কালেমা লিখা, তলোয়ার এবং খেজুর গাছ খচিত পতাকা দেয়ালে সাঁটানো। সবাই ভক্তি শ্রদ্ধা করে পতাকাকে এইটাই নিয়ম। কিন্তু এদের মত এমন করে ঘরে সাঁটানো রাখে না। সরকার যা বলে তা সৌদি জনগণ শুনে। কারণ জনগণের চাহিদা সরকার মিটিয়ে থাকে। আগে রাজা মারা গেলে রাজার বয়সে ছোট ভাই রাজা হয়ে ক্ষমতা প্রদান হতেন। এখন রাজতন্ত্রের এইদেশে রাজা মরলে উনার ছেলেই রাজা হবে। আমাদের দেশের রাজনীতির হাওয়া লেগেছে কিছুটা। বুঝে নিবেন, বেশী বলা যাবে না। বিখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাশোগী বেশী বলতে গিয়ে লাশও পায়নি। পালিয়ে থাকা খাশোগীকে তুরস্কে হত্যা করে লাশ পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এমন কি নিজের পরিবারের অনেক জনকে জেল জুলুম দিয়ে এবং দুই/একজনকে মেরে সিংহাসনে বসার পথ পরিস্কার এখন রাজার বড় ছেলের। তবে জনগণের এইসব নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। সিংহাসনে কে বসলো তা নিয়ে তাদের কোন কিছু আসে যায় না। দুর্নীতি দমনের নামে রাজার ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ পরিবার লোকজন কিংবা সন্দেহভাজন বড় বড় কর্মকর্তাকে জেল জুলুম দিয়ে প্রচণ্ড হেনস্থা করা হয়েছে। তবে বাদশাহ ফয়সাল, খালেদ কিংবা আবদুল্লাহর শাসন আমলে বাহিরের লোক সবদিকে ভালো ছিল। ইকামার ফিস কম ছিল, কাজের চাহিদা ছিল। তাদের আমলে শুধু ধর্মীয় কঠোর বিধান মেনে চলতে হয়েছে। সীমান্তবর্তী সব দেশের সাথে মোটামুটি সদ্ভাব ছিল। আর আজ ইয়েমেন ও সিরীয়া যুদ্ধে জড়িত সৌদি। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শিয়া এবং সুন্নি মতবাদ অথচ উভয় মুসলিম। আর মুসলিম হয়ে শিয়া সুন্নির প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত ইরান এবং সৌদি। হত্যা করছে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ কে। ইরান শিয়াদের দেশ আর সৌদি সুন্নি। ফিলিস্তিনে হাজারও মুসলিম হত্যা করছে ঈজরাইল নামক সার্বভৌমত্বহীন একটা ইহুদী রাষ্ট্র। অথচ মুসলিমদের তীর্থস্থান চুপ। কাতারের সাথে চলছে অর্থনৈতিক অবরোধ। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহারাইন কুয়েত এবং মিশর মিলে কাতারকে করে এক ঘরে। আর তখন তুরস্ক এগিয়ে আসে কাতারের পাশে। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিস যেমন রান্না ঘর হতে বাথরুম পর্যন্ত, এমনকি জীবন ধারণের যা প্রয়োজন তা সরবরাহ নিশ্চিত করে তুরস্ক। এই অপরিপক্ব রেষারেষিতে কাতার হল স্বাবলম্বী। দুর্ভিক্ষ অনাহার এবং বোমার আঘাতে রোজ রোজ সিরীয়া এবং ইয়েমেনে শিশু মহিলা পুরুষ অকাতরে মরতেছে। মুলত ইগো ক্ষমতার বলয় বিস্তারে আমেরিকার পদলেহনে এইসব পাপে লিপ্ত মক্কা মদিনার মালিক।
অথচ আমরা কাঁদি রোহিঙ্গা মুসলিম বলে। আমরা কাঁদি দিল্লী এবং কাশ্মীরের মানুষ মুসলিম বলে। আর আমাদের দেশের শাসকের চেয়ার পাকা পোক্ত হয় দিল্লীর অমুসলিমদের ইশারায়। ওরে বাবা! কি আজব পলিট্রিক্স। মধ্যপাচ্যে ক্ষমতার পালা বদল হয় আমেরিকা ইচ্ছাতে। পৃথিবীর সবচেয়ে শৃঙ্খলাপূর্ণ রেশন ব্যবস্থা ছিল ইরাকে। সেটা আজ অতীত আমেরিকার চালে। পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী টিভি চ্যানেল ইহুদীদের। সবচেয়ে বড় প্রসাধনী কোম্পানি ইহুদীদের। সবচেয়ে বড় পানীয় কোম্পানি ইহুদীদের। অথচ কুয়েত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী টাকার মানধারী মুসলিম রাষ্ট্র। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী তেল উত্তোলন হয় সৌদিতে। সৌদি আরব, বাহারাইন, আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত এবং কাতার ইচ্ছে করলে পুরা দুনিয়ায় নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে দাঁড়াতে পারে। অথচ তারা নিজের পাশের দেশে যুদ্ধে লিপ্ত। এইসব দেশ একজোট হলে ফিলিস্তিন একের একের জায়গা হারাতে হতো না। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেত মুসলিম জনগণ। আর এখন যাযাবর একটি জাতি গলা চেপে ধরেছে মুসলমানদের। এর পিছনে আছে এইসব রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ইন্ধন। একদিনে এই ঈসরাইল দানবে পরিনত হয়নি। আজকে তারা শিক্ষা দীক্ষা, জ্ঞান গরিমায়, বিজ্ঞান এবং আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত এক বিশাল মহীরুহ। পুরা দুনিয়ার ইহুদী ঈসরাইলকে টাকা পয়সা দিয়ে প্রথম হতে সাহায্য করেছে। স্কুল কলেজ গড়ে তুলেছে যাতে তারা শিক্ষিত হয়ে দেশ গঠনে মনোযোগ দেয়। ঈসরাইলের সেনাবাহিনীতে নারীরাও পৃথিবীর সেরা সৈনিক। রাস্তা ঘাট এবং আধুনিক স্থাপত্য ও গবেষণা দুনিয়ার মানুষকে অবাক করবে। ইয়েমেন এবং সিরীয়ায় যুদ্ধের কারণে শত শত শিশু দুধের অভাবে মরছে। অবরোধ চলছে ইয়েমেন সিরীয়া ইরান কাতারে এই সৌদি আরবের তত্বাবধানে। আমি আপনি কাশ্মীর কিংবা রোহিঙ্গা নিয়ে চোখের জল হাস্যকর তেমনি মুসলিমদের রক্তে স্নান করা সৌদি কালেমা খচিত পতাকা দেয়ালে সাঁটানোও হাস্যকর। ছোট ছোট শিশু শিয়া নয়, সুন্নি নয়, ইহুদী কিংবা মুসলিম নয়। কাশ্মীর রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিন তোমরা মানব সন্তান। প্রতিবাদ হোক লাল রক্তের সাগরে টেউ বন্ধে। প্রতিবাদ হোক গরিব মিসকিন ও ভূমিহীন মানব পাচারের। বিশ্ব হোক এক পাসপোর্টের। বিচার হোক যারা বাংলাদেশের পাসপোর্টকে কলুষিত করে মানহীন করছে।
ফকির শাহ দেওয়ানিয়া হতে বাহির হয়। দুপুর একটার উপরে বাজে আমি মনে করেছি ভাত খেতে যাবে ফকির শাহ। তা না গিয়ে পানির পাইপ হাতে নিয়ে দুর্বা ঘাসে পানি দিচ্ছে। দেয়ালের পাশে একটা আঙ্গুর এবং একটা ডালিম গাছ আছে। রৌদে আঙ্গুর গাছের পাতা মরে গিয়েছে। কয়েকটা ডালিম আছে গাছে। ফকির শাহ গাছগুলিতে পানি দিয়ে দেয়। খেইমা (তাবু) যেতেই আমি বলি ভাই চলো খেতে যাই। ফকির শাহ স্মিত মুখ করে। এটাও আড্ডাখানা তবে বাড়তি হলো হুক্কা পানের জায়গা। বার-বি কিউ করার সরঞ্জামও পড়ে আছে। এরা মাছ মাংস পুড়ে খায়। গভীর মরুভূমি হতে পাখি শিকার করে পুড়ে খায়। গরম কালে খুবই কম দিনে আড্ডা দেয়। রাতভর চলে পরিবার নিয়ে আড্ডাবাজি আর শুক্রবার আসলেতো রাস্তা ঘাট, খাওয়ার হোটেল, এটিএম বুথ থাকে জ্যামে পরিপূর্ণ। তবে করোনায় সব ওলোট পালট করেছে দিয়েছে। তিনশত জনের উপরে বাংলাদেশী মারা গিয়েছে। তের জুলাই পর্যন্ত করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে দুই লাখ তেত্রিশ হাজার তিনশত ঊনষাট জন। সর্বমোট মারা গিয়েছে দুই হাজার দুইশত বাইশ জন (বাহিরের লোকসহ)। আক্রান্তের দিক থেকে সৌদি আরব চৌদ্দ নম্বরে। এক নম্বরে আমেরিকা, একশ তিরাশি নম্বরে (সব শেষ) পাপুয়া নিউ গিনি ও ওয়েস্টিন সাহারা। প্রতি গরম কালে তিন মাস সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রীষ্মকাল এর ছুটি থাকে। এর ফলে সৌদিয়ানদের বেড়ানো বেড়ে যেত। বেড়ে যেত ব্যবসা বাণিজ্য কমে যেত অফিস আদালতের কাজ।
(চলবে)
জীবন কণ্টাকীর্ণ। বিশেষ করে প্রবাস জীবন।
আপনার আজকের পর্বে আন্তর্জাতিক কিছু বিষয়ে জানলাম। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
অনেক ভাল লেখেছেন মহী দা
চলুক।
বেশ তথাসমৃদ্ধ লেখা। চমৎকার রাজনৈতিক বিশ্লেষ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে।
সৌদি আরবের নিয়মনীতি আগে যা জানা ছিল, আপনার পোস্ট পড়ে আরও অনেককিছু জানা হলো। সাথে আন্তর্জাতিক বিষয়েও জানলাম। জেনে খুব ভালো লাগলো দাদা।
খুব ধৈর্য ধরে এরকম লেখা শব্দনীড়ে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি।