হুসাইন দিলাওয়ার এর সকল পোস্ট

হুসাইন দিলাওয়ার সম্পর্কে

কবি, কথাশিল্পী ও সংগঠক।

হালখাতা

খাতা থাকে মহাজনের
আরো থাকে মুদির
ধারে বিক্রির হিসাব রাখে
লাভ-লোকসান গদির ।

চলা ফেরায় কটু কথায়
তোমার মনের বাঁকে ।
মনের খাতায় আমার নামে
বকেয়া যদি থাকে ।

হালখাতাতে এলাম আমি
আমার সালাম নিও
জীবন হাটের বিকিকিনি’র
ছাড় বাট্টা দিও ।

মনের খাতার পাতা জুড়ে
ছিল যত ঋণ
ফতুর আমি হে মহাজন
ক্ষমা করে দিন ।

ফসল আমার পোকায় খেল
খাজনা নিল রাজা
তুমি যদি না ছাড় হে
বাড়বে আমার সাজা ।

#হালখাতা
#হুসাইন দিলাওয়ার
১৪/০৪/২০ইং

একটি শিশু

একটি শিশু
অনেক কিছু
সম্ভাবনার কুঁড়ি
ঘুরছে চাকা
ইঁচড়ে পাকা
স্বপ্ন দুচোখ জুড়ি।

একটি কুঁড়ি
স্নেহের ঝুড়ি
ফোটবে সুবিমল
নিকষ রাতে
আলোক হাতে
দ্বীপ্তি ঝলমল।

নাইরে তুল
একটি ফুল
মায়ার আবেশ পাক
হাঁটতে শেখা
আলোক রেখা
নতুন দিনের ডাক।

বন্ধু ও গন্ধরাজ

তুমি কোথায় নামবে ?
অচেনা অজানা একটা মানুষ হঠাৎ তুমি সম্বোধন করছে ! মেজাজটা সপ্তমে চড়ে গেল আমার। যদিও তিনি একেবারে অচেনা মানুষ নন।
: গাবতলী।
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে ভরা যমুনার রূপ দেখতে লাগলাম। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী নাইট কোচ, ট্রাক, লরি জ্যামে আটকে আছে। সেই কবে থেকে নিশ্চল নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির বিস্তীর্ণ মিছিল। যোহরের আযান শোনা যাচ্ছে। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করি।

নির্ঘুম রাতের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখ লাল টকটক আর মাথা ব্যাথায় টনটন করছে। আমার ঠিক পেছনে আমাদের পাশের গ্রামের একটা মেয়ে আর তার বান্ধবী বসেছে। অবিরাম খই ফোটে তাদের মুখে। কত রাজ্যের গল্প আর বিচিত্র স্বরভঙ্গি তাদের।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে আবদুল মতিন লিখে সার্চ করলাম। তিন বছর আগে পাঠানো ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টটা ক্যানসেল করে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করলাম।
আবদুল মতিন আমার ছোট বেলার বন্ধু। আমরা গ্রামের একই স্কুল পড়তাম। তার সাথে আমার গলায় গলায় ভাব। আমি একটু ইন্ট্রোভাট হওয়ার কারণে তেমন বন্ধু ছিল না কখনোই। আমাদের দিন বেশ ভালোই কাটছিল। মতিনের বাবার নার্সারি ছিল। ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছের চারা তৈরি করে হাটে হাটে বিক্রি করতেন। হঠাত একদিন শোনলাম মতিনরা আর বড়গাঁও এ থাকবে না। চলে যাবে ঢাকায়। তার বাবা ঢাকায় একটা বাড়ির কেয়ারটেকারের চাকরি পেয়েছেন। তাই তারা বনগাঁর পাটকাঠি গোটাতে লাগল। আমার মন তখন ভীষণ খারাপ। শেষ কয়টা দিন আমাদের আলাপ আলোচনা ছিল যেন আমরা একে অপরকে ভুলে না যাই।

তাই বিদায় বেলায় আমি তাকে একটা ডায়েরি উপহার দিয়েছিলাম সে দিয়েছিল একটা গন্ধরাজ ফুলের চারা। গন্ধরাজ ফুলের গাছটা আমি এখনো আগলে রেখেছি। সেই গাছ তার ফুল আর মোহিত সুবাসে বাড়ির সদস্যদের মন মাতাচ্ছে পনেরো বছর ধরে। কয়েক বছর আগে হঠাৎ মতিনকে ফেইসবুকে খোঁজে পেয়ে রিকুয়েষ্ট দেই কিন্তু সে আমার বন্ধুত্বের আবেদন গ্রহণ করেনি। আজ সেই মতিন আমার পাশের সিটে বসে ঢাকা ফিরছে। কোথা থেকে ফিরছে জানা নেই। জানতেও ইচ্ছে করে না। শৈশবের সেই বন্ধুত্ব বুঝি নাগরিক ব্যস্ততায় সে কবে ভুলে গেছে। আমারও বা কিসের ঠেকা। ভীষণ অভিমান হয় আমার। পুরনো স্মৃতি কেউ ভুলে গেলে আমি কেন পারবো না ভুলে থাকতে।
কিন্তু তার দেয়া গন্ধরাজ চারাটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ রইলাম তার দেয়া গন্ধরাজ গাছটার জন্য…।

কার গোরুটা !

কার গোরুটা কত্ত বড়
কার গোরুটা দামী
কার গোরুটা শান্ত শুবোধ
জিব দিয়ে দেয় হামি ।

কার গোরুটা ওজন ভারী
কার গোরুটা ষাঁড়
কার গোরুটা দামে কত
শোধাচ্ছ বারবার ।

দড়ি হাতে দর্পে হেঁটে
শাটের কলার ঝাকাও
হাবেভাবে লাটটি তুমি
গোঁফটা শুধু পাকাও ।

কত মানুষ বানভাসি হয় 
নিচ্ছ না সে খোঁজ
বন্যা খরায় কপাল পোড়া
ভুখা যারা রোজ ।

কেমন তোমার কুরবানী হায়
কেমন ত্যাগের ছিরি
কালোটাকায় কিনছ গোরু
ফরেন কোংয়ের বিড়ি !

তোমার পশুর রক্তটুকুই
ধর্তব্য তাঁর
খালেস দিলের কুরবানি আর
নিয়ত সহীহ্ যার ।