যা দেখছি সব বলে দিবঃ চাচার কবর কই চাচী কান্দে কই-১

যা দেখছি সব বলে দিব
চাচার কবর কই চাচী কান্দে কই
French-Revolution
………..
সারাদেশে যারা দেখে, যারা বুঝে, তারা বলছেন আমাদের দেশের যেই রাজনৈতিক কালচার আছে তাতে পরিবর্ধন, পরিমার্জন করা দরকার। যাকে বলা হইতাছে সংস্কার। রাজনৈতিক সংস্কার হতে হলে রাজনৈতিক দলগুলির মাঝে এই একটা বিষয়ে একমত হতে হইবে যে, কিছু বিষয়ে আমরা সকলে একমত তারপর যার যার মতাদর্শে দল চলবে পরে যে দায়িত্ব পাবে সে রাস্ট্র পরিচালনা করবে।

একটা সাধারণ কথা বলি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সবাই একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। যেমন স্কুলে বিভিন্ন টেস্ট, মাসিক, ত্রৈমাসিক, বার্ষিক পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি ব্যবস্থায় বোর্ডের মাধ্যমে পরীক্ষার অংশগ্রহণ করে যে যার মেধা ও পরিশ্রমের ভিত্তিতে রেজাল্ট নিয়ে কর্মজীবনে ডুকতে হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র প্রনয়ন, উত্তর পত্র দেখা, ফলাফল প্রকাশ সব কিছু একটা নির্দিষ্ট নিয়মের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। নিশ্চয়ই এই পদ্ধতি কি হবে তা নির্ণয় করা ছাত্র-ছাত্রীদের কাজ নয়। অটোপাশ একটা আপৎকালিন সিস্টেম। এটাকে বিবেচনায় আনা যাবে না যদিও এর মাধ্যমে পাশ করা ছাত্র ছাত্রীদের পাশ হিসাবেই বিবেচনায় আনতে হবে।

এখন এই সাধারণ আলোচনার পর আমি কিছু প্রশ্ন উদ্ভব করতে চাই। এই পরীক্ষার সিস্টেম সেটা কি ছাত্ররা নিজেরা নির্ধারণ করবে? নিশ্চয়ই না। সিস্টেম ডেভেলপ করতে হয় এক্সপার্ট দিয়ে। যদি কখনও সিস্টেমের কিছু পরিবর্তন করতে হয় তবে দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যেতে হয়।

এতক্ষণ আমি শুধু এইটা বলতে চাইছি ছাত্র-ছাত্রীরা কেবল একটা সিস্টেমের ভিতর দিয়ে নিজেকে প্রমানিত করে দেশ ও রাস্ট্রের সরকারি বেসরকারি নানামুখী কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবে এবং নিজ যোগ্যতা অনুসারে পদ পদবী দায়িত্ব পাবে।

এখন সেদিকে যাওয়ার চেষ্টা করি যা বলতে চাইছি।

ইতিহাসের প্রায় সকল পর্যায়েই একথা প্রতিষ্ঠিত ছিল প্রজা চলবে রাজার অধীনে। রাজা নিজের ইচ্ছা মত কতগুলি নীতি নির্ধারণ করে দিবে সেইভাবেই প্রজাদের চলতে হবে। যারা যেভাবে ইচ্ছা চলবে তাকে কোন নিয়মে রাখা যাবে না। তার ভোগ বিলাসের জন্য প্রজাদের চাঁদা দিতে হবে যার রাষ্ট্রীয় সমার্থক শব্দ কর। এই কর আদায় করে রাজা তার বিলাসবহুল জীবন চালাইতে পারবে, ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে নিতে আশেপাশের অঞ্চলগুলি যুদ্ধ বিগ্রহ ও নানামুখী কৌশলে দখলে নিয়ে সাম্রাজ্য গড়তে ও বাড়াতে পারবেন। এই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য, কর আদায় করার জন্য সৈন্য সামন্ত বাহিনী, নানা ধরনের কেরানি কর্মচারী লালন পালন করছে। এই সব কর্মচারীরা রাজার কাছাকাছি গিয়ে নিজেরাও ভোগবিলাসী জীবন যাপন করেছে, প্রজারা এদের রসদ যোগাইয়াছি । কিন্তু এই শ্রেণীটি রাজা নন, রাজা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। রাজা যা চাইবেন তাই সকলে মিলে বাস্তবায়ন করে যাবে। শুধু তাই না, অন্য কে রাজা হবার সুযোগ পাইবে এটা চলবে বংশানুক্রমিকভাবে। রাজার পোলা হবে রাজা। কখনও রাজার বড় ছেলে হবে রাজা, কোথাও বা অন্যকোন ব্যবস্থা। এই জন্য এই উত্তরাধিকারীদের মাঝে চলে নানা গোপন কারসাজি, পারিবারিক কুটনীতি, কূটকৌশল । এখানে অন্য কোন কথা নেই, সারাজীবন রাজা রাজাই থাকবে কেবল মৃত্যু হইলে বা নিহত বা বন্ধী হলে বা দেশ থেকে বিতাড়িত হইলে ক্ষমতার পালাবদল হয়। এটাই রাজতন্ত্র। সারা পৃথিবীতে ছিল সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও রাজতন্ত্র। এমন কি এখনও কোথাও কোথাও রাজতন্ত্র রয়ে গেছে।

