এ কে এম আব্দুল্লাহ এর সকল পোস্ট

এ কে এম আব্দুল্লাহ সম্পর্কে

কবি, সাহিত্যিক। প্রকাশিত গ্রন্থ: যে শহরে হারিয়ে ফেলেছি করোটি (কবিতা) / ইমেইল বডিতে সময়ের অনুবাদ (কবিতা)। ক্ষুধা ও সৌন্দর্য (উপন্যাস), টি-ব্রেকের গল্প(গল্প), শাজরাত কাঠের ক্যারাভ্যান ও আত্মার ফ্লেক্সিলোড ( কবিতা), Rat’s City Tour- (English)Story book for children.

পীড়িত দৃষ্টিপাত

ভোরের দেয়ালে লাগানো আয়না।
ক্রমশ বদলে যাচ্ছে আয়নার ভেতর-
দৃশ্যগুলো ক্লান্ত বহুকাল।
দৃশ্যের ফাঁকে আমরা বড় একা-
আটকে আছি অসুস্থ সময়ের আচ্ছাদনে।
তবুও আতঙ্ক আর দীর্ঘশ্বাস-
গোপন করে আকাশের দিকে তাকাই
দেখি, আমাদের বারান্দায় আকাশ থেকে-
ঝরছে নতুন চাঁদের ভাঙা ভাঙা আলো।

আমরা আধভাঙা বিশ্বাস নিয়ে—
তাকিয়ে থাকি সেই বারান্দার দিকে।

একটি মেয়াদোত্তীর্ণ অক্সিজেনপাইপের গল্প

জীবন থেমে আছে সময়ের মেদে; কারেন্টের জালে আটকে থাকা মাছের মতোন। স্পিনারের মতো ঘুরছে চোখ— নিঃশঙ্ক বাঁচার আকুলতায়।
তবুও চলো, হাওয়ায় দোলানো বেয়াড়া চুলের ঘ্রাণ জিইয়ে রাখি বিলের কিনারে।

বৃন্তের শক্ত বন্ধন ছিঁড়ে যাওয়া বোঁটার মতো— হৃদয় বেয়ে নেমে গেলে দুর্বোধ্য রাত। তোমার খোঁপায় গুজে রাখা নিশিগন্ধায় চেয়ে রবে যে কালের মৃত ভ্রমর; তার চোখ থেকে কেড়ে এনে স্বপ্ন— লিখে নেব আনুগত্যের নতুন ইতিহাস।

তুমি শুধু উন্মোক্ত করে দিয়ে উজ্জল ভোর, একটু কাছে এসো। আমি তোমার সিঁথি ভরে ঢেলে দেব ফের; মুঠোভর্তি সূর্যকণা।

কান্নার স্যুপ অথবা পুষ্টিকর রিংটোন

ভোরের দেয়ালে লাগানো আয়না। ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। আয়নার ভেতর দৃশ্যগুলো ক্লান্ত, বহুকাল।

দৃশ্যের ফাঁকে আমরা বড় একা। আটকে আছি অসুস্থ সময়ের আচ্ছাদনে। তবুও আতঙ্ক আর দীর্ঘশ্বাস গোপন করে আকাশের দিকে তাকাই— দেখি, আমাদের বারান্দায় আকাশ থেকে ঝরছে নতুন চাঁদের ভাঙা আলো।

আমরা আধভাঙা বিশ্বাস নিয়ে— কনফিউজড ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকি সেই বারান্দার দিকে— কখন বেজে ওঠে একটি পুষ্টিকর রিংটোন!

জন্মস্বাদ

আমি ঘুমাই ফুটপাতে— বারান্দায়— ষ্ট্যাশনে। দেহের ভেতর প্রবাহিত রক্ত— মাঝেমধ্যে হয়ে ওঠে যুবক। কদাচিৎ ঝাপটা মারে মুখে— শতাব্দীর দীর্ঘ কামুক বাতাস। হৃদয় হয়ে ওঠে ভাবুক এবং
তোমাদের মতো মাংসভোজী—

ইচ্ছে হয় শকুনের মত খাবলে খাই— যুবতী সময়ের কোমল বুক। মানিকমিয়া অ্যাভিন্যু’র লম্পট বাতাস— কেড়ে নেয় সব শৌখিন ভাবনা।

এরপর,পৃথিবী জুড়ে নামে সন্ধ্যা— আমি শূন্য হাতে হাঁটি গুলশান— বারিধারা— মিন্টোরোড অভিমুখে। নিয়তির মারপ্যেঁচে— তোমরা মগ্ন হও ইয়াবা— কিংবা ভায়াগ্রার—

আর,আমি দু’মুঠো অন্নের…

এখন শুধু আকাশকেই ভালোবাসবো

এখন থেকে শুধু আকাশকেই ভালোবাসবো।

মানুষকে ভালোবেসেছিলাম
হাতে ধরিয়ে দিলো
সুখের লাশ ভর্তি এলোমনিয়ামের থালা ।

মাটিকে ভালোবাসলাম
এক গুচ্ছ স্বপ্ন লেপটে দিয়ে চোখে
তপ্ত কাঞ্চনের মত পুড়িয়ে দিলো দেহ।

রাজপথ ভালোবাসলাম
গণতন্ত্র লেবেল এঁটে
গেসোলিন ভর্তি বোতল ঢেলে দিল বুকে।

তাই আকাশকে ভালোবাসবো
আকাশের নিল রঙ মেখে মাটির দেহে
পান করব তামাশার রক্ত।

কেউ খোলে দাও পাটাতনের পেরেক

শোনেছি সেখানে একটি অপূর্ব নদী আছে।
আর রুপাগলা ঝর্ণার মতো বেয়ে আসে
বাল্যকাল। জলকেলি শেষে চাঁদিও তুলতুলে পরশ শুষে নেয় দেহের জলকণা। এখানে অফুরন্ত সময়। চারদিকে জুলেখিও বাসনার আকুতি এবং রক্তবিহীন লেবুর আগরিও খুশবু। দুধসাদা প্রজাপতির ডানায় বাঁধাহীন উড়া-উড়ি সাত আঙিনায়।

এখানে কোন বিদ্যুৎ নেই। সবদিকে কেবল নিজস্ব আলো। ইচ্ছে হলেই মোমের হলদে আলোয় বসতে পারি মুখামুখি। ইচ্ছে হলেই নামবে দুধবৃষ্টি। বেজে ওঠবে ভায়োলিনের নাঙা সুর।

আমি জন্ম থেকেই, কান পেতে বসে আছি মাটির পাটাতনে। কেউ খোলে দাও পাটাতনের পেরেক। এই অরণ্য ছেড়ে ছুটে যাই – ভায়োলিনের সেই সুরের খোঁজে।

ঈশ্বর আর আমি

বুকের ভেতর বেদানা গাছ।
বেদানার দানা কেউ তুলে নিচ্ছে
সাবল দিয়ে। চোখ ক্রমশ
ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। মেরুদণ্ড
বেয়ে বেয়ে নামছে রক্ত।

শোনও—
আমি না হয়, আরেকটি ভোর
কাটিয়ে দেবো— পেটে ঢেলে
মাতাল আগুন ;

একদিন ঈশ্বর এসে—
ঘুম ভাঙাবেন। তোমরা শুধু
পাশের বেঞ্চটা খালি রেখো।