ওয়াচডগ এর সকল পোস্ট

কবর হতে উধাও হয়ে গেছে চার কংকাল …

কবর হতে উধাও হয়ে গেছে চার কংকাল…

কনটেম্পোরারি কনটেক্সটে বাংলাদেশের জন্য এটা কোন খবরই না। যেখানে কবর হতে লাশ পর্যন্ত উধাও হয়ে যায়, সেখানে কংকাল তো কোন ফ্যাক্টরই না! কোমল মতি বিশ্বাসীদের বিশ্বাস করানো কঠিন হবেনা যদি বলা হয় ধর্মীয় রোডম্যাপের ট্রেইল ধরে লাশ চলে গেছে তার আপন ঘরে। অর্থাৎ ফেরেশতারা উঠিয়ে নিয়ে গেছেন সৌরজগতের বাইরে অন্য এক জগতে। যেখানে কৃতকর্মের জবাবদিহিতে শুরু হবে লাশের। কিন্তু বর্ণনায় যখন কংকাল উঠে আসে তখন ধরে নিতে হবে এখানে ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে অন্যকিছু আছে। এই যেমন চেতনার ফাঁক-ফোঁকর গলে ব্যাংকের ভল্ট হতে সোনা-দানা, হীরা-জহরত অথবা থোকা থোকা নগদ বেরিয়ে যায়। কবর আর ব্যাংকের ভল্ট আমার কাছে সব সময় এক ঔরসে জন্ম নেয়া মায়ের পেটের খালাত ভাইয়ের মত মনে হয়েছে। লাশের মত সোনা-দানাও যখন ভল্টে যায় ওদের প্রাণ থাকেনা। পার্থক্য একটা আছে বৈকি; লাশকে কবরে পাঠানো হয় চোখ আর নাকের পানিতে একাকার করে। আর সোনা-দানার দাফন হয় লোলুপ দৃষ্টির কামনা বাসনায়।

বলাই বাহুল্য মানব সভ্যতার নতুন করে খৎনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে। যার কারণে লাশ, কংকাল আর ভল্টের সংজ্ঞাও বদলে যাচ্ছে পালা করে। চার হাজার কোটি যেমন এখন কোন টাকা নয়, তেমনি লাশও কোন বস্তু না। স্রেফ হিউম্যান ওয়েস্ট। এখানেই আসে আইনস্টাইনের পদার্থের সৃষ্টিও নাই, ধ্বংসও নাই, ও এক অবস্থান হতে অন্য অবস্থানে রূপান্তরিত হওয়ার তত্ত্ব। সেই তত্ত্বের গবেষণা চালাতেই কি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা কবর খুঁড়ে চারটি কঙ্কাল চুরি করে নিলো? হতে পারে। গবেষণার গিনিপিগ পাওয়া না গেলে হিউম্যান ওয়েষ্ট ব্যবহার কতটা বৈধ তা ৫৭ ধারা নামক আওয়ামী হাদিসে নিশ্চয় লিপিবদ্ধ আছে। এসব অব্শ্যই আমার মত ম্যাঙ্গোর জানার কথা নয়। বাস্তবতা হচ্ছে একই পরিবারের চারটি কংকাল একসাথে খোয়া গেছে। লাশ হতে মাংস খসে কংকাল হওয়ার বয়স খুব একটা বেশী ছিলনা। চার মাস হতে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত।

উপসংহার হচ্ছে; গোটা বাংলাদেশই এখন একটা কবর। এখানে ১৬ কোটি জীবন্ত লাশ খাদ্য হয়ে শুয়ে আছে একদল শকুনির অপেক্ষায়। শকুন আসবে… লাশ খুবলে খুবলে খাবে, তবেই ধন্য হবে আমাদের বেচে থাকা।

আপনি বাবা হওয়ার যোগ্য নন!

ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও সাথে পুলিশ বাহিনী দিয়ে স্বঘোষিত আওয়ামী সরকার হামলা চালাবে এটা অপ্রত্যাশিত ছিলনা। না হলেই বরং অবাক হতাম। বাংলাদেশের অতীত সরকারগুলোও এপথে হেটে গেছে। ৪/৫ দিন ধরে ফেরারি হওয়া ছুপা আওয়ামী ক্যাডাররা ফিরে আসছে ফেইসবুকে। কেউ প্রতিপক্ষ দলের আমির খসরুর ফোনালাপ, কেউ আওয়ামী অফিসে হামলার ‘করুণ’ কাহিনী নিয়ে ভার্চুয়াল দুনিয়া পুণঃ দখলের চেষ্টায় আছে। আওয়ামী লীগ সবই ফিরে পাবে। রাস্তার দখল নিতেও অসুবিধা হবেনা। তবে ক্ষতি যা হবার তা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। যে প্রজন্মের মগজে চেতনার বীজ ঢুকিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে সক্ষম হয়েছিল তা ঢিলে হয়ে গেছে। এর ফল কেবল রাজপথেই নয়, ব্যালট বাক্সেও প্রতিফলিত হতে বাধ্য। স্বভাবতই শেখ হাসিনা তার বে-আইনি ক্ষমতা ধরে রাখতে ভোটকেন্দ্রে জালিয়াতির মাত্রা দ্বিগুণ তিনগুণ করতে বাধ্য হবেন। তাৎক্ষনিক না হলেও এ ধরনের জালিয়াতির সুদূরপ্রসারী ইমপ্যাক্ট আছে, যা প্রতীয়মান হতে হয়ত একটু সময় লাগবে।

