সুরাইয়া নাজনীন এর সকল পোস্ট

নান্দনিক হয়ে উঠুক আপনার সিলিং

নান্দনিক হয়ে উঠুক আপনার সিলিং

সিলিং যত উঁচু, তত সুন্দর- এই ধারণা থেকে এখন বের হয়ে এসেছে নগরবাসী। এখন ছোট জায়গাকেই নান্দনিকভাবে সাজানোর জন্য প্রচলন শুরু হয়েছে কৃত্রিম ছাদের। মূল ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরও একটি অতিরিক্ত ছাদই হলো ফলস সিলিং। সৌন্দর্য বাড়ানোই এ ধরনের সিলিং তৈরির মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও ঘরকে কৃত্রিম আলোয় আলোকিত করার অন্যতম উপায় ফলস সিলিং। আবার অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ ছাদ ঢাকার জন্যও ফলস সিলিং ব্যবহার করা হয়।

যদি ঘরকে তাপ ও শব্দ নিরোধক করতে চান, তাহলে ফলস সিলিংয়ে ব্যবহার করতে হবে মিনারেল বোর্ড। মিনারেল বোর্ড তাপ ও শব্দ- দুটোই শোষণ করে। অবশ্য মিনারেল বোর্ড ব্যবহার করলে সিলিং ফ্যান ব্যবহার করা যাবে না। সাধারণ ফলস সিলিংয়ে জিপসাম বোর্ড ব্যবহার করা হয়। কারণ এটা তাপ বা শব্দ নিরোধক। জিপসাম বোর্ডে সিলিং ফ্যান ব্যবহার করা যায়। কাঠ, কাঁচ ও মেটাল দিয়ে ডিজাইন করা সিলিং অফিসের অভ্যর্থনা কক্ষ, রেস্তোরাঁ, বাসা বা খাবার ঘরে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। এছাড়াও এলকো প্যানেল, মেটালিক সিলিং ও ফলস ডেকোরেটিভ সিলিঙে কাজ করার ক্ষেত্রে কাঠ, কাঁচ ও মেটাল দিয়ে ডিজাইন করতে পারেন। দেখতে যেমন সুন্দর লাগবে তেমনি প্রকাশ করবে আভিজাত্যও।

ঘরের পর্দা ও ফার্নিচারের সঙ্গে মিলিয়ে ফলস সিলিংয়ের ডিজাইন কররে পারেন। জিপসাম বোর্ডের মাঝে মাঝে এনামেল কালার করে সিলিংয়ের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। চাইলে এনামেল কালারের পরিবর্তে ডেকো পেইন্টও করতে পারেন। মূল সিলিং থেকে ফলস সিলিঙের রঙ ভিন্ন হতে হবে। একটি হালকা এবং অপরটি গাঢ় রঙে রাঙাতে পারেন।

সাধারণত ফ্লোর থেকে সিলিংয়ের উচ্চতা ৯ থেকে ১০ ফুট হয়। বাথরুমের মেঝে থেকে ফলস সিলিংয়ের উচ্চতা হয় সাত থেকে সাড়ে সাত ফুট। আর বাসা, অফিস বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ফলস সিলিংয়ের উচ্চতা হয় আট ফুট। তবে অনেক সময় ডিজাইনের তারতম্যের কারনে এই মাপের কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

ফলস সিলিংয়ে বাহারি লাইট দিয়ে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন ঘরকে। হিডেন লাইট, স্পট লাইট, টিউব লাইট বা ফলস লাইট নকশা করা ছাদে নিয়ে আসবে চমৎকার আবহ। কিছু লাইট আছে যা সরাসরি মেঝেতে এসে পড়বে কিন্তু উপরের অংশ থাকবে তুলনামূলক অন্ধকার। আবার ডিফিউজ লাইট ছাদকে আলোকিত করলেও ঘরজুড়ে খেলা করবে আলোছায়া। ঘরের কোন জায়গায় বেশি আলো পড়বে আর কোন জায়গায় কম আলো পড়বে তা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ফলস সিলিংয়ের সাহায্যে। চাইলে কোনও নির্দিষ্ট অংশ ফোকাস করে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। আবার যদি চান শুধু বসার ঘরের শোকেসটি অথবা খাবার ঘরের টেবিলটি থাকবে আলোকিত, তবে সে অনুযায়ী নকশা করে লাইট বসিয়ে নিন সিলিংয়ে। ইচ্ছা করলে কয়েক রঙা আলোয় ঘরে নিয়ে আসতে পারেন মায়াবী আবহ। ঘরের মেঝেতে যদি থাকে রিফ্লেক্টিং টাইলস, তবে আলো-আঁধারির এই খেলা আরও জমে উঠবে।

অফিস কিংবা ডিসপ্লে শোরুমের ক্ষেত্রে সাধারণত বেশি আলো দরকার হয়। তাই ফলস সিলিং ঝালর দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন। বড় রুম হলে ছাদের দুই প্রান্তের অংশ একসঙ্গে এনে মিলিয়ে দিন। এছাড়া ফলস সিলিংয়ের মাঝে রঙ করা আয়না বসিয়েও ঘরের চাকচিক্য বাড়ানো যায়। আভিজাত্যের ছোঁয়া আনতে বোর্ডের মাঝে মাঝে ব্যবহার করতে পারেন ডেকোরেটিভ গ্লাস বা নকশাদার কাচ, গ্লাস টাইলস ও স্পটলাইট। ছাদে যদি কোনও রকম ত্রুটি না থাকে, তবে ঝকঝকে কাচের ছাদ লাগাতে পারেন। তবে এ ধরনের ছাদ ব্যবহারের আগে এর সাপোর্টিভ এলিমেন্ট মজবুত কিনা তা পরখ করে নিতে হবে। না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যেকোনও সময়।

জাদু আছে আখের রসে

জাদু আছে আখের রসে

শরীরকে সতেজ করতে আখের রসের কোনো তুলনা নেই, পাশাপাশি ডায়বেটিস’সহ বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে আখের রস বেশ উপকারী। তবে ফুটপাতের খাবার অস্বাস্থ্যকর হবে এমনটাই ভেবে অনেকে খেতে চান না। তবে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন ফুটপাতের আখের রস, শুধুমাত্র বরফ মেশানোটা খাবেন না, কারণ বরফের পানিটিই মূলত অস্বাস্থ্যকর।

ক্লান্তি দূর করে
আখের অন্দরে থাকা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর আপনি হয়ে উঠবেন চাঙ্গা।

লিভার সুস্থ রাখতে
মনে আছে জন্ডিস হলে আখের রস খেতে বলতো চিকিৎসকরা। সহজপাচ্য এই পানীয় আপনার যকৃতকে সহজে হজম করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে আখের রস।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে একেবারে নিচের দিকে রয়েছে আখের নাম। আখ থেকে উৎপাদিত চিনি ক্ষতিকর হলেও আখ আপনার শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তবে শুধু ডায়বেটিস না থেকে পাশাপাশি অন্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আখ খেতে পারেন।

সরিষা বিফ

সরিষা বিফ

উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি, টক দই ১/২ কাপ, সরিষার তেল ১/২ কাপ, পেঁয়াজ বড় কুঁচি ২ কাপ, লবণ স্বাদ মত ও চিনি ১ চা চামচ, লাল মরিচ গুড়ো ২ চা চামচ, হলুদ ও জিরা গুড়ো ১ চা চামচ, আদা রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, সরিষা বাটা ৩ টেবিল চামচ ২ পিস কাঁচামরিচ কুঁচি সরিষার সাথে বেটে নিন তবে তেতো লাগবে না, গরম মসলা গুড়ো হালকা টেলে গুড়ো করা এলাচ ৪, দারচিনি ৩ টি, তেজপাতা ১, গোল মরিচ ১০ পিস, লবঙ্গ ৩-৪পিস, ১/২টি জায়ফল।

ফোরনের জন্য
কাঁচামরিচ ৪-৫ পিস, আস্ত গরম মসলা এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা কয়েকপিস ও ঘি ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি
সরিষা বাটা, চিনি ও কাঁচামরিচ বাদে বাকি সব উপকরণ মাংসের সাথে মাখিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। এখন মসলা মাখানো মাংস দিয়ে মিশিয়ে উচ্চ তাপে ঢেকে রান্না করুন ১০ মিনিট। এরপর চুলার আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন ও সিদ্ধ করুন। দরকার হলে ১ কাপ পানি দিয়ে মিশিয়ে ১ ঘণ্টা ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করুন।

মাংস সিদ্ধ হলে সরিষা বাটা, চিনি ও কাঁচামরিচ দিয়ে মিশিয়ে ঢেকে রান্না করুন ১০ মিনিট। অন্য প্যানে ঘি, আস্ত গরম মসলা ও কাঁচামরিচ দিয়ে হালকা ভেজে মাংসে ঢেলে মিশিয়ে নিন ও চুলা বন্ধ করুন। গরম পরিবেশন করুন।

আর নয় পরীক্ষার ভয়

আর নয় পরীক্ষার ভয়

পরীক্ষা এলেই শিশুরা ভয় পেয়ে থাকে। কীভাবে পরীক্ষা দেবে বা ভালো ফল হবে- এসব ভীতিকর পরিস্থিতি কাজ করে তাদের মনে। সেই সঙ্গে মা-বাবাও দুশ্চিন্তায় পড়েন। এ জন্য পরীক্ষা নিয়ে শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত উদ্বেগ কাজ করে। তবে শিশুদের পরীক্ষার ভয়ভীতি দূর করতে বাবা-মায়ের অনেক করণীয় রয়েছে। খবর-আনন্দবাজার পত্রিকা।

আসুন জেনে নিই শিশুর পরীক্ষাভীতি দূর করবেন কিভাবে-

শিশুকে সময় দিন। পরীক্ষার দুই মাস আগে থেকেই শিশুকে সময় দিন। মাথা ঠাণ্ডা করে পড়ান। কোনো কারণে শিশুর ওপর অতিরিক্ত রেগে যাবেন না।

রুটিন বানিয়ে দিন। শিশুর পড়ার জন্য রুটিন বানিয়ে দিন। গোসল, খাওয়া, ঘুম ও খেলা করতে সময় দিন।

পড়ার প্ল্যান। কীভাবে পড়বে তার প্ল্যান করে দিন। যেসব বিষয়ে দুর্বল সেগুলো বেশি করে পড়তে বলুন। পড়ার বিষয়গুলো মনে রাখতে গল্প আকারে পড়ান। পড়াগুলো বারবার লেখার অভ্যাস করুন। তা হলে মনে থাকবে বেশি।

অতিরিক্ত চাপ। পরীক্ষার সময়টায় শিশুকে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে নয়; বরং আগ্রহ সৃষ্টি করে পড়ানো উচিত। আর আগ্রহ সৃষ্টি করতে সারাক্ষণ পড়তে না বসিয়ে রেখে বরং মাঝে মাঝে বিরতি দিন।

তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করতে হবে। পরীক্ষা চলে এসেছে দেখে সবসময় অনেক পড়া আছে, তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করতে হবে- এসব বলে ভয় দেখিয়ে পড়ানোর চেষ্টা করা উচিত নয়।

পরীক্ষা খারাপ হয়ে গেলে। কোনো একটি পরীক্ষা খারাপ হয়ে গেলে তা নিয়ে বকাঝকা করলে পরবর্তী পরীক্ষা নিয়ে আরও বেশি ভীত হয়ে পড়ে। ফলে পরবর্তী পরীক্ষাটিও খারাপ হতে পারে।

রাত জেগে পড়া। পরীক্ষার আগের রাতে রাত জেগে পড়তে দেয়া উচিত নয়। কারণ রাত জেগে পড়লে পরীক্ষার দিন শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করে।

পরীক্ষার ফল। সন্তানকে আশ্বস্ত করুন যে ফলই করুক, আপনি কোনোরকম অসন্তুষ্ট হবেন না। পরীক্ষার আগের রাতেই পেনসিল বক্সটি গুছিয়ে রাখুন। পরীক্ষার দিন তাড়াহুড়ো করলে কোনো কিছু বাদ পড়ে যেতে পারে।

সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে যান। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় শিশুকে সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে। যাওয়ার সময় তাকে সাহস দিন। তুমি সব পারবে।

জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা কৌশল সিপিআর

জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা কৌশল সিপিআর

হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রেই নয়, পানিতে ডুবে যাওয়া কিংবা ইলেক্ট্রিক শকের মতো বিভিন্ন কারণে শ্বাস বা হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলেও জরুরিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সিপিআর দেয়া হয়। এটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা স্বীকৃত এবং বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত।

কেন সিপিআর প্রয়োগ করবেন

৭০-৮০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া বা চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে এড়ানো যায় না অনেক প্রাণহানি। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে হৃদস্পন্দন ও রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যক্তি ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে অচেতন হয়ে যায়।

