল জানে না সাজেদুল। সকালে সজাগ হয়ে ভাবছে এই নির্জন এলাকায় সারা রাত একা ছিলাম! পাড়ার শৈশবের স্মৃতিগুলো তার খুব মনে পড়ছে। পাড়ার বন্ধুরা না জানি কে কী করছে। স্বল্প সময় তার মনে হয়; কতদিন যেনো বন্ধুদের সাথে দেখা নাই।

পৃথিবীর সব সৃষ্টি প্রকৃতির নিয়মে বদলায়। জীবনে কত প্রাপ্তী অপ্রাপ্তী থেকে যায়। আর প্রাপ্ত বয়সে সৃষ্টিকুল ঝড়ে যায়। কী নির্জন আর ভয়ানক অন্ধকার; যেখানে কোন সঙ্গী নেই। চা বাগানের জঙ্গলের পাশে এই চৌকিতে একাই রাত কাটলাম। এখন বড্ড খিদে পেয়েছে; পকেটে মাত্র কুড়ি টাকা। এভাবে আর ক’দিন চলা যাবে। কোথাও একটা কাজ যোগাড় করতে হবে। কিন্তু এই অচেনা শহরে কে তাকে কাজ দেবে। এমন সময় একজন পথচারীকে কাছে পেয়ে সাজেদুল জিজ্ঞাস করল কাকা দোকান কত দূরে? সাজেদুলের কথা শুনে লোকটির প্রশ্ন তোমার কী দরকার? সে ভীতস্বরে বলল; শহরে নতুন এসেছি। এই এলাকা সম্পর্কে চেনা-জানা নাই। কাকা আমাকে খিদে লেগেছে তাই দোকান খুঁজছি। এখানে কোন দোকান নাই। শ্রমিকেরা এ চৌকিতে চা পাতা তোলে জড়ো করেন। আমার সাথে চল; তোমাকে দোকান দেখায়ে দিব। সাজেদুল তার সাথে পথ চলতে লাগল। লোকটি গল্পের ফাঁকে তাকে জিজ্ঞাসা করল; কেন তুমি অচেনা শহরে একা চলে এসেছ। এখানে কী তোমার কোন আত্মীয় আছে। কাকা না তো এখানে আমার কেউ নাই। তাহলে অজানা-অচেনা শহরে তুমি …?।

কাকা, আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। সেদিন ছিলো রোববার। বাড়িতে বাবা নাই। আমি ছোট বোন চম্পাসহ বাড়িতে ছিলাম। সকালে নাস্তা খেয়ে মা’কে বলিনি। বাড়ির অদূরে গিয়ে পাড়ার ছেলেদের সংগে সাতগুটি খেলি। খেলা শেষে বাড়িতে গেলাম। বোন চম্পা বলল; ভাইয়া মা তোমাকে স্কুলে যাবার জন্য আশপাশে খুঁেজছে। একটু পরেই মা বাড়িতে এলো। আমাকে ঘরে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে জিজ্ঞাস করল কোথায় ছিলে ? কেন স্কুলে গেলে না। আমি ভয়ে থরথরে কাঁপছি। তখন মা’র ভীষণ রাগ দেখে চুপচাপ ছিলাম। মা’কে একবার বলেছি খেলার জন্য স্কুলে যেতে পারিনি। যে কারনে মা আমাকে সারাদিন ঘরে আটকে রাখে। যতক্ষণ না স্কুল ছুটি হয়; ততক্ষনে খেতেও দেননি। বিকেল সাড়ে চারটায় আমাকে ঘরের দরজা খুলে দিল। মা বলল তুমি আর কোন দিন স্কুল ফাঁকি দিবে?। তখনো মা’কে কোন উত্তর করিনি। মা যখন খাবার কথা বলে পাশের ঘরে গেলেন। আমি এই সুযোগে স্কুল ব্যাগে কাপড় গুছিয়ে অভিমান করে ট্রেনে চড়ে সিলেটে চলে এসেছি।