ভার্চুয়াল দুনিয়ার ছুপা আওয়ামী সমর্থকদের জন্যে শুভকামনা রইল। তবে একটা উপদেশ না দিলেই নয়। নিজেদের সন্তানদের যখন স্কুল-কলেজে পাঠাবেন তাদের গলায় একটা সাইন ঝুলিয়ে দেবেন…”আমার বাবা আওয়ামী লীগার”। কে জানে হয়ত নাবালক, অপরিপক্ব, মাতাল, উন্মাদ ড্রাইভারের দল যখন শিক্ষার্থীদের উপর বাস, ট্রাক তুলে দেবে আপনার সন্তানকে সাইনবোর্ডের কারণে রেহাই দেবে। আর যদি আপনার সন্তান চাকার নীচে পিষ্ট হয়ে আলুভর্তা হয়ে যায়, সেদিন কিন্তু দুঃখ করতে পারবেন না। বরং হাসিমুখে বরণ করে নেবেন সন্তানের ভাগ্য। সেদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজকে প্রশ্ন করে দেখবেন আজকের শিশু-কিশোর তরুণ-তরুণীরা রাস্তায় বের হয়ে আপনার জন্য কি করতে চেয়েছিল। দলীয় সমর্থন যদি সন্তানের মৃত্যু চাইতেও জরুরি হয় তাহলে একটাই উপসংহার টানা যায় আপনাকে নিয়ে; আপনি বাবা হওয়ার যোগ্য নন!

৪০ বছর পর ৪০ কোটি মানুষের দেশ! বাংলাদেশ!!!

১৬ কোটি মানুষ আর চারদিকে খাল-বিল নদী-নালা নিয়েই বাংলাদেশ। ৭১’সালে দেশটার জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। আজকে ১৬ কোটি। অর্থাৎ ৪৭ বছরে তা দ্বিগুণেরও বেশি। সহজেই অনুমেয় আগামী ৪০ বছরে এই সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে ৪০ কোটির কাছাকাছি চলে যাবে। দেশটার আয়তন ও অর্থনীতির উপর যাদের সম্যক জ্ঞান আছে তাদের জন্যে এ হবে বিশাল এক ধাঁ ধাঁ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে ৪০ কোটি মানুষ! থাকবে কোথায়? খাবে কি? আলট্রা ন্যাশনালিষ্ট ও অতি-দেশপ্রেমিকরা নিজ নিজ থিওরি দাঁড় করাবেন স্ব স্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস হতে। আল্লাহয়ালারা বলবেন রিজিকের মালিক উপরওয়ালা। সবই হবে স্পেকুলেটিভ; তথ্যভিত্তিক প্রোগনজ করার মত বিশেষজ্ঞ আজকের বাস্তবতায় নেই বললেই চলে। ৪০ বছর অনেক সময়। অতদূর না গিয়ে সমসাময়িক বাস্তবতায় ফিরে আসুন দেশটার অর্থনীতির একটা চিত্র আকার চেষ্টা করি।

আসলেই আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি কি? কিসের উপর চলছে আমাদের দেশ? পরিসংখ্যান মতে আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বাড়ছে গড় আয়ু। তারপরও কি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ থাকতে পারে? ভয়টা এখানেই। আমাদের অর্থনীতির দুটো মাত্র খাত। এক, মানব সম্পদ, দুই পোশাক শিল্প। বলা হয় এক কোটির মত স্বদেশী প্রবাসে শ্রম দিচ্ছে এবং আয়ের প্রায় সবটাই দেশে পাঠাচ্ছে। এক কথায় দেশ চলছে প্রবাসীদের আয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুরু হয়েছিল পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সস্তা শ্রমই ছিল তাদের মূল অস্ত্র। একটা সময় এই খাতের আয় বিনিয়োগ পূর্বক স্ব স্ব সরকার বহুমুখী খাতের জন্ম দিয়েছে এবং সময়ের চাহিদায় বস্ত্র-খাত ঠাঁই নিয়েছে ইতিহাসে। বাংলাদেশ কি একই পথে হাঁটছে? বোধহয় না।

গেল ৬-৭ বছর উন্নত বিশ্বকে কঠিন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে এগুতে হয়েছে। এর ঢেউ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও লেগেছে। বাংলাদেশের মানব সম্পদ রফতানিও মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে বলা হয় ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। যে কোন সময় এর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এর ফলাফল কি হবে তা আন্দাজ করতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ধ্বসে পরবে দেশটার অর্থনীতি। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পৃথিবীর কোন দেশেই সস্তা শ্রম সহজলভ্য থাকেনা। বাংলাদেশ এখন সেই সময়টা পার করছে। শ্রমিক শোষণ কোন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয় যা পুঁজি করে আজীবন ব্যবসা করা যাবে। সুতরাং বাংলাদেশের পোশাক খাতও শক্ত ফাউন্ডেশনের উপর দাঁড়িয়ে নেই। দেশে কোন বৈদেশিক বিনিয়োগ নেই যা শ্রমবাজার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ বিদেশীরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে বিনিয়োগ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেনা। এ ধরণের শাসন ব্যবস্থায় যে কোন সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার আশংকা থাকে। বিনিয়োগে বিপদের ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টতই একনায়ক-তান্ত্রিক স্বৈরাচারী সরকার। এ ধরনের সরকার ব্যাপক ধরণের লুটপাট নিশ্চিত রাখতে হত্যা, গুম, খুন আর দমন পীড়নের পথে হাটে। বাংলাদেশে যতদিন গণতান্ত্রিক সু-শাসন চালু না হবে বিদেশী বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে বাধ্য।