৩০-৬০ সেকেন্ডের মধ্যে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত সিপিআর ব্যক্তির রক্ত চলাচল ও শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখতে সাহায্য করে।

যেভাবে সিপিআর প্রয়োগ করবেন

সবার উচিত সিপিআর সম্পর্কে ধারণা রাখা। আগে থেকে জানা থাকলে যে কেউ-ই সিপিআর প্রয়োগ করতে পারবেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে কারও জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারবেন। প্রথমেই কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে চিৎকার দিয়ে অন্য কারো সাহায্য চাইতে হবে। দুজন হলে সহজে কাজগুলো করা যাবে।

১. প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের অবস্থা দেখে নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো বিপদসংকুল পরিবেশে থাকলে তা দূর করা। যেমন বৈদ্যুতিক তার বা কোনো বিষাক্ত কিছু আশপাশে থাকলে তা সরিয়ে নেয়া।

২. এরপর দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান আছে কিনা। জ্ঞান থাকলে তাকে স্বাভাবিকভাবে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে। যাতে তিনি ধীরস্থিরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন।

৩. জ্ঞান না থাকলে তার শ্বাস নেয়ার পথ যেমন- নাক, মুখ ও গলার ভেতরের অংশ পরিষ্কার আছে কিনা দেখতে হবে। তার মাথা পেছনের দিকে টেনে, থুঁতনি ওপরের দিকে তুলে শ্বাসনালি খুলে দিতে হবে। যদি কফ-রক্ত বা অন্য কোনো কিছু এপথে আটকে থাকে, তবে তা সরিয়ে শ্বাস নেয়ার পথ করে দিতে হবে এবং সিপিআর প্রয়োগ শুরু করতে হবে।

৪. ব্যক্তির এক পাশে এসে বুক বরাবর বসে এক হাতের তালুকে বুকের মাঝ বরাবর স্থাপন করতে হবে। তার উপর অপর হাত স্থাপন করে উপরের হাতের আঙুল দিয়ে নিচের হাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে। হাতের কনুই ভাঁজ না করে সোজাভাবে বুকের ওপর চাপ দিতে হবে।

৫. এমন গতিতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন প্রতি মিনিটে ১০০-১২০টি চাপ প্রয়োগ করা যায়। এভাবে প্রতি ৩০টি চাপ প্রয়োগের পর আক্রান্তের মুখে মুখ রেখে দু’বার ফুঁ দিতে হবে। এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন বুকের পাঁজর ২ থেকে ২.৫ ইঞ্চি নিচে নামে। যাতে চাপ হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে।

৬. হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বা জ্ঞান ফিরে আসা অথবা স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হওয়া পর্যন্ত একইভাবে সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে।

৭. জ্ঞান ফিরলে বা শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হলে তাকে একপাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এর পর হাসপাতালে নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

হাঁটার সঠিক নিয়ম

হাঁটার সঠিক নিয়ম

আজকাল মেদ কমাতে বা সুস্থ থাকতে অনেকেই ব্যায়ামের পরিবর্তে হাঁটাহাঁটিকে বেছে নিচ্ছেন। অফিসে যাতায়াত, কেনাকাটা, বাজার বা দোকানের যাওয়ার সময় গাড়ি বা রিকসায় না উঠে হেঁটে যাওয়া অবশ্যই ভালো। তবে এতে খুব একটা মেদ ঝরে না। মেদ ঝরাতে গেলে কিছু নিয়ম মেনে হাঁটতে হবে। কখন হাঁটবেন আর কত সময় ধরে হাঁটবেন এর কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। এসব নিয়ম না জানলে আপনার মেদ ঝরানোর চেষ্টা সফল নাও হতে পারে।

সপ্তাহে ২৫০ মিনিট: সপ্তাহে কমেপক্ষে পাঁচদিন এবং মোট ২৫০ মিনিট হাঁটতে হবে। গড়ে কমপক্ষে ৪০ মিনিট। এটুকু হাঁটলে কেবল মেদ ঝরাবে তা-ই নয়, এই দীর্ঘ ক্ষণ হাঁটা হার্টের অসুখ ভাল করে। কোলেস্টেরল কমায়। কিন্তু কেবল সময় মানলেই হবে না। জানতে হবে আরও কিছু নিয়ম।

একটানা রাস্তায় হাঁটুন: হাঁটতে হবে একটানা বা সোজা রাস্তা ধরে। বারবার থমকে, ঘন ঘন দিক বদলে হাঁটার চেয়ে টানা হাঁটায় উপকার বেশি। তাই বাড়ির ছাদে বা লনে না হেঁটে সোজা রাস্তা ধরে হাঁটা ভালো।

পরিবেশ বান্ধব রাস্তা: হাঁটার জন্য এমন পথ বেছে নিন যেখানে ধোঁয়া, যানজট বা বড় গাড়ির উপস্থিতি নেই। গলিপথগুলো হাঁটার জন্য ভাল। হাঁটার সময় বার বার যানবাহনের উপদ্রবে দাঁড়াতে হলে তা হাঁটায় বিঘ্ন ঘটায়। আর যানবাহনের ধোঁয়া তো শরীরের জন্যও ভাল নয়। তাই পার্ক বা উদ্যানই হাঁটাহাঁটির জন্য সবচেয়ে উপকারি।

একা হাঁটুন: দলবেঁধে হাঁটতে বের না হওয়াই ভালো। এতে হাঁটার বদলে গল্পই বেশি হয়। অনেকে তো গল্পের কারণে হাঁটার গতি কমিয়ে দেন। এই অভ্যাসগুলো কিন্তু মেদ কমানোর পথে বাধা হতে পারে। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতেও হাঁটবেন না। এতে হাঁটার গতি শ্লথ হয় ও বেশি দূর হাঁটা যায় না।

হেডফোনে গান শুনতে পারেন: দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ বাড়াবে এমন কিছু ভাবতে ভাবতে হাঁটা ভালো নয়। এসব উদ্বেগ কমাতে হাঁটার সময় ইয়ারফোন বা হেডফোনে গান শুনতে পারেন। এতে ফিল গুড হরমোনের জোগান যেমন বাড়বে, তেমনই হাঁটার রিদ্‌ম কমবে না। তবে ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটলে হেডফোন অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।