সাজেদুলের কথা শোনে লোকটি চলতি পথে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়াল। তার পিঠে হাত বুলিয়ে আক্ষেভ স্বরে বলল; ভুল করেছ! তুমি ভুল করেছো!। আবার পথ চলা শুরু করল। কাকা বাবু সাজেদুলকে বলল; আমি এগারো বছর আগে বাড়িতে বাবার সাথে রাগ করে ঘর ছেড়েছি। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। এখনো বাড়িতে যায়নি। একটি কোম্পানীতে ছোট পদে চাকুরি নিয়েছি। মাসিক বেতন মাত্র নয়’শ টাকা। আমার আব্বা ছিলেন পড়া শোনার ব্যাপারে বেশ যতœশীল। বাড়ি থেকে আসার দীর্ঘদিন হলো ভাগ্যের কোন উন্নতি করতে পারেনি। শুধু অভিমান করে জীবনকে ধ্বংসের মুখে ধাপিত করেছি। আমার সেদিন থেকে লেখাপড়া কপাল থেকে উঠে গেছে। আজ বড্ড আপসোস করি। কিন্তু এখন আপসোস করে কোন লাভ নাই। জীবনে কিশোর বয়সে যা হারায়েছি; পৌঢ় বয়সে সেই ক্ষতি আর কখনো পুরণ হবে না। আমি আর বাড়িতে যায়নি।
সাজেদুল দেখছে কাকার চোখের পানি কপোলে গড়িয়ে পড়ছে। কাকা ভিজে গলায় বলল আজ বাবা-মা ও ছোট বোনেরা কে কোথায় আছে জানিনা! আমি সেই ভুলের মাশুল আদৌ পুরণ করতে পারিনি। আর কোন দিন পারবো না। কাকা এতক্ষণ তার শৈশব অভিমানের স্মৃতিচারণ করল। বলল সাজেদুল জান; মনে হয় দেশের বাড়ি গিয়ে মা-বাবার খোঁজ করি। কিন্তু আমাকে চিনতে পারবে কি ? যদি চিনে ফেলে তাহলে লজ্জায় কিভাবে মুখ দেখাব। আমার এতসব ভাবনা-চিন্তার কারণে আদৌ বাড়ি যাওয়া হয়নি। এতক্ষনে বাজারে একটি দোকান পেলাম। কাকা বাবু সাজেদুলকে কাগজের টুকরায় ঠিকানা লিখে দিল। আর বলল তুমি নাস্তা শেষে আশপাশ বেড়াও। সন্ধ্যায় এই ঠিকানায় চলে এসো। আমি কোম্পানীর কাজে গেলাম। (চলবে)

পরকাল ঘিরে

চলতে ফিরতে হিসাব করি দুনিয়াদারী
ধন সম্পদ গড়তে হবে চল ফিকির করি
সম্পদ এলো ঘরে দেউলিয়া হই ভবে
দেমাকে ধ্বংস তারা দুনিয়ার ঘরে।

ন্যায়-অন্যায় মানি নাকো অর্থ অর্জনে
যত পাই তত চাই দুনিয়ার ঘরে ঘরে
ঢের সম্পদ জমা হলে অংহকারে মরে
যার পরানে ধ্বংস হলে মানবের তরে।

দুনিয়াবী ফিকিরে থাকি খোদাকে ভুলি
শুকুর গোজার করি নাকো সৃষ্টি ভবে
মানব সমাজ চলে তাঁর রহমত ঘরে
তবু মোরা বুঝি না খোদার সৃষ্টিকে।

হুস থাকতে শপথ নিবো সৎ পথে
দুনিয়াদারীর কাজে পরকাল খুজে
করবো সম্বল মোরা শেষ দিন যপে
মনে রাখি দুনিয়াদারী পরকাল ঘিরে।
-০-
১৫.০৩.১৭ রাত ১১.৯ মিনিট

ভোর বেলা

আজ ভোরে প্রার্থনা করি
নানা পাখির গান শুনি
প্রাণ ভরে শ্বাস নিলাম
সতেজ বায়ু শরীরে ধরি।

বাড়ির পাশে আম বাগান
কোকিলের ডাকে ভরে প্রাণ
ঘুঘু পাখি ছুটাছুটি সাথে গান
ঘাসে শিশির কনা স্বর্ণের মান।

