আলমগীর কবির এর সকল পোস্ট

স্বপ্ন

অন্ধকারগুলো নিঃশব্দে ঘিরে ধরেছে,
কোথাও কোন সুড়ঙ্গ নেই, নেই কোন আলোর খোঁজ!

আলোগুলো কোথায় যেন লুকিয়েছে;
অভিমানী মুখখানা তার, নিজেই নিজেকে খুঁজে মরে!

অন্ধকার আজ তার নিজের পথেই চলে,
সমস্ত আলোকে পদদলিত করে!

বোবা কান্নারা শব্দ খুঁজে মরে;
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হবে বলে!

আশার স্বপ্নগুলো দু:স্বপ্ন হয়ে ,
হাতছানি দেয়, বিরহী হবার ভরসা নিয়ে!

বুকের ব্যথাগুলো আলিঙ্গন করে,
আশাহত স্মৃতিগুলোর সাথে!

বেঁচে থাকা মৃত মানুষেগুলো
ঘিরে ধরে জীবনের সমস্ত সোপান!

অনেক হয়েছে, অনেক হয়েছে,
এখানেই ক্ষান্ত দাও!!!!

এবার দাঁড়াও রুখে,
আলোর মশাল জ্বাল!

হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলো
আঁচলে লুকিয়ে রাখা সব অভিমানেরে!

চাপড় মার সব বোবা কান্নার গন্ডদেশে,
হয় বেঁচে থাকো মাথা উচু করে;
অথবা মর সব বীরের বেশে।

দু:স্বপ্নদের ভীড়ে রেখে এস আশার মশাল;
পুড়িয়ে দাও সমস্ত রাতের আঁধার!

তুমি স্বপ্ন হয়ে বেঁচে থেকো
সূর্যের আশে,
আমি সকল ধৃষ্টতাকে
টানেল দেখাবো।

স্বপ্নগুলো বেঁচে থেকো
প্রতিটি স্পন্দনে, স্পন্দনে!!

প্রায়শ্চিত্ত

এইরকম একটা পরিস্থিতে মেয়েটির হাসির কারণ ছেলেটি কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ আগে যা ঘটেছে তাতে অপলার কান্নাকাটি করার কথা। মেয়েটি হাসির শব্দে ছেলেটি পুরাটায় কনফিউজ হয়ে গেছে, ছেলেটি বুঝতে পারছে না মেয়েটি অতি শোকে পাথর হয়ে গেছে নাকি অন্য কোন কারণে হাসছে।

মেয়েটি হাসছে, তার হাসির সাথে তার সমস্ত শরীর দোল খাচ্ছে, বিকেলে হালকা বাতাসে কাশফুল যে ভাবে দোল খায়। চিৎকার করে হাসছে, তার স্নিগ্ধ শরীরটাতে কাদা লেগে আছে, প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির তীব্রতা এতটাই যে কয়েক মিটার দূরের বস্তুও বৃষ্টি ভেদ করে ঠিক-ঠাক দেখা যাচ্ছে না। শরীরে কাদাগুলো ধুয়ে যেতে শুরু করেছে। বৃষ্টির তীব্রতায় হয়তো দাগগুলোও ধুয়ে যাবে। বৃষ্টির সাথে প্রচন্ড বেগে বাতাস বইছে, মেয়েটা শীতে কাঁপছে। শীতের কাঁপুনির সাথে হাসির কাঁপুনি একাকার হয়ে দাঁতে দাঁত লেগে অন্যরকম এক শব্দ তৈরী হয়েছে।

বৃষ্টির তীব্রতা একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে, মেয়েটি হাসি থেমে গেছে কিন্তু কাঁপুনি বাড়তে শুরু করেছে। ছেলেটির কাছে মনে হচ্ছে মেয়েটি কাঁপতে কাঁপতে ঘাসের উপর পড়ে যাবে। এখন বোধ হয় তাকে ধরে উদ্ধার করা উচিৎ কিন্তু ছেলেটি বুঝতে পারছে না বা সাহস পাচ্ছে না যে উদ্ধার করা উচিৎ কি না।

মেয়েটির উপর আরিকের চরম মায়া লাগতে শুরু করেছে। মেয়েটির প্রতি তার এই মায়ার কারণও সে বুঝতে পারছে না বা বোঝার সময়ও এটা নয়। তার কি এখন উচিৎ হবে? এখান থেকে যত দ্রুত পারে সরে যাওয়া; না কি মেয়েটিকে সাহায্য করার জন্য অনুমতি নেওয়া! ছেলেটি কিছুই বুঝতে পারছে না। বৃষ্টির তীব্রতা কমেছে কিন্তু থামেনি, বৃষ্টির ধারা দেখে মনে হচ্ছে এই বৃষ্টি সহসা থামবেও না।
‘তোমাকে কি আমি সাহায্য করতে পারি?’

ছেলেটি সাহস করে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল। প্রশ্ন শুনে মেয়েটি আবার হাসতে শুরু করল। হাসির শব্দে ছেলেটির বিভ্রান্তি আরও বেড়ে গেলো।

ছেলেটির বিভ্রান্তি বাড়ার সাথে সাথে মেয়েটির প্রতি তার মায়াও বাড়তেও শুরু করেছে। ছেলেটি বুঝতে পারছে না সে মেয়েটির প্রেমে পড়তে শুরু করেছে কি না। ছেলেটি সাহস করে আবার বলল
‘চল, তুমি আমার গাড়ীতে বসবে।’
মেয়েটি কোন কথা না বলে ছেলেটির পিছে পিছে হাটতে শুরু করল। মেয়েটির এই আচরণে ছেলেটি ভয় এবং মেয়েটির প্রতি ভালবাসা দু’টোই সমহারে বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি থেমে গেছে, শহরতলীর এই মেঠো পথটাতে মানুষ আবার চলতে শুরু করেছে।
‘যাও বস’
ছেলেটি মেয়েটিকে গাড়ীর পেছনের দরজা খুলে বসতে অনুরোধ করল। অনুরোধের পর ছেলেটি বিভ্রান্তি আরও বেড়ে গেলো। মেয়েটি কোন কথা না বলে ঈশারায় ড্রাইভিং সীটের পাশের সীটে বসার কথা জানালে ছেলেটি বাধ্য ছেলের মত গাড়ীর দরজা খুলে বসার সুযোগ করে দিল।

বৃষ্টি থেমে গেছে, ভেজা রাস্তায় ধীরে ধীরে গাড়িটি ড্রাইভ করে চলেছে।
‘তোমার নাম কি?’
‘অপলা’, নাম বলেই মেয়েটি আবার হাসতে শুরু করল!
‘তুমি সব সয় হাস কেন? এই পরিস্থিতিতে কোন মেয়ে হাসতে পারে সেটা আমার ধারনা ছিলনা। ’
‘আর কোন মেয়ের সাথে কি আপনি এইরকম পরিস্থিতি ঘটিয়েছেন?’ বলে আবার হাসতে শুরু করল?
‘আমি ধারনা ছিল বলেছি’ ছেলেটি উত্তর দিল।
‘আপনার কি মনে হয়েছিল? ঘটনা ঘটানোর পর আমি চিৎকার করে লোক জড় করব? দৌঁড়ে পুলিশের কাছে যাব? দ্রুত কোন নেতার কাছে গিয়ে বিচার চাইবো?’
‘যেগুলো বল্লেন, সুবিধাজনক যে কোন একটা বেছে নিতে পারতেন’ কেন জানি ছেলেটি যে অপরাধ করেছে তার ফলে তার পাপের যে শাস্তির ভয় তার অনেকটাই কেটে গেছে। মেয়েটির এজাতিয় ঘটনার অব্যবহিত পরে যে জাতীয় আচরণ করার কথা ছিল তা না করায় ছেলেটি ভয় কমে গেছে কিন্তু বিভ্রান্তি বেড়েছে।
‘উপরের যে কোন একটা কিছু করলে আপনার কি মনে হয়, তাতে আপনি আপনার পাপের উপযুক্ত শাস্তি পেতেন?’
ছেলেটি এইবার চমকে উঠলে জিজ্ঞেস করল-.
‘মানে?’
‘মানে, সময় হলেই আপনি বুঝতে পারবেন’
কিছু সময়ের জন্য ছেলেটি মানে আরিকের মন থেকে প্রায় যে ভয়টি চলেই গিয়েছিল তা আবার ফিরে এসেছে, ভয়ের সাথে নতুন এক অজানা আশঙ্কাও তৈরী হয়েছে। ছেলেটি কোন ভাবেই মেয়েটির মনোভাব বুঝতে পারছে না।
মেয়েটি আবার হাসতে শুরু করল, ছেলেটির কাছে কিছুক্ষণ পূর্বে এই হাসির অর্থ যেমন ছিল এখন আর তেমন নেই। ‘উপরের যে কোন একটা কিছু করলে আপনার কি মনে হয়, তাতে আপনি আপনার পাপের উপযুক্ত শাস্তি পেতেন?’ বাক্য দু’টোই দুই মিনিটের ব্যবধানের অপলার হাসির অর্থ সম্পূর্ণ রূপে পাল্টে দিয়েছে।

অরিকের শরীরে কাদা লেগে আছে, তবে গাড়ীর এসি’র বাতাসে শরীরের কাপড়গুলো শুকিয়ে গেছে। অরিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতে প্রচন্ড রকমের সংকোচ ও ভয় পাচ্ছে। অরিক অন্তর্মুখি একটি ছেলে, কম কথা বলায় সবাই ওকে স্নেহ করে। অরিকের শেষ ভরসা বাড়ীর সকলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা, কিন্তু সেটা কতটুকু কাজ করবে তা বুঝতে পারছে না। তাদের দিকে কাউকে আসতে দেখে অরিক স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল এবং তাদের ফ্লাটের কলিংবেল চাপল। কেউ একজন কি-হোল দিয়ে দেখলো,
‘ভাইয়া তুমি, তোমার এই অবস্থা কেন? আর উনিই বা কে?’
অরিক কোন কিছু বলার আগেই অপলা দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল-
‘তোমার নাম কি?’
‘আনিসা’
‘আপনার নাম কি?’
‘অপলা’
‘কিন্তু আপনি কে?’
‘তোমাদের বাসায় এই প্রথম আসলাম, তুমি বাড়ীর দরজায় দাঁড় করিয়ে কথা বলবে?, ভিতরে যেতে বলবে না?’
আনিসা একটু আশ্চর্য হলেও অপলার সাবলিল উপস্থিতি ও উপস্থাপনায় আনিসার বুঝতে কোন সমস্যা হলো না যে, ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি এই বাড়ীর একমাত্র পূত্রবধূ হয়েছেন অথবা হতে চলেছেন। কিন্তু আনিসা অনেকবার তার ভাইয়ার কাছে জানতে চেয়েছে, সে কাউকে ভালবাসে কি না, এমনকি গতকাল যখন অরিকের বাবা মা মিলে সবাই ওর বিয়ের বিষয়ে কথা বলছিল তখনও আনিসা অরিক কে জিজ্ঞাসা করেছিলে সে কাউকে ভালবাসে কিনা এবং তখনও অরিক যথারীতি উত্তর দিয়েছিল ‘না’।