আরামদায়ক জুতা: হাঁটার সময় কী ধরনের জুতো পরছেন, তার দিকে খেয়াল রাখুন। এমন জুতো বেছে নিন যাতে পায়ের আরাম হয় । অনেকটা রাস্তা হাঁটা যায়, এমন স্পোর্টস শু বা পাম্প শু পরতে পারলে ভালো হয়।

খালিপেটে হাঁটা নয়: হাতে বা পিঠে অনেক বোঝা নিয়ে হাঁটা ঠিক নয়। এতে ক্লান্তি বাড়বে, বেশিক্ষণ হাঁটা সম্ভব হবে না। হাঁটার নির্দিষ্ট কোনও সময়ও নেই। সকালে সময় না পেলে বিকেলে বা সন্ধেয় হাঁটুন। রাতে খাওয়াদাওয়ার পরেও হাঁটতে পারেন। তবে খুব ভরাপেটে বা খালিপেটে হাঁটা ঠিক না।

ডাক্তারের পরামর্শ: পায়ে বা হাঁটুতে বা কোমরে সমস্যায় থাকলে অবশ্যই হাঁটার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। দিনে কতটুকু হাঁটলে আপনার হাড় ও স্নায়ু সহ্য করতে পারবে তা জেনে তবেই হাঁটা শুরু করা উচিত।

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে

বাংলাদেশে ডেঙ্গু মৌসুমে সাধারণত আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১১ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময়ে সাত বছরই প্রকোপ বেড়েছিল।

এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশা নিধন কার্যক্রম আরও জোরদারসহ জনসচেতনতা বাড়ানো উচিত। অন্যথায় আগামী সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। বিশেষজ্ঞদের আরও অভিমত, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে ইতিমধ্যে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন, যেটি এখনও অব্যাহত আছে।

এতে সহজেই অনুমেয় যে, গ্রামীণ ‘এডিস এলবোপিক্টাস’ দ্বিতীয় পর্যায়ের বাহক হিসেবে কাজ শুরু করছে। বিস্তারিত জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে। এ মুহূর্তে ঢাকার বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রম তেমন দৃশ্যমান নয়।

আবার সেখানে নাগরিকদের এ বিষয়ে তেমন সচেতন করতে নেয়া হয়নি বিশেষ কোনো কার্যক্রম। তাই সেপ্টেম্বরে প্রকোপ রোধে রাজধানীর বাইরে জরুরি ভিত্তিতে মশক নিধন অভিযান পরিচালনার ওপর তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৬ হাজার ৬৪ জন। এ সময়ে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন ৬০ হাজার ৫৬৯ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৯৯ জন। যা গত ২৪ ঘণ্টার (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা) তুলনায় ৪৮ জন বেশি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ১৭৩ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। যার মধ্যে ৮৮টি মৃত্যু পর্যালোচনা সম্পন্ন করে ৫২টি মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে মঙ্গলবার রাজধানীর বাইরে আরও এক স্কুলশিক্ষার্থীসহ সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা এখনও সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ নিয়ে যুগান্তরের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী চলতি মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১১ জনে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গত ১১ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৭ বছরই আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। ২০১৮ সালের আগস্টে যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭৯৬ জন, সেখানে সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮৭ জনে।

একইভাবে ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৪৬ ও ৪৩০, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৪৫১ ও ১ হাজার ৫৪৪, ২০১৫ সালে ৭৬৫ ও ৯৬৫ ও ২০১৩ সালে ৩৩৯ ও ৩৮৫ জন। একইভাবে ২০১২ সালে ১২২ ও ২৪৬ জন এবং ২০০৯ সালের আগস্টে রোগীর সংখ্যা ছিল ১২৫ এবং সেপ্টেম্বরে ১৮৮ জন।

এদিকে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, গত ৭ দিনে রাজধানী ঢাকার তুলনায় দেশের অন্যান্য বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ছিল ৬০৮ জন, ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ৬৯১ জন। একইভাবে ২৬ আগস্ট ঢাকায় ছিল ৫৭৭ জন, ঢাকার বাইরে ৬৭৪ জন।

গত ২৫ আগস্ট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যথাক্রমে ৬০৭ ও ৬৯২ জন, ২৪ আগস্ট ৫৭০ ও ৬০৯ জন, ২৩ আগস্ট ৬৮৯ ও ৭৫৭ জন, ২২ আগস্ট ৭৬১ ও ৮৩৬ জন এবং ২১ আগস্ট ৭১১ ও ৯১৫ জন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছরও সেপ্টেম্বরে রোগী বাড়বে কিনা, জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, গত ১০ থেকে ১১ বছরের পরিসংখ্যানে বেশির ভাগ সময় সেপ্টেম্বরেই রোগী বাড়ার প্রবণতা রয়েছে।

চলতি বছর জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আক্রান্তের হার বেশি দেখা যাচ্ছে। যেহেতু গ্রামীণ এডিস এলবোপিক্টাস দ্বিতীয় পর্যায়ের বাহক হিসেবে কাজ করে তাই বিষয়টি উদ্বেগের। তাছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মশা মারা হয় না।

এমনকি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। তাই সেপ্টেম্বরে রোগী বাড়ার একটা আশঙ্কা রয়েছে। বাড়ার হার কেমন সেটা বুঝতে আরও ৭ থেকে ১০ দিন সময়ের প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে যদি মশক নিধনসহ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যেসব কার্যক্রম চলমান আছে সেগুলো অব্যাহত রাখা না হয়।

এই কার্যক্রম সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একযোগে পরিচালিত হতে হবে। কার্যক্রম পরিচালনায় কোনোরকম শিথিলতা সৃষ্টি হলে বাড়ার শঙ্কা থেকে যায়।

খাবারেও নারীর বন্ধ্যাত্ব কমে

খাবারেও নারীর বন্ধ্যাত্ব কমে

নানা চেষ্টার পরেও গর্ভধারণ করতে পারছেন না এমন নারীর সংখ্যা কম নয়। আশঙ্কার বিষয় হলো দিনদিন নারীর বন্ধ্যাত্বের পরিমাণ বাড়ছেই। এমন নারীর জন্য রয়েছে ফার্টিলিটি ডায়েট। তবে এটি মেনে চলা কষ্টকর কিছু নয়। শুধু প্রতিদিনের খাবার তালিকা একটু এদিক-ওদিক করে বদলে নিলেই হবে। কিছু খাবার যোগ হবে, বিয়োগও হবে কিছু খাবার। যেমন খাবার তালিকায় যোগ করুন লাল বা বাদামি চালের ভাত, খোসাওলা ডাল, আটার রুটি, হোল গ্রেন পাস্তা-নুডুলস ইত্যাদি।

অপকারি ফ্যাট ছেঁটে উপকারীদের দিকে মন দিন। মাছ-মাংস-ডিমের পাশাপাশি ডাল-ছোলা-দুধ জাতীয় নিরামিষ প্রোটিন খান। মাছ-মাংসও খান। মাঝে মধ্যে এক-আধ স্কুপ আইসক্রিমও খেতে পারেন।

‘নার্সেস হেল্থ স্টাডি’ নামের স্টাডিতে ৮ বছর ধরে ৮ হাজার বন্ধ্যা নারীর উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এই ডায়েট তৈরি করেছেন। এবং তাতে কাজও হয়েছে আশাতীতভাবে।

ফার্টিলিটি ডায়েট খেলে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মানের উন্নতি হয়। আশঙ্কা কমে হাই কোলেস্টেরল-প্রেশার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক জাতীয় অসুখবিসুখের। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ট্রান্স ফ্যাট বাদ দিন, ডিম্বাণুর ক্ষতি করা থেকে শুরু করে হাইকোলেস্টেরল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ওজন বাড়া ইত্যাদি সব কিছুর মূলে আছে তার হাত। তাই যেকোনো প্রক্রিয়াজাত খাবার, বেক্ড খাবার, বনস্পতি, মার্জারিন, ভাজাভুজি খাওয়ার আগে দু’বার ভাবুন।

মুফা ও পুফাসমৃদ্ধ খাবার খান, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ডায়াবিটিস ও ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা ঠেকায় এরা। কমায় শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহের আশঙ্কা। ফলে উপকার হয় ডিম্বাণুর। তাই বিভিন্ন সবজিজাত তেল- যেমন সর্ষে, সূর্যমুখী, সয়াবিন, অলিভ ইত্যাদি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজ, অ্যাভোক্যাডো, ঠান্ডা পানির মাছ বিশেষ করে স্যামন, সারডিন, ইলিশ খান পরিমাণ মতো।স্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার যেমন ঘি-মাখন, ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাংস ইত্যাদি খান কম।

পর্যাপ্ত উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খান। মাছ-মাংস-ডিমের পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় রাখুন মটরশুঁটি, বিনস, সয়াবিন, টোফু, পনির, বাদাম, ছোলা ইত্যাদি।

উপকারী কার্বোহাইড্রেট খান, দ্রুত হজম হয়ে রক্তে মিশে যায় এমন কার্বোহাইড্রেটের (সরল) বদলে খান ধীর গতিতে হজম হয় এমন কার্বোহাইড্রেট (জটিল) এতে রক্তের সুগার লেভেল ঠিক থাকে। ঠিক থাকে ইনসুলিনের কার্যকারিতা। আর তাতে ভালো থাকে ডিম্বাণুর মান। কাজেই হোল গ্রেন, শাকসবজি, ফল, বিনস ইত্যাদি খান। বাদ দিন সাদা চালের ভাত, ময়দা, চিনি, মিষ্টি, ফলের রস ইত্যাদি।

দুধ খান মাখন না তুলে, অর্থাৎ স্কিম্ড দুধের বদলে খান হোল মিল্ক, ফুল ফ্যাট ইয়োগার্ট, এমনকি মাঝেমধ্যে আইসক্রিমও।

খান মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট, বিশেষ করে ফোলিক অ্যাসিড, দিনে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম করে। ডিম্বাণুর মান উন্নত করে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে এর ভূমিকা আছে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, যেমন পালং, বিনস, কুমড়ো, টমেটো, বিট ইত্যাদি খেলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কম থাকে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

মিষ্টি স্বাদের কোমল পানীয় নয়, ঠান্ডা পান খান। চা-কফি খেতে পারেন মাত্রা রেখে। কিন্তু কোমল পানীয় একদমই নয়। তাতে ডিম্বাণুর সমস্যা হতে পারে।

এছাড়া ওজন খুব বেশি বা খুব কম থাকলে পিরিয়ডের গোলমাল হতে পারে। তার হাত ধরে শুরু হতে পারে ডিম্বাণুর সমস্যা। কাজেই ওজন যথাসম্ভব ঠিক রাখার চেষ্টা করুন। বিএমআই (ওজনের সূচক) ২০-২৪ এর মধ্যে থাকলে সবচেয়ে ভালো। সঠিক খাবার খেয়ে ও হালকা ব্যায়াম করে ধীরে ধীরে ওজন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন।

আমড়ার শত গুন

টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি বেশ জনপ্রিয়। কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি এটি খাওয়া যায় আরও অনেকভাবে। আচার, মোরব্বা, সালাদ, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করা যায় আমড়া দিয়ে। অবাক ব্যাপার হলো, একটি আমড়ায় প্রায় তিনটি আপেলের সমান পুষ্টি রয়েছে।

আমড়ার পুষ্টিগুণ: প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ১ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম শ্বেতসার, ০.১০ গ্রাম স্নেহ জাতীয় পদার্থ এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন আছে। এ ছাড়াও আছে ০.২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৪ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং৩.৯ মিলিগ্রাম লৌহ। আমড়ার খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালোরি। খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসের পরিমাণ ০.৬ গ্রাম।

ভিটামিন সি-এর উৎস: আমড়া ভিটামিন সি এ সমৃদ্ধ যা একটি অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রতিদিন যদি অন্তত একটি আমড়া খেতে পারেন তবে ভিটামিন সি এর চাহিদার ৩৯%-৪৯% পূরণ হবে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোলাজেনের উৎপাদনে সাহায্য করে। কোলাজেন স্কিন, লিগামেন্ট, টেন্ডন ও কার্টিলেজকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে।

ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ: ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের রোগ, মাংস পেশীর খিঁচুনি ছাড়াও যেসব সমস্যা দেখা যায় আমড়া তা প্রতিরোধ করে। তাই প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে আমরা আমড়া খান।

ব্রণ দূর করে: ব্রণ নিয়ে মুশকিলে? খাবারের তালিকায় রাখুন আমড়া। ত্বকের ব্রণ কমাতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে আমড়া দারুণ উপকার করে থাকে। আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। আর ভিটামিন ‘সি’ ত্বক উজ্জ্বল রাখতে অত্যন্ত দরকার। তাই ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে খেতে পারেন আমড়া।