আকাশে সাদা মেঘের ভেলা
মেঘের ঠেলাঠেলি বসে মেলা
রবির হাসি আকাশের বুকে
প্রকৃতি ভরা সুন্দর কুদরতে।

দিন ভাল যাক করি প্রার্থনা
খোদা রক্ষা কর যত যাতনা
বিশ্ব সুখের হোক সবার নীড়ে
দুষ্কৃতি দূর হোক দুনিয়া ভরে।

সৃষ্টির নানারুপ জগৎ ভরা
মানব ভুলে বিধাতার খেলা
সম্মান অটুট রাখ তুমি খোদা
ভাল হোক সবার সারা বেলা।
০৯-১০-১৭, রাত- ১১.৪৫

সৎ অর্থে জয়

অর্থ চাই-অর্থ চাই চলতে ফিরতে অর্থ চাই
অর্থ যখন অনর্থের মূল জীবন বাঁচা দায়
অর্থ দিয়ে ভাল মন্দ দুনিয়ায় করা যায়
অভাবের মাঝে গড়েছি সুখ তাতে ভাই।

শোকর গোজার করি নাকো আরো অর্থ চাই
দুনিয়া নিয়েই ভাবি শুধু পরকাল ভুয়ে যায়
অসৎ অর্থই গড়া সংসার তিলে তিলে ছাই
সন্তানাদি নষ্ট পিতার উপরি ইনকাম ভাই।

অর্থের অহংকারে কারো মনুষ্যত্ব নাই
সমাজে সেই ধনী লোক অর্থ আছে তাই
গরীব ঘরে সম্মান আছে অনেকের নাই
সম্মান বিধ্বংসী অর্থ ভবিষ্যৎ না চাই।

চলব ভাই সৎ ভাবে কষ্টে উপার্জন হবে
জীবনে পথ চলা সারাক্ষণে শপথ ভবে
রাতে চোখে ঘুম নাই ঋণ মহাজন তাই
জীবনের তরী ভিড়াতে শৈশব যুদ্ধ ভাই।

খোদা সহায় হলে সৎ অর্থে হবে জয়
তবু মনে ভয় মানবতা না হয় ক্ষয়।
-০-
০৮-১০-১৭ রাত ১১.১৩ মিনিট

বিশ্ব মনুষ্যহীন অন্ধ সূচি

অনেক হয়েছে দাঙ্গা ফেসাৎ এখন আর নয়’
দেশের কল্যাণে প্রত্যেকে করি জীবনের জয়
সময় থাকতে করব কল্যাণ দেশ মাতৃকার
মানব সেবায় নাম লিখাব দীর্ঘ পথ চলার।

চারদিকে হানাহানি ধর্ষণ আর খুনের সংবাদ
সভ্য এই মানব সমাজে কেন হবে হীন কাজ
প্রত্যেকে মোরা পড়ের তরে বিলিয়ে দিব প্রাণ
অসহায় মানুষের হাতে তুলে দিব কিছু ত্রাণ।

সততা সহমর্মিতা দ্বারা গড়ে তুলি নতুন দিগন্ত
যার আলোয় আলোকিত হবে গোটা বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ড
নতুন কোন দীক্ষা নিব ধরা মানব সন্ধানে
আসুন শপথ করি দেশ ও দশের কল্যাণে।

রুখব দুর্নীতির হাত গড়ব এক সভ্য সমাজ
দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে সকলে চলব ঐক্যস্বরে
সবার সুখ থাকবে ঘিরে এতিম অনাথ শিশুতে
নারীর সম্মান অটুট হবে নির্ভয়ে পথ চলবে।

এই বিশ্বমন্ডলে করে নানা জাতি মানব বাস
প্রত্যেকে চলব মিলে মিশে থাকবে সৌহার্দ ভাব
তবে কেন অসহায় বাস্তুহারা উদ্বাস্তু বৃহৎ জাতি
যাদের রক্তে রঞ্জিত বিশ্ব মনুষ্যহীন অন্ধ সূচি।

ঘুষের আরেক নাম স্প্রীট মানি !

সভ্যতার আদি থেকেই মানব সমাজে দূর্নীতির অস্তিত্ব ছিল; যা এখন আরও প্রকটভাবে বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে মানুষের সীমাহীন চাহিদা ও লোভ এবং সীমিত সাধ্যের মধ্যে থাকার যে সংঘাত, তা থেকেই দূর্নীতির উদ্ভব। বিভিন্ন প্রাচীন র্ধমগ্রন্থে দূর্নীতি বিরোধী বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়। পবিত্র কোরআন, বাইবলে, বেদসহ নানা র্ধমগ্রন্থে দূর্নীতির কুফল ও পরিণাম বিষদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ অত্র উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত দন্ডবিধিতেও দূর্নীতি মূলক অপরাধের শাস্তির বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দূর্নীতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে। চানক্যের অর্থশাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকারের দুর্নীতির বিশদ বিবরণ রয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের চেষ্টাও প্রাচীন। ১৮৬০ সনে প্রণীত দ-বিধিতে কতিপয় অপরাধমূলক কার্যকে দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে দ-ের বিধান আরোপ করা হয়। তবে এ দ-বিধি প্রচলিত হওয়ার পূর্বেও এ দেশে এ জাতীয় অপরাধের দ-ের বিধান ছিল। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, দ-বিধি ১৮৬০ প্রণয়নের মাধ্যমে দুর্নীতিসংক্রান্ত অপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার আইনগত কাঠামো সৃষ্টি হয় ।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৪ সনে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণকর্মচারীদের দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সনে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ বলবৎ করা হয়। দুর্নীতি দমনে জারিকৃত এ আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পুলিশ বিভাগের ওপর। এতে কাক্সিক্ষত ফল অর্জিত না হওয়ায় দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে একটি পৃথক সরকারি দপ্তর তথা দুর্নীতি দমন ব্যুরো গঠনসহ অন্যান্য লক্ষ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন আইন, ১৯৫৭ বলবৎ করা হয়। প্রাথমিকভাবে অস্থ’ায়ী দপ্তর হিসেবে কাজ করলেও ১৯৬৭ সন থেকে একটি স্থায়ী দপ্তর হিসেবে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর স্বাধীনভাবে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করার আইনি সুযোগ ছিল না।
১৯৫৭ সনে দুর্নীতি দমনের নিমিত্তে একটি পৃথক প্রতিষ্ঠান তথা দূর্নীতি দমন ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত আইনে কেবলমাত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি নিবারণ র্কাযক্রম পরিচালিত হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সকলের কাছেই এটি প্রতিবাদ হয় যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক যত কঠোর আইন-ই প্রণয়ন করা হোক না কেন; এর বিরুদ্ধে জনসচতেনতা বৃদ্ধি করা ব্যতীত এবং গণর্কমচারীদের ভিতরে দুর্নীতি বিরোধী মানসিকতা তৈরী ছাড়া দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। এসকল বাস্তবতা অনুধাবন করেই দুর্নীতি দমনমূলক র্কাযক্রমরে পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক র্কাযক্রম পরিচালনাকে গুরুত্ব দেয়ার আবশ্যকতা দেখে দেয়। সময়ের সাথে সাথে র্দুনীতির প্রকার প্রকরণ পরিবর্তিত হওয়ায় এবং দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম সুসংহত করার জন্য ২০০৪ সালরে ২১ নভেম্বর হতে দুর্নীতি দমন কমশিন আইনরে মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন যাত্রা শুরু করে।
একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর জরিপে বাংলাদেশ একাধিকবার শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে দেশের সাধারণ মানুষ, উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্টদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সনের ২১শে নভেম্বর “বাংলাদেশ ব্যুরো অব এন্টিকরাপশন” বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দুদক প্রতিষ্ঠার পর অর্থ ও মুদ্রা পাচার, ভূমি, ভূমি রাজস্ব ও ইজারা, ঘুষ (অর্থ, সম্পদ বা সেবা), অবৈধ উপায়ে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ অর্জন, নির্মাণ কাজ ও যোগাযোগ খাতে দুর্নীতি, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ও বেসরকারি সংস্থাসমূহে দুর্নীতি, শুল্ক ও কর, রাজস্ব, ব্যবসায়ী/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ, সরকারি ক্রয়-বিক্রয়, লাইসেন্স ইস্যু করা, অঙ্গীকারের শপথ ভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুদক আইন-২০০৪-এর তফসিলে উল্লিখিত অপরাধসমূহ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তুর্ভুক্ত হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০১৪ সালের প্রতিবেদন অনুসারে-২০১৩ সালের অনিষ্পন্ন অনুসন্ধানের সংখ্যা ছিল ৩১২১। এসব অনিষ্পন্ন অনুসন্ধানের মধ্যেও কমিশন ২০১৪ সালে ৪৬৫৪টি নতুন অনুসন্ধান কাজ হাতে নিয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে দুদকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১২৫০০টি এর অধিক অভিযোগ আসে, যার মধ্যে ১৬৮৯টি অনুসন্ধানের জন্যে গৃহীত হয় এবং ২৩৭টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ করা হয়। কমিশন ২০১৪ সালে সর্বমোট ৭৭৭৫টি অনুসন্ধান কাজের মধ্যে ৩৭৭৫টি নিষ্পত্তি করেছে। সম্পন্ন এসব অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে কমিশন ৩৩৩টি এজাহারও দায়ের করেছে। বাকী সম্পন্ন অনুসন্ধানগুলোর ফলাফল কমিশনের রেকর্ডের জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। কমিশনের তফসিলভুক্ত দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের হাতে-নাতে ধরতে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী অথবা নির্বাচিত অথবা মনোনীত জনপ্রতিনিধি কোনো কাজের জন্য ঘুষ দাবী করলে ঘুষ প্রদানের পূর্বেই তথ্যটি দুদকের প্রধান কার্যালয় অথবা নিকটস্থ’ দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণকারীকে ফাঁদ পেতে হাতে-নাতে ধরার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এসব অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে দুর্নীতির উৎস স্থল।
দুর্নীতি বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম অন্তরায়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে দুর্নীতি। একবিংশ শতাব্দীর পর দেশে ঘুষ-দুর্নীতির প্রভাব ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি চাকুরি প্রাপ্তি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে। বিভিন্ন টেন্ডার কাজে দুর্নীতি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন তপশীলি ব্যাংকে ঋণ প্রদানের ক্ষেতেও দুর্নীতির মাত্রা ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। বিশেষ করে কৃষি ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোতে সাধারণ কৃষকরা ঋণ গ্রহণের আগে ও পরে অনিয়ম দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। দেশের চিকিৎসা সেবা এখন সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক কারবার শুরু হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও কুচিং বাণিজ্য করছেন। কিছু জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিক জনসেবার আদলে দলের পদবী নিয়ে ক্ষমতায় পাকাপুক্ত হলে নানাভাবে অন্যায় দূর্নীতির আশ্রয় প্রশয় দিয়ে থাকেন। দেশের অফিস-আদালতের স্তরে স্তরে দুর্নীতির শাখা-প্রশাখা রীতিমত শেখড়ে পৌছে গেছে। চলমান ঘুষ-দুর্নীতির মহাউৎসবে জাতির গোড়ায় পচন ধরেছে। এই ঘুষ-দুর্নীতির ছোবল থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অফিস-আদালতে ঘুষ-দুর্নীতি কমেছে..? ঘুষ ছাড়া কী কোন কাজ করতে পারি..? আপামর জনসাধারণ কি সচেতন হয়েছে..? এসব প্রশ্নের জবাব আমজনতা অনেক ভাবে দিতে পারবেন। আমার যুক্তি তর্ক সচেতন পাঠকদের সংগে গড়মিল হতে পারে। কারণ একেক জনের চিন্তা চেতনা ভিন্ন।
