ওয়াচডগ এর সকল পোস্ট

সাভার হতে নেয়া – যে কাহিনীর শুরু নেই, শেষ নেই….

ফিরে দেখা নিজের লেখাঃ

জনাব সোহেল রানা কি রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর রানা ভবন গড়ে তুলেছিলেন, না ভবন সহ আলিশান সম্পত্তি নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন? অনেকটা ’মুরগী আগে না ডিম আগে’ প্রশ্নের মতই শোনাবে প্রশ্নটা। দুভাবেই সম্ভব বাংলাদেশে। কেউ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেন, কেউবা আবার হেলিকপ্টারে চড়ে সিঁড়ির শীর্ষে পা রাখেন। যেহেতু যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাই ধরে নেব ক্ষমতার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়েই এ পর্যন্ত এসেছেন। নাম, প্রতিপত্তি, যশ, সম্পদের বাহারী সমাহার সহ খ্যাতিমান হতে চাইলে রাজনীতিতে নাম লেখাতে হয়, আবার রাজনীতিতে নাম লিখিয়েও এসবের মালিক হওয়া যায়। এরও হরেক রকম কারণ থাকে। রাজনীতির সাইড লাইনে বসে বৈধ পথে আয়কৃত সম্পদ রক্ষা করা আর আবাবিল পাখির পীঠে চড়ে সৃষ্টিকর্তার সাথে দেখা করা প্রায় সমান দুরুহের কাজ। তাই সম্পদের সাথে বাংলাদেশের রাজনীতির সম্পর্ক অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর মত। একজন আরেক জনের পরিপূরক। সোজা বাংলায়, কেউ চুরি করে বড় হয়, কেউ আবার বড় হয়ে চুরি করে। চুরি এখানে অবধারিত, বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হতে শুরু করে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবাই এখানে চোর। ’জীবন থেকে নেয়া’ নামের সুন্দর একটা সিনেমা দেখেছিলাম ছোটবেলায়। নির্মাতা বোধহয় মরহুম জহির রায়হান। কাহিনীর সবটা মনে করতে পারবো না, যতদূর মনে হয় পারিবারিক একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একনায়কতন্ত্রকে রূপক অর্থে তুলে ধরেছিলেন নির্মাতা। আন্দোলন, বিদ্রোহ, পতন সহ সবই ছিল ছবিটায়, তবে তা রাস্তার চাইতে ঘরেই ছিল বেশি প্রাধান্য। চাইলে সোহেল রানা নামের মধ্যসারির নেতাকে কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটা রূপক ছবি আঁকা যায়। এই নেতার উত্থান লাখ লাখ নেতার উত্থানেরই কার্বন কপি, মুদ্রার এ পীঠ ও পীঠ। আসুন সীমিত পরিসরে সে চেষ্টাটাই করি। উদ্দেশ্যটার আরও একটা কারণ আছে। নিউ ইয়র্ক হতে এক বন্ধু ফোন করে আগ বাড়িয়ে সাবধান করে দিয়েছেন সাভার ট্রাজেডির জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে যেন ব্লগ না লিখি। বেডরুম পাহারা দেয়ার মত ইমারত পাহারা দেওয়া-ও নাকি মন্ত্রি প্রধানমন্ত্রীদের কাজ নয়। আসুন সে কাজটাই করি, খোদ প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করার চেষ্টা করি। নামও একটা দেয়া যাক সে চেষ্টার, ’সাভার থেকে নেয়া।’

শুরুটা বোধহয় এভাবেইঃ বাবা আবদুল খালেক। তেল মিলের মালিক। মিলে সরষে ভাঙ্গিয়ে তেল করা হয়, না বিদেশ হতে কাঁচামাল আমদানি করে ভোজ্যতেল তৈরী করেন সেটা জানা জরুরি নয়। আবদুল খালেকেরই ছেলে আমাদের সোহেল রানা। যুবক এবং হাতে কাজকর্ম বলতে বিশেষ কিছু নেই। করার প্রয়োজনও হয়না। বাবার যা আয় রোজগার তা দিয়েই চলে। বেশির ভাগ সময় কাটে ইয়ার দোস্তদের সাথে মৌজ ফুর্তি করে। মদ, গাঁজা, চরস, ভাং, ফেন্সি, হিরোইন, এলএসডি, ইয়াবা, ভায়াগ্রা সহ সবকিছুতে বেজায় আসক্তি। এলাকার তরুণদের আড্ডায় খুব জনপ্রিয় আমাদের এই সোহেল। এ নিয়ে বাবাও বেশ গর্বিত। আপন মেয়ের স্বামী জাকির হোসেনের সাথে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ বাধে শ্বশুর খালেক সাহেবের। গর্জে উঠে আরেক সন্তান ও ভবিষত্যের তরুন রাজনৈতিক নেতা জনাব সোহেল রানা। বোনের স্বামীকে ধামরাই এলাকার ধুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্য দিবা লোকে শত শত মানুষের সামনে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। আগুনের লেলিহান শিখার মত খবরটা পৌঁছে যায় স্থানীয় আওয়ামী নেতা জনাব মুরাদ জংয়ের দরবারে। ভ্রমরে ভ্রমর চেনার মতই একে অপরকে চিনতে পারে। জনাব জং গাঁটের পয়সা ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে জেলহাজত হতে দুরে রাখেন খুনি সোহেলকে। সামনের সংসদ নির্বাচনে জং’এর হয়ে ’জং’ করার চুক্তিতে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নাম লেখান ’সাভার থেকে নেয়া’ গল্পের নায়ক। মূর্তিমান আতংক হয়ে ক্ষমতার রাজনীতিতে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন নিজ এলাকায়।

বাবা খালেক সাহেবের তেলের মিলের পাশেই দুই একর পতিত জমি। বিশাল দুটি পুকুর ও খালি জায়গা সহ সম্পত্তিটার দিকে অনেকদিনের নজর খালেক সাহেবের। ছেলের গায়ে গতরে জোর হওয়ায় নজরটা শকুনের নজরে রূপ নিতে সময় লাগেনি। সম্পত্তির মালিক পাগলা নাথ। আওয়ামী ভোটব্যাংকের স্থায়ী ভোটার এই নাথের সম্পত্তি ক্রোক দিতে সাত পাচ ভাবতে হয়নি সংখ্যালঘুদের রক্ষক ও ত্রাণকর্তা সোহেল সাহেবের। কারণ শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্ষমতা তার জন্যে এনে দিয়েছে নাম, যশ, প্রতিপত্তি ও অঢেল অর্থ। কেনা হয়ে গেছে প্রশাসন। আইন আদালতের উপর শৌচাগার বানিয়ে নিয়মিত মলমূত্র ত্যাগ করার আইনী বৈধতাও পেয়ে গেছেন ইতিমধ্যে। তাই পাগলা নাথের ঠুকে দেয়া মামলা বানের জলের মত ভেসে যায় সোহেল রানার ক্ষমতার জোরে।

২০০৭ সালের কথা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে ততদিনে। বস সর্বজনাব মুরাদ জং মুজিব কোট লাগিয়ে সংসদে আসা যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স পেয়ে গেছেন ইতিমধ্যে। তাই আর দেরি করতে রাজী ছিলেন না রানা সাহেব। ডোবার উপর কোন রকমে মাটি ভরাট করে শুরু করে দেন ১০ তলা ইমারতের কাজ। ঠিকমত পাইলিং ও কম্পাক্টিং না করে সস্তা মালামাল দিয়ে এত বড় দালানের কাজ করতে বলায় বেঁকে বসে ঠিকাদার। ক্ষমতার সোনালী হরিন ততদিনে রানাদের হাতের মুঠোয়। চাইলে ১৬ কোটির সবাইকে শায়েস্তা করার ক্ষমতা ও অধিকার রাখে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ তথা বঙ্গবন্ধু সৈনিকেরা। এ যাত্রায় ঠিকাদারকে শায়েস্তা করার ভেতর ক্ষমতা সীমিত রাখেন যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ধানমন্ডিতে ডেকে নিয়ে থেতলে দেন ঠিকাদারের পা হতে মাথা পর্যন্ত। কেড়ে নেন ব্যবহারের গাড়ি। কেস কোর্টে উঠলে বিচারক রায় দেন রাজনৈতিক প্রতিশোধের কারণে বিরোধী দলের করা এ মামলা আইনের চোখে অবৈধ। ২০০৭ সালে শুরু করা দালানের কাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। এবং তিন বছরের মাথায় মাটিতে লুটিয়ে পরে অন্যায় ও অবিচার সমুদ্রের উপর দাঁড়ানো রানা প্লাজা। সাথে নিয়ে যায় দেড় শতাধিক খেটে খাওয়া মানুষের প্রাণ। বিরোধী দলের হরতাল, তাই সাংসদ মুরাদ জংকে নেত্রীর কাছে প্রমাণ করতে হবে সাভারের জনগণ বিরোধী দলের হরতালে সাড়া দেয়নি। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য এসব নেত্রীর বাধ্যতামূলক শর্ত। মুরাদ জং মানেই কতিপয় সোহেল রানা। তাদের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয় উপরওয়ালার চাহিদা। তাই হরতালের ব্যর্থতা সফল করতে জং সাহেব হাত বাড়ান সোহেলের দিকে। ফাঁটল দেখা দেয়ায় ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ করতে বাধ্য হয় রানা প্লাজার ভাড়াটিয়ারা। দুদিন বন্ধের পর তৃতীয় দিন মাঠে নামে সাংসদের পেশি শক্তির দল। ভয় দেখিয়ে পোষাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের কারখানায় ঢুকানো হয়। বলা হয় ফাঁটল কোন সমস্যা নয়। এর পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা। এর ভয়াবহতা বর্ণনা করার মত স্ক্রীপ্ট নেই লেখকের হাতে।

অনেকে প্রশ্ন করবেন এখানে শ্রমিক মৃত্যুর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কটা কোথায়? প্রথমত, রানা প্লাজা তৈরী করার এত টাকা কোথায় পেল সোহেল? উওর, রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট। সমীকরণটা এ রকম, কেবল মুরাদ জং’দের বিজয়ই নিশ্চিত করতে পারে বিশেষ পরিবারের ক্ষমতা। আর একজন মুরাদ জংয়ের বিজয় নিশ্চিত করতে সোহেলদের প্রয়োজনীয়তা বাধ্যতামূলক। এরা বিনা পয়সায় চ্যারিটি করার আদম নয়। তাই চাঁদাবাজী, হত্যা, গুম, খুন, টেন্ডারবাজী সহ ভাগ্য ফেরানোর সব রাস্তা খুলে দেয়া হয় রাজনীতির ছত্রছায়ায়। খুন করলে ওদের কিছু হয়না, কারণ আদালতে আছেন বিচারক লীগের একদল গৃহপালিত ভৃত্য। থানা-পুলিশের জন্য প্রতিটা খুন খুলে দেয় ভাগ্য ফেরানোর নতুন দরজা। রাষ্ট্রযন্ত্রের সবকটা গলি উন্মুক্ত থাকে সোহেলদের জন্য। আইন আদালত, থানা-পুলিশ, মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী সহ প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত উন্মুখ হয়ে থাকেন সেবা দানের জন্য। এভাবে সবকিছু আবর্তিত হয় বিশেষ একজনের ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে। এ আবর্তনের গলিতেই জন্ম নেয় একজন সোহেল রানা, দস্যু, তস্কর ও শতাধিক সহজ সরল খেটে খাওয়া বাংলাদেশির খুনি। বাংলাদেশে এমন কি কেউ আছেন যিনি সোহেলকে ২০০ মানুষ হত্যার দায়ে বিচার করার ক্ষমতা রাখেন? চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এমনকি ফাঁসির মঞ্চ হতে সসম্মানে ফিরে আসার রাস্তা তৈরী আছে সোহেলের জন্য। এ জন্যেই নিয়োগ দেয়া হয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রেসিডেন্টকে।

রাষ্ট্রকে যদি মানব শরীর হিসাবে কল্পনা করা হয় বলতে অসুবিধা নেই সবকটা অঙ্গে পচন ধরেছে আমাদের। একজন সোহেল রানাকে শাস্তি দিয়ে এ রোগ দুর করার ভাবনা হবে অনেকটা আকাশ কুসুম কল্পনার শামিল।

লেটস্‌ ফাক দেম টু দ্যা এন্ড!

লেটস্‌ ফাক দেম টু দ্যা এন্ড!

সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভে একেক ধর্মের জন্যে একেক রকমের বিধান আছে। এই যেমন মুসলমানদের জন্যে রোজা নামাজ হজ্ব যাকাত। হিন্দুদের জন্যে দুর্গা, কালি, সরস্বতী, শীবলিঙ্গ সহ হরেক রকমের দেব-দেবীর পূজা। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও বলতে গেলে সৃষ্টিকর্তার সমকক্ষ। তাদের সন্তুষ্টি এখন জাতীয় কর্তব্য ও পালনে বাধ্যতামূলক ধর্ম। আওয়ামী ধর্মেরও দেব-দেবী আছেন। তাদের নৈকট্য লাভের জন্যেও আছে সুনির্দিষ্ট কিছু তরিকা। এই যেমন ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধ বন্দনা ও পাকিস্তান গীবত চর্চা। শাহরিয়ার কবির, খুশি কবির সহ দেশের গোটা বুদ্ধিজীবী সমাজ এখন চেতনা উদ্দীপক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ইয়াবা সেবন করে চলছেন আর তার মূল্যবোধ অনেকটা বায়বীয় কায়দায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন দেশের আকাশে বাতাসে। পাকিস্তান গীবতই বা বাদ যেবে কেন! এই গীবতের উদাহরণ হিসাবে টানা যায় জনৈক চেতনাবাজ হযরতের পুত্রের বিদেশ যাত্রার কাহিনী।

পুত্র বিদেশ যাচ্ছেন। তবে আমার আপনার মত পকেটে ৫ ডলার নিয়ে বিদেশ যাত্রা নয়। পরবাসে পা রাখার আগেই পুত্রের চেতনাবাজ পিতা হবু দেশের ব্যাংক একাউন্টে সবেধন নীলমনি পুত্রের নামে ৫০০ কোটি ডিপোজিট করে রেখেছেন। পুত্রের ফ্লাইট উড়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের উপর দিয়ে। তিনি প্লেনে বসে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের অভিব্যক্তির কথা প্রকাশ করছেন। পাকিস্তানের উপর দিয়ে উড়ে যেতে কতটা ঘৃণা হচ্ছিল তা প্রকাশের ভাষা খুজে পাচ্ছিলেন না তিনি। লুটেরা পিতার লুটের টাকায় বিদেশ যাত্রায় চেতনার এই বিষ্ফোরণ অনেকের কাছে দেশপ্রেমের জীয়নকাঠি মনে হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে এ শ্রেফ ফাকিং লুটের মাল হালাল করার সুরা আল হাসিনার কয়েকটা লাইন মাত্র। আরবী আয়াতের মত এই আয়াত বুঝার সক্ষমতাও সীমাবদ্ধ কতিপয় শাহরিয়ার কবির ও জাফর ইকবালদের মত কিছু কিন্তা কুন্তিদের মাঝে।

পাকিস্তান!
মাথায় পাগড়ি, মুখে লম্বা দাড়ি আর সাথে হালি খানেক স্ত্রী নিয়ে একদল সামন্তযুগীয় মানুষকেই আমরা পাকিস্তানী হিসাবে চিহ্নিত করতে অভ্যস্ত। তাদের চিনতে এবং ঘৃণা করতে আমাদের খুব একটা অসুবিধা হয়না। কারণ, এরা হচ্ছে ৭১’এর খুনী ও ইসলামী জঙ্গিবাদের ধারক বাহক।

আমাদের দেশে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে অনেকটা আবাবিল পাখির মত ওরা উড়ে আসে। উড়ে আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত হতে। মুখে থাকে অসাম্প্রদায়িকতার ললিত বাণী, আর হাতে থাকে শায়েস্তা করার সৌদি তরবারী। সুজাতা বিবিরা অতিথি হয়ে আসেন। নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে রাজনীতিবিদদের সাথে দরবার করেন। এবং পৌছে দেন দিল্লীর হুঁশিয়ারী। … বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্ষমতায়ন মেনে নেবেনা দিল্লী।

আমাদের দেশে নির্বাচন হয়।
রাতের অন্ধকারে ভোটবাক্স ভর্তি করে প্রভুদের চরণে পূজা-অর্চনা দেয় তাদের লোকাল এজেন্টরা। উপহার দেয় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।

ভারত!
গুজরাটের কসাই নরেন্দ্র মোদি নতুন করে জনগনের ম্যাণ্ডেট পেয়েছেন। আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবেন তিনি। গোটা ভারতকে আনবেন গো-মূত্রের আওতায়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রবক্তা, ওলামায়ে কেরাম, হুজুরে আলা হযরত মোদির (সাঃ) ভারতকে কট্টর ধর্মীয় অনুশাসনের আওতায় আনার নির্বাচনী ওয়াদাকে ম্যাণ্ডেট দিয়েছে ‘অসাম্প্রদায়িক; ভারতের জনগণ। তারই তাৎক্ষণিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দেশটার আনাচে কানাচে। মুসলমানদের গরু পেটা করে লাইনে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশী অভিবাসীদের ঝেটিয়ে বিদায় করার হুমকি উচ্চারিত হচ্ছে ক্ষমতার উচ্চ পর্যায় হতে।
যে পাকিস্তানকে আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির ব্রীডিং গ্রাউণ্ড হিসাবে জানি বাস্তবতা হচ্ছে সে পাকিস্তানে কোনদিন কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসেনি। আসার সম্ভাবনাও নেই।

নতুন করে ভারত ও ভারতীয়দের চেনার সময় এসেছে। ওরা গো-মূত্র সেবক একদল উগ্র ধর্মীয় উন্মাদ। যে পশ্চিমবঙ্গে যুগ যুগ ধরে কম্যুনিষ্টরা শাসন করে গেছে, সে বঙ্গে এখন বিজেপি, বাজরাং আর লাল নীল গেরুয়া পোশাকধারী একদল গো-মূত্র সেবকের অভয়ারণ্য।
আবার এই গো-মূত্র সেবকদেরই চাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ!
লেটস্‌ ফাক দেম টু দ্যা এন্ড!

কৃষ্ণয় দিলা রাধার গলে, রাধায় দিলা কৃষ্ণের গলে…

কৃষ্ণয় দিলা রাধার গলে
রাধায় দিলা কৃষ্ণের গলে…

পাঠান সাহেব ছিলেন এরশাদ আমলের একজন প্রতিমন্ত্রী। খণ্ডকালীন বললে ভুল বলা হবেনা। কারণ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি উনার মন্ত্রীত্ব। ভদ্রলোককে চিনি তারও আগে। পল্লী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশে সদ্য ইন্ট্রিডিওস করা হয়েছে কেবল। খুব বেসিক পর্যায়ে হলেও একসময় আমিও যোগ দেই সে প্রকল্পে। কর্মস্থল ঢাকার কালিয়াকৈর, সাভার ও ধামরাই। পাঠান সাহেব বিদ্যুতের সাব-স্টেশন বসানোর ঠিকাদার। গায়ে গতরে ফিটফাট মধ্যবয়সী একজন মানুষ। চলাফেরায় কেতাদুরস্ত ভাব। আমাদের অফিসে আসেন এক হাতে গাড়ির চাবি আর অন্যহাতে বেনসন সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে। সব বিবেচনায় একজন সফল ও সুখী মানুষ। মাঝখানে দেশে না থাকায় পাঠান সাহেবের ব্যবসা ও ব্যক্তিগত জীবন কোন পথে প্রবাহিত হয়েছে জানার সুযোগ হয়নি। বিদেশ পর্ব চুকিয়ে দেশে ফিরতে নতুন করে পরিচয় হয় পাঠান সাহেবের সাথে। এ যাত্রায় তিনি আর ঠিকাদার নন, সরকারের একজন মন্ত্রী।

ফারাক্কা বাধের অভিশাপের মত এরশাদের ক্ষমতায়ও একসময় অভিশাপ লাগে। দিনের বেলার মন্ত্রী রাতে ফেরারী হতে বাধ্য হন। পাঠান সাহেবের মন্ত্রীত্ব অবশ্য এর আগেই দফারফা হয়ে যায়। তিনি ফিরে যান ময়মনসিংয়ের আপন ডেরায়।

কালের চক্রে নতুনকরে পরিচয় হয় প্রাক্তন ঠিকাদার ও মন্ত্রীর সাথে। এ যাত্রায় ওনার মতিঝিলের শ্রীহীন অফিসে। এরশাদের বেশকজন পরিত্যাক্ত মন্ত্রীকে নিয়ে একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি আমরা। ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা শেষ হওয়ার পর পাঠান সাহেব টেনে আনলেন নিজের মন্ত্রীত্ব অভিজ্ঞতার সোনালী সময়। রোমন্থন করলেন এবং আমাদের সাথে শেয়ার করলেন।

‘আহ! সে-কি সময়! চাইলেই কি ভুলা যায়! রাস্তার ট্রাফিক লাইটে গাড়ি থামলে ট্রাফিক পুলিশের লম্বা সালাম…এসপি ডিসিদের পোংগায় বাঁশ দেয়ার অঢেল স্বাধীনতা…বাড়ি গেলে রেলষ্টেশনে পুলিশের অপেক্ষা! – আরও অনেক কিছু রোমন্থন করে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অভিযোগ করলেন, ট্রাফিক পুলিশ এখন তাকে শালা বলে গালি দিতেও কার্পণ্য করেনা।

ছবিরজন এ সময়ের একজন মন্ত্রী। সোনালী সময় পার করছেন তিনি। কিন্তু হায়, যখন এ সময় চলে যাবে তিনিও হয়ে যাবেন একজন পাঠান সাহেব। যাদের কাঁধে চড়ে মোবাইল মসনদের ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন তারাই হয় শুয়রের বাচ্চা গালি দিতে দ্বিধা করবেনা।

সময় বড় কঠিন চীজ!