আজকের হিন্দুস্থান টাইমসের খবরটা হয়ত চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভিড়ে হারিয়ে যাবে। কিন্তু ছোট্ট এই খবরটার সিগনিফিকেন্স কতটা গভীর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার দাবি রাখে। যেখানে আমাদের ১ কোটি প্রবাসী নিজেদের স্বাভাবিক জীবন সেক্রিফাইস করে পশুর মত শ্রম দিয়ে বছর ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে, সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবৈধ ১০ লাখ কর্মজীবী বাংলাদেশ হতে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার নিজ দেশে পাচার করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ মালয়েশিয়ার জংগলে যে স্বদেশী তার ভিটামাটি বিক্রি করে সকাল-সন্ধ্যা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজ পরিবার তথা দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছে…যে গৃহবধূ স্বামী সংসার ফেলে মধ্যপ্রাচ্যের আরব পশুদের নির্যাতন সহ্য করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে তার অর্ধেকেরও বেশি সজ্ঞানে আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশে পাচার করতে দিচ্ছি। তাও অবৈধ পথে। এই সেই প্রতিবেশী যারা আমাদের সীমান্তে সামান্য গরু পাচারের অভিযোগে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার স্বদেশীকে হত্যা করেছে।

পদ্মাসেতুর স্প্যান বসছে। দলকানা কৃতদাসদের এ নিয়ে আনন্দের শেষ নেই। অথচ আমরা একবারও ভেবে দেখছিনা এ সেতুতে দেশি বিনিয়োগ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কতটা হুমকি হিসাবে কাজ করবে। এ মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে একটা যুদ্ধ বাঁধলে লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দেশ ফিরতে হবে। ধ্বস নামবে রেমিটেন্সে। লালবাতি জ্বলে উঠবে আমাদের রিজার্ভে। জ্বালানি আমদানি দানব হয়ে খেয়ে ফেলবে আমাদের রিজার্ভ। হাহাকার উঠবে সবখাতে। পদ্মাসেতুর দানবীয় রূপ তখন প্রকটভাবে ফুটে উঠবে। অথচ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এর সুদ হতে পারত মাত্র ১%। একদল সংঘবদ্ধ চোরের দল চাঁদার তালিকা নিয়ে হাজির হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের দরবারে। যারা এই অভিযোগ বিশ্বাস করেনি তাদের মগজ দলকানা জীবাণুতে আক্রান্ত তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

৪০ বছর পর ৪০ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের কি অবস্থা হবে তা ভেবে দেখার কোন প্রয়োজন নেই ফ্যাসিবাদী সরকারের। কারণ সরকার প্রধান হতে শুরু করে তার উজির নাজির কোতোয়াল ডাজ্ঞার দল ইতিমধ্যে কামিয়ে নিয়েছে ১০ প্রজন্ম লালন করার মত অর্থ। সময় হলে আস্তে ওরা ভেগে যাবে বিদেশে। এক মোহম্মদ নাসিমের কলেজ পড়ুয়া ছেলেই নিউ ইয়র্কে বিনিয়োগ করেছে ৫০০ কোটি টাকা।

মানুষ তার নিজ প্রয়োজনেই খুঁজে নেবে উন্নয়নের পথ

আমরা যারা পাকিস্তানে জন্ম নিয়ে বাংলাদেশে বেড়ে উঠেছি তাদের স্মৃতি হতে এখনো মুছে যায়নি বাংলাদেশে সৃষ্টির প্রেক্ষাপট। মূলত পশ্চিম পাকিস্তান ভিত্তিক সেনাবাহিনীর অবৈধ ক্ষমতা দখল ও ২২ পরিবারের নিরবচ্ছিন্ন শোষণই ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার মূল ক্যাটালিস্ট। শেখ মুজিব তথা আওয়ামী লীগের রাজনীতিও একই প্রেক্ষাপটে ঘুরপাক খেয়েছে। সংখ্যাগুরুদের অধিকার কেড়ে নিয়ে সংখ্যালঘুর শাসন কায়েম, সামরিক জান্তাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠা বাইশ পরিবারের কাছে ফাইন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউটগুলো বর্গা দেয়ার ভ্রূণেই সুপ্ত হয়েছিল স্বাধীনতার বীজ। এ বীজ আওয়ামী লীগের ৬ দফা অথবা ১১ দফার ভেতর বড় হয়েছে এসব জাস্ট টকিং পয়েন্ট। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে মুগ্ধ হয়ে নয়, বরং অবৈধ ক্ষমতা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। এ শোষণ ছিল সংখ্যালঘু কর্তৃক সংখ্যাগরিষ্ঠদের।