আমি মনে করি, দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের পরে ঘুষ-দুর্নীতি শব্দটির লাগাম খুব বেশি না হলেও কিছুটা টানা পড়েছে। ফলে প্রকাশ্যে ঘুষ-দুর্নীতি কিছুটা কমেছে। কিন্তু জাতির শেখড়ে ঘুষ-দুর্নীতি কমেনি। তথ্য-প্রযুক্তির যুগের সংগে তাল মিলায়ে ঘুষ-দুর্নীতির লেনদেনে পরিবর্তন এসেছে। ঘুষ-শব্দটি পরিবর্তন হয়ে নতুন নামকরণ হয়েছে ‘‘স্প্রীট মানি’’। এই নতুন শব্দটি এখন অফিস-আদালতে ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও ঘুষের বিপরীতে নতুন শব্দ ‘‘স্প্রীট মানি’’ কথাটি শুনেছেন একজন ১ম শ্রেণির চিকিৎসক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি পেশায় একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। বর্তমানে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। তিনি তেঁতুলিয়ায় সরকারি চাকুরিতে যোগদানের পর মাসিক বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির জন্য নিয়মানুযায়ী যাবতীয় কাগজপত্র তেঁতুলিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার দপ্তরে জমা দেবার পরও দীর্ঘ কয়েক মাস ঘুরেছেন। তিনি ন্যায্য বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। কিন্তু উদীয়মান চিকিৎসক তাঁর নীতিতে অটল থেকে বৈধভাবে কাজ হাসিলের চেষ্টা করেন। এজন্য হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিট অফিসার সহ অন্যান্য কর্মচারীদের কথামত দীর্ঘদিন ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।
আমি বিষয়টি জেনে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলি। সেদিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে বাহিরে ছিলেন। তিনি মুঠোফোনে আমার পরিচয় জেনে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য পরের সপ্তাহে অফিসে যেতে বলেন। আমি হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কথামত যথারীতি ভুক্তভোগী চিকিৎসক সহ অফিসে যায়। এই অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সাংকেতিক নাম (গোকি)। তিনি দেশের মফস্বল সাংবাদিক সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা আদলে আমাকেও সেই পাল্লায় উঠালেন। একপর্যায়ে তিনি নিজেও সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বলে জাহির করে তার ভিজিটিং কার্ড তুলে দেন। তাঁর কথা শেষে কিছুটা যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে বুঝালাম ওই ধরণের সাংবাদিক আমি নই। এবার তিনি চিকিৎসকের কাজটি অর্থাৎ বেতন-ভাতার ‘পে-ভিক্সেসন’ করে দিলেন। আমি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম। এই সুযোগে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ভুক্তভোগী চিকিৎসক কে বুঝালেন এসব কাজে ‘স্প্রীট মানি’ লাগে। ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসকের মুখে পরক্ষণে শুনলাম নঁথিপত্র প্রস্তুত করতে ঘুষ লাগে না ‘‘স্প্রীট মানি’’ লাগে। ঘটনা চলতি বছরের শুরুর দিকে কিন্তু সময়ের অভাবে লেখনি প্রকাশ করতে পারিনি।
আমাদের দেশে দুর্নীতি কমবেশী সব ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কিন্তু কেউ দুর্নীতি করতে সহায়তা করেন; কেউ কেউ প্রতিবাদ করেন। তবে প্রতিবাদকারীর সংখ্যা খুব সীমিত। এখনো অনেকে ঘুষের টাকা দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেন। আর কোন কারণে স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে তখন দুর্নীতির বিরুদ্ধের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেন। এরআগে দুর্নীতিকারীর বিষদাঁত না ভেঙ্গে স্বার্থ হাসিলের জন্য নিশ্চুপ থাকেন। এখনো সময় আছে দেশকে দুর্নীতির কোরাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য সকলের প্রতিবাদী হতে হবে। নিজ নিজ পরিবার থেকে দুর্নীতিমুক্ত পরিবার গঠনে কাজ করতে হবে। প্রত্যেককে মনে শপথ নিতে হবে ‘নিজে দুর্নীতি করব না; কারো দুর্নীতি মানব না’। এক্ষেতে উপজেলা/জেলা/ইউনিয়ন দুর্নীতি দমন কমিটিকে শক্তিশালী করে জনসচেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রত্যেককে নিজ পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের মাঝে দুর্নীতি বিরোধি চেতনা সৃষ্টি করতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সমাজ থেকে অন্যায়,ঘুষ-দুর্নীতি, স্প্রীট মানি ইত্যাদি শব্দগুলো চিরতরে নির্মুল করতে পারলে বাংলাদেশ একদিন সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিতি লাভ করবে। #

