(অণুগল্প)
রঙীন সোয়েটার-টুপি পরা বাচ্চাগুলো বাবা-মায়ের হাত ধরে হাসতে হাসতে মাঠে ঘুরছে। রঙীন ছবির বইগুলো পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখছে, বই কিনছে। গেটের বাইরে থেকেই এঁটো প্লেটগুলো ধুতে ধুতে হাঁ করে দেখছে পুষ্প। বইমেলার বাইরে বাবা ঘুঘনি বিক্রি করছে, পুষ্পকে সাথে এনেছে বাসন ধোয়ার জন্য। কদিন হলো শীতটা ভালোই পড়েছে। ছেঁড়া একটা সোয়েটার ছিল, সেটাও আর গায়ে ঢোকেনা পুষ্পর। প্লেটকটা বাবার কাছে দিয়ে ভুট্টা পোড়াচ্ছে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আগুনের তাতে বেশ একটু আরাম হচ্ছে। কত লোক মেলায় ঢুকছে বেরোচ্ছে। ইস্ ঐ লাল শাড়ি পরা বৌটার টাকার ব্যাগটা তো পড়ে গেল, খেয়ালও করলো না। পুষ্প ছুটে গিয়ে ব্যাগটা কুড়িয়ে ফেরত দিতে যায়। যাহ্ ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল তো বৌটা। হয়তো গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। ব্যাগটা তো কুড়িয়ে নিল, এবার কি করবে !!!!!
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
এক ছুটে এগিয়ে গেল পুষ্প। এবার তিন চারটে রাস্তা। পুষ্প আর লাল শাড়ি পরা কাওকে দেখতে পেল না। ফিরে এল বাবার কাছে। সব শুনে পুষ্পর বাবা খরিদ্দারকে ঘুগনি দিতে দিতে বাঁ হাতে মানিব্যাগটাকে নীচে লুকিয়ে রাখল। কিছু বলল না।
পুষ্প আরও কটা খাওয়া প্লেট নিয়ে ধুতে গেল। পাশেই ছিল পুলিশকাকু। ক’দিন ধরে দেখছে। তাই জিজ্ঞেস করল – পুলিশকাকু। পুলিশকাকু। কারো হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ যদি কুড়িয়ে পাই তাহলে তোমরা তাকে ফেরত দিতে পারবে?
– নিশ্চয়। এটাই তো আমাদের কাজ। কদিন ধরে তোকে দেখছি। ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডা জলে তোর খুব কষ্ট হচ্ছে? তাই না রে?
কোন উত্তর না দিয়ে পুষ্প এক ছুটে ঘুগনি দোকানে চলে এল। বাবাকে না বলে নিচে থেকে মানিব্যাগটা তুলে নিল।
আবার চলে আসে পুলিশকাকুর কাছে। মানিব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল – ওই সামনে একজনের কাছে থেকে পড়ে গিয়েছিল। আমি কুড়িয়েছি একটু আগে।
পুষ্পর নাম জেনে নেয় পুলিশকাকু।
পুষ্প মেলার লোকজনের পাশ কাটিয়ে আবার বাসন মাজায় মন দেয়।
আরও কিছুক্ষণ পরে বইমেলার মাইকে পুষ্পর নাম শুনে ওর বাবা খরিদ্দার সামলাতে সামলাতে অবাক হয়। পুষ্পকে জিজ্ঞেস করে – কি রে তোর নাম ডাকছে কেন? তোকে বলেছিলাম চুপচাপ থাকতে। কারো কিছু নিয়েছিস নাকি?
পুষ্প কিছু বলার আগে পুলিশকাকু চলে আসে। বলে – আয় পুষ্প, আমার সঙ্গে আয়। স্টোভ বন্ধ করে আপনিও আসুন।
ইউ বি আই অডিটোরিয়ামে অনেক লোক দেখে ওরা ঘাবড়ে যায়।
একজন বলছেন – এই হল পুষ্প। ফুলের মত। সবে পড়া শিখছে। বইমেলার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার প্রসার ঘটানো। পুষ্পর থেকে বড় শিক্ষা আর কি হতে পারে?
সেই লাল শাড়ি পরা বৌটা পুষ্পর হাত ধরে বলল – সবার সামনে বলছি, আজ থেকে পুষ্পর পড়ার সমস্ত দায়িত্ব আমার।
অডিটোরিয়ামের হাততালির মাঝে পুষ্পর বাবার চোখে জল এসে গেল।
জীবন অণুগল্পটি অসাধারণ হয়েছে। অভিনন্দন প্রিয় লিখক।
ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন।
পুস্পার জন্য মনটা কেমন করে উঠল। ভাল লেখা।
ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন।
পুষ্পর বাবার চোখের মতো আমার চোখেও জল এসে গেল।
অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন।