ফেনা এর সকল পোস্ট

ফেনা সম্পর্কে

মুক্ত ও সাদা মনের মানুষ হতে আগে চাইতাম। কিন্তু এখন শুধু একটু মুক্তি চাই, চাই জীবনটা শেষ হবে এই অপেক্ষার অবসান।

ভালবাসি ( খুঁজে পেলাম ) [ধারাবাহিক কবিতা-২]

শীতের এক সকালে-
শিশিরের কোমলতা আর
সূর্যের প্রথম আলোয়
মনটা চনমন করে উঠে।

বাইরে বের হয়ে দেখি-
শুভ্র শাড়ি পড়ে কোমল চেহারার এক মেয়ে
খালি পায়ে-
ঘাসের ডগায় জমে থাকা
হিরার মত টুকরো শিশিরের জলের উপর-
অনেক সাবধানে হাটছে।
চুলে গুজে রেখেছে একটা লাউ ফুল
দুধ সাদা হাতে তার কলমি ফুল।

মনটা আমার শিহরিত হয়ে কুয়াশার মত দোল খায়।
একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যায়
মনে হতে থাকে; সে আমার হাজার বছরের চেনা।

তাহলে কি সে-ই আমার……

সামনে এগিয়ে নিঃশব্দে দাড়িয়ে থাকি।
খুব দ্রুত চোখের পলক ফেলতে ফেলতে
আমাকে বলে-
আপনি……..
আমি কি আপনাকে চিনি?!!
মনে হয়-
কিন্তু –
ঠিক মনে করতে পারছিনা।
বলেনতো আপনার সাথে আমার কোথায় দেখা হয়েছিল?

আমার ঠোঁটের কোনায় খুঁজে পাওয়ার আনন্দ।
তাকে বলি-
আমাকে ছুঁয়ে দেখ
তোমার সব মনে পড়বে।

তার দুধ সাদা একটা হাত আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে
আমাকে স্পর্শ করে
প্রচন্ড অস্থিরতায় কাঁপতে থাকে সে
কাপা কাপা গলায় বলতে থাকে-
এত দিন কোথায় ছিলা!

আর সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারেনি
জড়িয়ে ধরে- কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে থাকে
প্রতিজ্ঞা কর; আর হারাবেনা তুমি।।

ভালবাসি ( খুঁজছি ) [ধারাবাহিক কবিতা-১]

পৃথিবীতে আসার আগে
অনন্য সুন্দর এক মূহূর্তে-
সাক্ষাত হয়েছিল;
আমার প্রিয়তমার সাথে।

অনেক ভালবাসা জরানো কণ্ঠে বলেছিলাম-
আমার মমতা আর ভালবাসা
সাথে আমার শ্রেষ্ঠ সুখ; রেখ কিন্তু বুকে আগলে,
তোমার বুকের উষ্ণতার মাঝে।

ভুল করে হলেও দিওনা যেন কাউকে
এমনকি-
কেউ হাতও যেন না দেয় তাতে।

পৃথিবীতে আসলাম আজ অনেক দিন হল।
আমি রীতিমত যুবক হয়ে প্রিয়তমাকে খুঁজছি।
কিন্তু-
কি অদ্ভুত! কোথাও নেই সে।
চাপা অস্থিরতায়-
এই মেয়ে ওই মেয়ের দিকে চেয়ে থাকি।
একটা কষ্ট; হারিয়ে ফেলার বেদনা-
শুধু আহবান করে আমায়
তার সাগরে ঝাঁপ দিতে।
আমার সাহস হয়না।

ভালবাসাটা আমার আমিতে ছড়িয়ে থাকায়
একটা বিশ্বাস বাসা বেধে বড় হতে থাকে-
আমার বিশ্বাস; নিশ্চয় তাকে খুঁজে পাব আমি একদিন।

অনু গল্পঃ কুলসুম

জীবনে একটা মেয়েকেই ভালবেসেছি। কিন্তু কেন বা তার প্রতি ভালবাসার কারণ তা জানি না। তার প্রতি আমার ভালবাসাটা এতটাই তীব্র এখনো তাকে আমি আমার অস্তিত্বে অনুভব করি। অনুভব করি আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসের স্পন্দনের সাথে।

যখন ভাবি তাকে আর কখনো আমি পাবনা, তখন আমার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে। অর্থহীন লাগে সময়ের প্রতিটা মুহূর্তকে।