ভৌগোলিক তেঁতুলিয়া

সাত ইউনিয়ন সীমানা ছয় নদী ধারে
বাংলাবান্ধা শেষ তিরনই নদীর পাড়ে
তিরনইহাট সীমানা ধরি নদীর দক্ষিণে
তেঁতুলিয়া শুরু রণচন্ডি নদীর কিনারে।

শালবাহান সীমানা বেরং নদী ঘেঁষে
বুড়াবুড়ীর শুরু ডাহুক নদীর শেষে
ভজনপুর শেষ নদী করতোয়া বেশ
দেবনগড় শুরু তেঁতুলিয়া থানা শেষ।

পিকনিক কর্ণার ডাকবাংলো ধরে
মহানন্দার ধারে পর্যটক মন নড়ে
তিন-তেঁতুলগাছ বাঁধা ঐতিহ্য রেশ
তেঁতুলিয়া বন্দর শিবমন্দির বেশ।

শালবাহান হাট বড় দুুই দিন বসে
রওশনপুর আনন্দধারা পর্যটক চুষে
গ্রাম-বাংলার মিঠোপথ সবুজে ঘেরা
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর বানিজ্যে সেরা।

সমতলে চা বাগান নুঁড়ি পাথর খনি
শ্রমিক পাথর তুলে মহানন্দার মনি
ভারত সৈনিক গুলি ছুঁড়ে প্রাণে ভয়
নদীতে জীবন বাজি শ্রমিকের জয়।

ভারত-বাংলা খন্ড মহানন্দা নদী রেস
তিনদিক কাটা তার ঘেরা দ্বিপের দেশ
সড়ক ঘেঁষে চা বাগান নয়নে বিদেশ
নদী-সবুজে ঘেরা ভৌগোলিক পরিবেশ।
-০-
০৭/০৯/১৭ খ্রি. (রাত-বিসিই-তে)

ভাদ্রের দিনে

ভাদ্র-আশ্বিনে মেঘের ডাক
শরৎ ঋতু দু’মাস
ভর দুপুরে কালো মেঘ
বিজলী ভয়ে দিন শেষ।

বজ্র কন্ঠে মেঘের ডাক
বিকম্পিত ঘর শিরে বাজ
বৃষ্টি যখন থেমে গেলো
চারদিক আঁধার হলো।

পাখ-পাখালি নীড়ে ফিরে
জেলে ছুটে নদীর তীরে
টোপর মাথায় রাখাল ছুটে
গোঁধুলী বেলা আলো ফুটে।

বিকট শব্দে ভয় ধরে
সতেরো ভাদ্র বিকাল পড়ে
মুষল ধারে বৃষ্টি হলো
ঘরে অলস দিন গেলো।

সকাল-দুপুর গরম করে
রাত পোহালে শীত পড়ে
ভেসপা গরমে তাল পাকে
ঈদ উৎসব বাংলার ঘরে।
-০-
০১-০৯-১৭ (বাড়িতে)

রহিঙ্গা মায়ের আর্তনাদ

প্রাচীন কালে আরাকান মায়ানমারে অবস্থান
রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে বুদ্ধিস্টের শ্লোগান
হেলিকপ্টারে ফেলে বোমা নিষ্ঠুর নির্যাতন
ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিলো ক্ষ্যান্ত হয়নি মন।

নারী শিশু বাস্তুহারা নির্যাতনের বিভীষিকা
মায়ানমার আকাশে রোহিঙ্গা লাশের ধোঁয়া
বাঁচাও বাঁচাও নারী শিশুর করুণ চিৎকার
বিজেপি সেনার মন গলেনা করছে উল্লাস।

