সাজিয়া আফরিন এর সকল পোস্ট

এসো … আমি নুসরাত বলছি

আমি নুসরাত বলছি। আমাকে তোমরা শুনতে পাও? তোমাদের মেকআপ কসমেটিক্স নানা প্রসাধনীর আড়ালে আমাকে দেখতে পাও? আমি একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। আমার নাম নুসরাত জাহান। মাদ্রাসায় পড়ি বিধায় নাক সিঁটকিও না। আমিও তোমাদের মতো সাজতে জানি, হয়তো অতো দামি মেকআপ কেনার অবস্থা নেই; তারপরও আমিও তোমাদের মতোই বন্ধু সুলভ। বন্ধুদের নিয়ে হৈ-হুল্লোড় এমনকি রাত জেগে গল্প কবিতা সব ঠিক চলে।

যায় দিন ভালো, আসে দিন মন্দ। এক সময় আমারই শিক্ষকের নজরে পরে যাই। সময় পেলে আমার ভিডিওটা ফেসবুক থেকে দেখে নিও। সেখানে আমি বলেছি কিভাবে একজন বাবার বয়সী মানুষ আমাকে লাঞ্চিত করেছে।

গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকালে আমি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় যাই। কেউ একজন আমাকে মিথ্যে খবর দেয়, আমার বন্ধু নিষাদ, মাদ্রাসার ছাদে কেউ তাকে মারধর করছে। বিশ্বাস করো, আমি ঠিক তোমাদের মতোই বন্ধু পাগল। বন্ধুর বিপদ শুনে স্থির থাকতে পারিনি। ঠিক তোমরা যেভাবে ছুটে যেতে বন্ধুর বিপদে, আমিও ছুটে যাই ছাদে। যেখানে মানুষরূপী কিছু পশু অপেক্ষায় ছিল আমাকে শাসাবে বলে। ওরা ভয় দেখিয়েছে, ওরা হুমকি ধামকি দিয়েছে। এরকম হুমকি ধামকিতে তোমরা অনেকেই ভয়ে কুঁকড়ে যেতে। আমিও ভয় পেয়েছি। ভীষণ ভয়। কিন্তু ভয়ের সাথে আপোষ করিনি।

তোমাদের মতোই আরো কিছু ছাত্রীরা মুখোশ পরে, অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয় আমাকে। আমি বলেছি, না আমি অন্যায় মেনে নেবো না। আমি আমার মতো অন্য নারীদের জীবনে অন্যরকম গল্প লিখবো। মজার ব্যাপার কি জানো? নারীদের আগুনে পুড়েই আমার মৃত্যু হয়।

ওরা চেয়েছিলো ধর্মের নামে, এভাবেই চলবে নারীদের প্রতি অত্যাচার। ওরা ভেবেছিলো, যে যখন চাইবে নারীরা তার কাছেই আত্মসমর্পণ করবে। তোমরা অনেকেই ব্যস্ত পৃথিবীর সেরা দেশ থেকে সেরা সব সামগ্রী কিনে সুখী হওয়াতে। তোমাদের মতো আমিও একজন। আমারও মন চাইতো একদিন বড় হবো, সেরাদের সেরা হবো।

আমাকে আমার অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে চলে যেতে হলো। আমার প্রিয় বাবা মা রেখে শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে আজ আমি অন্য একটা জগতে। তোমরা ব্যস্ত তোমাদের জীবনে। কারো জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না। থাকা উচিতও নয়।

আমি তোমাদেরই একজন। আমার মুখ খানা দেখো, কোথাও না কোথাও তোমাদের কারো সাথে মিল খুঁজে পাবে। আমার জন্য দু’ ফোটা জল নয়, দুই লাইন লিখে জানিয়ে দিও … তুমি বা তোমরা আমার মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাও। তবেই না জাগবে জাতি, তবেই না জাগবে বিবেক। তবেই না বলবো, মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।

youtu.be/OyY7ZW8psSI

সুর সে নয় বেশি দূরে

দমে আছে আসল ধন
করিতে জানিলে সাধন
পিঞ্জিরার ভেতর আছে যে জন
মন দিয়ে শুনো তার গুঞ্জন।

অচিন পাখি কাঁদছে নাকি
দুঃখের বাঁশি বাজায় নাকি
কান পেতে শুনো তার নিবেদন
সে খানে বাস করে এক অভাজন।

সুর শুনো সে আলোকের
মুখনা চাইয়া দেখো সে বালকের
উদাস সাঁঝের বেলায়
তারে কেমন সুখী দেখায়।

সাধন করিলে যতনে
ভবেরও ভুবনে
সে মন থাকে নিজেরও বশে
প্রাণ পণে ডাকিলে খোদাও মেলে।

সুর সে নয় বেশি দূরে
সাধনে করিলে যতনে
ভবেরও ভুবনে
বোঝে সে ব্যাথা বন্ধ নয়নে
পাখি যখন নিরুপায়
উড়াইয়া দাও তারে
জগৎ ভুলে ডুবে দেও ধ্যানেরও লীলায়
নূরের দেখা পাবে হৃদয়ের আঙ্গিনায়।

দমে আছে আসল ধন
করিতে জানিলে সাধন
পিঞ্জিরার ভেতর আছে যে জন
মন দিয়ে শুনো তার গুঞ্জন।

ভালোবাসার শয্যা পেতে রই

ভালোবাসার শয্যা পেতে রই

ভালোবাসার শয্যা পেতে রই
তুমি আসবে কড়া নাড়বে
কান পেতে রই্।
পাষান হৃদয় তোমার
তাকি কি আর সহজে বিগলিত হয়
চুক করে ভুল কি তোমাকে দিয়ে হয়
হিসেবে তুমি একদম পাকা
হৃদয়টা তোমার ভীষণ ফাঁকা !!

বুঝিনি আমি আগে
আমার হৃদয়টা চিরে দেখো
খুঁজে পাবে মলিন কিছু পত্র
পরে আছে যত্র তত্র
লেখা আছে
হৃদয় ভাঙ্গার সব গল্প।
মেঘলা দিনে
কেন আমার এমন একলা লাগে।

ব্যাকুল থাকে হৃদয়
অবজ্ঞা আর অশ্রু সজল আমারই অন্তর
তবু তোমাকেই ভালোবেসেছি
অনেকটাই … পাগলের মতো

তবু তুমি খোলা চোখে চোখ বুজে রও
ভালোবাসা পায়ে ঠেলে দাও
শহর কিংবা গ্রাম বলে কথা নয়
ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা হয়
ধৈর্যের পার ভেঙে গেছে
ভাবছি বসে,
নিষ্পাপ বিশুদ্ধ ভালোবাসা কি আজকাল কেনা বেচা হয়
তাহলে কিনে নিতাম সুখ আর স্বপ্ন দাম দিয়ে না হয়।

আমি না হয় চড়া দামে বেঁচে দিতাম আমার প্রথম প্রেম
অনুভূতির গভীর সে লেভেলে তুমি একজন কাঠ মিস্ত্রী
নিমিষে তছনচ করে দাও হৃদয়ের বাগান
নাহ ! ভয়ে কষ্টে, আগের মতো স্রষ্টা কে আমি আর ডাকিনা
তারও বোধয় সময় নাই আমার কথা শুনবার …

তাই আমি এখন দুর্বার
নেই কিছু হারবার
তবু আশায় আশায় কাটে দিন কাটে রাত
আমি ভালোবাসার শয্যা পেতে রই
তুমি আসবে আসবে কড়া নাড়বে
কান পেতে রই …

কবিতা নয় … এলোমেলো খেরোপাতা

কবিতা নয় … এলোমেলো খেরোপাতা

কিছুক্ষণ আগে বার্তা পেলাম
দুই বন্ধু এক জীবন যুগল বন্দি কাটাবে।
আমি খুব হাসলাম
খাতা কলম নিয়ে বসে পড়লাম
ভালোবাসা যদি অমরতা আনে;
তবে যাও বলে দিলাম, দাঁড় কাক হৃদয় খুবলে খাবে।

মৃদু হাওয়ায় যদি মাতাল হওয়া যেতো …
তবে হয়েছে, মদ্য কারবারিদের ব্যাবসা লাঠে উঠে যেত
কবি জীবনানন্দ দাস একদা বলেছেন
তার দেহ তিনি অন্ধকারে ধুয়েছেন একা একা
অভাগিনীর বেয়াদবি মাফ করবেন কবি মহোদয়
কবি হতে গিয়ে গুনেছেন কি, ভেঙেছেন কত শত কোমল হৃদয় !!

আমাদের প্রিয় কবি নির্মলেন্দু বলেছেন
“শুধু তোমাকে একবার ছোঁব
ওই আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন।”

এমন করে কেউ কি আজকাল উজাড় করে ভালবাসে ?
বুকে হাত দিয়ে সত্যি বলুন, সত্যি কি তাই?

বিশ্ব নারী দিবসে সকল নারীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

আজ বিশ্ব নারী দিবস। শব্দনীড় এর পক্ষ থেকে সকল নারীদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

প্রত্যেক নারী যার যার অবস্থান থেকে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছেন, ঘরে বাইরে সম অধিকারের জন্য পথ চলা থেমে নেই। নারীরা যেমন নানা ঢঙে চুল বাঁধছেন বা সাজছেন একই ভাবে জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে সমান তালে মেধা ও পারদর্শিতার প্রমাণ দিচ্ছেন সকল ক্ষেত্রে। সাধুবাদ জানাই সে সকল নারীদের যাদের পথ চলা দুর্বিষহ ছিল তবুও তারা থেমে যাননি …