রক্তস্বল্পতা দূর করে: অনেকেই রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন। তাদের জন্য আমড়া বেশ উপকারী। কারণ আমড়ায় প্রচুর আয়রন থাকার কারণে এটি রক্তস্বল্পতা রোধ করে। সাথে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক পর্যায়ে রাখে।

হজমশক্তি বাড়ায়: আমড়ায় রয়েছে বিভিন্ন দ্রবণীয় ফাইবার। এই ফাইবার আমাদের পাকস্থলীর ক্রিয়া প্রক্রিয়া স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখে। ফলে বদ হজম, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্যে দূরে রাখতে আমড়া খান।

সর্দি-কাশি দূরে রাখে: আমড়া সর্দি কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। যার ফলে নানা সংক্রমণ থেকে সহজেই বেঁচে থাকা যায়। ঠান্ডার সমস্যা থেকে দূরে থাকতে আমড়া খান নিয়মিত।

স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: আমড়া রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই আমড়া খেলে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে যা দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে সহজেই সুস্থ থাকা সম্ভব হয়।

রুচি বাড়ায়: রোগীর মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে আমড়ার দারুণ কার্যকর। আমড়া খেলে মুখের অরুচিভাব দূর হয় ও ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। তাই রুচি বাড়াতে নিয়মিত ফলটি খাওয়া যেতে পারে।

না খেয়ে ডায়েট নয়

না খেয়ে ডায়েট নয়

অতিরিক্ত ওজন রোগের বাসা। তাই অতিরিক্ত ওজন যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর তেমনি না খেয়ে ওজন কমানো ক্ষতিকর। ঝরঝরে, ফিট শরীর কে না চায়। তবে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই খিদে থাকা সত্ত্বেও না খেয়ে থাকেন। ভুলেও এ কাজ করবেন না।

জেনে নিন না খেয়ে ওজন কমানোর ভয়াবহ পরিণতি।

১. খাবার আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাদিহা পূরণ করে। না খেলে শরীরে পুষ্টিহীনতা হতে পারে।

২. ঠিকমত খাবার না খেলে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রয়োজন ফ্যাট ও ক্যালরি।

৩. না খেয়ে ওজন কমালে পুষ্টিহীনতার কারণে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে চুল পড়ে যায়।

৪. ঠিকমত না খেলে শরীর ক্লান্তি অনুভব হয় ও শক্তি কমে যায়।

৫. না খেলে পাকস্থলীকে অভুক্ত থাকে। আর যখন আপনি খাওয়া শুরু করেন তখন শরীর অধিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করে। তাই ওজন কমার বদলে আপনার ওজন বেড়ে যাবে।

দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে হাঁটুন, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান। মনে রাখবেন না খেয়ে কখনো ওজন কমানো যায় না।

সূত্র : ইন্ডিয়া টিভি।

অনেক রোগের ওষুধ খেজুর

অনেক রোগের ওষুধ খেজুর

পুষ্টিগুণে ভরপুর, আয়রনের অন্যতম উৎস খেজুর অবশ্যই রাখুন খাবার তালিকায়। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় খেজুর রাখলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। খেজুর ডায়েটে রাখার কথা বলে থাকেন প্রায় সব পুষ্টিবিদই। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে ০.০৯ গ্রাম আয়রন থাকে।

পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের অনেকটাই এই খেজুর থেকে মেলে। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের শুকনো খেজুর ডায়েটে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। শুকনো খেজুরেও শরীরের দরকারি খনিজ মেলে। খেজুর রয়েছে ওষধিগুণ ও শরীরে ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে।

আসুন জেনে নেই প্রতিদিন খেজুর খেলে যেসব উপকার পাওয়া যাবে।

১. খেজুরের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। এতে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম রয়েছে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতে পারেন খেজুর।

২. রক্তাল্পতা রোগীর ক্ষেত্রে খেজুর খুবই প্রয়োজনীয়। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে খেজুর।

৩. যারা চিনি খেতে চান না তারা খেতে পারেন খেজুরের রস ও গুড়। তাই চিনির ক্ষতি এড়াতে খেজুর খেতে পারেন।

৪. হৃদস্পন্দনের হার ঠিক রাখতে সাহায্য করে খেজুরের ভিতরে থাকা নানা খনিজ। তাই হার্টের স্বাস্থ্যের পক্ষে খেজুর খুবই উপকারি।

৫. খেজুরে থাকা সোডিয়াম রক্তের চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ডায়াটে খেজুর রাখা উচিত।

৬. খেজুরে লিউটেন ও জিক্সাথিন থাকায় তা রেটিনার স্বাস্থ্যকে ভাল রাখে।

________________
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

ফ্যাশনে বর্ষার জুতা

ফ্যাশনে বর্ষার জুতা

বৃষ্টি পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ এই সময়ে গরম কমে গিয়ে চারপাশের পরিবেশে ঠাণ্ডা হয়। তবে বৃষ্টি ঠাণ্ডার অনুভূতি দিলেও পাশাপাশি সৃষ্টি করে কিছু সমস্যার। এর মধ্যে যে সমস্যা বেশি দেখা যায় তা হলো জুতা নিয়ে। কাদা আর বৃষ্টির পানি জমে থাকা রাস্তায় জুতা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন। তাই বর্ষাকালে কেমন জুতা আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল হবে জেনে নিন।

এখন কিছু পানিরোধক জুতা পাওয়া যায় যেগুলো বিশেষভাবে বর্ষায় ব্যবহারের জন্য করা হয়েছে। এগুলো পানিতে ভিজে না। পানি বা কাদা লাগলে সহজেই মুছে ফেলা যায়। এ ধরনের জুতাগুলো পাম্প সু বা স্নিকার ডিজাইনের হয়।

আউট অফ সোল
এটাকে সবাই জুতার তলা বা সোল হিসেবে চেনে। বর্ষার সময় সোজা সোল ব্যবহার না করাই ভাল। কাদা, ময়লা সহজে পরিষ্কার হয় না। খাচকাটা সোলগুলো কাদার বা উঁচু নিচু রাস্তায় চলাচলে খুবই আরাম দেবে।

হিল জুতা
বর্ষায় মাঝারি বা ব্যালেন্স হিলগুলো খুবই আরাম দেবে আবার ফ্যাশনাবেলও হবে। তবে এই হিলগুলো হাফ ইঞ্চির বেশি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আরো যা খেয়াল করবেন
বর্ষার সময় পেন্সিল হিল, বড় হিল, স্যন্ডেল, চপ্পল এগুলো ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ একটু বৃষ্টি হলেই শহরে পানি জমে যায়। আর পানির মধ্যে হাঁটা এমনেই বিপদজনক। কারণ রাস্তায় পানির জন্য গর্ত সৃষ্টি হয়। তাই পায়ে ব্যথাও পেতে পারেন। আবার পা কেটেও যেতে পারে।

