সৈয়দ মুহাম্মদ আজম এর সকল পোস্ট

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম সম্পর্কে

“যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের– মানুষের সাথে তার হয় না'কো দেখা।" পড়া, লেখা আর ঘুরা- এই নিয়েই আমি চ্যাংড়া থেকে হতে চাই বুড়া। কবিতার প্রতি মোহ নাকি হৃদয়ের টান -জানিনা। অলক্ষে থেকেও হৃদয়ের মর্মকথা পৌঁছাতে চাই দিগন্তের বাঁকে বাঁকে। একঝাঁক স্বপ্ন বুকে- নিত্যি ছুটি দিকে দিকে...

খেলার আগেই বিজয়ী যারা!

3144

ফুটবল কিংবা ক্রিকেট- বিশ্বকাপ আসলেই উন্মুখ হয়ে থাকে খেলাপ্রেমীরা। তবে খেলার চেয়েও বেশি কৌতূহলী- কোন দল জিতবে বিশ্বকাপ? এ নিয়ে খেলা শুরুর কিংবা দিনক্ষণ ধার্যের অনেক আগ থেকেই চলে জল্পনা-কল্পনা, তর্ক-বিতর্ক।

ভালো লাগা বা ভালোবাসার জায়গা থেকে অনেকেই তার পছন্দের দল বিশ্বকাপ জিতবে বলে একটা মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে থাকে। হোক সে দল নতুন কিংবা পুরাতন। মত প্রতিষ্ঠা করলেই কি দল জিতবে? নিশ্চয়ই না! প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দলের সক্ষমতা, খেলোয়াড়দের মাঠের শক্তি জয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জয়ের দৃঢ় বিশ্বাস বুকে মাঠে নামে দলগুলো। নিজেদের সবটুকু দিয়েই ভালো করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন খেলোয়াড়রা। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলে কেউ শেষ অবধি টিকতে পারে নচেৎ/ লজ্জার হার মেনে বিদায় নিতে হয় আসর থেকে। তবে আত্মবিশ্বাসই শেষ কথা নয়, মাঠের পারফর্মের মাধ্যমে জয় ছিনিয়ে আনতে হয়। তবে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও টুর্নামেন্টে পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সম্প্রতি বিশ্বকাপে ‘ওভার কনফিডেন্সিয়াল’ একটি দলকে লজ্জাজনক হার নিয়ে আসর ছাড়তে দেখা গেছে। বছর কয়েক আগেও এমনভাবে হারতে হয়েছিল আরেকটি দলকে। তবে প্রত্যাশা ছিল অনেকটাই বেশি, সাথে দলের শক্তিমজ্জাও ছিল বেশ পোক্ত; এসব কিছু হিসাব কষে অনেকেই জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে আসছে। কিন্তু শেষ অবধি সেই ভবিষ্যদ্বাণী মুখ থুবড়ে পড়েছে।

প্রযুক্তি আর বিশ্বায়নের যুগে কি কেউ গণকের কথায় পাত্তা দেয় কেউ? দেয়, ‘ওভার কনফিডেন্সিয়াল’ যারা! বিধায় মাঠে নামার আগেই ‘এবার আমরাই জয়ী হবো’ বলে (আমানতউল্লাহর মতো) মতবাদ প্রচার করে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির দলগুলো তাদের কাছে নেহায়েত হেলার পাত্র।

―পরমতসহিষ্ণুতা মানবচরিত্রের একটি প্রশংসনীয় গুণ।

ধূসর নিনাদ

The

সুন্দর, তুমি চক্ষু ভরিয়া
এনেছ অশ্রুজল।
এনেছ আমার বক্ষ ধরিয়া
দুঃসহ হোমানল।

হৈমন্তিক হাওয়ায় অঘ্রায়ণের ধান ক্ষেতে আমার বৈরাগী মন দোলে। শরতের আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা, পারদ নামায়— রঙিলা মাঝি জীবন নদীতে উজান বায়। নির্মোহ আমি বিজনে বসে অহর্নিশ তোমার প্রহর গুনি!