সাফায়াত উল্লাহ সেফুর গল্প!

সাফায়াত উল্লাহ সেফুর গল্প!

অস্ট্রিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি সাফায়াত উল্লাহ সফি, যার অনলাইন পরিচিতি সেফুদা হিসাবে। তাকে নিয়ে ঘৃণার উন্মাদনা এখন অতীতের সব উন্মাদনাকে ম্লান করে দিয়েছে। টগবগ করছে অনেকের রক্ত। দফায় দফায় ফাঁসির দাবি আসছে। ওমানের জনৈক বাংলাদেশি সাফায়াত উল্লাকে যিনি দায়ের কোপে মৃত্যুর কাছাকাছি পাঠাতে পারবে, তাকে তার একবছরের বেতন সেক্রিফাইস করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। অনেক হিজাবী মহিলারা ঘোমটার আড়াল হতে দুটো চোখা বের করে হাতে দা নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। কোন কায়দায় তাকে টুকরা টুকরা করবেন তারও বিশদ বর্ণনা থাকছে হুমকিতে।

সাফায়ত উল্লার অপরাধ তিনি মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করেছেন। শতকোটি মানুষের বিশ্বাসে আঘাত হেনেছেন। তাই তার বিচার ও শাস্তির আদালত এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। যার ঢেউ আছড়ে পরছে পৃথিবীর দেশে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ঘরে।

এই সেফুদাকে যারা চেনেন তাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয় তার উত্থান পর্ব। হাতে মদের বোতল আর মুখে কুৎসিত গালাগালিতে কাউকেই তিনি ছাড় দেননি। দেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ সবাইকে তিনি সমানভাবে ধোলাই করতে অভ্যস্ত। ধর্মও ওনার মেনুর বাইরে ছিলনা। আমাদের অনেকেই ওনার গালাগালি এন্টারটেইন্টমেন্ট হিসাবে উপভোগ করেছি। কিন্তু ধর্মীয় আঘাত উলটে দিয়েছে আমাদের বিনোদন। আমরা এখন সেফুদার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল।

ব্যপারটা ভেবে দেখার মত। একজন হদ্দ মাতালের বেসামাল প্রলাপ কি তাহলে আমাদের বিশ্বাসের গোঁড়াকে টলিয়ে দিয়েছে? আমার তো মনে হয় সাফায়াত উল্লার এই কটূক্তি আমাদের ধর্মীর বিশ্বাসের ভীত কতটা দুর্বল তা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কেবল। শাস্তি কেবল সাফায়াত উল্লার প্রাপ্য নয়, শাস্তি আমাদেরও প্রাপ্য। কারণ আমাদের বিশ্বাস নড়বড়ে। একটু ধাক্কা লাগলেই তা হুড়মুড় করে লুটিয়ে পরে।

ধর্ম যদি আত্মশুদ্ধির আয়না হয়ে থাকে সে আয়নায় প্রথমে আমাদের নিজেদের চেহারা ভাল করে দেখা উচিৎ। খুন, গুম, ধর্ষণ আর লুটেরার দেশে ধর্ম কোন বিবেচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে তা যাচাই বাছাই করা উচিৎ। ধর্মের শুরু হওয়া উচিৎ নিজের বিবেক হতে, যার ছায়া প্রসারিত হওয়া দরকার নিজ ঘরে, পরিবারে। সেফুদা অনেক দূরের মানুষ।

অস্ট্রিয়া ইউরোপের একটি দেশ। সে দেশে ধর্ম চর্চা যেমন স্বাধীন তেমনি স্বাধীন এর বৈরিতা। ধর্ম নিয়ে গালাগালি সে দেশে আইনি কোন অপরাধ নয়। বরং নাগরিকদের জন্মগত অধিকার। বাংলাদেশে বসে সাফায়ত উল্লাকে জবাই করার হুমকি বরং অপরাধ। কাছে পেলে সে দেশের সরকার হুমকি দাতাকে বিচারের আওতায় আনবে। পাশাপাশি সে দেশে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করবে সাফায়াত উল্লার। বলে রাখা ভাল এ মুহূর্তে অস্ট্রিয়ায় ধর্ষণের সুনামি বইছে না। সে দেশের শিক্ষকরা শিক্ষাঙ্গনে নাবালক শিশুদের বলাৎকার করছেনা। নাগরিকদের পা হতে মাথা পর্যন্ত নেই ঘুষ আর দুর্নীতির কালিমা। প্রথমে ওরা মানুষ, তারপর ধার্মিক।

আসুন আমরাও প্রথমে রক্ত মাংসের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি। আর তা করতে পারলেই কেবল নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকার মত রক্তক্ষরণগুলো থামানো যাবে।

উপজেলা – কালো সূর্যের কালো রাতের কালো বন্যা…

উপজেলা – কালো সূর্যের কালো রাতের কালো বন্যা…

এরশাদ প্রবর্তিত উপজেলা পদ্ধতি কি এবং বাংলাদেশে এর প্রয়োজনীয়তা কেন আজ পর্যন্ত তার কোন কার্যকর ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। শুরুতে বলা হয়েছিল এই সিস্টেম রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাবে। বাড়বে দেশ শাসনে জনগণের অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততা। বিচারবিভাগকে ডিসেন্ট্রালাইজড করায়ও রাখবে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা। স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও কোন এক অজানা কারণে তার প্রবর্তিত উপজেলা সিস্টেমকে মেনু হতে বাদ দেয়নি পরবর্তী সরকার। অনেকটা ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দারের মত উপজেলা পরিষদকে রেখে দিয়ে তা ব্যবহার করে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো।

মূলত সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ প্রার্থীদের মান অভিমান নিয়ন্ত্রণে রাখায় ব্যবহৃত হচ্ছে এই ডিফ্যাক্টো সিস্টেম। এক্সিকিউটিভ পাওয়ার ও ফান্ডিং ব্যবহারের সুস্পষ্ট কোন রূপরেখা ছাড়াই উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বসিয়ে দেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতায়। ফলশ্রুতিতে বাড়ছে স্থানীয় সরকারের বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে এই পদ্ধতির কনফ্লিক্ট ও সংঘাত। আমরা যারা বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল রাজনীতির সাথে পরিচিত নই তাদের জন্যে উপজেলা পরিষদের সংজ্ঞা হচ্ছে ভাত ছিটিয়ে কাকদের কাছে টানা এবং দিনশেষে তাদের বলয়ে রেখে বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহার করা।

দেশের গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাই এখন একটা তামাশা। মিথ্যার বেসাতি গেয়ে অন্যায় ও অবৈধ ক্ষমতাকে জাস্টিফাই করার ন্যক্কারজনক ফাঁদ। এই ফাঁদে ধরা দিয়ে জনগণ হারাচ্ছে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশ হতে নির্বাসিত হচ্ছে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি। তারই ফল আজকের বাংলাদেশ ও তার বাস্তবতা! দুর্ঘটনার মহামারী, আগুনের প্রলয়, ক্ষমতাসীনদের হত্যা, খুন ও ধর্ষণের অবাধ স্বাধীনতা। সর্বোপরি লুটপাটের কালো সূর্যের কালো রাতের কালো বন্যা।

মার্চের দিনগুলো…

মার্চের দিনগুলো…

এপ্রিল মাসের ৩ তারিখ। খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল বাবার চিৎকারে। সবাইকে একত্র করে অদ্ভুত একটা আল্টিমেটাম দিলেন, দুই ঘণ্টা সময় আমাদের হাতে এবং এর ভেতর যেভাবেই হোক শহর ছাড়তে হবে সবাইকে। কারণ দর্শানো নয়, অজুহাত নয়, স্রেফ আদেশ। কোথায় যাব এবং কেন যাব প্রশ্ন করার প্রয়োজন ছিলনা, বাবার গলার আওয়াজ শুনেই বুঝে নিয়েছি কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে শহরে। ছোটকাল হতেই জেন এসেছি বাবা যা বলবেন তা ঘটতে বাধ্য। এ যাত্রায় তার ব্যতিক্রম হবে মনে করার কোন কারণ ছিলনা। বিষণ্ণ হয়ে গেল বাড়ির পরিবেশ। ভয় ভীতির চাইতে অনিশ্চয়তা গ্রাস করে নিলো আমাদের। স্কুল যাওয়া হয়না সেই মার্চ মাস হতে। হেড স্যার অনেক চেষ্টা করেও কাউকে ভেড়াতে পারেননি ওদিকটায়। আসলে স্কুলে যাওয়ার সময় ছিলনা ওটা। পরিচিত পরিবেশ বদলে যাচ্ছিল প্রতি ঘণ্টায়। দেশে বিশাল কিছু ঘটতে চলছে প্রথম নিশ্চিত হলাম যেদিন রেডিওর নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ হয়ে গেল। ’জয়বাংলা বাংলার জয়, হবে হবে হবে নিশ্চয়‘, গানটা শুধু রাস্তাঘাটে বাজতে শুনেছি এতদিন। এমন একটা গান রেডিওতে বাজবে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। কিন্তু তাই হল, এবং এর মধ্য দিয়ে ঘোষিত হল নতুন এক শুরুর। এ শুরুটা ছিল বিদ্রোহের তা বুঝতে কারও বাকি রইল না। আমার মত স্কুল ছাত্রের পক্ষেও বুঝতে অসুবিধা হল না জীবন বদলে গেছে আমাদের।

২৬ শে মার্চ ১৯৭১ সাল। পূব দিগন্তে সূর্য উঠি উঠি করছে কেবল। দাবানলের মত ছড়িয়ে পরল খবরটা, ঢাকা শহর আক্রমণ করেছে পাকিস্তানিরা। খুব সকালে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল শহরের রাস্তাঘাট। মোড়ে মোড়ে জটলা আর হরেক রকম জল্পনা কল্পনা। কেউ কেউ জানালো রাজধানীতে এত রক্ত বইছে যার উপর নৌকা চালাতেও না-কি অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটির কোন ছাত্রকেই না-কি রেহাই দেয়া হয়নি। টিএসসি আর মধুর ক্যান্টিনে নাকি ট্রাকের পর ট্রাক আসছে লাশ নিয়ে। বাতাসে শুধু খবর আর জল্পনা। লোকজন এক জটলা হতে অন্য জটলায় ঝাপ দিচ্ছে নতুন খবরের আশায়। সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকাগামী বাস গুলো হাত পা গুটিয়ে বসে রইল।

সময় গড়ানোর সাথে সাথে জেগে উঠল শহরের মানুষ। ঢাকায় আসলে কি ঘটেছে তা জানার উৎকণ্ঠায় অনেকেই রওয়ানা দিতে চাইল শহরের দিকে। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় এমপি এবং আওয়ামী নেতৃবৃন্দের চাপে নড়ে উঠল মোমিন কোম্পানির বাস গুলো। দুপুর ২টার দিকে শুরু হল মানুষের স্রোত। বাস, নৌকা, লঞ্চ এবং পায়ে হেটে ওরা আসতে থাকল। শিশু, কিশোর, বৃদ্ধা, ধনী, গরীব, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, রিকশাওয়ালা, ছাত্র, গায়ক, নায়ক সহ সবাই যোগ দিতে বাধ্য হল পালানোর মিছিলে। শহরের কোনায় কোনায় গড়ে উঠল আশ্রয় কেন্দ্র। খাদ্য এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেয়া হল যুব সমাজের উপর। চাল ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলো চাল নিয়ে, তরকারী ব্যবসায়ীরা তরকারী নিয়ে, এগিয়ে আসার মিছিল হতে কেউ পিছিয়ে থাকতে চাইল না। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গোটা শহর রূপান্তরিত হল শরণার্থী শিবিরে। সন্ধ্যার দিকে এ ক্যাম্পে নাম লেখাল সিনেমার নায়ক জাফর ইকবাল এবং তার ভাই আনোয়ার পারভেজ। উত্তেজনায় টগবগ করছে গোটা শহর। দম ফেলার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই কারও। ঢাকা হতে পালিয়ে আসা অনেকের মুখে শেখ মুজিবের ভাগ্য নিয়ে অনেক রকম কথা শোনা গেল। একজন বলল সে নাকি নিজে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের মোড়ে শেখ মুজিবের লাশ ঝুলতে দেখেছে। অনেকে দাবি শেখ মুজিব পায়ে হেটে তারাবো পর্যন্ত এসে অন্য কোথাও চলে গেছেন। মোট কথা কথার কোন লাগাম রইলো না, যার মুখে যা আসলো তা অবলীলাক্রমে বলে গেল।

২৭ তারিখ সকাল হতে শহর সরগরম হয়ে উঠল ইপিআর বাহিনীর আনাগোনায়। আর্মড জিপে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে ওরা চষে বেড়াল শহরের প্রতিটা গলি। আমরা শুধু হা হয়ে দেখে গেলাম এবং মনে মনে ধরে নিলাম স্বাধীন হয়ে গেছি আমরা। এভাবেই কেটে গেল মার্চের শেষ কটা দিন। বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকার সহায়তায় ততদিনে জানা হয়ে গেছে শেখ মুজিবের ভাগ্য। এত সহজে আমার স্কুলে ফিরে যাওয়া হচ্ছে না এপ্রিলের শুরুতে তা পরিষ্কার হয়ে গেল। এপ্রিলের ১ এবং ২ তারিখ দুটো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটল আমাদের শহরে। মুচি পাড়ার ১০/১২ জন নীরিহ অবাঙালীকে মেঘনা নদীর হাঁটু পানিতে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করল স্থানীয় কজন আওয়ামী লীগ নেতা। একদিন পর শহরের সবকটা ব্যাংক লুট হয়ে গেল। এ লুটে অংশ নিলো ইরান ভাই (বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা), আপেল ভাইয়ের (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিখ্যাত গায়ক আপেল মাহমুদ) মত বিশিষ্ট নেত্রী বৃন্দ, সাথে ছিল রতন মোল্লার (বিএনপির এককালীন শিল্প বিষয়ক সম্পাদক রোকনুদ্দিন মোল্লা – আরএম শিল্প গুষ্টির মালিক) মত সুযোগ সন্ধানীর দল। বাতাস ভারী হয়ে গেল শহরের। অনেকেই আশংকা করল পাকিস্তানী প্রতিশোধের। এমন একটা প্রেক্ষাপটেই বাবার আল্টিমেটামে শহর ছাড়তে বাধ্য হলাম আমরা।

কথা ছিল অবস্থা একটু ভালোর দিকে মোড় নিলেই ফিরে আসবো সবাই। কিন্তু আমরা কেউই ধারণা করতে পারিনি বাড়ি ফিরতে আমাদের আরও ৮ মাস দেরী হয়ে যাবে।

নির্বাচন কি তাহলে ইনকা সভ্যতার মতই ইতিহাস !!

ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে খুব পরিচিত একটা জায়গার উপর বিশেষ প্রতিবেদন দেখছিলাম। ‘মাচু পিচু, লস্ট সিটি অব ইনকাস’। আগ্রহটা এ জন্যেই নয় যে ঐ হারানো শহরে দু’বার গিয়েছিলাম। আমার জন্যে মাচু পিচুর দুর্বলতা অন্য কারণে। এন্ডিস পর্বতমালার বিপদজনক উচ্চতার ঐ শহরে আমি আমার হবু স্ত্রীকে আংটি দিয়ে প্রপোজ করেছিলাম। ওখান হতেই শুরু হয়েছিল আমাদের সংসার যাত্রা। আট আশ্চর্যের অন্যতম আশ্চর্য এই শহরের উত্থান ও পতনের সাথে জড়িয়ে আছে ইনকাদের উত্থান ও পতন। অবাক, বিস্ময় ও কষ্ট নিয়ে দেখছিলাম অনুষ্ঠানটা। কলোনিয়াল স্প্যানিশদের পৃথিবীর এ অংশে পা রাখার সাথে লেখা হয়ে যায় ইনকারের begging of the end!

অনুষ্ঠান শেষ করে ফেইসবুকে ঢুকতেই চোখে পরল আজাদ কাশ্মীর জামান ভাইয়ের দুটো ছবি এবং সাথে কয়েক লাইনের কিছু লেখা। অনেকের মত আমিও জামান ভাইয়ের ছবির ভক্ত। বেশকিছু ছবি ব্যক্তিগত আর্কাইভে জমা রেখেছি দুর্লভ ছবি হিসাবে। ছবি দুটোর স্থান একটা স্কুল। সময় ও উপলক্ষ উপজেলা নির্বাচন। বগুড়া শহরের নারুলী উত্তরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবি। জামান ভাইয়ের হিসাবে ঐ স্কুল সেন্টার এলাকার অন্যতম বড় ভোটকেন্দ্র। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোটার ভোট দিতে আসে এ সেন্টারে। হিসাব মতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোট পরেছে সর্বমোট ১টা। সকাল ১১টার পর তোলা ছবির প্যানোরমা অনেকটা খা খা করা মরুভূমির মত। কোথাও কেউ নেই! জামান ভাই নিজেও ভোট দিতে যাননি।

ইনকা সভ্যতার উত্থান পতনের সাথে বগুড়ার নির্বাচন কেন্দ্র গুলিয়ে ফেলা অনিচ্ছাকৃত ছিলনা। অভাব, অনটন আর সমস্যা জর্জরিত আমাদের দেশে নির্বাচন সবসময়ই ছিল একটা অঘোষিত উৎসব। এ উৎসবে ৯০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্বারা পর্যন্ত যোগ দিত মনের আনন্দে। গ্রামের দিকে এই উৎসবের ব্যাপ্তি ছিল আরও ব্যাপক। রিক্সা, ঠেলাগাড়ি, মোটরগাড়ি চেপে সকাল হতে শুরু হতো ভোটারদের আগমন। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে স্থাপিত নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকতো উত্তেজনা। সন্ধ্যায় একদল ঘরে ফিরত হাসিমুখে, পরাজিত দলের ক্যাম্পে নেমে আসতো সব হারানোর কষ্ট। হেরে যাওয়া দলের ক্ষণস্থায়ী হাঙ্গামাও ছিল নির্বাচনেরই অংশ। ভালমন্দ মিলিয়েই আয়োজিত হত নির্বাচনী নাটক। দিনশেষ মানুষ ঘরে ফিরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতো নির্বাচনী ফলাফল। এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতো সামনের নির্বাচনের। কোথায় গেল এসব!

জনাবা শেখ হাসিনা বাকশালের উপর কিছু কথা বলেছেন গতকাল। এক কথায় হতাশাজনক ও ভীতিকর। প্রশংসা করে বলেছেন রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় এর প্রবর্তন ছিল সময়োচিত। যে জাতি তার নিজ ভাষার কথা বলার অধিকার রক্ষার জন্যে রুখে দাঁড়িয়েছিল, সে জাতি একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার বিপক্ষে মুখ খুলতে কেমন যেন বোবা হয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মন হচ্ছে চেতনার জিয়নকাঠি বুলিয়ে জাতিকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন শেখ হাসিনা। এখানে কেউ আর কথা বলেনা। গোটা দেশকে মনে হয় আটরশী পীরের মাজার। আর শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এর খাদেম।

দেশ হতে জনগণের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন কি তাহলে ইনকা সভ্যতার মতই ইতিহাসে ঠাঁই নিতে যাচ্ছে?

বাতাস এখন গ্লোবাল… চাইলেও পালানোর উপায় নেই

১৯৯৯ সালের শেষদিকেই আমি নিশ্চিত ছিলাম অলৌকিক কিছু না ঘটলে পরের বছর আমি অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে যাচ্ছি। পাঁচ বছর ধরে দেশটায় আছি অথচ তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। দেখা হয়নি অনেক কিছু। পাশের দেশ নিউজিল্যান্ডে বন্ধু সাইফুল থাকে সপরিবারে। ৭০’এর দশকে আমরা একসাথে একই কলেজে রাশিয়ায় লেখাপড়া করেছি। হলের একই রুম শেয়ার করেছি। একই হাড়িতে রান্না করে খেয়েছি অনেকগুলো বছর। ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পর চাকরি জীবনের শুরুও একই জায়গায়। সেই সাইফুল হুট করেই একদিন পাড়ি জমায় আফ্রিকার দেশে জিম্বাবুয়ে। সেই হতে দেখা নেই। এত কাছাকাছি থাকার পর দেখা না হওয়ার দুঃখটা ঘোচানোর এটাই ছিল শেষ সুযোগ। সিডনি হতে অকল্যান্ডে তিন ঘণ্টার ফ্লাইট। পৃথিবীর বাতাস তখন গুঞ্জনে ভরপুর। ২০০০ সালকে ঘিরে চলছে হরেক রকম জল্পনা কল্পনা। মিলেনিয়াম বাগ নামের কল্পনার দৈত্য গ্রাস করে নিয়েছে উন্নত বিশ্বের সবকটা দেশ। পৃথিবী ধ্বংসের এটাই বোধহয় মোক্ষম ক্ষণ এমন ভবিষৎবাণী বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল। তো আমার ভাবনাটা ছিল অনেকটা কলা বেচা ও একই সাথে রথ দেখার মত। বিশ্বের যে স্থানগুলোতে ২০০০ সালের প্রথম প্রহর আসবে নিউজিল্যান্ড ছিল তার অন্যতম। সাইফুলকে দেখার পাশাপাশি ২০০০ সালকে বরণ করে এর পরিণতি দেখার ইচ্ছাটা কিছুতেই দমন করা গেলনা। ২৫ শে ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে’তে চেপে বসলাম অকল্যান্ড গামী এয়ার নিউজিল্যান্ডের প্লেনে।

১৯৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যরাত। টেবিল সাজিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়ার অপেক্ষায় আছি আমরা। ঘড়ির কাটা শূন্যতে গড়াতে ঘরের বাইরে এসে পরখ করতে শুরু করলাম ভেঙ্গে পরেছে কিনা মানব সভ্যতা। সে রাতে কোথাও কিছু ঘটেনি আকাশে কিছু আতশবাজির ঝলকানি ছাড়া। শেষরাতের দিকে বিছানায় গেলাম। অন্ধকার চিড়ে নতুন সহস্রাব্দির প্রথম আলো ফোটার সাথে বাসার মূল দরজায় বেধড়ক ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। অবাক হয়ে গেলাম এত সকালে কে আসতে পারে! সাইফুল বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতে এক ঝাঁক অকল্যান্ড বাসী বাংলাদেশী লম্বা সালাম দিয়ে অনেকটা জোর করেই ঢুকে পরল বৈঠকখানায়। ওরা এসেছে তাবলীগের দাওয়াত দিতে!

এক সপ্তাহের নিউজিল্যান্ড সফরের মেনুতে ছিল রটোরোয়া নামের ভল্কানিক এলাকায় যাওয়া। ওখানে হেলিকপ্টারে চড়ে নীচের অদ্ভুতসব কাণ্ডকারখানা অবলোকন করা। হেমিলটন শহর দেখা। দেশটার বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে অলস সময় কাটানো সহ অনেক কিছু।প্রকৃতির সাথে মনুষ্য সম্পর্কের নিবিড় লীলাভূমি এই দ্বীপে একটা জিনিষ দেখলে শিউরে উঠতে হয়; আর তা হচ্ছে দেশটার রক্তাক্ত রাস্তাঘাট। জংগল হতে বেরিয়ে এসে রাস্তা অতিক্রম করতে গিয়ে প্রাণ হারায় পশুর দল। এবং নির্দিষ্ট কোন জায়গায় নয়। বলতে গেলে গোটা দেশজুড়ে।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ার আক্রমণের পর মার্কিন মুলুক মুসলমানদের জন্যে নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল। চিন্তাটা তখন ঘুরপাক খাচ্ছিল; ফিরে যাই অস্ট্রেলিয়ায়… অথবা তাসমান সাগর পাড়ি দিয়ে নিউজিল্যান্ডে। ছোটখাটো কিছু একটা করে কাটিয়ে দেই বাকি জীবন। বাস্তবতা হচ্ছে, হিংসা বিদ্বেষের বিষাক্ত বাতাস এখন আর আটকে নেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্ণবাদী আমেরিকায়। এ বাতাস এখন গ্লোবাল। চাইলেও পালানোর উপায় নেই।

পৃথিবীর ২৫টি ধনী দেশ

পৃথিবীর ২৫টি ধনী দেশ

২৫. বাহারাইন
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪২,৯৩০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৭০.৯৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১৪ লাখ ৫০ হাজার
গড় আয়ুঃ ৭৬.৯ বছর

২৪. ফ্রান্স
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৩,৭৯০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ২,৮৭৬.০৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৬ কোটি ৪৮ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৩ বছর

২৩. জাপান
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৪,৮৫০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫,৪৮৭.১৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১২ কোটি ৬৭ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮৪.০ বছর

২২. ফিনল্যান্ড
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৫,৪০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ২৪৭.২৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৫৫ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮১.৮ বছর

২১. কানাডা
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৬,০৭০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১,৭১৪.৪৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৩ কোটি ৬৬ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৩ বছর

২০. অস্ট্রেলিয়া
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৭,১৬০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১,১৯২.০৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ২ কোটি ৪৭ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৫ বছর

১৯. বেলজিয়াম
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৪৮,২৪০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫৪৪.০৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১ কোটি ১৩ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮১.০ বছর

১৮. সুইডেন
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫০,৯৮০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫০৫.৪৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১ কোটি ১ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.২ বছর

১৭. জার্মানী
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫১,৬৮০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৪,১৮৭.৫৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৮ কোটি ২৬ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮০.৬ বছর

১৬. নেদারল্যান্ডস
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫২,২০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৮৯৯.৫৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১ কোটি ৭১ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮১.৫ বছর

১৫. ডেনমার্ক
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫২,৩৯০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ২৯৬.৩৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৫৭ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮০.৭ বছর

১৪. অস্ট্রিয়া
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫২,৫০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৪৬১.৫৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৮৮ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮০.৯ বছর

১৩. আইসল্যান্ড
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫৩,২৮০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১৮১.১৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৩ লাখ ৫০ হাজার
গড় আয়ুঃ ৮২.৫ বছর

১২. সৌদি আরব
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৫৪,৭৭০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১,৭৭৩.৫৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৩ কোটি ২৫ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৪.৬ বছর

১১. ইউ এস এ
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬০,২০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ১৯,৩৯০.৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৩২ কোটি ৫৮ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৮.৭ বছর

১০. আয়ারল্যান্ড
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬১,৯১০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৩৬৪.১৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৪৮ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮১.৬ বছর

০৯. নরওয়ে
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬৩,৯৮০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৩২৪.৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৫৩ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৫ বছর

০৮. হংকং
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬৪,১০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৪৫৪.৮৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৭৪ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮৪.২ বছর

০৭. সুইজারল্যান্ড
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৬৫,৬১০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫৪৭.৮৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৮৪ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৯ বছর

০৬. লুক্সেমবার্গ
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৭২,৬৯০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৮২,১৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৬ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৩

০৫. ইউনাইটেড আরব আমিরাত
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৭৪,৪১০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৬৯৪.৪৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ১ কোটি ১ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৭.৩ বছর

০৪. কুয়েত
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৮৩,৩১০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ২৫৭.৫৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৪৪ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৪.৭ বছর

০৩. ব্রুনাই দারেসসালাম
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৮৩,৭৬০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৩৩.৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৪ লাখ ৩০ হাজার
গড় আয়ুঃ ৭৭.২ বছর

০২. সিঙ্গাপুর
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ৯০,৫৭০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৫২৭.০২ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ৫৬ লাখ
গড় আয়ুঃ ৮২.৮ বছর

০১. কাতার – পৃথিবীর সবচাইতে ধনী দেশ!!!
মাথাপিছু বার্ষিক আয়ঃ ১,২৮,৬০০ ইউএস ডলার
২০১৭ সালের জিডিপিঃ ৩৩৮.৮২ বিলিয়ন ইউএস ডলার
জনসংখ্যাঃ ২৭ লাখ
গড় আয়ুঃ ৭৮.২ বছর

___________________
Source: America Online

পারমাণবিক মৃত্যুফাঁদ …

পারমাণবিক মৃত্যুফাঁদ …

আমাদের মত রাশিয়াও তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। মুখে, চেহারায় ও কাগজে কলমে সুপার পাওয়ায়ের তকমা থাকলেও ভেতরের খবর যারা রাখে তাদের কাছে রাশিয়া স্রেফ উন্নত ভার্সনে আমাদেরই কার্বন কপি। বিশেষ করে জোর করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করার মত সূক্ষ্ম কাজে। সেই রাশিয়ার সহযোগিতায় সমুদ্র বিজয়ের মত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের নব্য রাজতন্ত্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র! খবরটা পড়েই একদল মগজ-কানা দলীয় কিন্তা-কুন্তির দল উল্লাস শুরু করে দিয়েছে। অবৈধ রুটি-হালুয়ার জারজ মশা-মাছির দল ভন ভন করছে প্রকল্পের আশপাশে। দেশের খেটে খাওয়া কোটি কোটি সাধারণ মানুষ হয়ত কোনদিনও জানবে না কোন ভয়ংকর মৃত্যু-কুপে তাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে। চেরনোবিল অথবা ফুকুশিমা তাদের জন্য দিল্লি অনেক দূরের মতই রূপকথার গল্প। তাদের জানা থাকার কথা নয় অণু পরমাণুর ভয়াবহতা। হয়ত একদিন সকালে ঘুম হতে উঠে দেখবে তাদের মাথার চুল উঠে যাচ্ছে। চামড়া কুচকে যাচ্ছে। চেহারা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। সন্তান জন্ম নিচ্ছে শরীরে ক্যান্সার নিয়ে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধেয়ে যাচ্ছে স্থায়ী বিকলাঙ্গ ও পঙ্গুত্বের দিকে। যেদিন বুঝতে পারবে তাদের সর্বনাশের ভয়াবহতা, ততদিনে রাজা-রানী, রাজপুত্র-রাজকুমারীর দল পালিয়ে যাবে নিরাপদ আশ্রয়ে।

পৃথিবীর সবচাইতে জনবহুল ও পা হতে মাথা পর্যন্ত চোর ও চুরির রাজত্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেহাতই আত্মহত্যা। দুর্ঘটনা দুরে থাক, কেবল টক্সিক ওয়েস্টই জাতির অস্তিত্বকে পৃথিবীর মানচিত্র হতে মুছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া সহ পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলো যেখানে পিছিয়ে আসছে সেখানে আমরা, কেবল জয়ের তিলক কপালে লাগানোর লালসায় এগিয়ে যাচ্ছি গণহত্যার দিকে। জাতির অস্তিত্বকে ইনস্যুর করতে কিছু প্রস্তাব রাখছি যার মেরিট এ মুহূর্তে হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু যেদিন রূপপুর সহ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কান্নার রোল উঠবে সেদিন বুঝতে সহজ হবে এসব প্রস্তাবের যথার্থতাঃ

– রাজতন্ত্রের রাজপ্রাসাদ পাবনার রূপপুর ও হেমায়েতপুরের মাঝামাঝি কোন এক জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে।
– রাজকুমার ও রাজকুমারীদের তাদের ভিনদেশি স্ত্রী-স্বামী সহ স্থায়ীভাবে ঐ রাজপ্রাসাদে বাস করার আইন করতে হবে।

গুলিস্তান – নয়ারহাট মুড়ির টিন

গুলিস্তান – নয়ারহাট মুড়ির টিন

মাওলানা ভাসানী তখন খবরের শিরোনাম। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে হুজুরের ভূমিকা ছিল খুবই আনপ্রেডিক্টেবল। অনেকটা সমসাময়িক কাদের সিদ্দিকীর মত। দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতার প্রায় প্রতিদিন হেডলাইনে থাকতেন এই মজলুম জননেতা। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতো সকালের পত্রিকার জন্যে। তো একদিন সকালে এক হকার পত্রিকা হাতে দৌড়চ্ছে আর চীৎকার করছে…মাওলানা ভাসানীর কোন খবর নাই, খবর নাই…। জাতি চমকে উঠল, ভাবল মাওলানাকে গুম করা হয়েছে। হুমড়ি খেয়ে কিনতে লাগল সেদিনের দৈনিক পত্রিকা। কিছুক্ষণের ভেতর পাঠককুল আবিষ্কার করতে সক্ষম হল গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোন খবর নেই। হকারকে আটকে মিথ্যা বলার জন্যে উত্তম মধ্যম দিতে উদ্যত হল জনতা। হকার জানতে চাইলো কি তার অপরাধ। ক্রেতার দল উত্তর দিল, তুই মিথ্যা বলছিস, ভাসানীকে গুম করা হয়েছে তেমন কোন খবর নেই পত্রিকায়। হকার তখন উত্তর দিল; আরে, আমি কি তাই বলেছি না-কি! আমি তো বলেছি ভাসানীর কোন খবর নেই! পত্রিকা পড়ে দেখুন, সেখানে ভাসানীর কোন খবরই নেই। জমায়েত পাঠককুলের হুঁশ হল…আরে তাইতো, আজকের পত্রিকায় মাওলানা ভাসানীর আসলেই কোন খবর নাই!!!

কথা-ছিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে বীর-দর্পে ঘুরে বেড়াবে। কিলবিল করবে গ্রাহকের ভিড়। অর্থের বৈভব পাহাড় বাইয়্যা যাবে এবং তাতে জন্ম নেবে দ্বিতীয় প্রকল্প। উড্ডয়ন সাফল্যে রোমাঞ্চিত হয়ে সভা-সেমিনার সহ রাস্তায় বিজয় মিছিল পর্যন্ত হয়েছিল। আজ অনেকদিন হয়ে গেল। মহাকাশ বিজয়ের এই আইকন অনেকটা ধূমকেতুর মত মিলিয়ে গেল মহাকাশের গর্ভে। মাওলানা ভাসানীর মতই এর কোন খবর নেই। সব প্রশান্ত মহাসাগরের মত শান্ত। জাতীয় অর্থ লুটপাটের এই স্ক্যাম একদিন নিশ্চয় উধঘাটিত হবে এবং আমরা জানতে পারবো কার পকেট আর ব্যাংক একাউন্টে ঘুরপাক খাচ্ছে এই স্যাটেলাইট। বলা হচ্ছে যে কোঅরডিনেটে এই আদরের দুলালকে পাঠানো হয়েছে সেখানে গ্রাহক পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য।

একজন প্রতারক ও তার প্রতারণা!

একজন প্রতারক ও তার প্রতারণা!

১৯৮১ সাল। স্থান নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটি। কুয়াশার ফাঁক ফোকর গলে দিনের আলো মুখ খুলতে শুরু করেছে কেবল। পাপের এ নগরী এক অর্থে কখনো ঘুমায় না। জুয়ারিদের ভিড়ে ২৪ ঘণ্টা জমজমাট থাকে ক্যাসিনোর স্লট মেশিন গুলো। রুলেট ও পোকার টেবিল গুলোর আড্ডা একটু দেরী করে শুরু হয়। আটলান্টিক মহাসাগর হতে ভেসে আসা শো শো গর্জন আর ভেতরে জুয়ারিদের চাপা কোলাহল, সব মিলিয়ে পারফেক্ট একটা দিনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। পোকার অথবা রুলেট টেবিলগুলোর ব্যস্ততা শুরু হতে বেশ কিছুটা দেরী তখনও। সাধারণত জুয়ার এ দিকটা জমে উঠে রাত গড়ানোর সাথে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু আজ কি এক অজানা কারণে একটা পোকার অসময়ে খোলা হয়েছে। জনশূন্য টেবিলের ডিলার বার বার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে এবং উদগ্রীব হয়ে চোখ ঘোরাচ্ছে এন্ট্রান্সের দিকে। লক্ষ্য করলে বুঝা হবে কারও অপেক্ষায় আছেন ভদ্রলোক। ঘণ্টা খানেক পর কালো একটা ক্যাডিলাক এসে থামল ভ্যালেট পার্কিংয়ে। রিসেপসনিষ্ট এগিয়ে এসে খুলে দিল কালো কাঁচের নীচে ঢাকা পড়া সামনের দরজা। মাথায় কাউবয় হ্যাট ও হাতে কালোমতো একটা ছড়ি নিয়ে গাড়ি হতে বেরিয়ে এলেন মধ্যবয়স্ক একজন। হাতের হাতব্যাগটা প্রয়োজনের চাইতেও বড় দেখাচ্ছে। সাধারণত জুয়ারিদের এ ধরনের ব্যাগ বহন করতে দেখা যায়না। ডান-বা না তাকিয়ে আগন্তুক সোজা চলে গেলেন পোকার টেবিলে। পকেট হতে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে তাতে আগুন ধরালেন খুব আস্তে ধীরে। বুঝাই যাচ্ছে কোন তাড়া নেই আগন্তুকের। এবার বেশ সতর্ক চোখে চারদিকে চোখ ঘোরালেন। কেউ লক্ষ্য করছে কিনা যাচাই বাছাই করলেন। সন্তুষ্ট হলেন চারদিকের পরিবেশে। এবার রহস্যময় একটা হাসি উপহার দিয়ে হাতের ব্যাগটা এগিয়ে দিলেন ডিলারের দিকে।

– না, তোমাকে গুনতে হবেনা। যাদের দরকার তারা আগেই গুনে নিয়েছে। পাক্কা ৩.৩৫ মিলিয়ন।’
– উপরের নির্দেশ আমি রাতেই পেয়েছি। তাই গোনা গুনতির ঝামেলায় যাচ্ছিনা। তা চিপসগুলোর কোন এমাউন্টের হলে আপনার সুবিধা হয়?
– তোমার তো তা আগ হতে জানার কথা, নতুন করে তা জানতে চাইছো কেন? কথা ছিল প্রতিটা চিপস ৫ হাজার ডলারের হবে। অবশ্য তোমাদের যদি এর চাইতে বড় কোন অংকের থাকে তাহলে আরও ভাল। কমের হলে বহনে অসুবিধা হবে।
– না, ৫ হাজার ডলারের চিপসই গুনে রাখা হয়েছে। আসুন হাতবদল করা যাক।

ডিলার ব্যাগ হতে টাকার বাণ্ডিলগুলো বের করে টেবিলের উপর রাখলেন। ভাব দেখালেন যেন তিনি গুনতে শুরু করেছেন। টেবিলের অন্যপাশের ভদ্রলোক দুহাত বাড়ালেন চিপসগুলোর দিকে। তিনিও গোনার ভাব করলেন। দুজনই যে অভিনয় করছেন তা কাছ হতে লক্ষ্য করলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। মিনিট পনেরর ভেতর হাতবদল স্থায়ী হয়ে গেল। দুজনেই মুচকি হেসে বিড় বিড় করে কি যেন একে অপরকে বললেন। ভদ্রলোক খালি ব্যগটায় চিপসগুলো ভরলেন এবং হাতের কাউবয় হ্যাটটা আলতো করে মাথায় ঝুলিয়ে উঠে পরলেন। সোজা হাটা দিলেন অপেক্ষমাণ ক্যাডিলাকের দিকে। ভ্যালেট পার্কিয়ের হোষ্ট দরজা খুলে আহবান জানালেন সাইজে ছোট ও টেকো মাথার ভদ্রলোককে। আবারও মুচকি হাসি বিনিময় এবং এ যাত্রায় একে অপরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলেন। কালো ক্যাডিলাক নিকস কালো ধোঁয়া উড়িয়ে নিমিষেই মিলিয়ে গেল নিউ ইয়র্কের পথে।

এখানে এইমাত্র কি ঘটে গেল তা সীমাবদ্ধ ছিল হাতেগোনা কিছু বিস্বস্ত কর্মচারীর মাঝে। এবং তা লম্বা সময়ের জন্য। ১৯৮১ সালের এই ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে ২রা অক্টোবর, ২০১৮ সালে। দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক বছরের ইনভেষ্টিগেশনে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ এসব তথ্য। আটলান্টিক সিটির ট্রাম্পস ক্যাসেল টাওয়ার অর্থ সংকটে ধুকছে তখন। ব্যবসার অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। দেউলিয়া ঘোষণা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দিনটা ছিল ব্যাংকের বেধে দেয়া শেষদিন। একদিন দেরী হলে ক্যাসিনোর মালিকানা চলে যাবে ব্যাংকের কাছে। মালিক ডোনাল্ড ট্রাম্পের কপালের কুচকি দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হচ্ছে দিন দিন। কোথাও কোন তলা না পেয়ে শেষপর্যন্ত হাত পাতলেন পিতা ফ্রেড ট্রাম্পের দিকে। ফ্রেড ছেলের বিপদের দিনে মুখ ফিরিয়ে নেবেন এমনটা যে হবেনা ডোনাল্ড তা জানতেন। ৩.৩৫ মিলিয়ন হলেই উদ্ধার পাওয়া যায় এ যাত্রায়। বাপ ছেলে মিলে অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিলেন অর্থ বিনিময়ের কাজে। মূল উদ্দেশ্য ট্যাক্স ফাঁকি। পিতা ফ্রেড যদি সরাসরি পুত্র ডোনাল্ডকে এ টাকাটা দিতেন তা হত ট্যাক্সের পরিভাষায় উপহার। যা মার্কিন ট্যাক্স আইনে শতকরা ৫১ ভাগ কর আরোপের যোগ্য। অর্থাৎ, ৩.৩৫ মিলিয়ন ডলারের সিংহভাগই চলে যেত সরকারী খাজাঞ্চিখানায়। প্রতারণার সূত্রপাত এখানেই। যে ভদ্রলোক ব্যাগে করে টাকাটা নিয়ে ক্যাসিনোতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি ছিলেন পিতা ফ্রেডের বিশ্বস্ত লোক। ক্যাসিনোতে এমন একটা ভাব করলেন যেন তিনি জুয়া খেলতে এসেছেন। আর দশটা জুয়াড়ির মত টাকা দিয়ে চিপস কিনলেন। কিন্তু জুয়া খেলার ধারে কাছেও গেলেন না প্রি-প্লান মাফিক। ব্যাগ ভর্তি চিপস নিয়ে বেরিয়ে গেলেন ক্যাসিনো হতে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আয় করলেন ৩.৩৫ মিলিয়ন এবং এ টাকা দিয়ে উদ্ধার পেলেন দেউলিয়া হতে। অথচ সত্যিকার এ অর্থে এ ছিল ছেলের জন্যে পিতার উপহার। সবকিছু পানির মত সহজভাবে সমাধা হয়ে গেল। মাঝখান হতে সরকার মহাশয় বঞ্চিত হলেন প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলারের ট্যাক্স হতে। আমেরিকার আইনে এ ধরণের প্রতারণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কর্পোরেট আমেরিকায় ট্যাক্স প্রতারণা নতুন কোন ঘটনা নয়। হরহামেশাই তা ঘটছে। তবে যারা এসব করছে তাদের কেউই কোনদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া দূরে থাক স্বপ্ন দেখারও সাহস পায়না। অথচ একজন প্রফেশনাল প্রতারক এখন উন্নত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে আছেন। সমস্যাটা এখানেই।

স্বপ্ন ও বাস্তবতা …

স্বপ্ন ও বাস্তবতা …

বিশ্রী একটা স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল প্রায় ৬টা। ইচ্ছা করেই টেবিল ঘড়ির সময় ৫ মিনিট এগিয়ে রাখি। সকালে কাজে যেতে সুবিধা হয়। মনটা খারাপ করে আলো ফোটার আগেই হাইওয়ে ধরে কাজের উদ্দেশ্যে রওয়ান দিলাম। সত্যি হয় কিনা জানিনা, তবে ভয়টা যে সারাদিন তাড়া করে বেড়িয়েছে তাতে সন্দেই ছিলনা। মা বলতেন সকালের দিকের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। স্বপ্নে দেখলাম দেশে সামরিক আইন জারী করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে কমিশন বসিয়ে লোকজন আটকে কি যেন পরীক্ষা করছে। মোবাইল ফোনে দুয়েকটা ছবি তোলার আশায় পরীক্ষাগারে যাওয়ার সাথে সাথে ওরা আটকে ফেলল। সামনের জনের সাথে কি হচ্ছে দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।

‘হা করেন জনাব’ – ব্যপারটা বুঝতে না পেরে হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কষে ধমক লাগালো হাফপ্যান্ট পড়া উর্দিওয়ালা। থমমত খেয়ে হা করলাম। টর্চলাইট মেরে কি যেন পরখ করল মুখের ভেতর। কমিশনের দ্বিতীয় জন থাবা মেরে নিয়ে গেল তার জায়গায়। চোঙ্গা ওয়ালা পাইপ লাগিয়ে চোখের ভেতর কি যেন খুঁজতে থাকল। কিছু না পেয়ে অনেকটা লাথির কায়দায় ধাক্কা দিল। হুমড়ি খেয়ে ঠাঁই নিলাম তৃতীয় এবং শেষ কমিশনে। ন্যাড়া, ভুঁড়িওয়ালা ও চোখে ভারী চশমার এক উর্দিওয়ালা আমাকে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। ‘ঐ হালা, লুঙ্গি খোল’। আমি বললাম ভেতরে জাইংগা নেই, খুলবো কেমনে!’ ‘বাইঞ্চুত, সারা জীবন মাইনসের জাইঙ্গা খুলছস, এখন কস নিজের জাইঙ্গা নাই। উষ্ঠাইয়া বত্রিশ দাঁত ফেলাইয়া দিমু’। উর্দিওয়ালার গোপালগঞ্জীয় এক্সেন্টে সাবধান হয়ে গেলাম। আমি খোলার আগে হেঁচকা টানে উর্দিওয়ালাই খুলে নিলো আমার লুঙ্গি। খোলা আকাশের নীচে আমি আর আমার দোতারা এক অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি ঝপতে শুরু করলাম। দোতারার তারে হাত দিল। এদিক সেদিক করে কি যেন যাচাই বাছাই করল। পরীক্ষা শেষে হঠাৎ করেই বদলে গেল উর্দিওউয়ালার সুর। খুব নরম গলায় কানের কাছে মিয়াও মিয়াও করে বলল, ‘এবার আপনে যাইতে পারেন’। ইমান আলী দফাদারের সাথে দেখা না হলে বুঝতেই পারতমা না কি হচ্ছে এখানটায়। ইমান আমাদের পাড়ার এক কালের চৌকিদার। হঠাৎ করে উর্দিবাহিনীতে নাম লিখিয়েছে রাতারাতি ভাগ্য বদলের আশায়।

আরে ভাই ইমান যে, আছেন কেমুন?
ওয়াচডগ মিয়া যে। তা এইখানে ধরা খাইলা কেমনে?
এই যে এমনে! দোতারার দিকে আঙ্গুল দেখাতে জিহ্বায় কামড় হেসে উঠল ইমান আলী। আমরা আম্বালীগ, হাম্বালীগ আর তাদের উজির নাজির কোতোয়ালদের খুঁজতাছি। সবই বুঝলাম, কিন্তু জিহ্বা, চোখ আর পাকিস্তানী কায়দায় লুঙ্গি খুইলা দোতারা যাচাই করার কি কারণ?

আম্বালীগ আর হাম্ব্বালীগার চিনতে এই তিন পরীক্ষাই যথেষ্ট। গত ১০ বছর মিছা কথা আর হারাম খাইতে খাইতে সব আম্বালীগারদের জ্বিহবায় এক ধরনের ঢোরাকাটা দাগ পইরা গেছে। কারো জিহ্বায় এই দাগ পাওয়া গেলে সাথে পায়ু পথে পায়ুকাফ পরিয়ে গ্রেফতার করি। চোখ পরীক্ষা করারও ভাল একটা কারণ আছে। খারাপ নজর দিতে দিতে চোখে ডাইক্লোরো ডিফানেল ট্রাইক্লোরেইথানো নামের একধরণের ভাইরাস বাসা বেধেছে। কারও চোখে ঐ ভাইরাস ধরা পরলে গোলাম হোসেন উপায় নাই। আর দোতারার ব্যাপারটা খুব ফঁকফঁকা। খুইলা না বললেও তুমি বুঝবা আশাকরি…

গায়ের দোতারা হাতে নিতে পাড়ার সুলতান ফকিরের গানটার কথা মনে পড়ে গেল…
আমার দোতারায় কি গাইতে জানে গান
টেকা পয়সায় সোনার গয়না
মইরা গেলে সঙ্গে যায়না…

প্রচণ্ড ঘাম ঝড়িয়ে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। অবচেতন মনে হাতটা চলে গেল দোতারার দিকে। না, তারগুলো জায়গামতই আছে।

কালা আন্ধা হয়ে মরীচিকার পিছু নেয়া

ভারতীয়দের গোমূত্র পান নিয়ে আমাদের মাথাব্যথার অন্ত নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে আমরা খুবই সরব। অনেকে ছবি অথবা ভিডিও আপলোড করে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে বুঝাতে চাইছেন প্রতিবেশী দেশের হিন্দুদের চাইতে আমরা কতটা উত্তম! ভার্চুয়াল দুনিয়ার স্বাধীনতায় আপনাকে স্বাগতম। উপভোগ করুন যতদিন পারেন। এ সুযোগ অনন্তকাল খোলা থাকবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। ভারতীয় হিন্দুরা গো-মূত্র পান করে, তাতে আমার আপনার মাথা ব্যথার কারণ কি? গরুকে ওরা দেবতা মানে, তাই গরুর সবকিছুই তাদের কাছে পবিত্র ও পূজনীয়। ভারত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দেশ। সে দেশের সামাজিক মূল্যবোধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ধর্মীয় প্রভাব। প্রায় সব ধর্মের আদলে হিন্দু ধর্মেও আছে উগ্রতা। এর বহিঃপ্রকাশ গরুকে ঘিরে দেখা গেলে খুব কি অবাক হওয়ার থাকবে? পাশাপাশি আমরা যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ ধর্মের অনুসারী হিসাবে দাবি করি তারা কি মেনে নেব বাংলাদেশের অলিগলিতে শুকর নিধন ও এর বাজারজাতকরণ? এমনটা হলে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পৈচাশিক উল্লাসে গনহত্যায় মেতে উঠতে দ্বিধা করবেনা। পার্থক্যটা এখানে কোথায়, ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বে? আমি শ্রেষ্ঠ আর বাকিরা নিকৃষ্ট, এ কোন শিক্ষা হতে পারেনা। এ স্রেফ শিক্ষার বাই-প্রোডাক্ট। এবার আসুন লেখার সাথে সেটে দেয়া ছবিটার দিকে।

একদল ধর্মভীরু গ্রামবাসী মোনাজাতের মাধ্যমে পরিত্রাণ চাইছে নদী ভাঙ্গনের ধ্বংসাত্মক বিপর্যয় হতে। আমি আপনি ভাল করেই জানি কোন মোনাজাতই এ ভাঙ্গন থামাবে না। কোন এক সুন্দর সকালে নদী কেড়ে নেবে আপনার এতদিনের সাজানো সংসার। এ বছর না নিলেও সামনের বছর তা ফিরে আসতে পারে। এ অভিশাপ কি আসলেই উপরওয়ালার অভিশাপ? যারা সারা জীবন ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে সৎ জীবন যাপনে সচেষ্ট ছিল তাদের উপর কেন এ শাস্তি? এখানেই আসে অন্য এক ভারতের ভূমিকা। সমস্যার গোঁড়া কোথায় তা জানতে আমার হাটতে হবে নদীর গতিপথে। রিভার্স মুডে ফিরে যেতে হবে নদীর উৎসস্থলে। এ যাত্রায় আমাদের গন্তব্য হবে গো-মূত্র পানের দেশ ভারত। কারণ আমাদের প্রায় সবগুলো নদীর জন্ম ভারতে। ওরা উজানে আর আমরা ভাটিতে। বর্ষায় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে নদীগুলো ফুলে ফেঁপে বেপরোয়া হয়ে উঠে। সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে তলিয়ে দেয় জনপদ। প্রতিবেশী ভারত তার নিজের সীমানা নিরাপদ করার জন্যে নদী আটকে দেয়। বাধ তৈরি করে। অতিবৃষ্টিতে ওরা বাধ খুলে দেয়। অনেকটা বর্জ্য পদার্থের মত পানিকে ছুড়ে ফেলে আমাদের দিকে। আমরা তলিয়ে যাই। আমাদের নদীগুলো দ্বিগুণ তিনগুণ হয়ে খেয়ে ফেলে হাট-মাঠ-ঘাট, বাজার-বন্দর, স্কুল-কলেজ আর মসজিদ-মাদ্রাসা। আবার শুকনা ও অনাবৃষ্টির দিনে ওরা আটকে রাখে নদীর প্রবাহ। আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। থেমে যায় নদী-পারের মানুষের জীবন। আমরা আবারও মোনাজাতে বসি সৃষ্টিকর্তার আনুকূল্য লাভের আশায়। সময় বয়ে যায়। আনুকূল্য আসেনা। আমরা নীরবে নিঃশব্দে এসব মেনে নেই অভিশাপ হিসাবে। কোন বিচারেই এসব অভিশাপ নয়, বরং মনুষ্য সৃষ্টি অপকর্ম। আর এর মূল হোতা আমাদের প্রতিবেশী ভারত। ভারত তার সীমানার ওপারে নদী নিয়ে ঝামেলা এড়ানোর জন্যেই রাজনীতিতে নাক গলায়। ক্ষমতায় বসায় নিজেদের সেবাদাস। আর আমি আপনি যারা এসব সেবাদাসদের ভোট দিয়ে বৈধতা দেই এক অর্থে বৈধতা দেই নদী ভাঙ্গনের।

প্রতিবেশিদের গো-মূত্র পান আমাদের সমস্যা নয়। আমাদের সমস্যা নদী, সমস্যা অন্যের রাজনীতিতে নাক গলানো, সমস্যা অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে সেবাদাসদের ক্ষমতায় বসানো। সমস্যা কালা আন্ধা হয়ে মরীচিকার পিছু নেয়া।

ধিক আপনাকে!

আপনি ক্ষমতার রাজনীতি করেন, খুবই প্রশংসনীয় কাজ। ধরে নেব আপনি সমাজ সংসার তথা ধরণী নিয়ে খুবই সচেতন একজন মানুষ। তা না হলে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কেন! এই আপনি যখন জীবিকার সন্ধানে বটতলার মোড় হতে বাসে চেপে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন, লাশ হয়ে যে বাড়ি ফিরবেন না তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? যদি হায়াত মউত আল্লাহর হাতে এই বিশ্বাসে নিজের বাচা-মরা সপে দিয়ে পথ চলতে শুরু করেন তাহলে এখানেই থামতে পারেন। আমার এ লেখা পড়া আপনার জন্য জরুরি নয়। পথ চলুন এবং মৃত্যুর জন্য নিজকে প্রস্তুত রাখুন। আর আমার মত আপনি যদি বিশ্বাস করেন জীবন-মৃত্যু কোন দৈব ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত পথচলার শুরু ও শেষ। তাতে সৃষ্টিকর্তার যেমন হাত রয়েছে তেমনি রয়েছে মনুষ্য ফ্যাক্টর। এবং এই জাগতিক ফ্যক্টরগুলোকে ড্রাইভ করার জন্যই সভ্যতার ধাপে ধাপে মানুষকে এগিয়ে আসতে হয়েছে বিভিন্ন সমাধান নিয়ে। রাজনৈতিক ক্ষমতা সে সমাধানেরই অংশ। আপনি বাসে বসে আছেন। মাধবদী পেরিয়ে পুরিন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাসের ড্রাইভিং সীটে বসে আছেন চৌদ্দ বছর বয়সী এক তরুণ। তার লাইসেন্স নেই। অভিজ্ঞতা নেই। নেই সামাজিক তথা বিচারিক দায়বদ্ধতা। তার মাথায় একটাই দায়িত্ব; দিনশেষে মালিককে সন্তুষ্ট করে ঘরে নগদ কিছু নিয়ে যাওয়া। কারণ ঘরে মা-বাবা, ভাই-বোন সহ অনেকে এই নগদের উপর নির্ভরশীল। এবার ঘাড় ঘুরিয়ে বাসের সামনে, পেছনে, ডানে অথবা বামে তাকান। আপনার বাসের মত আরও অনেক বাস একই কায়দায় ঢাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পথে পথে যাত্রীরা অপেক্ষা করছে যানবাহনের। যে বাস আগে যাবে তার ভাগ্যেই জুটবে এসব যাত্রী। এবার শক্ত করে সামনের সীটের হাতলটা ধরুন। কারণ মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাইল আপনার ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে। পুরিন্দা আর পাচরুখীর মাঝামাঝি কোথাও আপনার বাস হলিউড মুভি ‘মিশন ইম্পসিবল’ কায়দায় দশটা পলটি দিয়ে ছিটকে পরল রাস্তা হতে। সাথে থেঁতলে গেল আপনার মগজ। আপনি এখন মৃত। মুখ দিয়ে লালা বেরুচ্ছে। একদল বুনো মাছি আপনার লাশকে ঘিরে নৃত্য শুরু করে দিয়েছে। অথচ আপনার তো এভাবে মরার কথা ছিলনা। আপনি তো ক্ষমতার রাজনীতি করেন। আপনার দাপটে থানার ওসি পর্যন্ত কেঁপে উঠে। অন্দরমহল হতে গৃহবধূকে উঠিয়ে আনতে আপনার অসুবিধা হয়না। এমন অসহায়ভাবে আপনাকে মরতে হবে এমনতো কথা ছিলনা! একজন চৌদ্দ বছর বয়সী বাচ্চা আপনাকে হত্যা করবে এমনটা কি স্বপ্নেও কল্পনা করে ছিলেন? মোটেও না। আর যদি এ যাত্রায় আপনি আজরাইলকে পরাস্ত করে বাস হতে আস্ত শরীরে বেরিয়ে আসতে পারেন তাহলে চলুন রাস্তার পাশে একটু বসি এবং কথা বলি।

যে চৌদ্দ বছর বয়সী বাচ্চা ড্রাইভিং সীটে বসে আপনাকে খুন করতে চেয়েছিল তাতে নিশ্চয় বিএনপি-জামাতের উস্কানি ছিলনা। ঐ ড্রাইভার আপনার দলের মন্ত্রী জনাব শাহজাহান খানের পোষ্য। প্রতিদিন নিজের জীবন তথা বাকি যাত্রীদের জীবন বাজি রেখে যা আয় করে তার একটা অংশ চলে যায় ঐ মন্ত্রীর পকেটে। যে জরাজীর্ণ রাস্তার কারণে বাসটা ছিটকে পরল সে রাস্তা মেরামতের কথা যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব আব্দুল কাদেরের। তেনার এসব দেখার সময় নেই। তিনি সাজগোজ করে গায়ে আতর মেখে বিএনপি বিষয়ক ছবক নিয়ে সময় কাটান। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর অপরাধে জন্য ড্রাইভারকে বিচারের মুখোমুখি করলে সেখানে মধু খাওয়ার মত জমা হবে আপনার দলের দাদারা, আসবে থানার পুলিশ, হাত পাতবে আদালতের বিচারক সহ আরও অনেকে। এবার ভাবতে চেষ্টা করুন যাদের সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোন এই ড্রাইভারের কারণে নিহত হল তারা রাস্তায় নামছে…প্রতিবাদ করছে…দাবি জানাচ্ছে আইনি শাসনের…চাইছে স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তা। খুব কি অন্যায় করছে? মান এবং হুশের সমন্বয়েই মানুষ, যতদিন এগুলো থাকবে মানুষ প্রতিবাদ করবেই। এবার আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। লাঠি হাতে আপনি তাড়া করছেন প্রতিবাদকারীদের…আপনি ক্ষমতার রাজনীতি করেন। এ রাজনীতিতে টিকে থাকতে চাইলে আপনাকে হাতে লাঠি নিতেই হবে। মানব সভ্যতার সব সংজ্ঞায় আপনি একজন নিকৃষ্ট মানব। আপনি সভ্য পৃথিবীর অসভ্য সৃষ্টি।

ধিক আপনাকে!