আজকের নারী আগামী প্রজন্মের দিকনির্দেশক। আমাদের সময়, আমাদের মায়েদের বলার অধিকার ছিল না। লাঞ্ছনা, বঞ্চনা সয়ে নিজের পছন্দ অপছন্দকে মনের ঘরে বন্দি করে জীবন পার করে দিতেন। তাদেরও নানান গুণ ছিলো; কেউ কবিতা লিখতেন, কেউ পারতেন হাতের কাজ, কারো হাতের রান্না ছিল বর্তমান নামকরা শেফদের চেয়েও সুস্বাদু। তাদের মেধা বিকাশের উপায় ছিল না। তাদের সকল গুণ সংসারেই সীমাবদ্ধ ছিল; তারা নিজেরাও জানতেন না তারা কতটা গুণী ছিলেন।

সময় বদলেছে। নারী এখন শুধুই একজন নারী নয়; একজন বন্ধু, একজন দার্শনিক, একজন শিক্ষিকা, একজন কূটনৈতিক, একজন ডাক্তার, একজন বিজ্ঞানী ভাবতে হৃদয় এক অন্যরকম অনুভূতিতে তৃপ্ত হয়। চলমান আইন নারীদের জন্য পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোতে নানা ভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। নারী শিক্ষা, নারীদের নানা কর্ম সংস্থান সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নারীদের পথ চলায় সহায়ক হয়েছে।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী একজন নারী, তারা প্রত্যেকে কোনো কোনো ভাবে বাংলাদেশের নারীদের হাত মজবুত করেছেন। তাদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

বিতর্কিত হলেও অস্বীকার করতে পারিনা একটি নাম “তাসলিমা নাসরিন” নারী অধিকার, নারীর শেকল ভাঙ্গার গল্প বলতে গেলে এই প্রতিবাদী নারীর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আজ তিনি দেশান্তরি। আশা করবো তিনি তাঁর দেশে ফেরার অনুমতি পাবেন। ধর্ম, বর্ণ শ্রেণী বিভেদ থেকে বেড়িয়ে নারীরা হোক আকাশছোঁয়া স্বপ্নের ঠিকানা।

নারীদের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ হয়ে উঠুক পৃথিবীর বুকে একটি স্বপ্ন রাষ্ট্র। খুন, ধর্ষণ, যৌতুক যেন হয়ে উঠে পুরোনো দিনের বেদনার গল্প কথা। দিন বদলাচ্ছে, বদলাতে হবে পুরুষদেরও। তাদের চিন্তা চেতনায় নারীদের সমান ভাবার শক্ত ভিত্তি তৈরীর কাজে সমাজের সকল শ্রেণীকে কাজ করতে হবে। পরিবর্তন ঘর থেকেই শুরু হোক। আপনি আপনার ছেলে সন্তানকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তুলুন। ভবিষৎ প্রজন্ম অবশ্যই ধীরে ধীরে তাদের বোন ও বন্ধুদের এবং ভবিষতে তাদের জীবন সঙ্গীকে তাদের সম সমান মর্যাদা দেবে।

বিশ্বজুড়ে আজকের স্লোগান, নারী-পুরুষের সমান অধিকার চাই। সকল নারীর সাথে একাত্ম হয়ে আমিও বলতে চাই, সঙ্গী হয়ে পাশে থাকো, আস্থা রাখো, গায়ের জোরে নয় ভালোবেসে হাতটি ধরো … চলো এই পথ এক সাথে; একই ছন্দে নির্মল আনন্দে পারি দেই। সুখকে মিলেমিশে ভাগা ভাগি করে নিলে বাড়ে, দুঃখও মিলেমিশে ভাগা ভাগি করে নিলে কমে।

আমার সবটুকু প্রেম তোমায় দিলাম
তোমার সবটুকু প্রেম আমায় দিও
এসো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বর্গ গড়ি
এসো পাশাপাশি পথ চলি …

নতুন করে ভাবি। নতুনদের নতুন চিন্তা সাদরে গ্রহণ করি। ধর্ম যেন শান্তি আনে। ধর্ম যেন শক্তির উৎস হয়। ধর্ম যেন সমতা আনে। নারীবাদীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দুটো কথা বলতে চাই, নারী অধিকার নিয়ে বিস্তর লেখা লিখেছেন, বিস্তর নাটক গল্প হয়েছে, হয়েছে প্রতিবাদ সভা। আজ না হয়, যে মা, যে বোন ঘর সামলায় তার পাশে বসে শুনে নেবেন নারীবাদ বা নারীবাদীদের প্রতি তার মনের ভেতরে রাখা কষ্টের কান্না। ঐ যে বললাম, পরিবর্তন ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। এঁটো থালাবাসন মাজবে একজন, অন্যজন করবে সভা সিমফোসিয়াম, নারী অধিকার এভাবে হয় না।

আগে নিজের মাঝে পরিবর্তন আনতে হবে। পরে দেশের বা অন্য দশের। সুস্থ সুন্দর মানবিক চেতনায় এগিয়ে চলুক আগামীর নারী।

সুখ পাখি

সুখ পাখি

সুখ পাখি তুই এতই উড়িস!
ধার দিবি তোর ডানা দু’টো?
ইচ্ছে মত উড়বো আমি,
ফেরত দেবো দু’দিন পরে।

আকাশ জুড়ে উড়বো আর
বলবো আমি সাত সতেরো
গপ্পো তোদের
সুখ পাখি, দিবি নাকি
তোর ডানা দু’টো?
আয়েশ করে তোকে বসতে দেবো
উষ্ণ নরম আসন দেবো
যা খেতে চাস খেতে দেবো
মিষ্টি মধুর ভরে আমার দু’মুঠো
ধার দিবি তোর ডানা দু’টো?