আমার মৌন অবগাহনে আবৃত বিষণ্নতা। যার প্রতিটি পরতে পরতে অবসাদ, বেহুলার বিলাপ, দ্বিধাগ্রস্ত, বিভ্রান্ত প্রহর। নিকট তমসাকল্পে জরাজীর্ণ। জন সমুদ্রে মিশে ধূসর হয়েছি, বেঁচেছি তুমিহীন মর্মরে।

অবহেলার নিনাদ বুকে স্বপ্ন ছাড়া একদল পোকার মতোই পরিণত হই। তোমার বর্ধিষ্ণু বেলুল সভ্যতার অহমিকায় খোদ মহাজনের শয়ন শিয়রও কেঁপে ওঠে। মৃদুল পায়ের মৃত্তিকা— আটোসাঁটো যন্ত্রণা, ভীষণ ধুলো। কথা দিচ্ছি, তুমি ফিরলে- ধূলোর পাহাড়ের সম্রাজ্ঞী হবো।

—সবকিছুর সৌন্দর্য্য আছে কিন্তু সবাই তা দেখতে পায় না।

টিম্বাকতু

1-69

বিস্তির্ণ প্রেইরি নয়-
ছুঁই ট্রপিক্যাল নিষ্পাদক প্রান্তর,
অলসভাবে বহমান নদ-নদী
ধরিত্রীর বুক ছিন্ন ভিন্ন করে বয়ে যায়।

শ্রাবণের প্লাবনে পুষ্টিবর্ধক ভূমি
গুল্ম, ঝোপ, ক্বচিৎ ঘাসে পূর্ণ হয়;
গ্রস্ত উপত্যকা, পর্বত, মালভূমি পেরিয়ে
সতেরোটি নীল পদ্ম এনেছি, চন্দ্রমহিনী।
বহু দীর্ঘ, শীর্ণ, গভীর হ্রদের পদ্ম!

অবিরাম রোদে পুড়ে দগ্ধ হয়েছি,
চির হরিৎ বৃক্ষের নিবিড় অরণ্যে
রেইন ফরেস্ট পেরিয়ে, স্মৃতিধৃত ইতিহাস।
যেখানে বৃষ্টিপাত ক্রমে ক্ষীয়মাণ-
দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যস্থান, টিম্বাকতু।

পরিবহন কথা

82730
প্রতীকি ছবি

মিনিট দশেক অপেক্ষা করে বাস পেলাম। বাসে উঠতে না উঠতেই দুজন দীর্ঘদেহী মানবের বাঁধায় থমকে গেলাম; পথ আটকে দাঁড়িয়েছিলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। পরের স্টপে আরও কয়েকজন বাসে উঠছে দেখে ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু না, সেই দীর্ঘদেহী ব্যক্তিদ্বয়ের কারণে পারলাম না। পিছন ফিরে দেখলাম পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলা ভিড়ে নিষ্পেষিত হচ্ছে প্রায়। এদিকে নিজেরও বেহাল দশা!

সুযোগ পেতেই ওই মানবদ্বয়ের মাঝ-বরাবর নির্ঝঞ্ঝাটভাবে ঢুকে পড়লাম। পাতলা গোছের মানুষ বিধায় খুব একটা অসুবিধা হয়নি। দুজনের মাঝে জোর করে ঢুকে শক্ত চাপ সৃষ্টি করলাম। এতে উভয়ের ভুঁড়ি দু’দিকের দুটো সিটে লেগে যাওয়ায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করতে লাগলেন। মূহুর্তেই মুখের লাবণ্যতা হারিয়ে ফেললেন দুজনেই। ব্যথার চটে বেশ কাবু হয়েছেন বটে!

এই ভুঁড়িকষ্ট থেকে বাঁচতে চেষ্টার কমতি রাখলেন না। কিন্তু আমি তো নাছোড়বান্দা, সেখান থেকে সরার নাম-ই নেই। পরক্ষণে তাদের ভুঁড়ির দুর্দশার কথা চিন্তা করে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম, দুজনে ভুঁড়িতে হাত বোলাচ্ছে। হাসি পেল কিন্তু হাসলাম না। নয়তো প্রতিবেশী যাত্রীরা ভাববে কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস।

অতঃপর একজন সে স্টপেই নেমে গেল; অন্যজন ল্যাম্পপোস্টের মতো দাঁড়িয়ে রইল। যতক্ষণ বাসে ছিলাম তার দিকেই খেয়াল ছিল- বেচারা কোন কথা বলেনি। অনেকেই তাকে অতিক্রম করে নামা-উঠার সময় নানান কথা বললেও তিনি উত্তর করেননি। চালকের সহযোগী বারবার ধমক দিচ্ছেন কিন্তু সেই দীর্ঘদেহী ভদ্রলোক নির্বাক জানালা ভেদ করে উঁচু উঁচু দালানের দিকে তাকিয়ে রইলেন।