নাফ নদী দেয় পাড়ি একটু ঠাঁই পাই যদি
ভাসমান নৌকা ভর্তি রহিঙ্গাদের করে গুলি
জলে আছরে পড়ে শিশুর জীবন হয় বলি
গুলিতে প্রাণ গেলো নদীতে ভাসছে লাশ।

বাস্তুহারা রহিঙ্গাদের বনে জলে নাই ঠাঁই
জাতিসংঘ মানবাধিকার দেখেও দেখে না!
নির্যাতনের নির্লজ্জ হাসি সিঙ্গাপুরে অংসাং সুচি
শান্তিতে নোবেল জয়ী হিংসায় এ মানস পরি।

নানা দেশের প্রতিবাদ রহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ হোক
স্ট্রিম রুলারের ন্যায় বিজেপি বাড়লো ক্ষোভ
রাতদিনে ফিরায়ে দিলো নদীতে ভাসে রহিঙ্গা
চীনের সীমান্ত খুলে দেয়ায় কিছুটা ঠাঁই হলো।

নারীর ওপর বিজেপি সেনার শারীরিক নির্যাতন
পুরুষের গলা কাটে অবাধে চলে রহিঙ্গা নির্ধন
যুগযুগ চলা রহিঙ্গা নির্যাতনের নাই কোন রহম
বিধাতা কবুল করো রহিঙ্গা মায়ের আর্তনাদ।
-০
২১ ফেব্রুয়ারী-২০১৭ খ্রি. অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় প্রকাশিত “লাল সবুজের পতাকা হাতে যোদ্ধা ফিরে ঘরে” আমার লিখা কাব্য বই থেকে।

দূরন্ত পথিক

দূর দূরান্তে ছুটে যাও পথিক
কর্মে থাক মশগুল,
মনে চিন্তা; জীবন যুদ্ধে নাই কূল !

সাহস রাখ; ধৈর্য ধর,
শৈশব থেকে দুঃখ কর জয়।

নির্ভয়ে পথ চলো; সদা সাহস রাখ,
লোভ লালসা ভুলে যাবে;
সৎ কর্মেই জয়ী হবে।

জাতির হাল ধর তুমি কর্ণধার,
দূরন্ত পথ হোক স্বচ্ছতার।
-০-
২০-০৮-১৭
সকাল-৭.১৫ মিনিট।

ঘুম ভাঙ্গেনি

স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পেরিয়ে গেল
ওহে বীর-বাঙ্গালি এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি!
বিচার হলেও অপরাধ প্রবণতা কমেনি
দেশে নারী-শিশুর জুলুম নির্যাতন বৃদ্ধি,
কখন জাগবে আগামীর বীর সেনা ?

বাংলার দামাল জেগে উঠ ন্যায়ের পথে
সমাজে যত অন্যায় দুর্নীতি নিমূল করো।
বাংলার স্থপতি পাইনি স্বাধিকারের সাধ
জাতি দমাতে ষড়যন্ত্র ছিল বিদেশী হাত,
বাংলায় দোসরের লিপ্সা আদৌ মেটেনি।

স্নায়ু সমরে ঘেরা বাঙ্গালি ও বাংলার মাটি
দেশে উন্নয়ন ঘিরে ষড়যন্ত্র বুঝেনা জাতি।
এক-এগারর সমস্যায় দেশে ডামাডোল
বন্যা-খরা, আইলা-সিডর প্রকৃতির চাপ,
দেশে মুক্তির নাই ফাঁক সবে দেয় ধাপ।

হে বীর বাঙ্গালি জেগে উঠ সময়ে হাল ধর
একাত্তরের রক্ত ঝড়া পীড়িত দেশকে গড়।
যুবকে কর্ম দাও মোচন করো ঘুষ কারবার
আগামীকে পথ দেখাও সত্য-ন্যায়ে চলার,
যখন দেশে সময় এলো খোলা জানালার।
-০-
১৬ আগস্ট ১৭ (সকাল-৯.১৫)