হরেক মনের খবর এনে দেবো
দে না ভাই তোর ডানা দু’টো!
তোকে আমি স্বপ্ন দেবো,
স্বপ্ন রঙিন পরিসর দেবো
ভালোবাসার কবিতা দেবো
উপমা-অনুপ্রাস উৎপ্রেক্ষা দেবো
তাল, লয়, ছন্দ দেবো, গানও দেবো।

যা গানের সাথে সুরও দেবো
এবার দে তোর ডানা দু’টো।

অণুগল্প : রুমা’র কষ্ট বা হাসি

অণুগল্প : রুমা’র কষ্ট বা হাসি

রুমা হাতে বই নিয়ে বসে আছে। বসে আছে বলাটা বোধহয় ঠিক হলোনা। বালিশে হেলান দিয়ে আধ শোয়া হয়ে আছে। খুব আগ্রহ নিয়ে বইটা খুঁজে বের করেছে। বইয়ের নাম “The Sins of the father”। লেখকের নাম “Jeffrey Archer”। নাম করা ফিকশন লেখক। তার একটা বই ২৭০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। এক টাকা করে লাভ হলে, একটা বই থেকে ভদ্রলোক ২৭০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। আমাদের দেশে লেখকদের অবস্থা অন্যরকম…

আফসোস এত ভালো ভালো লেখকদের লেখা বই অনলাইন বিভিন্ন পোর্টালে ফ্রি দেয়া আছে, তবুও আমরা বই পড়িনা। সময় কই? পরচর্চা, কান ভাঙ্গানি, লোক দেখানো আদিখ্যেতা করে কুল পাইনা, বই পড়বো কখন ? তার উপর আছে সংসারের নানান ঝামেলা, আজকে ছেলের ঠান্ডা লেগেছে, কাল মেয়ের বায়ু চড়া, পরশু স্বামীর মেজাজ টং।

রুমাও আমাদের মতো একজন নারী। সারাদিনের নানা কাজ কর্ম সেরে ক্লান্ত সে প্রায়। শখ করে বই নিয়ে বসেছে। কিন্তু এখন বই খুলতে ইচ্ছে করছেনা তার। সে মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে অকুল ভাবনায় পরেছে। কেমন করে থাকে তারা মাকে ছেড়ে, ভাই বোন স্বজনদের ছেড়ে। তাদের কি একবারও প্রিয় মানুষ গুলোর জন্য বুকের ভেতর হাউ মাউ করে কাঁদেনা ? একবার যে যায়, সে আর কোনোদিন ফেরে না।

সবার সকাল হয়, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি আসে। আহা! যে সন্তান চলে যায় সে মায়ের জীবনে ভেতরে ভেতরে কি আঁধার ঘিরে থাকে? কে জানে ? রুমার এসব ভেবে গলা ধরে আসে। মৃত্যু ভাবনা থেকে রুমা এক লাফে শফিকের সাথে তার ঝগড়া লাগার বিষয় নিয়ে – চিন্তায় কপাল কুঁচকে ফেলেছে। রুমার স্বামীর নাম শফিক চোধুরী।

আজকাল রুমার সংসারে মন নেই। মন তার কেমন উথাল পাথাল করে। রুমাকে দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নাই। আজ বিকেলে পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে অনেকক্ষণ হাসা হাসিও করেছে। কিন্তু কিছুতেই শফিকের উন্মাদনার কথা ভুলতে পারছে না। সেকি রাগ !! রুমার বাবা মা তুলে গাল দিতে ছাড়েনি। মানুষটার হলো কি ? মাথা টাথা কি সত্যি খারাপ হয়ে যাচ্ছে ? একবার ভেবেছে শফিককেই জিজ্ঞাসা করে দেখবে, শরীরে গরম বেশি লাগে কিনা ? একা একা কথা বলে কিনা, জামা কাপড় পরে থাকলে অসহ্য লাগে কিনা? শেষ পর্যন্ত অবশ্য কিছুই বলেনি।

রুমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো। রান্না ঘরের কুট কাট আওয়াজ থেকে। রুমা বই বিছানায় রেখে পাকের ঘরে গিয়ে দেখে, শফিক রান্না বসাচ্ছে। রুমা দেখে একগাল হেসে বললো, “দাঁড়াও এখন কিন্তু ঘুমাবে না ভুনা ঝাল চিকেন কারি বানাচ্ছি, খেয়ে তারপর ঘুমাতে যাবে। ভরা পেটে ঘুমোতে গেলে দেখবে, বিছনায় যেতে না যেতেই তুমি নাক ডাকছো”।