জুতা অবশ্যই দোকান দেখে কিনতে হবে। কারণ কম দামি জুতায় অনেক সময়ে পায়ে ইনফেকশন বা অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।

কোরবানি ঈদে খাবারের সচেতনতা

কোরবানি ঈদে খাবারের সচেতনতা
ঈদুল আযহা সমাগত যার অপর নাম কোরবানির ঈদ। ঈদ হলো আনন্দের দিন, যার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো খাবার। আর কোরবানির ঈদের অন্যান্য খাবারের সাথে মূল আয়োজন হলো বিভিন্ন রকমের গোসত খাওয়া, যেমন গরু, খাসি, মহিষ, এমনকি উটের গোসতও। ঈদ উৎসবে সবারই মনে প্রবল ইচ্ছা থাকে বেশি বেশি করে কোরবানির গোসত খাওয়া। গোস্ততো অবশ্যই খাবেন, কিন্তু খাবারের বিষয়ে চাই পরিমিত জ্ঞান ও সংযম পালন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা। মনে রাখতে হবে, দুই একদিন বেশি গোসত খেতে যদিও বাধা নেই, তবুও খাবেন রয়ে সয়ে। সমস্যা হলো যারা অনেক দিন যাবৎ বিভিন্ন রোগে ভোগেন যেমন- যাদের পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ, কিডনি বা লিভারের রোগ আছে কিংবা এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ আছে। ঈদকে উপলক্ষ করে সবার বাসায় নানা ধরণের মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়। নিজের বাসায় তো বটেই, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের বাসায় ঘুরে ঘুরে প্রায় সারা দিনই টুকিটাকি এটা-সেটা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় খাওয়া হয়েই থাকে। আমাদের একটু নজর দেওয়া দরকার আমরা কী খাচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি, শরীরে বিভিন্ন খাবারের কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে তার ওপর।

খাবারের পরিমাণ:
মূল সমস্যাটা নিঃসন্দেহে খাবারের পরিমাণে। অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। কোরবানির গোসত পরিমাণে একটু বেশিই খাওয়া হয়। অধিক পরিমাণে গোসত খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা, পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে। গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত রোগীদের সমস্যাটা আরও বেশি হয়। পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাদ্য গ্রহণ না করার দরুন অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। যদিও সাধারণভাবে কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেতে মানা নেই, কিন্তু পরিমাণ বজায় রাখা খুবই জরুরি। কিছু কিছু খাবার সকাল আর দুপুরে পরিহার করা উত্তম। যেমন-তৈলাক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি, আমিষ জাতীয় খাবার, যেমন- মুরগি, খাসি বা গরুর মাংস, কাবার, রেজালা ইত্যাদি। অন্য খাবারও যথাসম্ভব কম খেয়ে পেটটা একটু খালি রাখুন। কারণ দিন গড়িয়ে গেলে কোরবানির গোসত প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই। ঈদের দিনে অনেকেই সরবত, কোমল পানীয়, ড্রিংকস এবং ফ্রুট জুস খাওয়া পছন্দ করেন। তবে মনে রাখা উচিত, বাজারে দেশি-বিদেশি যেসব ফ্রুট জুস পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশির ভাগই আসল ফলের রস নয়। লেবুর শরবত, বাসায় বানানো ফলের রস, ডাবের পানি, বোরহানি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

সকালের খাবার হতে হবে হালকা:
ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে অল্প করে সেমাই বা পায়েস খেতে পারেন। সঙ্গে কিশমিশ, বাদাম এমনকি খেজুর বা খুরমা, ফলের জুস, ডাবের পানি খেতে পারেন। খাবার আধ ঘণ্টা পরে দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নামাজ পড়তে যান।

খাবার খেতে হবে বুঝেশুনে:
যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারেন এবং তাদের হজমেও কোনো সমস্যা হয় না, শুধু অতিরিক্ত না হলেই হলো। বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার। বেশি গোসত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। যাদের এনাল ফিশার ও পাইলস জাতীয় রোগ আছে, তাদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে, এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণও হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, সরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভূষি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন। পেটে গ্যাস হলে ডমপেরিডন, এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। যাদের আইবিএস আছে, তারা দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। দাওয়াতে গেলে পরিমিত খাবেন, অতিভোজন পরিহার করার চেষ্টা করুন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না, এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি পান করুন। খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন।

চর্বি এড়িয়ে চলুন:
যে কোনো পশুর চর্বি খাওয়া এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোরবানির সময় এ বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত। গুরু বা ছাগলের মাংসকে এক কথায় বলা হয় লাল মাংস বা রেড মিট। লাল মাংস প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস, শরীরের বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ ও শরীরের গঠনে যার ভূমিকা অপরিসীম। তবে লাল মাংসের যেমন উপকার আছে, তেমনি রয়েছে অনেক ঝুঁকিও। এতে আছে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত। এগুলো শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তনালীতে চর্বি জমিয়ে রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়, ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের যেমন-কোলন ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে লাল মাংসে। যতটুকু সম্ভব মাংসের চর্বি ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো। মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খাওয়া যেতে পারে। টাটকা সবজি পাকস্থলীকে সাবলীল রাখে।

বয়স্কদের সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ:
মধ্যবয়সী এবং বয়স্কদের খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা আরও জরুরি। এমনকি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি ইত্যাদি না থাকা সত্বেও এই বয়সের সবাইকেই ঈদের খাবারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। অতিভোজনে তাদের পেট ভরা ভাব বা অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। বেশি গোসত খেলে তা পরিপূর্ণভাবে হজম করতে অনেক সময় লাগতে পারে। এতে পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি, ভরা ভরা ভাব, বারবার ঢেকুর ওঠা এমনকি বুকে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।

স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য:
স্ট্রোক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা অবশ্যই তৈলাক্ত মাংস কমিয়ে খাবেন। সারা বছর তারা যে ধরণের নিয়মকানুন পালন করেন খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে, কোরবানির সময়ও সেই ভাবে চলা উচিত। কোরবানির মাংস একটু আধটু খেলে শরীরের যে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তা নয়, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের ওজন বেশি তাদের অবশ্যই ঈদের সময় অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করতে হবে। গেঁটে বাত বা ইউরিক এসিড বেশি যাদের এবং যারা কিডনির সমস্যায় ভোগেন, তাদেরকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য কম খেতে বলা হয়।