পারিবারিক চাপে বিয়ে করেছি। কিন্তু মনের দিক থেকে অনেকটাই উদাসীন ছিলাম। কিন্তু একদিন তুমি যখন বললে – “আমার জন্য তুমি একটা মেয়েকে কষ্ট দিও না। তাকে ঠকাইওনা। যদি কষ্ট দাও মনে করবা আমাকেও কষ্ট দিলা।“ মুহুর্তের জন্য আমি হ্যং হয়ে গেলাম। কোন উত্তর ছিল না আমার কাছে। চুপ চাপ হয়ে শুধু শুনেছি তোমার কথা। মনে আছে তোমার; তুমি জিজ্ঞাস করছিলা যে –“ তোমার বউ এর নাম কি?” উত্তরে বলেছিলাম কুলসুম। তুমিও সাথে সাথেই বলেছিলা “আরে আমাকে বউ ডাকতা আগে ঠিক ছিল। কিন্তু এখন আর আমাকে বউ বলে তিনটা জীবনের অশান্তি তৈরি করিও না।“ তখন আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। ওকে বললাম- একটু চোখটা নামাবা?? একটু রাগের চেহারায় তুমি – কেন? আমি তখন ভালবাসার ভয় নিয়ে বললাম- তুমি মনে হয় একটু রেগে গেছ। আরে আমার মনের বউ আর বিয়া করা বউ দুইজনের নামই কুলসুম। বুঝছ???

তার পর তোমার দিল ছিঁড়া হাসি, আমাকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। নদীর ঢেউ যেমন তীরে এসে আছড়ে পড়ে তেমনি তোমার শান্ত হাসি আমার বুকে একটা প্রশান্তি ঢেউ তুলে দেয়। আবার পরক্ষণেই এই মধুর মুহুর্তটা আমার কাছে হয়ে উঠে নিংড়ানো কষ্টের নীল কাব্য। অনুভব করতে থাকি আমার ভিতরে কলিজা ছিড়ে রক্ত ক্ষরণের অনুূভূতি।

অই দিনের পর থেকে বলে আসছ তুমি আমাকে ভালবাসনা। কিন্তু আমি বুঝি বা জানি তুমি অনেক ভালবাস আমাকে। কিন্তু তোমার চাপা স্বভাবের কারণে তোমার বুক ফাটবে ত মুখ ফাটবে না।

প্রকৃত ভালবাসা কি একেকটা মহা কাব্য!! নাকি কষ্টের নীল উপাখ্যান?? তোমার নীরবতার কারণেই আজ আমি এই প্রশ্নের মুখোমুখি।

চিঠি

অতঃপর-
আমার অনুভুতি ভরা চিঠিটা লিখেই ফেললাম,
তোমাকে জানাব বলে।

এই চিঠিতে আমার বুক ভরা ভালবাসার সাথে-
তোমার প্রতি আমার হৃদয়ের স্পন্দনের স্পর্শ লিখেছি।
প্রতিটা শব্দের মাঝে আমার বেঁচে থাকার কারণ বলেছি,
বলেছি; তুমি আমার প্রতিটি শ্বাসের উৎসের কথা।

প্রিয়, তুমি কি জান-
এই চিঠিটা আমার সমস্ত জীবনের বেঁচে থাকার প্রকাশ।

কারণ-
এই চিঠিটা পড়ে তোমার হ্যাঁ বা না বলাটাই;
আমার জীবনের গতিপথ মুহুর্তেই বদলে দিতে পারে।
একটা হ্যাঁ অথবা না-ই-
আমার জীবনটাকে স্বার্থক বা অনর্থক করে দিবে।

বুঝতে পারছ প্রিয়- এই চিঠিটা আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ??

একটা অনুরোধ প্রিয়-
তুমি আমার এই ভালবাসা মাখা চিঠিটা-
শুধু- একবার পড়ে নিও।
শুধু একবার।

উৎসর্গকৃত জীবন ( কষ্ট )

আমার আমিকে উৎসর্গ করেছিলাম তোমায়
ভেবেছিলাম তুমি খুব খুশি হবে-
বলবে-
“আমি খুশি। আর কিছু চাইনা।
তুমি সুস্থ থাক ভাল থাক। এবং মনে রেখ….
আমি তোমাকে ভালবাসি।”

কিন্তু কই-
তোমার রাগ আর অভিমান বেড়ে গেছে অনেক
বেড়েছে আমার প্রতি তোমার ঘৃণা-
তোমার অযোগ্য বলে দূরে ঠেলেছ
লেবু চিপার মত তেতু করে।

কিসে আমার অযোগ্যতা??? যন্ত্রনা পোষা বেকার জীবন???

বিশ্বাস কর সাবাহ্-
আমি তোমাকে খুব বেশি ভালবেসেছিলাম বলেই
তোমার প্রতিটা মূহূর্তকে আমার স্পর্শের বাইরে রাখতে চাইনি।
চেয়েছি…. চেয়েছি…..
তুমি হবে আমার প্রতিটা শ্বাসের প্রাণ
হবে তুমি আমার জীবনের শওকত শান
তোমার স্পর্শ হবে আমার হৃদয়ের দারকান।

আমার থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটা
আমি মানতে পারছিনা।
আমার কাছে মনে হয়-
একটা প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্নী ঝড় আমার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে।

আমি এখন নিঃস্ব। একা।

মাথাটা ভীষণ ঝিম ঝিম করে
বুকের ভিতর কি যেন একটা মোচড়ে উঠে-
কষ্ট অনুভব হয়।

উৎসর্গকৃত জীবন

আমি-
নিশিতে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে পারি তোমাকে।
প্রশ্ন করতে পার-
দিনে নয় কেন?
দিনের অপরাধ?

