দেবী ও কবি ১০

29855

নিরাকার দহনে জ্বলছে কবি, নীল জলের উপর টলমলে প্রতিচ্ছবি
শত সহস্র প্রশ্নের তোড়ে জর্জরিত বিবেকের সাথে করছে অনর্গল বোঝাপড়া
দেবীর মুখোমুখি হতে আজ তার বড্ড দ্বিধা! জীবনের আর যৌবনের ঊর্ধ্বে যে দাবী
কবির সাধ্যের সীমানায় সেই আশা শক্তি নিতান্তই অপ্রতুল…

ফিরে যাবার সমস্ত পথ রুদ্ধ ! দেবী ছাড়া আগামীর পথ অনিশ্চিত!!
কবি জানে, জানে বলেই চলছে মনের সাথে মনের যুদ্ধ
দুস্তর মরুর খরা মাথায় নিয়ে ক্ষরণ সুখের নেশায় বুদ হয়ে আছে সমস্ত চেতনা
দেবী জানেনা কবি তার সমগ্র সত্ত্বায় ভোগ করে চলছে দহন গন্দমের এই যন্ত্রণা।…

দেবী আজ সেজেছে ইচ্ছে মত। বর্ষা আঁকা সফেদ শাড়ীতে বিশুদ্ধ রূপ পদ্মের মত ফুটে উঠেছে।
হাওয়ায় উড়ছে খোলা চুল, শাড়ীর আঁচল, স্নিগ্ধ সুবাস
চোখে চোখ রাখতে পারছেনা কবি

– কি হলো তোমার, এমন কি দেখছো কবি?

– দেবী, এত জল এত বৃষ্টি এত প্রবণ তবু কেন মেটেনা তৃষা! বলতে পারো ?

– কি হয়েছে, এমন কেন বলছো?
-তোমায় আজ ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে!

– তুমি কিছু লুকোচ্ছো কবি
আমি কিছু লুকোচ্ছি কিনা জানিনা। তবে এই জানি যে লুকানো মত গুপ্ত আমার নাই
আমার সর্বত্র তুমি প্রবাহিত জোয়ারের মত

– তবে এই যে চাপ, অবয়ব, শঙ্কা

– জানিনা দেবী, আমার হারাতে মন চায়

-তুমি হারালে আমাকে কে খুঁজে দেবে জীবনের পথ
সবুজের বুক থেকে বিশুদ্ধ প্রাণ নিয়ে কে আনবে পবিত্র চুম্বন!
তুমি হারালে, সূর্যের সোনা ঝরা উত্তাপে কে জড়াবে আমার বুক, মন

– দেবী, জানো এত সুখ কেন ক্ষরণে, দহনে

– ভালোবাসা কবি! যার হাত ধরে আমায় তুমি জীবন শিখালে
জগতের মোহ, মৌলিক দাবীর মুখোমুখি দাঁড় করালে

-তোমার অনাবাদী জমিনে অশান্তির বৃক্ষ রোপণ করেছি, আমায় ক্ষমা করো দেবী

– না কবি
তুমি বপন করেছো অন্তর্যামীর বিশুদ্ধ ভালোবাসা
আমাকে আমার ভেতর জন্ম দিয়েছো
আজ আমি আমাকে সন্ধান করি, খনন করি, উজাড় করি
জীবনের অতলান্তে নির্জীব পড়ে থাকা জীবনকে ভোগ করি
আলোর মুখে দাড়িয়ে আত্মার নিগূঢ় অন্ধকার নিধন করি,
আমি তোমার পরম প্রেমের অধিকার!

– দেবী ,জীবন ভুক পথিক আমি
অসীমের ঘূর্ণিপাকে পথভুলা দিকভ্রান্ত মানুষ
দৃষ্টির অবক্ষয়ে ঝাপসা হয়ে আসা গন্তব্যে পৌছার সংশয়ী নাবিক!
-তোমার বুকে চুমু দিয়ে দেখেছি নিষিক্ত স্বাদে প্রজ্বলিত স্বপ্ন
সুখের নিবিড় বাসনায় প্রবাহিত স্পন্দন
চোখের পাতায় চুমু দিয়ে জেনেছি জগতের কক্ষপথ পদক্ষিন করা স্বপ্নের ভাষা
ভালোবাসার অদম্য আকর্ষণে মিশে একাকার করেছি আমার রমণীয়
প্রত্যাশা।

© ২০১৩ সালে প্রকাশিত “দেবী ও কবি” কাব্যগ্রন্থ থেকে।

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

1 thought on “দেবী ও কবি ১০

  1. চোখের পাতায় চুমু দিয়ে জেনেছি জগতের কক্ষপথ পদক্ষিন করা স্বপ্নের ভাষা
    ভালোবাসার অদম্য আকর্ষণে মিশে একাকার করেছি আমার রমণীয় প্রত্যাশা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।