.
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ
সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান. মেডিসিন অনুষদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

বাহারি মসলায় ঈদ আয়োজন

বাহারি মসলায় ঈদ আয়োজন

খাবারে স্বাদ বাড়াতে মসলার জুড়ি নেই। বিভিন্ন খাবারের স্বাদ ভিন্ন থেকে ভিন্নতর হওয়ার কারণ এই মসলা। তাই ঈদের উৎসবের আনন্দকে বাড়াতে খাবারের টেবিলে যেমন থাকে নানা পদের খাবার তেমনি তাতে লুকিয়ে থাকে নানা রকম মসলার সংমিশ্রণ।

তবে বর্তমানে রূপ পাওয়া এই মসলা একটি সময় ছিল কেবল প্রসাধনীর অংশ। খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেই সময়ের তরুণীরা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এই মসলার ব্যবহার করতেন। তবে সময়ের আবর্তনে সেই মসলা ব্যবহার করা হয় খাবারের রূপ অর্থাৎ স্বাদের ভিন্নতা আনতে।

খাবারের ধরন এবং স্বাদ দুই নির্ভর করে আপনি কেমন মসলা ব্যবহার করবেন। তবে ঝাল জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে মসলা নির্ধারণ করা সহজ। অন্যদিকে মসলার আগমন ঘটে পর্তুগিজদের হাত ধরে। এরপর ধীরে ধীরে ভারতবর্ষে মসলার যাত্রা শুরু করে। আর এসব মসলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মসলা হচ্ছে লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ। বর্তমান সময়ে আরও অনেক ধরনের মসলার দেখা মিলে।

মসলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে মাংস রান্নার ক্ষেত্রে। এছাড়া নানা ধরনের বিরিয়ানি, কাবাব, কোরমার ক্ষেত্রে নানা বৈচিত্র্যময় মসলার দেখা মিলে হেঁশেলে। এসব মসলার মধ্যে আছে আদা, রসুন, বড় এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, স্টার মসলা, সাদা গোল মরিচ, কালো গোলমরিচ, মৌরি, হিং, জোয়ান, মেথি, চারমগজ, জায়ফল, জয়ত্রি, ত্রিফলা, চুঁইঝাল, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, কালঞ্জি, আমচুরসহ আরও নানা পদের মসলা।

এসব মসলার মধ্যে জয়ফল, জয়ত্রি মূলত ইন্দোনেশিয়ান মসলা, স্টার মসলা কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান আর অন্যদিকে কালঞ্জি, আমচুর ভারতীয় উপমহাদেশীয় মসলা। এসব মসলার কোনো একটি খাবারের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে আবার কোনটি ঝালের মাত্রা তীব্র করে খাবারে বৈচিত্র্য আনে। খাবারের রঙের ক্ষেত্রেও মসলার গুরুত্ব অনেক। অনেকেই খাবারে রঙের ভিন্নতা আনতে জাফরান ব্যবহার করে থাকেন।

তবে জাফরান বিরিয়ানি জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে অতিরিক্ত মসলার ব্যবহারে খাবারে স্বাদ অনেকাংশে কমে যায়। তাই খাবারে স্বাদ সঠিক রাখতে মসলা নির্বাচন করার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিমাপ ঠিক রাখাও জরুরি।

অন্যদিকে এসব মসলা ছাড়াও আরও আছে পাঁচফোঁড়ন, কাশ্মীরি মরিচ, কালো এলাচ, রাইসহ আরও অনেক মসলা। এসব মসলা দেশ এবং সংস্কৃতি ভেদে খাবারে আনে ভিন্নতার ছোঁয়া আর স্বাদের দিক থেকে খাবারকে করে তুলে অতুলনীয়।

কোথায় পাব :
চকবাজার, কারওয়ান বাজার, ঠাটারি বাজার, টঙ্গী বাজারে পাওয়া যাবে এসব মসলা অথবা আপনার আশপাশের যে কোনো সুপারশপে।

দাম :
বড় এলাচির দাম পড়বে ১৮০০ টাকা কেজি দরে, স্টার মসলা ১০০ গ্রাম ১০৯ টাকা, লবঙ্গ ১২০০ টাকা কেজি, গোলমরিচ ১১০০ টাকা, ছোট এলাচ ১২০০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকার মধ্যে।

ঈদে বানিয়ে ফেলুন কলিজা ভুনা

ঈদে শুধু মাংস নয়, গরুর অন্য আরো অনেক রান্না সবারই পছন্দ। এমন একটি খাবার কলিজা ফ্রাই। ঈদের দিনেই খুব ঝটপট মজাদার এই খাবারটি তৈরি করতে পারেন।

উপকরণ
গরুর কলিজা ১/২ কেজি, পেয়াজ কুঁচি ১ কাপ, আদা রসুন বাটা ১ চা চামচ, মরিচ গুড়ো ১ চা চামচ, হলুদ গুড়ো ১/২ চা চামচ, টালা জিরা ও ধনে গুড়ো ১ চা চামচ, গরম মসলা গুড়ো ১ চা চামচ, রসুন কোয়া ১০-১২পিস, ঘি ১/৪ কাপ।

প্রণালি
কলিজা ছোট টুকরো করে ভাল করে ধুয়ে নিন। একটি পাত্রে ৩ কাপ গরম পানি, ১ টেবিল চামচ লবণ ও ১ টেবিল চামচ সিরকা দিয়ে কলিজা দিয়ে ২ মিনিট রাখুন। ২ মিনিট পর কলিজা টুকরোগুলো আবার ভাল করে ধুয়ে নিন।

প্যানে ঘি গরম করে পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ হালকা ভেজে কলিজা ও আদা রসুন দিন। কয়েক মিনিট উচ্চ আঁচে ভেজে বাকি সব মসলা ও পরিমাণ মত লবণ দিন।

এখন মাঝারি আঁচে কলিজা ভাজতে থাকুন। ৮-১০ মিনিটের মাঝে কলিজার পানি শুকিয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে দিন। উপরে কাঁচামরিচ কুঁচি, ধনেপাতা কুঁচি ও লেবুর রস দিয়ে পরিবেশন করুন। নান, পরোটা বা পোলাউয়ের সাথে পরিবেশন করুন।