আমি ঠিক তোমাকে বুঝাতে পারবনা।।

আসলে তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা-
দিনে আমি কতটা অসহায় থাকি!!
কত গুলো কষ্ট আর যন্ত্রণাকে আমি
সেবা দিয়ে থাকি!!
অনেকটা ডে-কেয়ার সেন্টারের মত।

আর পর্দার পেছন থেকে ক্যামেরা ধরে থাকে কিছু-
বীভৎস অসহায়ত্বে বেড়ে উঠা
তরতাজা সাদাকাল বেকার জীবন।
তাদের সাথে একাত্মা প্রকাশ করে জ্বলন্ত বেনসন।
দিনের জমানো কষ্টগুলোকে
অল্প অল্প করে পুরে-
সময়ের শেষে তৈরী করে ছাঁই।
আর-
নিকোটিন যুক্ত ধোঁয়াকে পাঠানো হয় ভ্রাম্যমান আদালত করে,
অন্তর পরিদর্শনে।
সারাটা দিন ব্যাস্ত থাকি-
ঐ আদালতের প্রয়োগকৃত শাস্তি ভোগ করতে।

বুঝতে পারছ সাবাহ্??
আমি আসলেই দিনে সময় পাইনা।
তাই-
রাতের সময়টা তোমাকে উৎসর্গ করলাম।
রাতের সময়টা তোমাকে উৎসর্গ করলাম।
ঐ আদালতের প্রয়োগকৃত শাস্তি ভোগ করতে।

বুঝতে পারছ সাবাহ্??
আমি আসলেই দিনে সময় পাইনা।
তাই-
রাতের সময়টা তোমাকে উৎসর্গ করলাম।

স্বপ্ন-প্রিয়াশ্বরী (কাব্য গল্প)

এমন একটা দিন আসবে,
আমি আশাও করব সেই দিনের-
একই ট্রেনে
পাশা পাশি সীট হবে দু’জনার সীট।
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দু’জনে
আরও আবাক হব আমি
তুমি প্রিয়াশ্বরীকে দেখে।
তাও আমার পাশে-
খুব কাছে, ভীষণ কাছে।
ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে
তুমি বলবে-
তোমার হাতটা একটু ধরি?
আমি ভীষণ রকম আশ্চর্য হয়ে
মাথা নেড়ে সম্মতি জানাব।
আর-
ভাবতে থাকব
যার হাত ধরার জন্য, যার একটু উষ্ণতা পাবার জন্য
প্রিয়াশ্বরী প্রিয়াশ্বরী বলে মুখে ফেনা তুলেছি
কত রাত জেগে কাটিয়েছি-
করেছি কত কি!
কিন্তু-
আমার সেই প্রিয়াশ্বরী
তার কাছে টানেনি আমায়।
নিজেকে লুকিয়ে নিয়েছে
আমাকে অনুভুতিহীন রেখেই।
এর পর থেকে-
ভীষণ কষ্ট নিয়ে শুধুই-
স্মৃতির যাবর কেটেছি।
অভিযোগহীন একাকী জীবনটাকে নিয়ে সামনে এগিয়েছি
একটা কচ্ছপের মত।
হঠাত একদিন – এই ভাবে-
দেখা হবে ট্রেনে; ভাবতেই পারছিনা।
কী ভীষণ উষ্ণ ভাল লাগা।
দু’জনার মাঝে, আর কোন কথা নেই
শুধুই নিরব বসে থাকা,
হাতে হাত রেখে।
একটা সময় বুঝতে পারলাম
আমরা আমাদের গন্তব্যে চলে এসেছি
এই হাত আর ধরে রাখা যাবে না।
প্লাটফর্মে এসেও কোন কথা নেই
শুধুই নিরবতা।
একে অন্যের দিকে তাকিয়েই বিদায় জানালাম।
দু’জন দু’জনার থেকে দূরে সরে যেতে যেতে
আচমকা খেয়াল করলাম-
আমার প্রিয়াশ্বরীর চোখের কোনায়-
অশ্রু দানা।
আবেগে ওষ্ঠধর তার কাঁপছে।
সম্ভবত-
আমাকে নতুন করে এত কাছে পাওয়ার পরও
আবার হারানোর বেদনা তার।
এটা ভাবতেই- নিজের ভালবাসাকে
অনেক ধন্য মনে হল।
বুঝতে পারি-
প্রিয়াশ্বরীর মনের অনেকটা জায়গা জুরেই
আমার আমি ছিলাম।

(মেঘনার পাড়, আশুগঞ্জ)
শ্বপ্ন-প্রিয়াশ্বরী (কাব্য গল্প)