‘নিশ্চয়, আসুন, ভেতরে আসুন’ হাসতে হাসতে আনিসা বলল।
আনিসার কথা শেষ হওয়া মাত্রই অপলা চিৎকার করে হাসতে লাগল; আনিসা হাসির শব্দে বিভ্রান্ত হয়ে গেলো; কিছুক্ষণ আগে এই মেয়েটির সাথে তার যে সম্পর্ক সেটা ননদ-ভাবী হতে পারে বলে যে প্রত্যাশা করেছিল এখন তা এক আশঙ্কায় পরিণত হলো।
‘কি ব্যাপার আনিসা! হাসির শব্দে কি ভয় পেয়ে গেলে? ভয় তো পাবেই, তোমার ভাইয়াও যে আজ সারা বিকেল থেকে আমার হাসির শব্দে ভয় পেয়ে আসছে’
আনিসা কোন কথা বলল না, শুধু ভাবতে লাগল এই মেয়েটি হয়তোবা একটু পাগলাটে গোছের হবে অথবা অন্য কোন কারণ আছে? কিন্তু চোখের দৃষ্টি, অঙ্গভঙ্গি ও অঙ্গ বিন্যাস দেখে মনে হয় না তার বুদ্ধি নামক লৌকিকতার এই প্রদর্শনীয় বস্তুর কোন অভাব আছে। ভাবতে ভাবতে আনিসা অপলাকে অরিকের বেডরুমের দিকে নিয়ে গেলো। প্রথমে আনিসা ভাবতে পারছিল না মেয়েটিকে ড্রয়িং রুমে নিবে, নাকি তার রুমে, নাকি তার ভাই অরিকের রুমে নিবে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে অপলার হাসির শব্দে আনিসা যে বিরক্ত ও বিভ্রান্ত হয়েছে সেই বিরক্ত ও বিভ্রান্তই আনিসার সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভ্রান্তটা কাটাতে সাহায্য করেছে।
‘তুই ওকে আমার রুমে রেখেছিস কেন? একটু বিরক্তির স্বরেই আনিসাকে অরিক জিজ্ঞেস করল।
‘তোমার নির্লজ্জ বউ তোমার রুমে রাখব না, কোথায় রাখব? আনিসাও বিরক্তির স্বরে প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর দিল।
‘ও আমার বউ কে…… বলতে বলতে বাক্যটা শেষ না করেই অরিক বল্লল
‘রেখেছিস ভাল করেছিস’
‘তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমার বউয়ের কাছে যাও’
অরিক আনিসার কথায় কোন কর্ণপাত না করে, তার বাবার রুমের দিকে তাকালো।
‘তোমার আপাতত কোন ভয় নেই, বাবা বাড়ীতে নেই, বাজার করতে গেছে। আম্মাও বাবার সাথে গেছে’
‘কতক্ষণ গেছে?’
‘তোমরা আসার কিছুক্ষণ আগেই গেছে, আসতে বেশ দেরী হতে পারে’
অরিক এই দেরীর সুযোগটুকু কাজে লাগাতে চায়, কিছুক্ষনের জন্য হলেও সামান্য স্বস্তি পেল, কিন্তু অতি অল্প সময়ের জন্য। অরিকের মধ্যে প্রচন্ড রকমের অস্থিরতা কাজ করছে, সাধারণত মানুষ খুব অস্থির হলে নতুন কোন ভাবনা সে ভাবতে পারে না, অরিকেরও তাই হচ্ছে, সে কি ভাববে, কি নিয়ে ভাববে, কি করবে, কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল
অরিক এইবার আরও অস্থির হয়ে উঠল ;
‘বাবা তুমি? এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে তোমার বাজার কই?’ আনিসার বাবাকে করা এই প্রশ্নটি অরিকের কানে যাওয়া মাত্রই অরিক দৌঁড়ে তার নিজের রুমে চলে গেলো।
‘মারে, আমার ওয়ালেটটা ফেলে গেছি, তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় তো’
যদিও অরিকের কাছে মনে হলো, বাবা আনিসাকে প্রশ্ন করছে, ওয়ালের পাশে বসে আছে মেয়েটি কে? বাবার প্রশ্নের শ্রবণ বিভ্রমে রুপান্তির অর্থে অরিকের বুক কাঁপনি শুরু হয়ে গেলো।
‘দাঁড়াও বাবা এনে দিচ্ছি’ বলে আনিসা দৌঁড়ে ওয়ালেটটা নিয়ে বাবাকে দিয়ে বলতে গেলো
‘বাবা তোমার সাথে একটা কথা আছে’
‘কি কথা দ্রুত বল মা’
‘বাবা ভাইয়া বাসায় ফিরেছে, তবে…
‘তবে কি’
মূর্হুতের মধ্যে আনিসার তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলল
‘বাজার থেকে ফিরে এসো, তখন বলব’
‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে জহুর”ল সাহেব চলে গেলেন।
অরিক তার বাবা ও বোনের শেষে সংলাপটাগুলো শুনে আনিসার প্রতি সে কিছুটা কৃতজ্ঞতাবোধ অনুভব করল।
আনিসা, তার ভাইয়া, মেয়েটি ও পুরো ঘটনার প্রতি স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশিই কৌতুলী হচ্ছে! অতি কৌতুহলের কারণেই অপলার প্রতি বিরক্তির অংশটুকু ভুলে গিয়ে আনিসা অরিকের রুমে গেলো
‘ভাইয়া বলতো আসলে বিষয়টা কি? তুমি কি মেয়েটাকে বিয়ে করেছো? নাকি বিয়ে করার জন্য সাথে করে নিয়ে চলে এসেছো?, তোমাকে তো মেয়েদের দিকে তাকাতেই লজ্জা পেতে দেখি, অথচ তুমি প্রেম করে এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছো? ব্যাস আমিতো ভাবতেই পারছি না।’
‘আমি তোকে পরে সব খুলে বলবো, আপাতত বিষয়টি তুই একটু সামলে দে’
‘আমি কি ভাবে সামলাবো?’
‘যেহেতু মা এবং বাবা কেউ দেখেনি যে মেয়েটি আমার সাথে এসেছে, সেহেতু তুই বলবি মেয়েটি তোর বান্ধবি, সে পরীক্ষার কারণে কয়েকদিন এখানে থাকবে’
অপলা আবার হাসতে শুরু করলো, জোরে হাসতে শুরু করলো!
‘ব্যাস যথেষ্ট হয়েছে, আর হাসবেন না, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এখানে হাসির কি হলো’
আনিসা চরম বিরক্তির সাথে কথাগুলো শেষ করেই মেয়েটি চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটির দু’চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। আনিসা আবার খুব ভালো করে মেয়েটির চোখের দিকে তাকালো। আনিসার মনে পড়লো, সেই কোথায় যেন পড়েছে, মানুষ মুখ দিয়ে হাজারটা মিথ্যা কথা বলতে পারে কিন্তু তার চোখ কখনও কোন মিথ্যা বলতে পারে না। আনিসার চোখে অপলার চোখ পড়তেই অপলা চোখ ফিরিয়ে নিলো। আনিসা এই প্রথম বুঝতে পারলো মেয়েটি আসলেই কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুব দু:খ পেয়েছে। অপলা হাসি বন্ধ করে দিয়েছে। আনিসা কোন ভাবেই অনুমান করতে পারছে না যে, আসলে কি হয়েছে, মেয়েটি কি বাবা-মাকে ছেড়ে ভাইয়ার হাত ধরে চলে এসেছে বলে দু:খ পাচ্ছে, নাকি অন্য কোন কারণ!
‘কিন্তু ভাইয়া, মা-বাবাকে কি বলবো?’
‘আমি জানি না তুই কি বলবি, তবে যা বলে পারিস তাই বলে রাখবি, আমি কিছু বলতে পারবো না’
কথা শেষ হওয়া মাত্রই অরিক হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো
আনিসা এইসব কান্নাকাটির কোন অর্থই বুঝতে পারছে না, তবে এইটুকু বুঝতে পারছে, তার ভাইয়া কোন মেয়ের সাথে প্রেম করে তাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে তুলেছে বিষয়টি এত সহজ নয়। এই পরিস্থিতে মেয়েটিকে ও তার ভাইয়াকে সে কিছুই বলতে চায়না, আনিসাকে শুধু পুরো ব্যাপারটা সামলাতে হবে। ভেতরে ভেতরে আনিসার কাছে নিজেকে বেশ সিনিয়র মনে হতে লাগলো, তার কাছে মনে হলো তার এখন অনেক দায়িত্ব, তার প্রথম কাজ হলো, তাদের বাড়ীতে মেয়েটির স্বচ্ছন্দ অবস্থান নিশ্চিত করা, দ্বিতীয় দায়িত্ব হলো ভাইয়া ও মেয়েটির প্রকৃত সত্য ঘটনা আবিস্কার করা অত:পর সমস্যার সমাধান করা।
‘চল, আমার রুমে চল’

আনিসা মেয়েটিকে তুমি বলতে শুরু করেছে; তার কারণ হতে পারে মেয়েটির প্রতি মায়া হতে শুরু করেছে। আনিসা যখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল তখন সে খেয়াল করে দেখেছিল মেয়েটির চোখের দিকে তাকালেই এক ধরনের মায়া হয়। মেয়েটির গায়ের রং শ্যামলা তবে উজ্জল শ্যামলা নয়, লম্বায় পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির মত হবে, চোখ দু’টো বড় বড়, মুখাকৃতি গোলাকার। শারিরীক গঠন আকর্ষনীয় বলার জন্য ভাবতে হয়না।
মেয়েটি কোন কথা না বলে আনিসার পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলো।

‘বাবা যশোর থেকে আমার এক বান্ধবী এসেছে’
‘যশোর তোর কোন বান্ধবী আছে বলে তো আমি কখনও শুনিনি’
‘আমার সব বান্ধবীর গল্প কি আমি তোমাকে বলেছি?’
‘যশোর ওত দূরে তোর বান্ধবী কি করে হলো?’
‘কি যে বলনা বাবা, এখন ফেসবুকের যুগ, এখন দুর নিকট এসব কোন ব্যাপার নাকি, এখন ধানমন্ডি থেকে উত্তরা যাওয়া যা, ধানমন্ডি থেকে নিউওয়র্ক যাওয়াও সে কথা’
‘তা যা বলেছিস মা কিন্তু এখন যুগ যা হয়েছে তাতে স্বল্প পরিচিত কাউকে বাসায় রাখতে হলে ভেবে চিন্তে রাখিস, আর তাছাড়া যে বাড়ীতে উপযুক্ত ছেলে আছে সেই বাড়ীতে একটি মেয়ে রাখতে হলে একটু ভেবে চিন্তে রাখাই উচিৎ’
‘তুমি ওতো সব ভেবো নাতো বাবা, তুমি ভাইয়াকে দেখেছো কখনও কোন মেয়ের চোখের দিকে তাকায়? আর মাকে তুমিই সামলিও’

ভোর সাড়ে পাঁচটার মত বাজে, অরিক সাধারণত সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে। সরকারী চাকুরী থেকে রিটায়ার করার পর অরিকের বাবা রিটায়রমেন্টের টাকা দিয়ে মিরপুর দুই এ চার কাঠার উপর ১০ ইউনিট সমৃদ্ধ পাঁচ তলা একটি বাড়ী করেন এবং তার স্ত্রীকে নিয়ে হজ্জ্ব করে আসেন। তার পর থেকেই এ বাড়ীর সবাইকে মোটামুটি ভাবে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হয়। বাবার এই বাধ্য করা নামায সাধারণত দুই বা তিন ওয়াক্ত এর বেশি পড়া হয় না।

অরিককে কখনই ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামায পড়তে দেখা যায়নি। তবে আজকে পাশের মসজিদে ফজরের নামায পড়তে গেছে। মসজিদে ঢোকার প্রবেশ পথেই একটি মাঝারি সাইজের আম গাছ রয়েছে, গাছটিতে কিছু পাখি কিচির মিচির করে ডাকা-ডাকি করছে, অরিক কখনও ভেবে দেখেনি পাখির ডাক শুনতে কেমন লাগে, তবে যেমনই লাগুক আজকে অরিকের কাছে পাখির ডাক শুনতে খুব বাজে লাগছে। পাখির ডাকে অরিক খুবই বিরক্ত হচ্ছে। পাখির ডাকে বিরক্ত হয়েই অরিক আবার মসজিদে প্রবেশ করলো, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে মোনাজাত করতে করতে চোখের পানি ফেলতে লাগল।

‘মা আনিছা অরিক কি ঘুম থেকে উঠেছে?’
‘জ্বি বাবা, ওতো বাইরে গেছে’
‘এত সকালে বাইরে কি করতে গেছে?’
‘জানি না তো বাবা, কেনো? ভাইয়াকে কি কিছু বলবে, বাবা?’
‘হ্যাঁ মা, শুধু তোর ভাইয়াকেই নয়, তোর সাথেও কথা আছে’
‘কি কথা বাবা? এখনই বলবে?’
‘আগামীকাল আমার এক পরিচিতজন একটা মেয়ে দেখার কথা বলছিল, ধানমন্ডির কোন এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে তুই ও তোর ভাইয়া মেয়েটিকে দেখে আসবি’
‘বাবা, মেয়েটা কালকেই দেখতে যেতে হবে’
‘কেন, তোদের মানে তোর ভাইয়ার কি কোন সমস্যা আছে?’
‘আছে বা নেই কোনটাই আমার জানা নেই বাবা, তবে ভাইয়ার সাথে কথা বলে চূড়ান্ত করলে ভাল হতো না’
‘তাহলে তুই তোর ভাইয়ার সাথে কথা বল’
‘ঠিক আছে বাবা’
এমন সময় কলিং বেল বাজতে শুরু করলো
‘তুমি অনেকদিন বাঁচবে ভাইয়া, আমি আর বাবা তোমার কথাই বলছিলাম’
‘অনেক দিন দুনিয়াতে বেঁচে কি লাভ? যতদিন বাঁচবি ততই পাপ করবি’
‘তোমার কি হয়েছে ভাইয়া?’
‘কি বলতে চাইছিলি তাই বল’
‘বাবা তোমাকে পাত্রী দেখতে যেতে বলছেন, বাবা তো আর জানেন না যে পাত্রী দেখতে যাওয়ার কোন দরকার নেই, বরং পাত্রীই তার বাড়ীতে এসে বসে আছে, এখন বল ভাইয়া আমি বাবাকে কি বলব?’
‘পাত্রী দেখতে যেতে বলেছেন দেখতে যাব’
‘তাহলে যাকে নিয়ে এসেছো তার কি হবে?’
‘সেটা পরে দেখা যাবে’
‘আনিসা তোমার ভাইয়ার পাত্রী আমিও দেখতে যাব, আমাকে তোমরা সঙ্গে নেবে?’
অপলা ও অরিকের কথোপকোথনে আনিসার বিভ্রান্ত বেড়েই চলেছে। আনিসা বুঝতে পারছে না তারা দুজন তার সাথে রসিকতা করছে কি না। আনিসা তার ভাইয়াকে কখনও কারও সাথে রসিকতা করতে দেখেননি। এবং আনিসার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ওর ভাইয়ার রসিকতা করার জ্ঞান না থাকার কারণেই ও কখনও কোন মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারতো না।