রুমা কি বলবে না বুঝে বললো, ‘খিদায় মারা যাচ্ছি .ভাগ্গিশ তোমার রান্নার শখ হয়েছে। দাঁড়াও আমি সালাদ বানিয়ে দিচ্ছি। আজ কে আমি ‘নো টু ডায়েট’। পেট ভরে খাবো। শফিক শিশুদের মতো হাসছে। রুমার চোখে কোথ্থেকে – কি যে পরলো। রুমা তরি ঘড়ি করে বাথরুমের দিকে গেলো। চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখলো। ওপাশের রুমাকে বড্ডো অচেনা লাগছে …

ওপাশের রুমা, আয়নার সামনে দাঁড়ানো রুমাকে বললো, ‘shame on ইউ’।
রুমার চোখ গড়িয়ে, অশ্রুরা আজ যেন থামছেই না।
রুমা ফিশফিশিয়ে বললো, কি বিপদ !! কষ্টেরা এত নিষ্ঠুর কেন ? একা থাকতেই দেবেনা !!

চোখ মুছে সে প্রতিদিনের রুমা হয়ে একবার আয়নায় নিজেকে দেখলো। ওপাশের রুমা হাসছে। এখন আয়নার সামনের দাঁড়ানো রুমাও হাসছে। হাসি বোধহয় উদার বন্ধু, বাহু খুলে অপেক্ষায় থাকে। এখন অকারণে আমিও হাহা করে হাসছি।

নির্বান অন্বেষণ

নির্বান অন্বেষণ

ভাল আছি, ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।।

অগনিত চিঠি দিয়েছিলাম। তুমি পাওনি বোধহয়। আকাশের দিকে তাকানোর ফুরসৎ ছিল না তোমার হয়তো। ছদ্মবেশী এক অবাক করা বাউলের গলায় মালাও পরিয়েছিলাম, সে মালা শুকিয়ে গেছে সেই কবেই !! বাউল হারিয়ে গেছে বনে, কোথায় আছে, কেমন আছে, খোঁজ করিনি। ব্যাস্ত ছিলাম, স্বপ্ন গড়ায়। সে স্বপ্ন কখন যে মনের গ্লানি হয়ে মনকে গিলে খেয়েছে টের পাইনি। কবে, কখন, কোথায় তুমিও যেন হারিয়ে গেলে … রয়ে গেলাম শুধু আমার আমি।

হাজারও ভীড়ে একা নিঃসঙ্গ, তোমার অপেক্ষায় কেটেছে দুই যুগ। একদিন বসে গেলাম লিখতে … লিখেও ফেললাম কিছু কথা।

একজীবনে দেখলাম আমি হরেক রঙের মানব মেলা
এক চিলতে রোদ্রের ফাঁকে দেখলাম একরাশ মেঘ বালিকা

একজীবনে ভালোবেসে, দেখলাম কত কৃত্রিম মায়া
এক টুকরো কাঁচ দিয়ে এঁকে দিলাম তার ছায়া …

একজীবনে আর কত কষ্ট পেলে কষ্টের শেষ হবে
এক বুক কষ্ট নিয়ে হয়তো একটা জীবন অনায়াসে চলে যাবে

… পাঠিয়ে ছিলাম আকাশের ঠিকানায়। অভিমানী নীল আকাশের কান্না গুলো, অশ্রু হয়ে ঝরলো যেন আমারই বুকে। সে বুকে বাঁধলো নতুন ব্যাধি. ডাক্তার বৈদ্য সবাই হাল ছেড়ে দিলো। কোনো ঔষধে যেন কাজ হয় না। একদিন বিধাতার দয়া হলো, নীল আকাশ থেকে টুপ্ করে পরলো একটা চিঠি। ওতে লেখা আছে …

তুই যত দূরে থাকিস না কেন, তুই আমারি। তুই আমারই বুকচেড়া সর্বনাশ।

আদতে আমি ভালোবাসার কাঙ্গাল। মনে পরে গেলো, হাত ধরে ঘন্টার ঘন্টার পর ঘন্টা চুপচাপ বসে থাকার দিনগুলো কথা। মনে পরে গেলো, নিশীথে তোমার কোলে মাথা রেখে গান শোনার স্মৃতি। তুমি বলেছিলে মায়া।

আমি বলেছিলাম ভালোবাসা। তুমি বলেছিলে যত্ন রাখতে যত টুকু তুমি দিয়েছিলে। আমি বলেছিলাম, আমি আঁকড়ে ধরে রাখবো। শেষ পর্যন্ত আমিই স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে ছিলাম। তুমিই কবেই সব ভুলে বসে আছো। বাউলদের সব মনে রাখতে নেই। বাউলদের বোধহয় ভালোবাসতে নেই।

ভেবেছিলাম, জিজ্ঞেস করবো কোনো এক ফাঁকে
এই কথায় সে কথায়, তোমার অন্যমনস্কতায়
প্রায় সময় অনিচ্ছায় ভুলে যাই
তোমার হাসির আড়ালে কখনো কি তোমার চোখ ভিজে যায়?

… নাহ! তুমি তখন কোনো কিছুর ধার ধরতে না। তুমি এখনো কোনো কিছুর ধার ধারণা। আমি কথা রেখেছিলাম। পড়িয়েছিলাম মালা বাউলের অন্তরে, সে মালার ভার বাউল বহন করতে পারেনি।

নষ্ট বাউল নষ্ট করে ফেলে, সে ভালোবাসার মালা। আমি ঠিক আগের মতোই আছি। বোধহয় আগের চাইতে কিছুটা নরম স্বভাবের হয়েছি। বয়স বোধহয় সবাইকে একটু একটু করে পাল্টে দেয়, তুমি বদলে গেছো আমূল …

তোমার চোখে এখন আর আমাকে দেখা যায় না। আমার চোখে ভালোবাসা নয়, তুমি পাপ খুঁজে পাও। সেদিনই আমার মৃত্যু হয়; যেদিন জানতে পারি, তোমাকে ভালোবাসা পাপ। তুমি বুঝতে পারোনি। কারণ তুমি আজও ঠিক; আগের মতোই ভীষণ স্বার্থপর।

ছেঁড়া বিক্ষুব্ধের সংগোপন

ছেঁড়া বিক্ষুব্ধের সংগোপন

নিরালায় বসে ভাবছিলাম তোমার কথা …
জানি তোমার সে জগতে অবাঞ্ছিত আমাকে মনে পরে না
যে মানুষটা তোমার মনের যোজন যোজন দূরে বাস করে
ভাবছিলাম তাকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে থাকো কি করে !!

ভীষণ ইচ্ছে, কবিতা দিয়ে একটা শহর জ্বালিয়ে দিলে মন্দ হতো না
অন্তত, ভালোবাসাহীন লক্ষাধিক লাশে দুর্গন্ধ ছড়াতো না
ঘুম ভেঙ্গে, চিবুক ছুঁয়ে তোমাকে আমার ছাইপাশ পড়তে হতো না
স্বপ্নের বাগানে কেউ কোনদিন রক্ত ঝরাতো না
যুগ যুগ ধরে শোষিত জনতা ক্ষুব্ধ হতো না
দূর্বার গর্জনে জয় বাংলার স্লোগান ম্লান হয়ে যেতো না।

আজ দিন শেষে তুমি … প্লিজ অনুশোচনা করো না
দেখনা প্রাণহীন শহরে কেউ আর চিৎকার করে কাঁদে না
কেউ আর উড়ো চিঠি দিয়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখায় না।

বসে বসে ভাবছিলাম, তোমাকে নিয়ে আর ভাববো না
আজ থেকে তোমাকে নিয়ে আর কবিতা লিখবো না
হাহুতাশ, স্বপ্ন, কল্পনা মনের তুলিতে আল্পনা … না না আর না
ভালো থেকো আমার ভালোবাসা, ভালো থেকো বুক ছেঁড়া কান্না।

সহজ কথা সহজ আর কঠিনকে আরোও সহজ করে বলুন

সামাজিক বা ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে নিজের মতের পক্ষে বা অন্যের মতের বিপক্ষে প্রতিবাদ করতে হলে, অভদ্র হতে হবে। কোন কিতাবে লেখা আছে আমি ঠিক জানিনা। যার যার জীবন তার তার.যার যার ভাবনা তার তার। নিজের অস্তিত্ব কে বাঁচিয়ে রাখা আর জাহির করা দুটো ভিন্ন বিষয়। আমাদের দেশের বেশ নামি দামি কিছু ইউটুবার অদ্ভুত ভাবে নানা জটিলতায় জড়িয়ে যাচ্ছেন শুধু নিজের আবেগকে পাবলিকলি প্রকাশ করে।

পরিবর্তন আনতে হলে সবার আগে নিজের আচরণ, নিজের আবেগের প্রতি নিয়ন্ত্রণ নিজের ব্যবহার মার্জিত করা সব চাইতে জরুরি। আপনার ফলোয়ার সংখ্যা কত, আপনার একটি ছবিতে কয়টি লাইক আসে সেটা সেখানে বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য বিষয় আপনার করা ভিডিও বা লেখা পরে আপনি সমাজকে ইতিবাচক মেসেজ দিচ্ছেন না নেতিবাচক !! একজন ফলোয়ারও যদি আপনাকে অনুসরণ একটা ভালো কাজ করে সেটাই আপনার অবদান সমাজের প্রতি বা দেশের প্রতি।

সামাজিক কিছু শেকল আমাদের আসলে বেঁধে রাখে, কিছু শেকল আগলে রাখে আমাদের মায়ার অদ্ভুত বাঁধনে। মাঝে মাঝে মনে হতেই পারে …

কারার ঐ লৌহকপাট
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ!
ধ্বংস নিশান
উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।

হাত কেটেছে আপনার, ব্যথা আপনার। অন্যরা উহু আহা করতে পারবে, একজ্যাক্টলি আপনার ব্যথা অনুধাবন করবে না। শেকল ভাঙ্গার জন্য উদ্বুদ্ধ করার আগে ভাবতে হবে, কোন কোন শেকল গুলো লাথি দিয়ে ভাঙতে চাই। কোন কোন নেকাব গুলো তুলে দেয়া উচিত। মডার্ন মানেই উগ্র ভাবনা নয়।

