অগ্নিসহকারী

একটা বরফীকৃত ঘর, আলো-পেছল। দেয়াল কত পুরু হবে, পঞ্চাশ ইঞ্চি? এই পুরুকে সে হারাতে পারবে আলেকজান্ডার? তখন মাইকে দৈববাণী —মহান ভয়যোগ্য ঘরে স্বাগত। পৃথিবীতে ফিরে আসতে আপনার যে ঐকান্তিক চেষ্টা, তার পেছনে আমাদের অনবরত শুভকামনা রইল।

মাথা খুলে নামিয়ে রাখার জন্যে একটা টেবিল। তিনটে হ্যাঙার থেকে দুটো আলখাল্লা ঝুলছে। দেয়াল ভ’রে ফোন নাম্বারের শুঁয়োপোকা : আমার কিছু হয়ে গেলে মনীষাকে… অরিজিৎকে… ছোটভাইকে… প্লিজ জানিয়ো তোমরা। চেয়ারে বসলাম — লিওনার্দো। ওমনি চেয়ারের ঠান্ডা শূন্যতায় এসে বসল সুবিনয়। আমার বাবা এক সময় পাগল হয়ে গেছিল, শিউলিফুলের মতো পাগল। ঘুম থেকে উঠেই বলত : এক দুই তিন, সুন্দর দিন। আমার নাম শুভময়।
শুভময়ের ছেলে সুবিনয় হওয়া খুবই সম্ভব।

তোমাকে একটা নাম দিতে চাই, নেবে তো — জিগ্যেস করেছিল এক মেয়েও। যখন ডাক শুনতে চেয়েছি, নামে আপত্তি কেন থাকবে? বুবু, সে বলল। হাসপাতালের কাউন্টারে প্রোজ্জ্বল কালো জিগ্যেস করা মাত্র আমি তক্ষুনি প্রোজ্জ্বল কালোকে চেঁচিয়ে : লিওনার্দো সুবিনয় বুবু। নিজের পুরো নাম আবিষ্কারের জন্যে আমার দরকার হল মাথার টিউমারটা খাটানোর, মানচিত্রের বাইরে থেকে উড়ে এসে হাসপাতালের শীতল নিস্তরঙ্গ দয়া দরকার হল, হায় দইয়া…!

পেরোতে লেগেছি ঘরের পর ঘর, স্তব্ধতার পর শূন্যতা, সাদা মেঝের ফতুর-এ ন্যাপথলিনের ছাদ। দাঁড়িয়েছি মাঠঘরের চৌকো পৃথিবীতে; প্রতিদ্বন্দ্বী এক হলুদ বাইসন, হাঁমুখের ঘন আঠালো রশ্মি থেকে তার অস্থিজিভ বেরিয়ে আসছে। হাড়ের ওপর উঠে শুয়ে পড়ে আমার পেনসিলস্কেচ, বাইসন ব্যাঙ-জিভে তাকে মুখজঠরে টেনে নেয়। চোখের মণি পুড়ে যাচ্ছে এত আলোআগুন, নার্সের জীবাণুমুক্ত গলা শুনতে পাই, “চেষ্টা করুন ঘুমিয়ে পড়তে”। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম কনডেমড সেলে এক মরহুম নিদ্রা চাইছে, সেতারে দক্ষিণী রাগ…

তোকে ঘুম পাড়ানোর সময়েও হংসধ্বনি চালিয়ে দিতাম। একদিন না বাজলে মাঝঘুমে কেঁদে উঠে বসতিস, মনে আছে? আজ সে আমাকেই সুপ্তি দেওয়ার অজুহাত, শুধু একটু পরপর অজুহাতে পক্ষাঘাত লেগে এসএলআর থেকে নাগাড়ে গুলিধারা। ভেড়ির শিয়রবর্তী চাঁদের উদ্গম হলে সারস যেভাবে মাটি থেকে ডানা তোলে — করোটি সূক্ষ্মভাবে উড়ে গেছে। পাখির স্তনের চেয়ে লাজুক ঘিলু নগ্ন দাঁড়িয়ে, লাল পুরুষাঙ্গআলো তার কমলালেবু-কোষ একটু ক’রে মুখে পুরছে। আর বিশ্রামে যাচ্ছে যখন শুক্রপাতক্লান্ত কিরণ, ওই হংসধ্বনি। পরপর গানে ও ধর্ষণে এভাবে কার্তুজের অপব্যয় … একটা বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা আমি একাই নষ্ট ক’রে গেলাম!

কেঁচোমুখ দিয়ে মল উগরে দেবে বাইসন। রোগি শায়িত; অজ্ঞান কি? না। বন্দী কি? হ্যাঁ। বন্দিত্বের মধ্যেও আপাত-মুক্ত? হ্যাঁ। দরজাপ্রতিম কোনও অস্পষ্টতায় হাত ছোঁয়ালাম। ঘরের কুহেলি থেকে বাইরের কুয়াশায়, ঘরের বরফ থেকে বাইরের নভেম্বরে আবার অন্তহীন সাদা পথ আর মাথার যৌনাঙ্গ থেকে অদ্ভুত রক্ত চুঁইয়ে পড়া। খুলির অন্তর্বাস ফেলে আসছি না তো ভেবে পেছনে তাকাই, এমআরআই ফুটে থাকতে দেখি দরজায়; সে মৃ হলে ত্যু তাহলে পাশের হলুদ ঘরে ফালি করে কাটা ফুলকির স্তূপ — আমার শেষ যজ্ঞে অগ্নিসহকারী…

3 thoughts on “অগ্নিসহকারী

  1. অসাধারণ কথা কাব্য। লিখা গুলোন শব্দনীড়ের আর্কাইভকে সমৃদ্ধ করবে নিশ্চিত। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. অপূর্ব কাব্য কথা লিখেছেন 

    শুভকামনা রইল নিত্য 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।