অরিক শুধু নামাজ পড়া ছাড়া আজকে অন্য কোন কারণে বাড়ীর বাইরে যায়নি। এখন বিকাল হয়ে গেছে, গ্রীষ্মের এই সময়টাতে সাধারণত কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায় কিন্তু খুব একটা বৃষ্টি হতে দেখা যায় না। তবে এইবার ব্যাপক বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছে। গতকাল বিকালের সময়টাতে আকাশে প্রচুর পরিমাণে কাল মেঘ জমে গিয়েছিল এবং তার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে তখন চারিদিকে ভরা সন্ধ্যা নেমে এসেছিল আর বিপত্তিটাও ঘটেছিলও তখন। অরিক সে সব কথা কোন ভাবেই ভাবতে চায় না। কিন্তু অরিক যতবার ভাবছে সেই ঘটনাটা আর ভাববে না ততবারই তার মাথায় ঘটনা চেপে বসছে।

অরিক তার দুই হাতের দুই কনুই হাটুর উপরে রেখে দুই বন্ধনীর উপর থুতনি রেখে কি যেন ভাবছে।

অপলা বেলকনির গ্রীল দিয়ে আকাশের দিক তাকিয়ে আছে, এমন সময় অরিকের চোখ পড়ে অপলার চোখের দিকে। অপলার দু’চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। অরিকের কাছে মনে হচ্ছে, সে জীবনে কখনও শ্যামবর্নের এত সুন্দরী মেয়ে তার চোখে দেখেনি।

অরিক কিছু একটা ভেবে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো।
‘আমি পাত্রি দেখতে যেতে চাই না’
‘কেন, যেতে চান না?
‘আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই ’
‘আপনার কি মনে হয় আমাকে বিয়ে করলেই আপনার এতবড় পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে? আর আপনার কেন মনে হলো আমাকে বিয়ে করলেই আমি আপনাকে ক্ষমা করে দেব’
‘তাহলে তুমি আমাকে শাস্তি দিচ্ছ না কেন বা শাস্তি দেওয়ার আয়োজন করছো না কেন?’
‘আপনি আমাকে কেন তুমি করে বলছেন?’
‘সরি, আপনি করেই বলব’
‘আপনার কেন মনে হলো যে, আমি আপনাকে শাস্তি দেব না, আপনার কি মনে হয় থানায় গিয়ে পুলিশকে বলে আপনাকে ধরিয়ে দিয়ে বিচারের মাধ্যমে পাঁচ দশ বছরের শাস্তি দিলেই আপনার পাপের উপযুক্ত শাস্তি হয়ে যাবে? আপনার পাপের আরও বড় শাস্তি দিতে চাই, আপনাকে আমি প্রায়শ্চিত্ত করার কোন সুযোগ দিতে চাই না ’
‘আপনি আমাকে পুলিশে দিবেন না, প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিবেন না আবার পাত্রী দেখতে যেতে বলছেন, তাহলে আপনি আমাকে শাস্তিটা দিবেন কি ভাবে’
‘আপনাকে কিভাবে শাস্তি দেব, এনিয়ে টেনশনে রাখাটায় আপনার শাস্তি দেওয়ার প্রথম পর্বটা শুরু, শোনেন আগামীকাল বিকালে ধানমন্ডি সাতাশে Pita Pan নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে, ওখানে আপনি পাত্রী দেখতে যাবেন’

অরিক অপলার মেজাজ ও অভিব্যক্তি দেখে আর কিছু বলার সাহস করল না, শুধুমাত্র মাথা নেড়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলো।

অরিককে প্রচন্ড রকমের বিদ্ধস্ত লাগছে, তার দিকে তাকালে মনে হচ্ছে সদ্য যুদ্ধ শেষ করে ব্যারাকে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছে, চোখে মুখে পরাজয়ের ছাপ লেগে আছে। কিন্তু অরিকের এই পরাজয়ে গল্প পৃথীবির চারজন মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না, একজন অরিক নিজে, দ্বিতীয় জন অপলা নিজে তৃতীয় ও চতুর্থজন পাঠকের সামনে পরে তুলে ধরা হবে।

প্রায় সন্ধ্যা শুরু হয়েছে, এই সময়টাতে ধানমন্ডির রাস্তাগুলোতে প্রচন্ড রকমের জ্যাম থাকে, চারিদিক থেকে শুধু মানুষের কোলাহল ও গাড়ীর বিপ শব্দ শোনা যায়। রেস্টুরেন্টটি রাস্তার ধারে হওয়া সত্ত্বেও সাউন্ড প্রুফ ব্যবস্তা থাকায় বাইরে শব্দ আসছে না। Chandeliers এর হালকা আলো অরিকের অসহ্য লাগছে। প্রত্যাশীত পাত্রি এখনও এসে পৌঁছায়নি। অরিকের নানান চিন্তার পাশা-পাশি মেয়েটি কেমন হতে পারে সেই চিন্তা কখনও সখনও উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে না। যতুটকু উুঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে অরিকের চোখে একটা কাল স্বাস্থ্যবতী মেয়েই ভেসে উঠছে। অরিকের ডান পাশে আনিসা ও তার বাম পাশে অপলা বসে আছে। সবাই চুপচাপ বসে আছে।

আনুমানিক পঁচিশ বছরের একটি লম্বা গড়নের সুন্দরী মেয়ে চল্লিশোর্দ্ধ এক ভদ্রলোকসহ অরিকের চেয়ারে সামনে বসে পড়লো। এই প্রথম বিগত তিন দিন ধরে অরিকের কোন একটি ঘটনা ঘটল যাতে অরিকের বিরক্ত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু অরিক তা হলো না।

‘আপনি ভাল আছেন অরিক সাহেব?’ সদ্য আবির্ভূত হওয়া মেয়েটি অরিককে জিজ্ঞেস করলো অত:পর তৎক্ষণাত জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। অরিকের কাছে মনে হলো অপলার কাছ থেকে এই হাসিটা কপি করা হয়েছে।
‘জ্বি ভাল আছি, আপনি কি আমাকে চেনেন?’
‘চিনবো না মানে, চিনি এবং সারা জীবন ধরে চিনব ও চেনাবো, যদি চেনার সুযোগটা আমাকে দেন’
‘মানে?’ অরিক কিঞ্চিত কিংকর্তব্যমূঢ় হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
‘আপনি পাত্রী দেখতে আসছেন না? আমি সেই সু-পাত্রি’
অরিক সংকোচ, দ্বিধা ভয় ইত্যাদি কণ্ঠে জড়িয়ে বললো
‘বসেন প্লিজ’
অরিকের অনুমান সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে যে মেয়েটি তার সামনে বসে আছে, তাকে সুন্দরী বলতে একটুও ভাবতে হয় না। উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির মত হবে, গায়ের রং গৌরবর্ণ, চোখ দু’টো দেখে মনে হচ্ছে বিধাতা শিল্পি দিয়ে স্পেশাল কেয়ার নিয়ে তৈরী করেছেন।
পাত্রী-পাত্র দেখার ক্ষেত্রে সাধারণ মধ্য-বিত্ত বাঙালিরা একটি নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুসরণ করে থাকে, সাধারণ এক্ষেত্রে তাই হলো। খুব সামান্য কিছু নাটকীয়তা ছিল বটে। কিন্তু অরিকের কাছে মনে হলো Pita Pan -এ যে অতি সাধারণ নাটকটি আজ মঞ্চয়ান করা হলো তা কোন এক অসাধারণ গল্পকারকে দিয়ে লেখানো হয়েছে।

নানা সংকোচ, শঙ্কা আশঙ্কা থাকলেও অরিককে অদৃশ্য একচাপে বিয়ের পিড়ীতে বসার সুযোগটা নিতেই হলো।

ঘরোয়া ভাবেই অতি নিকট কিছু আত্মিয় ডেকে অরিকদের মিরপুরের এই বাড়ীর তিন তলাতেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হলো। অরিকের মা ও বাবাকে খুবই চিন্তিত মনে হলো। তাদের কাছে মনে হলো কালো পথারের এক জগদ্বল পাহাড় তাদের মাথার উপর চাপিয়ে দেওয়া হলো।

সংক্ষিপ্ত সময়ের আয়োজনে কোন রকম পেশাদার মানুষ ছাড়ায় অরিকের বাসরঘরটি সাজানো হয়েছে, সেই অরিকের স্ত্রী তনিমাকে অরিকের কোন এক ইয়ার্কি সম্পর্কের আত্মীয়া এসে অরিকের কাছে দিয়ে গেছে।
‘কি ব্যাপার আপনাকে এত বিমর্ষ মনে হচ্ছে কেন? শুনেছি বাসর ঘরে ছেলেরা মেয়েদের কি সব প্রশ্ন করে, আপনি সে সব প্রশ্ন আমাকে করবেন না?’
‘কি প্রশ্ন করে?’
‘এই যেমন ধর”ন, আমি প্রেম করেছি কিনা, করলে কয়টা প্রেম করেছি, আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে চুমো খেয়েছে কিনা, চুমো খেলে কি ভাবে খেয়েছিল, কবে খেয়েছিল, তার কথা এখন মনে পড়ছে কি না, এই সব নানান প্রশ্ন’
‘তুমি জানলে কি করে? বাসর ঘরে জামাইরা এই সব প্রশ্ন করে’
‘কি বলেন আমার বান্ধবীদের বিয়ে হয়েছে না, ওরা বলেছে, ওরা আরও বলেছে বিয়ের আগে যাই হোক না কেন বাসর ঘরে বরকে একটাও সত্যি কথা বলবি না, বলেছে, বলবি যে, আমি কোন দিন কোনে ছেলের সাথে সেই ভাবে কথাই বলিনি! কিন্তু আমি কোন মিথ্যা টিথ্যা বলতে পারবনা, আমি যা যা করেছি সব আপনাকে বলে দেব, যদি আপনি জানতে চান অবশ্যই এমনকি না জানতে চাইলেও বলব,’
‘আমি সব ছেলেদের থেকে তো আলাদা কেউ নই, তাহলে আমি জানতে চাইবো না কেন? তবে আমি বিশ্বাস করি যে, আমি যেহেতু বিয়ের আগে কখনও প্রেম করিনি আমার যে স্ত্রি হবে সেও কখনও প্রেম করবে না’
‘এগুলো আপনার বিশ্বাস না প্রত্যাশা, আর তাছাড়া ঈশ্বর এইরকম কোন কন্ডিশনে পাত্র-পাত্রী মিলিয়ে দেয় বলে আমার জানা নেই’
‘ধর্ম সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাই তুমি এসব বুঝবে না’
‘তবে আপনি বিশ্বাসের ফর্মে যে প্রত্যাশার কথা বলেছেন, তার ফলাফল কিন্তু খুবই হতাশাব্যঞ্জক’
‘মানে?’
‘মানে হলো, আপনি প্রেম না করলেও আমি কিন্তু করেছি, আবার বিয়ের আগে আপনি এমন কিছু ঘটিয়েছেন যা আমার জীবনে ঘটেছে’
‘মানে, তুমি কি বলছো?’
‘কি ব্যাপার আপনি চমকে উঠলেন কেন? রিতীমত বিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এসি চলছে, ঠান্ডা দেখে মনে হচ্ছে এসিতে ঠিক-ঠাক কাজও করছে, কিন্তু আপনি ঘামতে শুর” করেছেন, ব্যাপারটা কি বলেন তো,? শুনেন মি. অরিক আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম, ভীষণ ভালবাসতাম’
‘ভাল বাসতে তাহলে তাকে বিয়ে করতে, আমাকে কেন বিয়ে করতে আসলে’
‘ঐ যে বল্লাম ভালবাসতাম, এখনতো বাসি না, এখন যেহেতু বাসিনা তাই বিয়ে করিনি’
‘কিন্তু আমি তো কাউকে ভালবাসতাম না, আর কাউকে ভালবাসলে আমি তাকেই বিয়ে করতাম, তুমি আমাকে কেন বিয়ে করতে এসেছো?,’
‘কি ব্যাপার আপনি ঘেমে যাচ্ছেন কেন, আর সামান্য প্রেম-ট্রেম নিয়ে এত উত্তেজিতই বা হচ্ছেন কেন? এতো শুধু প্রেমের কথাই বল্লাম, আর অনেক কিছু থাকতে পারে; বিয়ের আগে বউয়ের প্রেম ট্রেম নিয়ে তো এযুগের স্মার্ট ছেলেদের তো এত টেনসান করার কথা না’
‘আমি বিয়ের আগে প্রেমে বিশ্বাসি নই, এগুলো আমাদের ধর্ম এ্যালাউ করে না’
‘এর মধ্যে আবার ধর্ম নিয়ে আসছেন কেন?; ’
‘আচ্ছা প্রেম না হয় মেনে নিলাম, আর কিছু করনি তো?’
‘কেন করব না, প্রেম হলে মানুষতো অনেক কিছুই করতে পারে, আমি সেসব করেছি, সেই ছেলেটি আমাকে চুমো খেয়েছে, গায়ে হাত দিয়েছে, আরও……’
‘আমি তোমার সাথে ঘর সংসার করতে পারব না, তুমি একটা অপবিত্র মেয়ে, কালকেই তোমাকে, কালেকেই তোমাকে….’
‘কালকেই ডিভোর্স দিয়ে দেবে?, আচ্ছা দিও, কিন্তু রাতটাতো কাজে লাগাও’
‘কাজে লাগাও মানে? কি বোঝাতে চাইছো?’
‘মানে, সংসার কর বা না কর সেক্সতো করতে পার, আজকের রাতটাই তো তোমার হাতে আছে’
‘তোমার মত অসভ্য, চরিত্রহীন মেয়ের সাথে সেক্স করতেও আমার ঘৃণা লাগবে’
‘সংযত হোন মি. অরিক, চরিত্র বলতে কি বোঝায় আপনাদের মত পুরুষদের কাছে? প্রেম করে একটু চুমো খেলে চরিত্র নষ্ট হয়, তাই না, প্রেম করে প্রেমিকার একটু আদর নিলে মেয়েরা চরিত্রহীন হয়, তাই না? ’
‘হ্যাঁ হয়, তোমার মত চরিত্রহীন মেয়ের সাথে ঘর সংসার করার চেয়ে আত্মহত্যা করা অনেক ভাল, কালকে সকালেই তোমাকে ডিভোর্স দেব, আর না দিতে পারলে আমি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাব’
‘তাহলে পরের অংশটুকু শুনলে তো এখনই আত্মহত্যা করবেন মি. অরিক’
‘পরের অংশটুকু কি হতে পারে সেটা আমি বুঝতে পারছি, তবে ওতো বুঝে আমার কাজ নেই, সকালটা হোক, তারপর আমি দেখছি’
‘আমার সকল কথা আপনাকে বলব কিন্তু কাল সকালে আমাকে আপনি কিছুই করতে পারবেন না, আমি যত দিন চাই ততদিন আপনাকে আমার সাথে ঘরসংসার করতে হবে, আপনি কিচ্ছুটি করতে পারবে না’
‘আমি আইনের আশ্রয় নেব’
‘অপরাধি কখনও আইনি আশ্রয় নিতে পারবে না’
‘মানে?’
‘মানে অনেক হয়েছে, এইবার আপনাকে খুলে বলি, একদিন অফিস থেকে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়, সেই সন্ধ্যায় আমি ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পড়ি, রাস্তার ধারে অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টিতে আমার সমস্ত শরীর ভিজে যায়, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু কোন গাড়ি পাইনা, অবশেষে একটি প্রাইভেট কার আসতে দেখি, হাত উচু করলে গাড়ী থামায়, আমি সেই গাড়ীতে উঠি, অত:পর কোন এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে আমাকে শ্লীলতাহানী করা হয়’ আমার অফিসে ঘটনাটা খুলে বলি, অফিস থেকে আমাকে দার”ন সহযোগিতা করে, আইনের আশ্রয় নেই, সেই র্যাপিস্টগুলোর শাস্তিও হয়, এখনও তারা জেলে আছে; কিন্তু আপনাদের মত তথাকথিত পুর”ষের কাছে আমি অপরাধ না করেও অপারাধি হয়ে গেলাম, আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম, ছেলেটিও আমাকে প্রচন্ড ভালবাসত, আমাদের বিয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে ছিল, কিন্তু ছেলেটি আমাকে বলে যেহেতু আমরা দুইজন একই অফিসে চাকুরী করি এই ঘটনার পর আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি তাহলে আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারব না, ছেলেটির এই কথা শুনে তার প্রতি আমার প্রচন্ড ঘৃণা হয়! আমি ক্ষোভে, দু:খে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম, একদিকে ধর্ষিতা হবার মানুষিক যন্ত্রণা, অন্যদিকে যার সাথে বিয়ে ভেঙ্গে গেলো তার সাথে অফিস করতে হচ্ছে সেটাও আর এক যন্ত্রণা সব মিলিয়ে চাকুরীটাও ছেড়ে দিলাম; আমার চাকুরীটা ছাড়তে দেখে ছেলেটিকে খুব খুশি হতে দেখেছিলাম, সেটা আমাকে আরও যন্ত্রণা দিতে লাগল।
আপনি কি ভেবেছেন আপনি যে অপলাকে শ্লীলতাহানী করেছেন তা কেউ জানে না? সবাই জানে আপনার মা বাবা সবাই জানে। অপলা ও তার আত্মিয় স্বজন মিলে আপনার বাবাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমার এবং অপলার বষয়ফ্রেন্ডের ষঢ়যন্ত্রে বলতে পারেন আপনার সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। অবশ্যই একের এক আমার বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় আমিও প্রচন্ড হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি, তাই আপনাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আমরা এই আয়োজন করি কিন্তু সব কিছু করা হয় আপনার অগোচরে যাতে আপনি কোথাও পালিয়ে যেতে না পারেন।’
‘কিন্তু তনিমা, আমি তো অপলাকেই বিয়ে করতে চাইছিলাম’ অরিক চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তনিমাকে বলল।
‘অপলাও প্রথমে তাই চেয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে অপলার বয়ফ্রেন্ডের ইচ্ছেতে অপলা আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চাইছিলো’
‘অপলার বয়ফ্রেন্ড আমার একজন ভাল বন্ধু আমি তার সাথে দেখা করে, আপনার এই শাস্তির ব্যবস্থা করি’ লাকিলি অপলার বয়ফ্রেন্ড আমার বয়ফ্রেন্ডের মত নয়। অএতব মি. অরিক এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নেন আপনি আত্মহত্যা করবেন নাকি শাস্তি ভোগ করবেন! বলে তনিমা কাঁদতে লাগল…………..।

অনুভূতির পুষ্প

শর্তহীন ভালবাসার শর্তে তোমার ভবিষ্যতের,
হাতে আমার সমস্ত অতীত তুলে দিলাম।

আমার অতীত তোমার হাতের পরাগদন্ড,
তোমার হৃদয়ের উভয় অলিন্দ তার পরাগধানী।

আমার বর্তমান তোমার হাতের পুষ্পাক্ষ,
তোমার হৃদয়ের মহাধমনীগুলো তাতে পুষ্পবৃন্ত।

আমার প্রতিটি ভবিষ্যত একটি একটি পাপড়ি;
আর তোমার হৃদয়ের শিরা এক একটি পুষ্পবৃক্ষ।

আমার সমস্ত সময় একটি পুংকেশর
তোমার হৃদয়ের সমস্ত শরীর সেই পুংকেশরের বৃক্ষরাজী।

আমার সমস্ত অনুভূতি আজ সময়ের হাতে ,
তোমার প্রণয়ের পুষ্পকাননে সে এক অঙ্কিত অংক।

আকাশ

ধ্রুব আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি কয়েকটি শুভ্র তারা-
নীলিমার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।

আমার কাছে মনে হয়েছিল আকাশটা অনেক ছোট,
যেখানে শুধু নীলেরা নীলিমা ছড়ায়।

সন্ধ্যায় যখন মা কেরোসিনের আলো জ্বালতো-
আকাশ তখন ওর বুকে জোনাকি জ্বেলে দিত।

ভাবতাম আকাশ বোধ হয় জোনাকির মা।
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
একদিন খুব অভিমান হয়েছিল-কার উপরে জানিনা
শুধু মনে পড়ে-
আকাশ তুমি ছোট কেন, তোমাকে এত সুন্দর দেখায়,
তোমার সন্তানেরা কি সুন্দর আলো দেয়, সে আলোয়-
মায়াবী অন্ধকার নেমে আসে, ঠিক আমার মায়ের মত।

আমি তোমার বিশালতাকে দেখতে চাই, তোমার ছাউনির
নিচে আমি সমগ্র ধরণীকে নিরাপদ দেখতে চাই।
কিন্তু আকাশ, তুমি এত ছোট কেন?

আমার খুব রাগ হতো আকাশটার উপরে, ওটা ছোট্ট বলে
একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলাম-

মা আকাশ অত ছোট কেন, ও শুধু কয়টা তারা বুকে বড় করছে।

আমি সেদিন আবিষ্কার করলাম, আমি অনেক বোকা,
না আমার মা বলেনি যে আমি বোকা, আমার মায়ের হাসি বলেছিল।

মা বলেছিল-
তোর জানালা যে ছোট, তাই তোর দেখা আকাশটাও ছোট।

যা পাগল বাইরে যা,
আকাশ দেখতে হলে তো আকাশের নীচে যেতে হয়,
তখন দেখবি আকাশ কত বড়।

মায়ের কথায় সাঁঝের বেলায়-
দরজার চৌকাঠ পাড়ি দিলাম, মা হাত ধরে নিয়ে গেলো
আমি আর মা আর আকাশের বুকে তারা।

মা দেখো দেখো কাল কি ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশের বুকে
ওটা কাল মেঘ, আকাশে প্রায় কাল মেঘ জমে, মা বল্ল।

আমার মনটা ভারি হয়ে গেলো, আকাশের বুকে কাল আকাশ
মায়ে হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে মাকে বললাম মা-
আমি আরও বড় আকাশ দেখবো আরও বড় আকাশ, মেঘ মুক্ত আকাশ।

শরতের কোন সন্ধ্যায় মা আমাকে মস্তবড় আকাশ দেখালো।
যে আকাশে ছিল হাজারো তারা,
তারাগুলো ঢেকে দিয়েছিল মেঘামালাকে
এ যে, মায়ের আকাশ।

তোমার তুমি

যখন শীত ছিল তখন তুমি আমাকে গ্রীষ্মের গল্প শুনিয়েছিলে!
যখন গ্রীষ্ম ছিল তখন তুমি আমাকে আষাঢ়ে গল্প শুনিয়েছিলে!
এখন আষাঢ় এসেছে, তুমি আমাকে বৃষ্টির গল্প শোনালে!
তুমি শ্রাবণের, তুমি আষাঢ়ের!
আষাঢ়ের তুমিই তোমার,
তোমার তুমিই; তুমিই তোমার
শ্রাবণের তুমিই তুমি!
আষাঢ়েরই তুমিই তুমি!
এখনকার তুমিই তুমি!

নচেৎ

তোমার পা জমিনে না পড়ুক,
অন্তত: অন্তর্বাসের হুকটা ঠিক-ঠাক খুলতে দিও,
নচেৎ, এটা নিছক প্রেমের গল্প হবে, প্রেম হবে না।

তোমার দৃষ্টি মাটিতে না দাও,
অন্তত: অধরের রংটা পালিশ করতে দিও,
নচেৎ, এটা আজ্ঞাবাহী হবে, অনুরক্ত হবে না।

তোমার চরিত্রে কালী লাগতে না দাও,
অন্তত: উত্তরীয়টা মুখে মাখতে দিও,
নচেৎ, এটা চরিত্র হবে, প্রেমের চরিত্র হবেনা।

পালাবদল

এক বনে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রাণীদের বসবাস। প্রাণীদের বৈচিত্র এত বেশি যে সেখানে সুষ্ঠু ও শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো ছাড়া বনের প্রাণীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব নয়। তাই সবাই মিলে বন রাজ্যে একটা শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলার উদ্যোগ নিল। যথা উদ্যোগ তথা বাস্তবায়ন। একটি প্রাশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলা হলো। এই কাঠামোকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাকে দায়িত্বভার দেওয়া যায় সকলে মিলে সে বিষয়ে চিন্তা করতে লাগল। বিশৃঙ্খল ভাবে কোন সিন্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারায় ও বিষয়টা খুব জটিল হওয়ায় বনের সকল প্রাণী মিলে একটা সার্বজনীন সভার আয়োজন করল। সেই সভায় সংখ্যাগরিষ্ট প্রাণীদের নিকট থেকে প্রস্তাব আসল; যিনি বনরাজ্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন তার থাকতে হবে শক্তি ও সাহস এবং এই শক্তি ও সাহস দ্বারা যাতে তিনি যে কোন সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। আরও সিদ্ধান্ত হল যে- যিনি দায়িত্ব পালন করবেন একটানা দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করবেন এবং পরবর্তী দুই বছরের জন্য আর একটা শক্তি ও সাহসি প্রাণীকে সেই দায়িত্বভার প্রদান করা হবে। সভায় এই সিদ্ধান্তও নেওয়া হলো যে-যেহেতু রাজ্য চালানোর জন্য রাজাকে প্রচুর পরিমাণে মেধা ও শ্রম প্রয়োগ করতে হবে সেহেতু বন রাজ্যের সকল প্রাণীর তাদের উপার্জিত সম্পদের একটা অংশ রাজাকে প্রদান করতে হবে। এই প্রস্তাবের আলোকে সার্বিক দিক বিবেচনা করে বাঘ ও সিংহ কে বনরাজ্য চালানোর দায়িত্বভার ধারাবাহিক ভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। প্র্রথম মেয়াদে এই দায়িত্ব বাঘকে প্রদান করা হলো।
এই বনের সবচেয়ে বেশী সংখ্যাক প্রাণী হলো হরিণ, স্বভাবে বেশ শান্ত এবং দেখতে সুন্দর। এই হরিণ বনের সৌন্দর্য্য বছরের পর বছর বৃদ্ধি করে চলেছে। বনে শেয়ালের সংখ্যা যথেষ্ঠ। এরা একটু চতুর প্রকৃতির এবং চিন্তা চেতনায় সুবিধাভোগী। বনটিতে গাধার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। গাধাদের মূল কাজ হল খাওয়া ও ঘুমানো, কে কি করল এসব নিয়ে তাদের ভাবনার কোন সুযোগ নেই। এ ছাড়াও এখানে সুন্দর পাখি ও অন্যান্য প্র্রাণীও যথেষ্ঠ পরিমাণে বাস করে। বনটি সুন্দর সুন্দর বৃক্ষ-তৃণে সমৃদ্ধ।

হরিণগুলো তৃণ ভোজন করে বেঁচে থাকে, কখনও সখনও হয়তো ভাবে কি করে আরও ভাল খাবার সংগ্রহ করা যায় তবে সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলপ্রসু হয় না। গাধাগুলো সারাদিন খেটে খুটে সামান্য খাদ্য সংগ্রহ করে সন্ধ্যা বেলা তা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কখনও সে ভাবে না, কি করে পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করা যায়, কি করে এই বনে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। শেয়ালগুলোর মূল কাজ ধুর্তমী করা। সে সারাক্ষণ কি করে গাধা এবং হরিণগুলোর সংগ্রহ করা খাবার খাওয়া যায় সেই চিন্তাতেই মত্ত থাকে এবং তাদের সংগৃহীত খাবার কু-কৌশলে কুক্ষিগত করে ভোগ করে।
যেহেতু এই বনরাজ্যের রাজা হিসাবে বাঘ চলমান মেয়াদের দায়িত্ব পালন করছে। প্রত্যেক প্রাণীই রাজস্ব হিসাবে তাদের সংগৃহীত খাবারের একটি অংশ বাঘকে দিয়ে থাকে। যেহেতু বনের শত শত হরিণ, গাধা ও শেয়াল তাদের খাবারের একটি অংশ বনের বাঘকে রাজস্ব হিসাবে দেয় সেহেতু বাঘ বসে বসে তার প্রয়োজনীয় সমস্ত খাবার পেয়ে যায় এবং কিছুটা অবশিষ্ট্য থেকে যায়। দেশে যখন খাবারের সংকট দেখো দেয় তখন অবশিষ্ট্য এই খাবার হরিণ, গাধা ও শেয়ালদের মাঝে বিক্রি করে দেয়। ফলে বাঘগুলো একদিকে যেমন স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠছে অন্যদিকে সম্পদেও সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। বাঘের সুখ, স্বাচ্ছন্দ বাঘকে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে অভ্যস্ত করে তুলছে। আর এসব দেখে পরবর্তী মেয়াদের বন রাজার তা সহ্য হচ্ছে না।
তবে ঝামেলা শুরু হল তখন যখন বন রাজা বাঘ ও তার চেলারা হরিণ শাবকদের ধরে ধরে খাওয়া শুরু করল।

আজকে বনের সমস্ত হরিণ, গাধা ও শেয়াল একজায়গায় সমবেত হয়েছে। সমবেত হওয়ার কারণ বন রাজা বাঘ ও বাঘের চেলারা হরিণের বাচ্চাদেরকে ধরে ধরে খাচ্ছে। রাজ্য ক্ষমতা দেওয়ার সময় শর্তছিল বনের সকল প্রাণী যে খাবার সংগ্রহ করবে সেখান থেকে একটা অংশ বনের রাজাকে দেবে। বিনিময়ে বনের রাজা বনে বসবাসরত সকল প্রাণীদের জান ও মালের নিরপত্তা বিধান করবে। বন রাজা বাঘ এখন অন্য প্র্রাণীদের তো নিরাপত্তা দিচ্ছেই না বরং রাজাদের পরিবারের অন্যান্য বাঘেরা হরিণদের বাচ্চাদের ধরে ধরে ধরে খাচ্ছে।

-আমরা রাজা বাঘের পরিবারের সদস্যদের এই সব অনিয়ম মেনে নেবনা। একটি হরিণ বলল। আমরা সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করব।
হরিণ সর্দারের এই কথা শুনে কিছু হরিণ তার সাথে একাত্মতা ঘোষনা করল।

-বল্ল-হ্যাঁ হ্যাঁ বাঘেদের এই অত্যাচার অনিয়ম মেনে নিতে পারিনা। এর একটা বিধি ব্যবস্থা করতেই হবে।

হরিণদের এই প্রতিবাদের ফলে সুবিধাভোগী কুচক্রী শেয়াল গোপনে গোপনে কিছু হরিণের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক হতে প্ররোচিত করল এবং সেই বিশ্বাঘতক হরিণদেরকে রাজা বাঘের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিল। শেয়াল বল্লল-

-তোমারা যদি রাজার বিরুদ্ধে আন্দোলন না কর তাহলে রাজা তোমাদের বা তোমাদের সন্তানদেরকে ধরে খাবেনা।

বিপন্ন জীবন বাঁচাতে কিছু হরিণ শেয়ালের এই কুচক্রের সাথে যোগ দিল এবং তারা আন্দোলনে যাওয়া থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখল।
প্রোরোচিত হরিণদেরকে শেয়াল বল্ল-

-রাজা সাহেব বলেছে, যে সকল হরিণেরা প্রতিবাদ করছে তোমরা যদি তাদের নাম ও ঠিকানা আমাদেরকে জানিয়ে দাও তাহলে রাজা তোমাদের নিকট থেকে তোমাদের উৎপাদিত ফসলের যে অংশ নেন তা নেবেন না। তাছাড়া পুরষ্কার হিসাবে রাজা তোমাদেরকে রাজ পরিবারের খাবারও খেতে দিবে।

এই শুনে কিছু হরিণ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে প্রতিবাদ করা বন্ধ করে দিল এবং কিছু হরিণ প্রতিবাদ বন্ধ করার পাশা-পাশি প্রতিবাদী অন্য হরিণের তালিকা শেয়ালের মাধ্যমে রাজাকে পৌঁছে দিল।

কিছুদিন পর বনে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করা গেলো। যে হরিণগুলো বন রাজার অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বন্ধ করে দিল তারা গাধায় পরিণত হলো এবং যারা প্রতিবাদী হরিণদের তালিকা রাজার কাছে পৌঁছে দিল তারা শেয়ালে পরিণত হলো।

একদিকে বনরাজা ও বনরাজার পরিবারের সদস্যগণ হরিণ ধরে ধরে খেতে লাগল, আর একদিকে নিরব হরিণেরা গাধায় পরিণত হতে লাগল, অন্যদিকে বিশ্বাস ঘাতক হরিণেরা শেয়ালে পরিণত হতে লাগল। এতসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বনে হরিণের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে কমতে লাগল।
সংক্ষুব্ধ হরিণেরা বাধ্য হয়ে বাঁচার তাগিদে সিংহকে সাথে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন করতে শুরু করল। সিংহও রাজ্যভার পাওয়ার লোভে সংক্ষুব্ধ হরিণদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিল। ধীরে ধীরে আন্দোলন জোরালো হতে লাগল। বনের সকল প্রাণী বুঝতে পারল বাঘের মেয়াদ শেষের পথে। ধূর্ত শেয়ালেরা ভাব বেগতিক দেখে তারাও সিংহ-হরিণের দলে যোগ দিল। বনের সম্মিলিত সকল প্রাণীর দূর্বার আন্দোলনের ফলে সময়ের আগেই বাঘ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলো।

পরবর্তী মেয়াদের জন্য সিংহ বন রাজ্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করল। কিছুদিন যাওয়ার পর যে সকল হরিণেরা শেয়াল এবং গাধায় রুপান্তর হয়ে গিয়েছিল তারা আবার হরিণ হয়ে গেল এবং নতুন নতুন হরিণ জন্মগ্রহণ করায় হরিণের সংখ্যা বনে যথেষ্ঠ পরিমাণে বেড়ে গেলো। আন্দোলনরত হরিণেরা আবার নিরিহ হতে শুরু করল। বনে শান্তি ফিরতে শুরু করল। তবে ধূর্ত শেয়ালদের ধূর্তমী আবার নতুন করে শুরু হলো।

বনে হরিণের সংখ্যা বর্ধন দেখে এবং এই বর্ধিত হরিণের কচি মাংশ দেখে সিংহ এবং তার পরিবারের সদস্যরা লালায়িত হলো। একদিকে তাদের লালসা চরম পর্যায়ে, অন্যদিকে বনের হরিণসহ সকল প্রাণীর শান্ত অবস্থা দেখে তারা লোভ সামলাতে পারলনা। বাঘের শাসন আমলের শেয়ালের ভূমিকার কথা সিংহের জানা ছিল সেই অভিজ্ঞতা থেকে সিংহরা শেয়ালকে তাদের স্বার্থ হাছিলে কাজে লাগাতে শুরু করল। শেয়ালেরা তাদের পুরাতন ভূমিকায় ফিরে গেলো, প্রোরোচিত হরিণেরাও তাদের পূর্বের ভূমিকায় ফিরে গেলো।

কিছুদনি পর

বিশ্বাস ঘাতক হরিণেরা আবার শেয়ালে রুপান্তর হতে শুরু করল, প্রতিবাদ বিমুখ হরিণেরা গাধায় পরিণত হতে শুরু করল।
সুযোগ বুঝে বাঘ সিংহর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হরিণ ও শেয়ালদের সংঘবদ্ধ করার প্রয়াসে হরিণ, বাঘ, গাধাসহ সকল প্রাণীকে একত্র করে

বল্ল-
-সিংহ তোমাদের উপর যে অত্যাচার শুরু করেছে আমি এর প্রতিবাদ করতে চাই। (এই কথা বলার সময় বাঘ মনে মনে খুব লজ্জা পেলো। ভাবল আমি যে কাজ করেছি এরাওতো সেই একই কাজই করছে তা হলে আমি…..)। সিংহর এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায়না। নিরিহ হরিণদেরকে যে ভাবে ধরে ধরে খাচ্ছে এটা চরম অন্যায়। (এবার বাঘ আনমনে তার ভুড়িতে হাত বুলিয়ে মনে মনে বল্র আমার এই ভুড়ি তো এই হরিণদের মাংশেই গড়া।)আমার সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করব। আর আমি এবার এই বনরাজ্যের দায়িত্ব পেলে আমি তোমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেব, তোমাদের জন্য উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা করব।

-বাঘ ভাই আপনি এবং আপনার চেলারা আমাদের যেভাবে অত্যাচার করেছিলেন তা আমরা আজও ভুলতে পরিনি। সিংহ এখন যা করছে আপনি ক্ষমতায় থাকা কালীন সময়ে তাই করেছিলেন। আমরা সেটা ভুলে যায়নি। তবুও বাঁচার তাগিদে আপনার সাথে আন্দোলন করছি। একটি হরিণ বল্ল।
-বাঘ খর্বকায় এক হরিণের এই কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠল।
বনের দায়িত্বে কখনও বাঘ আসে, কখনও সিংহ আসে কিন্তু যিনিই বন রাজ্য চালানোর দায়িত্ব পান না কেন তিনি সেই একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
কয়েক বছর পর-

বাঘ, শেয়াল এবং হরিণ অথবা সিংহ, শেয়াল এবং হরিণ এখন আর যুগপৎ আন্দোলন করতে যাইনা। বাঘ এবং সিংহ তারা দুই পক্ষই শলা পরার্শ করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে-তারা যেহেতু উভয় পক্ষই কচি হরিণের মাংশ খেতে পছন্দ করে সেহেতু তারা এখন আর গন্ডগোল করবে না। বরং মিলে মিশে পালাক্রমে হরিণ ধরে ধরে খাবে।

আরও কয়েক বছর-

বনে এখন আর কোন হরিণ নেই, বাঘে সিংহে প্রচুর পরিমাণে হরিণ তারা ধরে ধরে খেয়েছে। বিশ্বাস ঘাতক হরিণগুলো শেয়ালে পরিণত হয়েছে, প্রতিবাদ বিমুখ হরিণগুলো গাধায় পরিণত হয়েছে। হরিণ এই বনের এখন এক বিলুপ্ত প্রাণী। তাই সিংহ বাঘের রসনা বিলাসের জন্য এখন আর কচি হরিণের সুস্বাদু মাংশ ভক্ষণ করতে পারেনা।

বাঘ সিংহ হরিণে সুস্বাদু মাংশ আস্বাদনের অভাবে কাঁদে, শেয়াল এখন ধূর্তমীর খেলা করার জন্য কাউকে পায়না, তাই সে কাঁদে। যে সকল নির্বোধ হরিণ গাঁধাদের সঙ্গী ছিল তাদের হারানোর বেদনায় কাঁদে। বনের সকল প্রাণীদের সময় এখন শুধুমাত্র স্মৃতি চারণ ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাটে।
পরিবর্তনের প্রত্যাশায় কিছু কিছু প্রাণী ভাবে হাতি অনেক বড়, শক্তিশালী ও শান্ত প্রকৃতির প্রাণী হাতি এসে নিশ্চয় তাদের সুদিন ফিরিয়ে দেবে। আবার তখনই আরেক ভাবনা এসে সুভাবনাকে প্রতিহত করে; ভাবে হাতির পেটতো সিংহ বা বাঘের চেয়ে আরও অনেক বড়।

নিঃসঙ্গ

আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন অনেক ভীড়ের মধ্যে একা থাকি!
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন ইতর রঙের কালো ধোয়ারা আমাকে ঘিরে রাখে!
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন দল বেধে যন্ত্র দানবেরা আমাকে আমার-
একাকিত্বকে বিঘ্নিত করে পেছন পাণে ছুটে চলে।
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন অরণ্যমাতাকে দেখি শব্দ শকূনের কাছে গণ ধর্ষণ হতে।
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন দেখি বাস্তবতার গর্ভ হতে প্রসাব হচ্ছে জারজ বিশ্বাস।
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন,
যখন তোমার সময়ের হাতে আমার সময়—
অর্পিত না হয়ে সমর্পিত হয়।
আমি নিঃসঙ্গ থাকি তখন, যখন হাজারো-
যন্ত্রনাপ্রদেয় যন্ত্রের অনুসঙ্গে সঙ্গহীনতা নিঃসঙ্গ হয়।

প্রভু

(প্রভু আপনি সকল ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করেছেন। কিন্তু আপনি বোধ হয় বুঝতে পারেননি যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে যে কোন অর্জন স্থায়ী ভাবে ধরে রাখতে হলে সবচেয়ে ভাল কৌশল হলো কোন কৌশল অবলম্বন না করা।)

Lord

কাঠুরিয়া : আপনি আমাদের প্রভু, আমরা সারাক্ষণ আপনার পূজা করি, আপনার গান করি, আপনার স্তব করি, আমাকে একমুঠো ভাত দিন প্রভু। আমার দেওয়া একমুঠো ভাত আপনার ঘরে সাত মুঠো ভাত হয়ে ফিরে আসবে। আমি সাত জনম আপনার দাস হয়ে থাকব প্রভু। আমার সাত পুরুষ আপনার দাস হয়ে থাকবে।

প্রভু : তোমার ভুখ আমার ভুখ, তোমাদের দুঃখ আমার দুঃখ, এক বস্তা চাল তোমাকে দিলাম। যাবার সময় আমার গুদাম ঘর থেকে নিয়ে যাবে। যা তুমি খাবে, তোমার মাকে খাওয়াবে, তোমার স্ত্রীকে খাওয়াবে, তোমার সন্তানকে খাওয়াবে।

কাঠুরিয়া : মঙ্গল হোক প্রভুর, মঙ্গল হোক, প্রভুর সমস্ত ধন সাতগুণ হয়ে যাক। প্রভু আপনি আমাকে যে চাল দান করেছন তাতে আমার এক মাস চলে যাবে। হে প্রভু আমি এখান থেকে অর্ধেক চাল বিক্রি করে যদি একটি কুড়াল ক্রয় করি তা দিয়ে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে যে উপার্জন হবে তা দিয়ে আমার সংসারের চাল সারা বছর ধরে কিনতে পারব প্রভু।

প্রভু : বৃক্ষ তোমাদের জীবন বাঁচায়, বৃক্ষ থেকে তোমার ফল পাও, ফুল পাও, জীবনের জন্য আহার পাও, আমার দেওয়া চাল বিক্রি করি তুমি কিনা সেই বৃক্ষ নিধন করবে, প্রকৃতিকে উজাড় করবে? তুমি জান কি তোমার এই ভুল পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারে, পৃথিবীর জীবকুলের জীবন বিপন্ন করতে পারে।

কাঠুরিয়া : আমাকে ক্ষমা করুন প্রভু আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কখনও এরকম মরণ ঘাতি কাজ করার কথা চিন্তা করব না।

প্রভু : তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। গোমস্তা যাও ওকে এক বস্তা চাল দিয়ে দাও। আমি চাইনা আমার এলাকায় কেউ ভুখে কষ্ট করে দিন চালাক।
___________

গোমস্তা : প্রভু একজন ধীবর এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে।
প্রভু : পাঠাও ওকে।

বহু পুরাতন সাদা রঙের গেঞ্জিটি দীর্ঘ দিনের ময়লা জমে কাদাটে রঙ ধারণ করেছে। পিঠের দিকের অংশে গেঞ্জির প্রায় অর্ধেকটা ছেড়া। লুঙ্গিতে কাদা জল মেখে আছে। মজলিশ কক্ষে প্রবেশ করতে ভয় পাও জেলেটির বুভুক্ষু’র তাগিদ তাকে সাহস জুগিয়েছে।

প্রভু : কি চাই তোমার?

ধীবর : আমার মাছ ধরার জালটি ছিড়ে গেছে প্রভু। আমি আর মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারছি না। আমার সংসারে সদস্যদের মুখে ঠিকমত অন্ন জোগাতে পারছি না। ক্ষুধার জ্বালায় আমার মেয়েটি…….।

(জেলেটি আর কথা বলতে পারছে না। হু হু করে কাঁদতে শুরু করল)

প্রভু : থামাও তোমার কান্না। আমি আমার রাজ্যে কোন কান্না দেখতে চাইনা। গোমস্তা ওকে কিছু চাল ও বাজার করার জন্য কিছু পয়সা দিয়ে……

প্রভু শেষ করার আগেই

ধীবর : প্রভু আমি কোন খাবার ভিক্ষা চাইনা। আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন তাহলে সেটা দিয়ে জাল কিনতে পারতাম, তা দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে আমার পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারতাম, আস্তে আস্তে আপনার টাকাটাও পরিশোধ করে দিতাম।

প্রভু : আমি চাইনা তোমরা জাল দিয়ে ছোট ছোট মাছ ধরে বাজারে বিক্রি কর। আর এই ভাবে নদীর সমস্ত মাছ উজাড় করে দাও। আমি চাই আমার রাজ্যে প্রতিটি গাছ, প্রতি মাছ নিরাপদে থাকুক। এই বিশ্বকে আমি সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের অভয়ারণ্য হিসেবে দেখতে চাই। বরং তুমি আপাতত আমার দেওয়া টাকা, চাল দিয়ে তোমার পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দাও। কাল থেকে আমার রাজ প্রসাদের পাশে যে পুকুর গুলো আছে সেগুলো দেখা-শুনা কর। মাস শেষে তোমাকে যে টাকা দেব তাদিয়ে তোমার চলতে খুব একটা কষ্ট হবে না।

ধীবর : হে ভগবান আমাদের প্রভূকে তুমি আরও ক্ষমতা দাও, আরও সম্পদ দাও। এই রকম একজন মহান মানুষের হাতে সম্পদ গেলে সেই সম্পদতো জনগণই পাবে। মঙ্গল হোক প্রভুর, আমাদের প্রভুর মঙ্গল হোক।
___________

দুই

প্রভুর মেয়ের আজকে জন্ম দিন। রাজ্যের সকল রাস্তা-ঘাট আজ ফুলে ফুলে শোভিত করা হয়েছে। এই দিনে ও বিশেষ বিশেষ দিনগুলো রাস্তা-ঘাটের শোভা বর্ধনের জন্য কৃষকদের দিয়ে বহুমুখী ফুলের চাষ করানো হয়েছে। অবশ্যই কৃষকদেরকে ধান বা অন্যান্য ফসলে যে পরিমাণ লাভ হতো তার চেয়ে ফুল চাষে বেশি মুনাফা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রভুর মেয়ের জন্ম দিন উপলক্ষে যেমন রাজ্যের বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তেমনি ভাবে রাজ্যের সকল শ্রেণীর মানুষের খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্য জুড়ে আজকে চারিদিকে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মেঘগুলো আজকে হাসা-হাসি করছে। নীল পবনের সাথে আকাশ সীমানা জুড়ে আজ মেঘ ও রোদ্দুরের খেলা চলছে। সূর্যের উদ্ধত হাসি পৃথিবী নামক গ্রহের প্রশান্তিতে কিছু বাগড়া দিতে চাইছে কিন্তু প্রভুর কন্যার জন্ম দিনের সমস্ত আনন্দ সূর্যের সেই উদ্ধতকে টিপ্পনী দিচ্ছে।

বিশাল আকৃতির পুরো মাঠ জুড়ে সবাইকে খেতে দেওয়া হয়েছে। সারি সারি মানুষগুলো বসে বসে খানা খাচ্ছে এবং প্রভুর নানান ধরনের স্তব করছে।

তিন

সন্ধ্যা প্রায় শেষ। পশ্চিম কোণের লাল আভার সমাপ্তি ঘটেছে। প্রতিদিনের মত আজকেও মজলিস শুরু হয়ে গেছে। প্রভু নিয়মিত ভাবে এই সময়টাতে রাজ্যবাসীর সমস্যাসমূহ শুনে থাকেন এবং তাদের সমস্যাসমূহ নিরসনে নানান সহযোগিতা করে থাকেন। সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন শিক্ষক এসেছেন।

প্রভু : আপনার কি সমস্যা মাস্টার মশায়?

শিক্ষক : প্রভু একজন শিক্ষক হিসাবে আমি যা মাইনে পাই তা দিয়ে আমার চলতে তেমন কোন কষ্ট হয় না। আর তাছাড়া আপনি যে ভাবে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করছেন তাতে কারওর তেমন কোন সমস্যা থাকারও কথা নয়। আমারও তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে প্রভু অতি সহযোগিতার ফলে মানুষ কিছুটা কর্ম বিমুখ হচ্ছে।

প্রভু : আপনি আপনার কথা বলুন মাষ্টার মশায়।

শিক্ষক : প্রভু আমি একটু পাঠশালা ও শিক্ষার বিষয় বস্তু নিয়ে কথা বলতে এসেছি। দিন দিন পাঠশালায় ছাত্র-ছাত্রী বেড়েই চলেছে সেই তুলনায় পাঠশালা ও শিক্ষকের সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। আর তাছাড়া আমরা শিক্ষা ব্যবস্থারও তেমন উন্নতি সাধন করতে পারিনি।

প্রভু : বলুন কতটি পাঠশাল আপনার চাই। সকলের শিক্ষার সুব্যবস্থা করার জন্য যতগুলো পাঠশালা দরকার ততগুলো পাঠশালা পর্যায়ক্রমে তৈরী করা হবে। সেই মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগেরও ব্যবস্থা করা হবে।

শিক্ষক : কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা…

প্রভু : শিক্ষা ব্যবস্থার আবার কি হলো?

শিক্ষক : প্রভু আমরা বহু মানুষকে লেখা-পড়া শেখাচ্ছি কিন্তু কাউকে শিক্ষিত করতে পারছি না। আমাদের লেখা-পড়া অতিত ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। আমরা ইতিহাস মুখস্ত করাচ্ছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা জানে না তারা যে অংকগুলো করছে কেন সেগুলি করছে। ভাষা শিখতে গিয়ে এত করে ব্যাকরণ শিখতে হচ্ছে যে মুল ভাষা শেখার কথা তারা ভুলেই যাচ্ছে। পরীক্ষার জন্য একই পড়া তাদের বার বার পড়তে হচ্ছে ফলে পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের পথ সঙ্কুচিত হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদের ভাষা শেখাচ্ছি, আমরা জিহাদি পথ দেখাচ্ছি কিন্তু আমরা শান্তির পথ সুখের পথ, ভালবাসার পথ দেখাচ্ছি না। জাতীয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধু করতে গিয়ে আমরা বিভেদ তৈরীর পথ শেখাচ্ছি। ধর্ম শিক্ষার নামে আমরা অধর্ম শেখাচ্ছি। ধর্ম শিক্ষা দিতে গিয়ে আমরা, আমার পথ, আমার মতই সত্য এবং অন্যের পথ, অন্যে মত ভুল; এহেন ভুল শিক্ষা দিচ্ছি। শিক্ষার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ গড়তে চাইছি কিন্তু আমাদের পুস্তকাদি অতিত ভিত্তিক। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে আমরা আবার কখনও কখনও যুদ্ধের পথও বাতলে দিচ্ছি।

প্রভু : মাষ্টার মশায় আপনি আপনার স্কুল ও ছাত্রদের নিয়ে ভাবুন; শিক্ষার বিষয় বস্তু, পদ্ধতি মান এসব নিয়ে ভাববার জন্য উচ্চ ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ গুণীজনদেরকে রাজ্যের কোষাগার থেকে উচ্চ বেতন দিয়ে পোষা হচ্ছে। তাছাড়া ইতিহাস অংক ধর্ম এসব যেভাবে শেখানো হচ্ছে তাতো ঠিকই আছে। মানুষ ইতিহাসের মাধ্যমে আমাদের অতীত ইতিহাস জানতে পারছে. দেশকে কিভাবে ভালবাসতে হয় তা তারা শিখতে পারছেন। মানুষ শিক্ষার মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা শিখছে; আমি তো কোথাও ভুল দেখছি না। মাষ্টার মশায় আপনি আপনি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে থাকেন। আগামী মাস থেকে আপনি আর ভার প্রাপ্ত প্রধান হিসাবে থাকবেন না প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনার বেতন পঁচিশ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হলো।

শিক্ষক : মঙ্গল হোক প্রভুর, মঙ্গল হোক।
___________

তিন

গোমস্তা : প্রভু আপনি শুনে থাকবেন যে, আমাদের পাশের রাজ্যে খরার কারণে ঠিকমত ফসল ফলাতে পারেনি। সাধারণ মানুষজন তাদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে না। ঐ রাজ্যে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

প্রভু : গোমস্তা প্রয়োজনীয় সকলকে বলে দাও তারা জন্য সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পাহারা দিয়ে রাখে। কোনভাবে যেন এই রাজ্যের চাল, ডাল, গম চোরাই পথে ঐ রাজ্যে যেতে না পারে। আমি কোন ভাবেই চাইনা যে, এই রাজ্যের খাবার ঐ রাজ্যে চোরাই পথে চলে যাক আর আমার রাজ্যের মানুষ খাদ্য অভাবে পড়ুক।

গোমস্তা : হুজুর এবার আমাদের রাজ্যে অনেক খাবার উৎপাদন হয়েছে। যে পরিমাণ খাবার উৎপাদন হয়েছে তা দিয়ে সারা বছরের খাবার হয়ে অনেক বেশি খাবার মজুদ থাকতে পারত। কিন্তু অতিরিক্ত খাবার মজুদের ফলে কৃষকরা তাদের ফসলের উৎপাদিত মূল্যের চেয়ে বিক্রয় করে কম মূল্য পেতে পারে এই আশঙ্কায় অতিরিক্ত সম্ভাব্য খাবার আপনার নির্দেশে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যে খাবার গুলো থাকলে এই দুর্ভিক্ষের সময় আমরা সেই খাবারগুলো তাদেরকে দিতে পারতাম। যৌক্তিক কারণে তাদের সাথে আমাদের এত দিনের তিক্ত সম্পর্ক ভাল হতে পারতো।

প্রভু : আর যদি ঐ রাজ্যে দুর্ভিক্ষ না হতো তাহলে আমার কৃষকরা সেই উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে তারাই দুর্ভিক্ষে পড়তো। এই রাজ্যের মানুষের আমিই ভাগ্য নিয়ন্তা। এরা কি ভাবে ভাল থাকবে না থাকবে সেটা নিয়ে আমাকে অনেক ভাবতে হয়। যদি ঐ রাজ্যের মানুষের খুব বেশি অভাব হয় তাহলে তারা আমার রাজ্যে এসে কামলা খাটুক। তাহলে আমাদেরও উৎপাদন বাড়বে ওদের সমস্যার কিছুটা সমস্যার সমাধান হবে। দীর্ঘ দিন যাবৎ ঐ রাজ্যের দাসত্ব থেকে আমার রাজ্যের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। এখন আমার মাথা উচু করে চলতে শিখেছি। এই রাজ্যের মাটি, মানুষ আমার প্রাণতুল্য। এদের মাথা উঁচু করে রাখার জন্য আমি……….। থাক এসব বিষয় নিয়ে আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইনা।
___________

গোমস্তা : প্রভু আপনার কাছে কয়েকজন মানুষ দেখা করতে এসেছে।

প্রভু: তাদেরকে বলে দাও আমি এই সময় কারওর সাথে দেখি করিনা।

গোমস্তা : প্রভু ওনারা অনেক দূর থেকে এসেছেন। সংখ্যায় দশ পনের জনের মত হবেন।

প্রভু: আমি এখন বিশ্রাম করব।

গোমস্তা : প্রভু ওনারা একটি মধ্যম শ্রেণীর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসাবে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছেন। তাদের অনেক সমর্থক আছেন।

প্রভু : ঠিক আছে, পাঠিয়ে দাও।

সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবী পরা কয়েক প্রৌঢ় বয়সের মানুষ। কারও কারও গলায় পৈতা পরা আছে। দু’হাত উচূ করে মাথা কুর্ণিশ করে কয়েকবার নমস্কার করলেন।

১ম অতিথি : প্রভু আমাদের এই ভুখণ্ডে আমাদের ধর্ম বিশ্বাসী সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ এবং মোহাম্মদীয় ধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা প্রায় ৭৮ ভাগ। প্রভু এখানে যদি ৪টি মসজিদ থাকে তাহলে অবশ্যই একটি মন্দির থাকা সমীচীন কিন্তু এই রাজ্যে এমনটি পাবেন না যেখানে রাজ্যের সহযোগিতায় তৈরী করা মন্দির আছে।

২য় অতিথি : প্রভু আপনার প্রতি আমাদেরও সমর্থন আছে। এই রাজ্যের প্রভু হিসাবে আপনাকে রাখার ব্যাপারের আমাদেরও আনুপাতিক হারে অংশীদারিত্ব আছে। প্রভু আমাদের ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আপনার সহযোগিতা কাম্য। প্রভু আপনি সকল বর্ণের, সকল ধর্মের প্রভু।

প্রভু : তোমরা চলে যাও আগামী একবছরের মধ্যে এই রাজ্যে যতগুলো মসজিদ তৈরী করা হয়েছে চার ভাগের এক ভাগ মন্দির করে দেওয়ার ঘোষণা দিলাম।

সকলে সমস্বরে বলতে লাগল-জয় হোক প্রভুর, জয় হোক।
___________

চার

গোমস্তা : প্রভুর শত শত মানুষ রাস্তায় নেমেছে, আপনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে।

প্রভু : কেন শত শত মানুষ রাস্তায় নেমেছে? আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ কি? তার স্লোগান কেন দিচ্ছে?

গোমস্তা : আপনি নাকি এই রাজ্যের মন্দির নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই তারা স্লোগান দিচ্ছে স্বধর্মভ্রষ্ট প্রভুর পতন চাই। আর এ কাজে উস্কানি ও নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা আপনাকে হটিয়ে আপনার সিংহাসনে বসতে চায়। আর তারাই সাধারণ জনতাকে ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে জনতাকে ভ্রষ্ট পথে পরিচালিত করছে।

প্রভু : আমি মন্দির নির্মাণে সহযোগিতা করতে চাইছি ঠিক, তাতে আমি স্বধর্মভ্রষ্ট হলাম কিভাবে?

গোমস্তা : এই রাজ্যে একদিকে মসজিদে আযান পড়বে আবার একই সময়ে অন্য দিকে মন্দিরে ঘন্টা পড়বে। মুমিনগণ যখন নামায পড়তে মসজিদে যাবে তখন চলার পথে তাদের চোখে মন্দিরের মূর্তি পড়বে। মুমিনদের নামায হবে না। তা ছাড়া এই পবিত্র ভূমিতে ভগবানের তুষ্টি সাধনের নামে বলিদানের পাঠার রক্তে এই পবিত্র ভূমি অপবিত্র হবে তা নাকি কেউ মেনে নেবে না।

প্রভু : কিন্তু আমরাও তো গরু কোরবানী দেই। এই পবিত্র ভূমির অধিকারী তো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও তো বলতে পারে আমাদের এই পবিত্র ভূমি গরুর রক্তে অপবিত্র হতে দেবো না।

গোমস্তা : যে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজনকে পাঠার রক্তকে অপবিত্র মনে করে সেই রাজ্যের প্রভু কেউ তাই মনে করা উচিৎ। প্রভু আমি জানি যে আপনি কোন ধর্ম বিশ্বাস করেন না কিন্তু তবু আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন, কোরবানীর সময় শত শত গরু কোরবানী দিয়ে তার মাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিলিয়ে দেন। এই রাজ্যের প্রভু হিসাবে রাজ্যকে শাসন করতে হলে আপনার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা প্রয়োজন। অতএব, আপনার ভেবে দেখা উচিৎ হবে এই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কি চায় এবং আপনাকে সেই ভাবেই সামনের দিনগুলোর জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।

প্রভু : আমি অনেক সংঘাতের পর এই রাজ্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম। আমি নতুন করে আর কোন সংঘাতে জড়াতে চাইনা। আন্দোলনরত মুসলিম বিদ্রোহীদের সাথে আমি আলোচনায় বসতে চাই। আমি তাদের কথা শুনতে চাই।

পরের দিন পূর্বাহ্ন…….

প্রভুর বাড়ীর সামনে হাজার হাজার আন্দোলনরত মুসলমান সমবেত হয়েছে। তাদের দাবী একটাই মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে অথবা রাজ্যের শাসনভারের দায়িত্ব থেকে সরে আসতে হবে। এমন সময়। ভীত রাজা সকলের সামনে উপস্থিত হন।

১ম বিদ্রোহী : আমরা আমাদের এই পবিত্র ভূমিতে মন্দির নির্মাণ করতে দেব না।

(না বলার সাথে সাথে উপস্থিত জনসমুদ্র না না করে উঠল।)

প্রভু : ঠিক তোমরা যা চাইছো তাই হবে।

সমস্বরে সকলে : এই পবিত্র ভূমিতে কোন মন্দির নির্মাণে আমরা সরাসরি কোন ভূমিকা রাখব না।

প্রভু : কিন্তু তোমাদের কাছে আমারও এ বিষয়ে কিছু বলার আছে।

জনতা সমস্বরে : বলুন বলুন

প্রভু : আমি তাদের মন্দির বানিয়ে দেবনা ঠিক আছে কিন্তু তাদেরকে তাদের মত করে ধর্ম পালন করতে দিতে হবে বা তারা চাইলে তারা নিজেরা মন্দির নির্মাণ করতে পারবে।

(জয়োউল্লাসে সকলে রাজ প্রাসাদ এলাকা ছেড়ে যে যার কাজে চলে গেলেন।)

পরের দিন……………

গোমস্তা : প্রভু খারাপ খবর আছে।

প্রভু : কি খারাপ খবর?

গোমস্তা : সনাতন ধর্মাবালম্বীগণ সমবেত জনগণের বিরাট অংশ রাজ প্রসাদের দিকে আসছে।

প্রভু : কিন্তু কেন?

গোমস্তা : তাদের অভিযোগ এই রাজ্যের প্রভু সাম্প্রদায়িক, তিনি মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করেছেন। রাজ্যের প্রভু হিসাবে আপনি যেটা করতে পারেন না। আপনি যা করবেন সকলের জন্য, সকল ধর্মের জন্য করবেন সেটাই হতে হবে কিন্তু তা হয়নি। আপনি এক সম্প্রদায়ের চাপে অন্য সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করেছেন। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের এই দাবিকে নৈতিক মনে করছে। অন্যদিকে হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র যেখানে মুসলীমগণ সংখ্যালঘু সেখানে এমনটি হতে পারে যে মসজিদ নির্মাণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। একদিকে দেশের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের আন্দোলন, অন্যদিকে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র ও বহির্বিশ্বের কূটনৈতিক চাপ আপনাকে সিংহাসনহীন করে দিতে পারে।

প্রভু : না, সেটা হতে পারেনা, আমি সব সময় আমার দেশের জনগণের সকল কথা শুনে এসছি, তাদের সকল চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করে এসছি। এই সিংহাসন আমি কোন ভাবেই ছাড়তে পারব না। এই সিংহাসন না থাকলে আমি আমার এই জনগণকে সেবা করতে পারব না। তাদের আমি সকল সমস্যার সমাধানের জন্য তাদের সাথে কথা বলতে চাই।

গোমস্তা : প্রভু আন্দোলনরত সম্প্রদায় প্রসাদের কাছে পৌঁছে গেছে। চলুন আপনি তাদের সাথে কথা বলুন।

প্রভু: (বিদ্রোহী জনতার উদ্দেশ্যে) আপনারা কেন আন্দোলন করছেন?

সমবেত জনতা : (সমস্বরে) আপনি মন্দির তৈরীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছেন না। আপনি প্রভু হয়ে এই রকম সাম্প্রদায়িক হতে পারেন না।

প্রভু : ঠিক আছে, আমি খুব দুঃখিত যে আপনাদের পুরো দাবী মানছি না বা মানতে পারছি না। তবে মসজিদ থেকে আপনারা একটু দূরত্ব্বে মন্দির নির্মাণ করুন। মন্দির নির্মাণ ব্যয়ের আংশিক অর্থ আমি নগদ অনুদান হিসাবে আপনাদেরকে দেব।

(প্রভুর এই সিদ্ধান্তে তারা পুরোপুরি খুশি হতে পারল না। তারপর তারা চলে গেলো।)

রাজ্য আজ স্পষ্টতো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রভু আজ উভয় পক্ষ থেকে চরম সমালোচিত হচ্ছে। একপক্ষ বলছে প্রভু সাম্প্রদায়িক, অন্য পক্ষ বলছে প্রভু স্বধর্মভ্রষ্টা। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে সারা রাজ্য জুড়ে উভয় পক্ষই সভা সেমিনার, মিছিল মিটিং করছে। প্রভু চেষ্টা করছে উভয় পক্ষের সাথে সুসম্পর্ক রেখে সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান করতে। কিন্তু কোন কৌশলই কাজ করছে না। যে যার মত করে ইস্যুটি ব্যাখা করছে। জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রাখতে মসজিদ মন্দির ইস্যুতে যে কৌশল গ্রহণ করেছিলেন তা পুরোপুরি ব্যর্থ হতে চলেছে। বিরোধী সংগঠনগুলো এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে ইস্যু করে রাজনীতিতে খুবই সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান করছে।

চার :

এই বছর প্রভুর রাজ্যে প্রচুর খরা হচ্ছে, বৃষ্টির অভাবে মাঠের ধানগুলো লাল হতে শুরু করেছে। একই সাথে প্রকৃতি ও রাজনৈতিক তাপে প্রভুর একেবারে টালমাটাল অবস্থা। সকলে খুবই চিন্তিত। এক পক্ষ বলছে মন্দির নির্মাণে সহযোগিতা করায় এই রকম দশা। অন্য পক্ষ বলছে প্রভু তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় ভগবান ক্ষুব্ধ হওয়া এই রকম করছে। রাজনৈতিক, ধর্মীয় আন্দোলনের সাথে খুবই শিঘ্রই অর্থনৈতিক আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে।

প্রভু : গোমস্তা, গোমস্তা তুমি কোথায়?

গোমস্তা : প্রভু আমি তো সব সময় আপনার সাথেই থাকি। আমি আপনার চৈতন্য। আপনার যখন প্রয়োজন হয়েছে আপনি আমাকে শারিরীক অবয়ব দান করেছেন। আপনি আমাকে দাস বানিয়ে রেখেছেন। অর্থ্যাৎ আপনি আপনার নিজের বিবেককে দাস বানিয়ে রেখেছেন। যে মানুষ নিজের বিবেককে দাস বানিয়ে রেখেছে সে মানুষ কোন ভাবেই অন্যর স্বাধীনতা এনে দিতে পারে না। প্রভু অপেক্ষা করুন দেখুন কি ভয়াবহ পরিস্থিতি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রভু দেখুন একদল কৃষক এদিকে আসছে। ঐযে ঐদিকে তাকিয়ে দেখুন সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ এদিকে থেকে আসছে। দেখুন আর এক দিক থেকে মুসলীম সম্প্রদায় এদিকে আসছে। একদল কৃষক সহ সেই কাঠুরিয়া, ধীবর, সেই শিক্ষক প্রত্যেকেই আছে। আজকে তাদের সময়, আজকে তাদের সুযোগ এসেছে। আপনার স্ব-স্ব দিনে তাদের দ্বিমতকে আপনি সহমত বানিয়েছিলেন, আজকে তাদের দিনের তারা তাদের দিনকে কাজে লাগাবে।

জনৈক কৃষক : প্রভু এ বছর আমাদের খরায় সমস্ত ফসল মারা গেছে, গত বছর আমরা দাম পাবনা বলে আমাদের ফসল আমাদের নিকট থেকে বাজার মূল্যে ক্রয় করে কিছু গুদামজাত করেছিলেন এবং কিছু নদীতে ফেলেছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম প্রভু কত মহান আমাদের ফসলের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করার জন্য ন্যায্য মূলে ক্রয় করে সেই ফসল নদীতে ফেলে দিচ্ছেন। আমাদের ঘামে উৎপাদিত ফসল, আমাদের খাজনার টাকায় ক্রয় করা সেই ফসল এবার আমাদের নিকটেই চড়া দামে বিক্রয় করবেন। এবং আমাদেরকে তা চড়ামূল্যে ক্রয় করতেও হবে তা-না-হলে এদেশের কৃষকরা অনাহারে মরবে। পাশের রাজ্যের মজুদকৃত খাদ্য থাকলেও আমাদের প্রভুর দেশপ্রেমের জন্য আমরা তা কিনেও খেতে পারব না। বা আমাদের প্রভু কত মহান। সমস্বরে (সকলে কটাক্ষ করে) বা বা আমাদের প্রভু কত মহান।

সনাতন ধর্মাবলম্বী : প্রভু কতিপয় স্বার্থন্বেষী মানুষ তাদের স্বার্থে ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মকে ব্যবহার করেছে আপনি তাদেরকে অনুগত রাখার জন্য নিজেই উপরন্তু তাদের আনুগত্য মেনে নিয়েছেন। ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্ম ব্যবহারকারীদের আপনি নিজের কায়েমী স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদেরকে দমন করেননি।(সকলে সমস্বরে) হ্যাঁ আপনি দমন করেননি।

মুসলিম ধর্মাবলম্বী : (সকলে সমস্বরে) আমরা স্বধর্ম ভ্রষ্টা প্রভুকে আর দেখতে চাইনা।

শিক্ষক : প্রভু আপনি এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার ঝুঁকি নেননি যে শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজ ব্যবস্থাকে একটি পজেটিভ স্থায়ী পরিবর্তন আনবে। আপনি সকল ক্ষেত্রের মত শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও ধর্মীয় অন্ধত্ব, জাতীয়তাবাদের বন্ধ্যাত্ব, মনস্তত্ত্ব পরিবর্তনের জন্য কোন ব্যবস্থা চালু করেননি বা করতে দেননি। আজকে আপনি আনুগত্যের লোভে যে আনুগত্য দেখিয়েছেন তার সেই আনুগত্যের লোভই আপনাকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

গোমস্তা : প্রভু আপনি সকল ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করেছেন। কিন্তু আপনি বোধ হয় বুঝতে পারেননি যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে যে কোন অর্জন স্থায়ী ভাবে ধরে রাখতে হলে সবচেয়ে ভাল কৌশল হলো কোন কৌশল অবলম্বন না করা।

প্রভু সম্পূর্ণ স্তব্ধ, সমবেত সকল জনতাও স্তব্ধ। প্রভুর চোখ দিয়ে টপ-টপ করে পানি পড়ছে। প্রভু কিছু বলতে যাচ্ছে এমন সময়, আকাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘন কাল মেঘ গুলো দ্রুত গতিতে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে শুরু করল। শাঁ শাঁ শব্দে একটু দূরের বাতাসের শব্দ কানে ভেসে আসছে। শব্দ ও বাতাসের গতি দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। বাতাসে ধুলো-বালি আর রোদে পুড়ে মরা ফসলের টুকরো টুকরো পাতা একাকার হয়ে গেছে, ধুলোবালিতে চোখ খুলে রাখার অবস্থা নেই। নগ্ন বাতাসে মেঘেদের দিগ্বিদিক ছুটোছুটি। চারিদিকে মেঘেদের কান ফাটানো গর্জন শোনা যাচ্ছে কিন্তু কোথাও এক ফোটা বৃষ্টির পানি দেখা যাচ্ছে না তবে প্রভুর চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে…….
___________

প্রুফ রিডার : বিউটি

আলমগীর কবির।

অনুগল্প : ব্যাখ্যাহীন

অপরিচিত : বাহ! আপনি তো বেশ আধুনিক!
আমি : আমাকে কেউ আধুনিক বল্লে আমি কিছুটা অপমান বোধ করি!
অপরিচিত : স্যরি,
আমি : Young Man, No Problem, Don’t Worry!
অপরিচিত : কিন্তু কেন?
আমি : কারণ আধুনিকতা একধরনের রিচুয়্যাল! যার মাধ্যমে পরিবর্তনকে গ্রহণ করা হয়। সেখানে বেশ আধুনিক মানুষ হিসাবে আমাকে থাকতে হয় সহিষ্ণূ; সেটা স্রোতে গাঁ ভাসানো দলের বড়জোর সামনের সারিতে থাকার মত কিছু একটা । তাই আমার কাছে ‘আপনি তো বেশ আধুনিক‘ শব্দটি আত্ম সম্মানহানীকর প্রশংসা মনে হয়।
অপরিচিত : কিন্তু ভাইয়া আত্ম সম্মানহানীর প্রতিশোধটাতো বেশ স্মার্টলি নিলেন।
আমি : আবার তো সমস্যায় ফেলে দিলেন!
অপরিচিত : Sorry ভাইয়া! মন্দ কিছু বল্লাম নাকি?
আমি : না, মন্দ কিছু বলেননি, তবে—
অপরিচিত : তবে..?
আমি : স্মার্ট শব্দটি যে কারণে আমার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেন তাতে মনে হলো আমি সব সময় শব্দের বর্ম নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে প্রয়োজন, প্রয়োগ করি। ‘আপনি তো বেশ স্মার্ট’ শব্দটি তাই কিছুটা শান্তিহানীকর প্রশংসা মনে হয়। বলে আমি হেসে উঠলাম।
আমার হাসি শুনে প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পেরে অপরিচিত ভদ্রলোক কিছুটা জোরে হেসে উঠলেন।
আমি : হেসে উঠলেন যে?
অপরিচিত : কেন এতে আবার কিছু হানি ঘটল নাকি?
আমি : জ্বি,
অপরিচিত : কি হানি ঘটল?
আমি : দৃষ্টি হানী ঘটল!
অপরিচিত : হাসির সাথে দৃষ্টি হানীর কি সম্পর্ক? (বলে হাসতে লাগলেন)।
আমি : হাসতে গিয়ে আমার চশমটা পড়ে গেলো যে, বলে আমি হাসতে লাগলাম।
অপরিচিত : ভাইয়া আর কিছু করব না বা বলব না যাতে আপনার মূল্যবান কিছু হানী ঘটে।
আমি : না করায় ভাল কারণ আজকের আন্ডওয়্যারটা ভাল ব্রান্ডের না।
এইবার ভদ্রলোক সত্যিই জোরে জোরে হো হো করে হেসে উঠলেন।
পরিশেষে : এতদিন মনে করতাম যন্ত্রের যন্ত্রনায় কাতর মানুষগুলো হাসতে জানে না; শুধুমাত্র প্রবঞ্চনা, ধাপ্পাবাজী এই সব করতে পারে। আমি বলছি ঢাকার অধিবাসীদের কথা, যদিও জানি না যে ঢাকার আদিবাসীগণ হাসতে পারেন কিনা। এইতো; যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় ব্যয়, সারাক্ষণ কাজ আর কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সাথে বিরামহীন হাসি ঠাট্টা চলছেই। সময় ভাল যাচ্ছে না মন্দ যাচ্ছে সেই বিবেচানাটুকু করারও কোন সুযোগ নেই।
তবে, রাজধানীর এই একমাস সময়ের আমার সবচেয়ে অবিচ্ছেধ্য অংশ হলো-আমার মেয়েকে মিস করা, আমার মেয়ে মানে যাকে ছাড়া আমি এই পৃথীবির অস্তিত্ত্বকে এক সেকেন্ডও কল্পনা করতে পারিনা তাকে ছেড়ে থাকতে হচ্ছে। ওর সাথে ফোনে কথাও বলি না, না সেটা রাগে নয়, অভিমানে নয় বা সময়ের অভাবে নয়, কারণ ফোন দিলেই ও শুধু বলে- বাবা তুমি দর্শনা অফিসে অফিস করনা কেন, তুমি আমার সাথে ঘোরনা কেন? তুমি এখনই চলে আস। এই শব্দ গুলি শোনার পর আমার যা অনুভূতি হয় সেটা কোন ভাবেই ব্যাখ্যারযোগ্য নয়। ব্যাখ্যাহীন জীবনের, ব্যাখ্যাতীত হাজারো বিষয় নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে ব্যাখ্যাহীন ফল পাওয়া যাবে তাই No ব্যাখ্যা…সকলেই ভাল থাকবে!
সকলকে ধন্যবাদ

আলমগীর কবির
লালমাটিয়া, ঢাকা।