নিজের অস্তিত্ব মানেই, অন্যরা ভাবনা গুলো অপরিপক্ক জাহির করা নয়। ওয়েস্টার্ন কালচার আপনাদের ভিষণ ভাবে উৎসাহিত করে সেটাই স্বাভাবিক। তার মানে এই না যে সে কালচারেও গরমিল নাই। তাদের বেড়ে উঠা, তাদের জীবন যাত্রা। ধর্ম, সামাজিকতা ভিন্ন. তাদের ভালো দিক গুলো অর্জন করতে চাইলে, নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে ভেঙ্গে গড়তে হবে। তারা কথায় কথায় বড় ছোট উভয়কে, হোয়াট দা *ক বলে বিধায়, সেটা রপ্ত করে পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝে আপনাকেও প্রয়োগ করতে হবে। তার কোন মানে নাই, নিজেকে গ্রহণ যোগ্য করার জন্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

নিজেকে জানতে হবে, যখনি আপনি আপনারা অসীমতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ সুস্পষ্ট একটি চিত্র আপনার হৃদয় ও মস্তিষ্কে ধারণ করবেন, তখন লোকের কথায় আপনি থোড়াই পাত্তা দেবেন। বাজবেন বা বাজাবেন নিজের মতো করে নিজ ছন্দে। সহজ কথা সহজ করে বলুন। কঠিন কথা আরোও সহজ করে বলুন। শেকল তখন লাথি দিয়ে ভাঙতে হবে না, লক্ষ কোটি মানুষ আপনার হয়ে সে সকল আলগা করে দেবে।

তারপর তো এগিয়ে চলা …
দুর্বার সব কাণ্ড কে দমিয়ে সত্য সুন্দর সহজের পথে স্বপ্নময় যাত্রা …

আমি তুমি এবং আমি

আমি তুমি এবং আমি

কবে থেকে শুরু, সে হৃদয় টনটনে
আজ তা সত্যি মনে নেই – তবু
সব গল্প অল্প অল্প জানে, আমার শৈশব;

তোমার সাথে বোধহয় আর দেখা হবে না
আমাদের দুজনার পথ দু’রকম কাছে টানে না
কতবার একটি কথা বলতে গিয়ে থমকে গেছি
প্রতি রাতে মনে মনে নিবিড়ে তোমাকে ভেবেছি
অবসরে কল্পনায় মৃদু অভিমানও করেছি …

তুমি একদিন চলে গেলে ঈশ্বরের খোঁজে
বিশ্বাস করো, আমি ছিলাম তোমার খোঁজে
অনেক খুঁজে খুঁজে একদিন একটা পাহাড় পেয়েছি
সে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে কষ্ট দেখেছি
সে কষ্টের ভারে আমি বাঁধা পরে গেছি

আমাকে টেনে তোলার আবদার আজ করবো না
আমাকে ভালোবাসে কাছে টানার কথা বলবো না

শুধু একবার জানিও প্রিয়,
হৃদয় গহবরে তোমার কি ছিল টন টনে !!
এতগুলো বছর পরে যদি উত্তর খুঁজে না পাই
কি ছিল তা তোমার আমার, আমাকে জানিও প্রিয়।

তুই কি আমার বন্ধু হবি

তুই কি আমার বন্ধু হবি

তুই থাকিস নীল নগরে
আমি থাকি সাগর পারে
এখানে সন্ধ্যা মায়া কাড়ে
ওখানে পদ্ম জলে ভাসে

তোকে নিয়ে যাবো একদিন লালনের দেশে
ঘর বাড়ি ছেড়ে গাইবো গান ভিন্ন কোন বেশে
তোকে নিয়ে হারিয়ে যাবো, উদাসী বনের শেষে
মায়া ভরে তাকিয়ে থেকে কাটাবো হাজার কাল
তোর তরীতে ভাসাবো নাও, বাইবো অনন্ত কাল

তুই আমার সবটা নিলি
দেয়ার বেলায় শূন্য দিলি
তবুও আমি আপন মনে স্বপ্ন বুনি
তুই যে আমার স্বপ্ন কবি
তুই আমার ভোরের রবি
তুই কি আমার বন্ধু হবি
দিয়ে দেব হৃদয় নগর, সবি
তুই কি আমার বন্ধু হবি?
বল্ না তুই কি আমার বন্ধু হবি !!

মেঘবিরহের ত্বক

মেঘবিরহের ত্বক

জীবন যখন দারুণ ফ্যাকাসে
এক দুপুরে একটি ম্যাসেজ আসে
ছোট্ট একটা প্রজাপতি উড়ে যায়, দূরের ওই নীল আকাশে
সহজ সরল মনে নানা প্রশ্ন ভাসে
কতগুলো বছর কেটেছে তোমার প্রতীক্ষায়
ভেবেছিলাম আর খুঁজবোনা তোমায়
যে যায় তাকে কি ধরে রাখা যায় !!