nap
মানব জাতির ইতিহাসের এই সবেমাত্র কয়েক শত বছর আগে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের এক ভয়াবহ দাবানল সৃষ্টি হয়। প্রজারা আর প্রজা হয়ে থাকতে চায়নি। ১৭২৯ সালে ফ্রান্সে ঘটে যায় এক ব্যাপক উলট পালট। এই উলট পালটের ব্যাপারটার রাজনৈতিক টার্ম হইতাছে বিপ্লব। ফ্রান্সের সেই উত্তাল সময়ের ইতিহাস উলট পালট করা বিপ্লবকে নাম দেয়া হয়েছে ফরাসী বিপ্লব। সারা পৃথিবীতে অনেক ধর্মীয় পরিবর্তন এসেছে, অনেক যুদ্ধ, অনেক রক্তপাত, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, জুমুল চলেছে পৃথিবীর মানুষের উপর, চলেছে নানা প্রতিবাদও। সব কিছুর মুল বিষয় এই ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন ও অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ। আধিপত্য বিস্তার। ভোগবিলাসী জীবন। শৈল্পিক কারুকাজে প্রাসাদ, মিনার নির্মাণ, রাণীর সৌন্দর্য স্পৃহা, স্বর্ণ, হীরা মতির সুনিপুণ কারুকার্যময় অলংকারের পিছনে চলে গেছে বহু অর্থ যার জোগান দিতে হয়েছে প্রজাদের। কিন্তু ফরাসি বিপ্লব কেবল প্রজাদের এনে দিয়েছে নিজের শাসন নিজে করার অধিকার। প্রায় একই সময়ে ঘটে যাওয়া আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র ইত্যাদি পৃথিবীতে এনে দিয়াছে রাজতন্ত্রের বিপরীতে প্রজাতন্ত্রের ধারা। আর আস্তে আস্তে ডেভলব করেছে এক সুমহান ব্যবস্থা গণতন্ত্র।

সেই ইতিহাসের বিস্তারিত বর্ণনা৷ ও বিশ্লেষণ আমি এখানে দিতে চাইছি না কারণ আমি বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে চাইছিলাম। এছাড়া ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকার গনতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়গুলো আলোচনা করলে অবশই অথেনটিক সোর্স থেকে আলেচনা করতে হবে, নানা বইপত্র রেফারেন্স দিতে হবে। কেউ আগ্রহী হলে খোঁজে নিতে পারেন সেইসব ইতিহাসের আাদ্যপান্ত।

Abraham_Lincoln_O-77_matte_collodion_print

আমি কেবল ফরাসি বিপ্লব পরবর্তী সময়ের পরিবর্তন পৃথিবীর কিছু চিত্র উল্লেখ করতে চাই। ফরাসি বিপ্লবের পূর্ববর্তী সময়ে পৃথিবীর নেতৃত্ব দিয়াছে ইসলামি ভাবধারার রাজতন্ত, মুসলিম সাম্রজ্য। ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে শাসন করত অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতানরা। সুলতানী রাজত্বের অবসান হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে। ফরাসি বিপ্লবের পর সেই সাম্রাজ্যের পতন হয় নানা যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার মাধ্যমে। সাম্রাজ্যগুলি ভেঙে দেশে দেশে বিভক্ত হয়। প্রজাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে একেক দেশে। মানুষের রাজনৈতিক নিপীড়নে মুক্তির কারণে জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যাপক চর্চা শুরু হয়। এমন কি ধর্মীয় প্রভাব থেকেও তারা আলাদা হয়ে যেতে থাকে। তাদের মাঝে জন্ম নিতে থাকে ধর্মনিরপেক্ষ ধারণা। তারা রষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা করে নেয়। ফলে মানুষের ধর্মীয় বিভেদগুলি ব্যক্তি পর্যায়ে নেমে আসে। রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা চলে আসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে। ফলে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হয়। মানুষ এগিয়ে যায়। রাষ্ট্র অনেক ক্ষমতাবান হয়। কিন্ত গরীব প্রজাদের ভাগ্য থেকে জুলুম নির্যাতন মুক্ত হয়নি। মানবতার মুক্তিকামী মানুষের মাঝে আবার শুরু স্বাধীনতার স্পৃহা। আর একটি বিপ্লব সংগঠিত হয় কমুনিষ্ট বিপ্লব। ফরাসি বিপ্ববের পরবর্তীতে সংগঠিত এই বিপ্লবের মাধ্যমে ইউরোপজুড়ে আবার সাম্রাজ্যের সুচনা হয়। ইউরোপের অনেকগুলি রাষ্ট্র যুক্ত হয়ে গঠিত হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন।

440px-Battle_of_Mill_Springs

অন্যদিকে আমেরিকায় কৃশাঙ্গ ও শেতাঙ্গ বিরোধের কারণে গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে আব্রাহাম লিংকনের গনতন্ত্রের ধারণা। নানা রাজতন্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীতে নেতৃত্বদানকারী শাসন ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা অর্জনকারী বৃটিশ সাম্রাজ্যের অবসান হওয়া রাষ্ট্র ব্রিটেনের রাজাকে প্রতীক হিসাবে রেখে এক ধরণের সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হয়।

ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে এই বিপ্লবের মুল ধারনা সাম্য, স্বাধীকার, নারী স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মানবতাবাদ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য নিয়া দুই ধারার চিন্তা চেতনায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্যদিকে আমেরিকা, বৃটেন প্রভৃতি ইউরোপীয় রাষ্ট।

পরবর্তী সময়গুলিতে এই দুইটি মতবাদের প্রভাবেই সারা পৃথিবী চলতে থাকে।

চলবে