আজকের বাংলাদেশ ভৌগলিক সংজ্ঞায় স্বাধীন। তার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটা সীমানা আছে, আছে পতাকা। ব্যাস এতটুকুই! পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ করার যে মূল চেতনা তা এখন বেওয়ারিশ লাশ হয়ে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের অপেক্ষায় আছে। পাকিস্তানী শোষণকে রিপ্লেস করেছে লুটপাট। ২২ পরিবারের জায়গা দখল করেছে ২ পরিবার। শোষণের তাও কিছু লাজ-লজ্জা ছিল, যা আইডেন্টিফাই করতে অনেক সময় ম্যাগনিফাইং গ্লাসের প্রয়োজন হত। কিন্তু আজকের লুটপাটে কোন রাখঢাক নেই, নেই জড়তা; এক কথায় উদাম, নির্লজ্জ, বেহায়া, বেলাজ। রাষ্ট্রের সবকটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বানানো হয়েছে ক্ষমতাসীনদের উদরপূর্তির নিরাপদ ভাগার। লুটপাট মহোৎসবের উচ্ছিষ্ট ভাগ-বটোয়ারা করার কাজে সংযুক্ত করা হয়েছে দেশের ব্যুরোক্রেসি, বুদ্ধিজীবী সহ শ্রেণী-ভিত্তিক সব পেশাদারদের। বিচারবিভাগকে বানানো হয়েছে সবজি এবং নিয়োগ দেয়া হয়েছে লুটপাট যন্ত্রের চৌকিদার হিসাবে। এখানে প্রধান বিচারপতির মাথায় বন্দুক রেখে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় চৌকিদারের ভূমিকা ঠিকমত পালন করেনি বলে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটাধিকারকে বানানো হয়েছে আলোমতি প্রেমকুমার যাত্রাপালার রঙ্গমঞ্চ। বাংলাদেশ এখন একব্যক্তির এক দেশ। এখানে স্বাধীনভাবে কথা বলা যাবেনা…লেখা যাবেনা… প্রতিবাদ এখন যাদুঘরে। এখানে ইচ্ছামত জন্মদিন পালন করাও অপরাধ। বাংলাদেশ এখন একক দেবতার দেশ। অনেকটা উত্তর কোরিয়ার মত, যেখানে ব্যক্তি কিম জং উং’ই দেশ! তিনি যা বলবেন তা-ই আইন, তা-ই শাসন, তা-ই বিচার, তা-ই রায়। এর বাইরে যা কিছু তার সবই নষ্ট, সবই শাস্তিমূলক অপরাধ।

স্বাধীনতার সংজ্ঞাকে আমি রবীন্দ্রনাথের দুই পাখী কবিতার আলোকে ক্লাসিফাইড করতে পছন্দ করি; এক, খাঁচায় বন্দী স্বাধীনতা, দুই, বনের মুক্ত স্বাধীনতা। বন্দী পাখির কিছু কিছু নিশ্চয়তা আছে যা বনের পাখির থাকেনা। যেমন অন্ন! দুবেলা দু’মুঠো খাবার দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েই মানুষ পাখিকে খাঁচায় আটকায়। তো আজকের শেখ হাসিনার স্বাধীনতা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের খাঁচার পাখির স্বাধীনতা; বন্দী, শৃঙ্খলিত! তোতা পাখির এই স্বাধীনতা সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়ও কায়েম হয়েছিল। দু’বেলা দু’মুঠা অন্ন আর মাথার উপর ছাঁদ দিয়ে মানুষকে আফ্রিকা হতে ধরে আনা দাসদের মত স্বাধীনতা দিয়েছিল। কিন্তু সে সমাজ টিকেনি। কারণ মানুষ পশু নয়। মানুষের চিন্তাশক্তি আছে। শুধু আহার আর বাসস্থানই তার জন্য সব নয়। আজকের বাংলাদেশে চিন্তা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। লেনিন, মাও, হো আর কিম’দের মত শেখ মুজিবকে এখানে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে দেবতা হিসাবে। গোটা জাতিকে বলা হচ্ছে হ্যামিলনের বংশীবাদকের পেছনে লাইন ধরতে।

উন্নয়নের চাইতেও আজকের পৃথিবীতে বেশী জরুরি মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার নিশ্চয়তা। এসবের গ্যারান্টি থাকলে মানুষ তার নিজ প্রয়োজনেই খুঁজে নেবে উন্নয়নের পথ।

নুরে হত্যাচেষ্টা ও একজন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি…

নুরে হত্যাচেষ্টা ও একজন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি…
(ওয়াচডগের আর্কাইভ হতে)

জনাব আসাদুজ্জামান নুর , রাজনীতির মাঠে আপনি বাকের ভাই নন যার উপর আক্রমনের প্রতিবাদে আমাদেরও চোখের পানি ফেলতে হবে। এদেশের জীবন হতে সে সব দিন বিদায় নিয়েছে যখন নাটকের বাকের ভাইয়ের জন্যও মানুষ সহমর্মিতা দেখাত। সে হৃদয় আজ শকুনের ছোবলে ক্ষতবিক্ষত। নুর সাহেব, আপনি সেসব শকুনদেরই একজন। আপনি তাদেরই একজন যারা এদেশকে আলীবাবা চল্লিশ চোরের সিসিম ফাঁক মন্ত্রবলে ফাঁক করেছে, ধর্ষণ করেছে, লুটেছে, চাটার মত চেটেপুটে খেয়েছে। রাজনীতির খাতায় প্রথম যেদিন নাম লিখিয়েছিলেন সাথে শকুনের খাতায়ও নাম লিখিয়েছিলেন সেদিন। বাংলাদেশের রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও তার খেলোয়াড়দের পরিচয় না জেনে এ পথে পা বাড়িয়েছিলেন বিশ্বাস করা কঠিন। আশাকরি ভুলে যাননি লুটের পয়সায় সন্তানকে লন্ডন পাঠানোর ইতিবৃত্ত। সুসংবাদ হচ্ছে, এ পথে আপনি একা নন। আপনার আশপাশের সবাই একই পথের পথিক। দেশকে গৃহযুদ্ধের আগুনে ঠেলে দিয়ে আপনারা উত্তাপ নিচ্ছেন শীত নিবারণের। জ্বলজ্যান্ত মানুষকে গুম করছেন, বছরের পর বছর ধরে লম্বা করছেন লাশের মিছিল। কেবল এক ব্যক্তির সেবা করতে গিয়ে বিসর্জন দিয়েছেন মানুষ হিসাবে পরিচয় দেয়ার ন্যূনতম মনুষ্যত্ব। নাগরিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তামাশা করতে গিয়েছিলেন নীলফামারীর জনপদে। নুর সাহেব, ভেবে দেখুন একজন বাকের ভাইয়ের ফাঁসির জন্য যে নীলফামারীর মানুষ রাস্তায় নেমেছিল একই মানুষ তাদের প্রিয় আসাদুজ্জামান নুর ভাইকে হত্যার জন্য ককটেল, গ্রেনেড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরতে দ্বিধা করেনি। একবারও কি ভেবে দেখেছেন কেন এমনটা হয়? যারা আপনাকে মারতে গিয়েছিল তারা এলিয়ন নয়। এদেশেরই সন্তান। রাজনৈতিক পছন্দ মানুষের জন্মগত অধিকার। আপনি যেমন একটা দল বেছে নিয়েছেন, তাদেরও অধিকার আছে বেছে নেয়ার। মুক্তিযুদ্ধের নামে প্রতিপক্ষ নির্মূল করার অধিকার আপনাদের কেউ দেয়নি। কিন্তু আপনারা তাই করছেন।

জনাব নুর, আপনারা দেশকে ভাগ করেছেন। শহর-বন্দর, হাট-বাজার, নদী-নালা সহ সবকিছু ভাগ করেছেন। ভাগ করেছেন প্রতিটা পরিবার। কেবল দেশ নয়, বাংলাদেশের প্রতিটা পরিবার এখন যুদ্ধের মাঠ। এখানে ভাই লড়ছে ভাইয়ের বিরুদ্ধে, বাপ লড়ছে সন্তানের বিরুদ্ধে, এথনিক ক্লিনজিংয়ের দোর গোড়ায় দাড়িয়ে প্রিয় জন্মভূমি। এবং সবকিছু হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নামে। রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পারিবারিক লড়াইকে আপনারা নাম দিয়েছেন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। জনাব, জাতি হিসাবে আমাদের বয়স ৪২ বছর পেরিয়ে গেছে। অনেক কিছু বুঝতে শিখেছি আমরা। আপনাকে চিনতেও ভুল হয়নি। আপনি তাদেরই একজন যাদের হাতে জিম্মি ১৫ কোটি মানুষের জীবন। ট্যাংক, কামান, থানা, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও প্রতিবেশী দেশের শক্তিশালী প্রভু নিয়ে রক্তাক্ত করছেন দেশের অলিগলি রাজপথ। যে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের উন্মাদ বানিয়েছেন, শিরায় শিরায় পৌছে দিয়েছেন ঘৃণার বিষাক্ত বীজ। জনাব, ভুলে গিয়েছেন কি এ দেশের মানুষ কেন পাকিস্তানী সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল? আপনার মত সেবাদাসদের ক্ষমতায় পাঠিয়ে বিশেষ পরিবারের সেবা করার জন্য নয় নিশ্চয়? পাকিস্তানী সামরিক স্বৈরশাসক ও তাদের দোসর ২২ পরিবারের শোষন, নিপীড়ন হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যই এদেশের মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, মাথার উপর ছাদ, স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তার জন্য স্বাধীনতা এনেছিল। অথচ আপনার মত কৃতদাসরা আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন রাজাকার নিধন আর জামাতি নিশ্চিহ্ন করার অপর নামই নাকি স্বাধীনতা।

জনাব নুর, যুদ্ধের মাঠে আপনি একজন সৈনিক। এবং প্রতিপক্ষের বৈধ টার্গেট। নীলফামারীর যুদ্ধে আপনি চার সহযোগী হারিয়েছেন। কাঁদছেন কেন? চোখের পানি আর নাকের পানি একাকার করে আপনি যখন হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা বর্ণনা করছেন একই সময় আপনার পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও দলীয় ক্যাডারের দলও ট্যাংক, কামান নিয়ে বিরান করছে দেশের বিভিন্ন জনপদ। মানুষ মারছে পাখির মত। হত্যাই যদি সমস্যার সমাধান হয়, তাহলে রাজনীতির মাঠে কেবল আপনারা হত্যা করবেন আর প্রতিপক্ষ পালাতে থাকবে তা হতে পারেনা। ওরাও হত্যা করবে এবং তা হবে বৈধ। চাইলে যুদ্ধ সংক্রান্ত জেনেভা কনভেনশন পড়ে দেখতে পারেন।

রক্তের দাগ হাতে নিয়ে বাকের ভাইয়ের ভালবাসা চাওয়ার ভেতর গৌরবের কিছু নাই…… পরাজয়ের গ্লানি।

ইউনাইটেড কুইনডম অব বাংলাদেশ!

ইউনাইটেড কুইনডম অব বাংলাদেশ!

বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। খণ্ড খণ্ড কতগুলো খবর। প্রতিদিন ঘটছে এবং প্রচার মাধ্যমে ঠাঁই পাচ্ছে বানিজ্যিক ও রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে। বিদেশে বসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশের উপর কেউ যদি থিসিস লিখতে চায় অনলাইনে প্রকাশিত দৈনিকগুলোর উপর চোখ বুলালেই বোধহয় যথেষ্ট হবে। প্রকাশিত খবরে ধারাবাহিকতা থাকে, থাকে প্রকাশনার মুন্সিয়ানা। একটা সফল দেশের খুব কাছাকাছি দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে দেখতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের পত্র-পত্রিকা পড়লেই যথেষ্ট। আবার ব্যর্থতার ষোলকলায় পূর্ণ একটা দেশের সাথে পরিচিত হতে চাইলে যেতে হবে প্রতিপক্ষের দুয়ারে। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে এক মেরুতে দুধের সাগর বইলে অন্য মেরুতে বিষের মহাসমুদ্র বইতে বাধ্য। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেসিক তত্ত্বের সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের জানা থাকার কথা উত্তর ও দক্ষিন মেরুর বিকর্ষণের মাঝে ম্যাগনেটিক ফিল্ড কি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। একইভাবে বিপরীত মেরুর রাজনীতিও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ তৈরী করে। তবে সে বিদ্যুৎ সেবাখাতের বিদ্যুৎ নয়, মিলিয়ন ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন বজ্রপাতের বিদ্যুৎ। যার আঘাতে ছারখার হয়ে যায় সবকিছু।

ফেব্রুয়ারী মাসকে বলা হয় শোকের মাস। এ নিয়ে উত্তর এবং দক্ষিন মেরুতে কোন দ্বন্ধ নেই। আগস্ট মাসকে যদিও শোকের মাস বলা হয় তবে তা এক মেরুর শোক। মে মাসকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শোকের ট্যাগ না দিলেও এ মাসে দুই মেরুর এক মেরুতে বইতে থাকে শোকের আবহ। একটা জাতি সবকিছুতে শোক খুঁজলে তা নিশ্চয় সুস্থ জাতির লক্ষণ হতে পারে না। শোকের অন্য পিঠেই সুখপায়রাদের বাস, আমাদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদেরও ঈদ আছে, আছে বিজয় দিবসের আনন্দ, আছে ১লা বৈশাখের উচ্ছাস। দুই মেরুর শোক আর সুখের মাঝে কোটি কোটি মানুষকে বাস করতে হয় নীরবে নিভৃতে, অনেকটা ম্যাগনেটিক ফিল্ড হয়ে। এবং এখানেই লুকিয়ে থাকে দেশের তৃতীয় মেরু। থ্রি ডাইমেনশনাল দেশের এই তৃতীয় মেরু নিয়ে আমার এ লেখা। আসুন কিছুক্ষণের জন্যে হলেও উপেক্ষিত সে মেরু হতে ঘুরে আসি।

বাংলায় একটা কথা আছে এক মাঘে শীত যায় না। কথাটা বোধহয় সবটা সত্য নয়। মেরুতে ঋতুর পরিবর্তন বাধ্যতামূলক হলেও বিষুব রেখায় তা বোধহয় প্রযোজ্য নয়। একই কথা বাংলাদেশের তৃতীয় মেরুর বেলায়ও প্রযোজ্য। মেরুর আনন্দ বেদনায় খুব একটা প্রভাবিত হয়না সে জীবন। সেখানে বছর জুড়ে রাজত্ব করে কিছু বিষধর সাপের অবাধ চলাফেরা। ১৫ই আগস্টের শোক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর জনৈক ব্লগারের লেখা খোলা চিঠিটা পড়ে দেশে ফোন করতে বাধ্য হলাম। মাসের ১ তারিখ হতে ১৪ তারিখ পর্যন্ত আমাদের শতাব্দি পুরানো শিল্পকারখানায় কোন ধরনের শোক বিরাজ করে তার সাথে সম্যক পরিচয় আছে, তাই শোকের অংশীদার না হয়ে উপায় ছিলনা। শত হলেও আপন ভাই বোন। ৯ বারের মাথায় অফিসের দারোয়ান ফোন ধরল। জানাল কারখানা বাইরে হতে বন্ধ করে মালিক পক্ষের সবাই অর্থাৎ আমার বাকি ভাইরা পালাতে বাধ্য হয়েছে। চাঁদার হুমকি নাকি সয্য করা যাচ্ছে না। ওরা স্রোতের মত আসছে; আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, তাতী লীগ, শ্রমিক লীগ। সবাই পিতা হারানোর শোক মুহ্যমান, অবমুক্তি জন্যে অর্থের প্রয়োজন। তৃতীয় মেরুতেও আগস্ট মাস শোকের মাস। তবে তা পিতা হারানোর শোক নয়, হুমকির মুখে চাঁদা দেয়ার শোক। টাকা দিয়ে যদি মানুষের জীবন কেনা যেত এক শেখ মুজিবকে কেনার জন্যে সৃষ্টিকর্তাকে কাড়ি কাড়ি টাকা দিতে প্রস্তুত আছে ৩-ডি মেরুর অনেক বাসিন্দা। শোকার্ত বুকে কতদিন বেচে থাকা যায়!

শুরুটা মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সামনে ঈদ। দুই মেরুর বাসিন্দাদের ঈদ করানোর পবিত্র দায়িত্ব নিতে হয় তৃতীয় মেরুর বাসিন্দাদের। ঘটনাটা ফোন করে নয়, নিজের অভিজ্ঞতা হতে নেয়া। গ্যাস ওয়ালা, বিদ্যুৎ ওয়ালা, পানি ওয়ালা, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, ভূমি অফিস, লীগ, দল, পার্টি, মসজিদ, মাদ্রাসা, ইমাম, মুয়াজ্জিন, ইয়াতিমখানা, শ্রমিক, কর্মচারী, গরীব আত্মীয়স্বজন সবার ঈদ পালন নিশ্চিত করার পরের ঘটনা। ঈদের দিন সকাল বেলা। নামাজ মুখী হই না অনেক বছর। অফিসে বসে শীতের সুন্দর সকালটা উপভোগ করছিলাম মনের আনন্দে। শরীর ও মনের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে রোজার মাসটায়। কড়া ব্রেক কষে থামল জীপটা। পুলিশের জীপ। ডানহাতের কর্মটা সপ্তাহখানেক আগেই সম্পন্ন হয়ে গেছে তাদের সাথে। ঈদের সকালে পুলিশ! দমে গেলাম ভেতরে ভেতরে। লম্বা একটা সালাম দিয়ে ওসির সহকারী আমলনামাটা পৌছে দিল। ওসি সাহেব জাকাত দেবেন, ৫০০ পিস শাড়ি দিতে হবে। হিসাব মেলাতে পারলাম না। ওসি জাকাত দেবে তার জন্যে শাড়ি দিতে হবে আমাদের! খুব ঠান্ডা মাথায় জবাবটা দিলাম, ’ঈদের সকালে আমরা জাকাত দেই না, দেই ফেতরা।’ অপমানটা বোধহয় বুঝতে পারেনি মোটা মাথার সেকেন্ড অফিসার। ধর্ম-কর্ম না করলেও ঈদের সকালে এত বড় একটা পাপ করার জন্যে তৈরী ছিলাম না। মুখের উপর না করে দিলাম। অনন্যোপায় হয়ে হাতে পায়ে ধরা শুরু করল। ঘটনার ভেতরও যে অন্য ঘটনা আছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ রইলো না। চমকপ্রদ ঘটনা। সপ্তাহখানেক আগে ৫০ লাখ টাকার ভারতীয় শাড়ি উদ্ধার করা হয়েছিল মেঘনা নদীতে। থানার এসপি, ওসি, সিপাই, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আর সাংসদ মিলে ভাগ করে নেয় আটক মালামাল। ভেবেছিল ব্যাপারটা বেশিদূর গড়াবে না। কিন্তু বাধ সাথে স্থানীয় প্রেস ক্লাব। সাংবাদিকদের বঞ্চিত করা হয়েছে এ চালান হতে। খবর পুলিশের আইজি পর্যন্ত চলে গেছে। সবাই বখরা চাইছে এবং বখরা আজকের মধ্যে পৌছানো না গেলে অনেকের চাকরী নিয়ে টান দেবে। দুই মেরুর জন্যে ঈদ আনন্দের দিন হলেও ৩-ডি মেরুতে এটা শোকের দিন।

একই পথে আসে শহীদ দিবস, আসে বিজয় দিবস, আসে নেতা নেত্রীর জন্ম দিন। মেরুতে মেরুতে আনন্দ হয়, ফুর্তি হয়, দুঃখ হয়। সময়ের প্রবাহে আবার তা ভেসে যায়। কিন্তু তৃতীয় মেরুতে সবকিছু কেমন স্টেশনারি। এখানে ১৫ই আগস্টের মত এক মাসের শোক হয়না, শোক হয় ১২ মাসের, ৩৬৫ দিনের, ২৪ ঘন্টার। পত্রিকায় দেখলাম ৯ই আগস্টকে জাতীয় জ্বালানী নিরাপত্তা দিবস হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। উপলক্ষ এ খাতে মরহুম শেখ মুজিবের অবদান। ক্ষমতার মেরুতে এ নিয়ে হয়ত আনন্দ হবে, বিপরীত মেরুতে বইবে প্রতিবাদের ধূলিঝড়। সে আনন্দ আর ঝড়ের জোয়াল টানতে হবে সেই তৃতীয় মেরুর ‘গরু ছাগলদেরই, নতুন দিবস মানে নতুন চাঁদা, শোকের চাঁদা, আনন্দের চাঁদা, বাংলাদেশে জন্ম নেয়ার চাঁদা।

একজন কমলার গল্প-

লেখালেখিতে যাদের হাত আছে চাইলে উপন্যাস লিখতে পারেন কমলাকে নিয়ে। তার দেখা পেতে একটু কষ্ট করতে হবে এই যা। রাজধানীর সদরঘাট হতে ভোলাগামী লঞ্চ ধরে যেতে হবে তজুমদ্দিন নামক একটা উপজেলায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন এক কোনায় শুয়ে আছে গল্পের নায়িকা কমলা বেগম। শরীরে অজস্র ক্ষতচিহ্ন, চোখে বাধ ভাঙা অশ্রু আর সামনে অনিশ্চয়তার সমুদ্র। একজন কমলার অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে গড়ে উঠা এ কাহিনী লিখতে গেলে পার্শ্বচরিত্রের অভাব হবেনা। খন্ড খন্ড কিছু ঘটনা, বিচ্ছিন্ন কতগুলো চরিত্র এবং কালের প্রবাহ হতে খসে যাওয়া কিছু সময় একত্র করলে তৈরী হবে বিশাল ক্যানভাসের এক গল্প। যেখানে থাকবে ক্ষুধা আর দরিদ্রের সাথে লড়াই করে বেড়ে উঠা এক তরুণীর জীবন যুদ্ধ। গল্পের কোন নায়ক নেই। আছে একাধিক খলনায়ক।

এক বছর আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় কমলা। তারও আগের ঘটনা। প্রতিবেশি অলিউল্লাহর ঘটকালিতে বিয়ে হয় তার। বাকপ্রতিবন্ধী রিকশাচালক মিজানকে ভাগ্য মেনে নিয়ে কমলা শুরু করে নতুন জীবন। কিছুদিন যেতেই বুঝতে পারে বিয়েটা ছিল আসলে প্রতারণা, তাকে ভোগ করার মহাপরিকল্পনার অংশ মাত্র, যার রূপকার সেই অলিউল্লাহ । সুযোগ পেয়ে রাস্তা হতে উঠিয়ে নেয় কমলাকে। অজ্ঞান করে নিয়ে যায় ঢাকা শহরে। ভয় আর প্রলোভনের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় কমলা। ১২০০ টাকায় বাসার গৃহপরিচারিকার কাজটাও যোগাড় হয় অলিউল্লাহর ইশারায়। কমলার শরীর আর তার পরিশ্রমের পুরো টাকাটাই ভোগ করতে থাকে গল্পের খলনায়ক। কিন্তু এক সময় বেঁকে বসে কমলা। অস্বীকার করে পুতুল হয়ে বেচে থাকতে। ফলশ্রুতিতে তার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। কয়েক দফা নির্মম পেটানোর পর পাঁচজনের একটা দলের কাছে বিক্রি করে দেয় কমলাকে। গল্পের ঘটনা প্রবাহ হতে বিদায় নেয় গোলকপুর গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে অলিউল্লাহ। তবে বেশি দিনের জন্যে নয়।

নতুন মালিকরা কমলাকে ঠেলে দেয় দেহব্যবসায়। এখানেও সে বেঁকে বসে। অস্বীকার করে অন্ধকার জীবনের সাথে ফয়সালা করতে। যা ফেরার তাই আবার ফিরে আসে, অকথ্য নির্যাতন। ব্লেড আর ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয় তার শরীর। আশংকাজনক অবস্থায় রাস্তায় ফেলে চম্পট দিতে বাধ্য হয় দালালের দল। নদীতে অনেক পানি গড়িয়ে শেষপর্যন্ত নিজ গ্রামে ফিরে আসতে সক্ষম হয় কমলা। সবাইকে বলে দেয় তার কাহিনী। এবার গণরোষের শিকার হয় গল্পের খলনায়ক অলিউল্লাহ। গণধোলাইয়ে মারাত্মক আহত অলিউল্লাহকে পুলিশ উদ্ধার করে এবং ভর্তি করে দেয় হাসপাতালে। এখান হতে দ্বিতীয়বারের মত হারিয়ে যায় সে।

প্রভাবশালী মহল বলতে একটা মহল আছে বাংলাদেশের শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে। তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর গ্রামও এর ব্যতিক্রম নয়। অলিউল্লার উদ্ধারে এখানেও এগিয়ে আসে এই প্রভাবশালী মহল। এলাকার যুবলীগ নেতা শাহজাবুদ্দিন ও তার দলবল কমলাকে হাসপাতাল হয়ে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ভয় দেখায় মামলা তুলে নেয়ার জন্যে।

এখানেই গল্পের শেষ হতে পারে। কারণ এর পর কমলার ভাগ্য কোনদিকে গড়াবে তার খবর কাউকে রাখতে হয়না। আসলে রাখার দরকারও হয়না। কমলাদের মত হাজার হাজার যুবতী বাংলাদেশের জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও পাড়ায় পাড়ায় অলিউল্লাহ, প্রভাবশালী মহল আর আইনী লোকদের লোভ লালসার শিকার হয়ে নিয়মিত নির্যাতিত, নিষ্পেষিত আর ধর্ষিত হচ্ছে। এসব নিয়েই আমাদের দেশ। দেশকে ভালবাসলে আওয়ামী-বিএনপির মত এগুলোও বোধহয় আমাদের ভালবাসতে শিখতে হবে।