অদ্ভুত স্বপ্নময় একটা সন্ধ্যা কেটে যায়
বার বার মেসেঞ্জারে চোখ থমকে যায়
না আর কোনো মেসেজ আসে না
অপেক্ষা যেন শেষ হয় না
চঞ্চল মন, কিছু ভালো লাগে না
অবশেষে, ক্রিং ক্রিং….
ওপাশ থেকে হ্যালো, কেমন আছো
দীর্ঘশ্বাস গোপন করে
আমি বললাম, বেশতো
কোথায় ছিলে, কেমন ছিলে কিছুই তো জানিনা।

তুমি বললে, ভালোবাসার থৈ থৈ সাগরে
অজস্র মেঘ মালার পথ ধরে
ভালোবাসার কল্পলোকে তোমার সেই পদ্ম পাতার নীড়ে
জানো খুব খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো, বলি তোমায়
নিবে আমায় তোমার সাথে সে নীল নদীর পারে
প্রাণ ভোরে দেখবো তোমাকে আলোকিত জোছনা রাতে।

অদ্ভুত আনন্দ উল্লাসে, বুকের গহীনে হটাৎ যখন টন টনে
একান্তে তোমার হাতটা ধরতে দিও আনমনে
কতকাল তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখিনা
খুঁজে দেখো, কোথাও একটু খানি রয়ে গেছি তোমার অন্তর গহীনে
সে বালুচরে অনন্ত ভালোবাসা খেলা করে
কোন এক ঝির ঝির বৃষ্টি ভেজা দুপুরে
সঙ্গে নিও আমায় ভিজবো দুজন প্রাণ ভোরে
একথা ও কথা গল্পের যেন শেষ হয় না …

তুমি বললে আজ রাখি
মনে হলো, হৃদয় নিংড়ে উড়ে যাচ্ছে প্রাণ পাখি
আমি বললাম, একটা কথা ছিল ভীষণ জরুরি
তুমি জিজ্ঞেস করলে কি হলো, কিছু বলবে
আমি বললাম, তোমার যেখানে খুশি চলে যেও
আমার অর্ধেকটা, আমাকে দিয়ে যেও
তুমি প্রাণ খুলে হাসলে
আমাকে যেন ধূসর কুয়াশায় আবারো ভাসালে
আমার প্রার্থনা তুমি, কি করে বাঁচবো বলো তোমাকে হারালে।

বুঝি শুধু সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা

আচ্ছা – দুঃখ ছাড়া কি জীবন হয় ?
মস্ত বড় পৃথিবী জুড়ে
কোথাও কি কেউ একটু হলেও দুঃখী নয় !!
শুনেছি, জনবহুল শহরে নাকি স্বপ্ন পোড়ে
এও শুনেছি, চাঁদের গালে নাকি টোল পরে
আরো শুনেছি, স্বপ্ন লোকে মানুষের গল্প উড়ে
শুনেই আমি হেঁসে গড়াগড়ি
মন পোড়া গ্রামে, মানুষ নাকি কল্পনাতে ভূত ধরে।

কেউ একজন বলেছিলো, কবে মনে নেই
রিক্ত হৃদয় নাকি সন্ধের আকাশে স্বচ্ছ দেখা যায়
সুখ – সুখ নাকি শুধুই ফাঁকি
শুনেছি, চায়ের দোকানে, সুখের নামে পরিমলের বেশ কিছু বাকি
আরো শুনেছি নীল রং নাকি কবিদের মন গড়া বাড়াবাড়ি
বেদনার আয়োজনে কবির রং-তুলির সাথে নিত্য নতুন ছল চাতুরি
সত্য মিথ্যে জানিনা
জোছনার বুক চিড়ে নাকি বেদনার রক্ত ঝরে।

মানুষের বুক চিড়ে নাকি এক বর্ষা গল্প কথা
কে জানে দিনকাল যা পড়েছে,
ভণ্ড জোছনার হৃদয় জুড়ে নাকি লক্ষ কোটি বেদনার আত্ম কথা
আমি অত শত বুঝিনা
বুঝি শুধু সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা
বুঝি হৃদয়ের শীতল হাওয়া
লোকে বলে প্রেম নাকি এক জীবনে একজনকেই
আমার হাসি পায়, তাহলে যে কবিদের লোকালয় ছেড়ে পালতে হবে …

রবিঠাকুরের কবিতায় তাহলে জমতো ধূলি
বর্ষায় সর্ষে ইলিশ আর খিচুড়ি
মেঘ দুপুরে হাতে রবীঠাকুরের কবিতা
বদলে যেত এক ধু ধু তেপান্তর
ওন দা স্পট থমকে যেতে পারে
ঝর্ণার অবিরাম ঝরে যাওয়া প্রান্তর।

শুনেছি শর্ত বিহীন হাত আজকাল কেউ ধরে না
আমি অতি সাধারণ একজন, অত শত ঠিক বুঝি না।

বুঝি শুধু সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা।