প্রিয় সাহেব,
জীবনের এই সংক্ষিপ্ত পথে
যদি হাতে হাত রেখে চলতে যাই
প্রকৃতির নিরাময় যোগ্য নিয়ম দিয়েই
পরিশুদ্ধ কোরো এই মসৃন পথ।
যদি ভুল করে কোন ভুল হয়ে যায়
নিরাপদ সময় নিয়ে বুঝিয়ে দিও…
আমাদের প্রসন্ন সকালটা যেন
শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে’ শত শুভ্রতায়
বাতায়ন ধরে রেখ কোমল অন্তর।
দেয়ালের ঝুলন্ত ঘড়ির দিকে
তাকিয়ে যেন চমকে যাই
কিভাবে সূর্য ঢলে পড়লো পশ্চিম দিগন্তে
আমাদের রঙিন দিনগুলো
যেন গোধূলির বিকেল হয়
সাত রঙা আলোয় সন্ধ্যা
শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে জমা পড়ে হৃদয়ের তল্লাটে।
প্রিয় সাহেব,
আমাদের এই অন্তসারশূন্য জীবনে
যে পরিণত দীপ জ্বলে উঠবে
তা যেন পূর্ণমান চাঁদ দেখেও চমকে যায়
আমি আর আপনি
হয়তো ফুলের বাগানের শিশির হতে
পারবোনা কিন্তু একটি বাগান হতে পারি
জীবন বিহঙ্গের পাখায়ডানা ঝাপ্টে
না চললেও চলতে পারি যেন
আমাদের পবিত্রতায় আমাদের অস্তিত্বের
সে বাগানে যেন সদা ফুল ফোটে
আমি যদি প্রতিদিন তার থেকে
একটি করেও ফুল হাতে পাই গুজিয়ে দিও খোঁপায়।
প্রিয় সাহেব মানুষের চাহিদা
দেখেছো নিশ্চয়ই আমার তেমন
কোনো চাহিদা নেই।
বেশি কিছু প্রয়োজন নেই
অস্তিত্বের এই টিকে থাকার লড়াইয়ের
সাথী হইও’ প্রতিদিন প্রতিটি পদক্ষেপ।
আমি আপনার কাছে
আসমান ছোঁয়া রঙধনু এনে দিতে বলবো না
ক্ষুদ্র আশাগুলো ক্ষুদ্র চাওয়াগুলো
যেন আমার অধীনস্ত কোরো।
প্রথম প্রহরের চায়ের কাপটা
যেন ঘুম থেকে ডেকে তুলে হাতে দিতে পারি
নিজেদের বোঝাপড়াগুলো যেন
আকুল ব্যগ্রতায় স্পন্দন কেঁপে না উঠে
জানেন’তো সাহেব
আমি একটু বেশিই অভিমানী
তোমার অভিমানে যেন পাথর না হই
সেদিকেও নজর টা দিও
ভুল করে যদি কোন ভুল হয় শুদ্ধ করে নিও
আমাদের এই বেলা অবেলার পথের বাঁকে
ফেলে আসা অতীত যেন আজন্ম ঢেকে যায়
তোমার মসৃন স্পর্শে।
অন্তরের বাঁধনটা যেন মজবুত হয়
কোন মজবুরি আঘাতে যেন ছিঁড়ে না যায়
অস্তিত্বের এই টানাপোড়েন
যেন আলোয় ঢেকে যায় সেদিকেও দিও নজর।
আমি যেন হাজার জনমের ইচ্ছে
পূরণে এই একজনমে আসি
খুব কঠিন কোন ইচ্ছে নয়
ক্ষুদ্র ভাবনাগুলো যেন মুক্ত আকাশে
উড়িয়ে দিতে পারি
যদি খুব করে স্বাধীনতা দাও
স্বাধীনতা দিলে স্বাধীনতার ভাঙ্গন আসবেনা
এই কথা দিতে পারি।
যেন চাঁদের রাত্রিতে একসাথে বসে
আকাশের নক্ষত্রের জগৎ থেকে
ছুটে চলা ফ্লাইং ষ্টারগুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে পারি।
জানেন তো সাহেব
ছোট বেলায় মা’র মুখে শুনেছি
চাঁদের বুকে’ যে কলঙ্ক দেখা যায়
তা একটি চাঁদের বুড়ি;
চাঁদের বুড়ি সুতো কেটে পৃথিবীতে
পাঠিয়ে দেয়
আর তা আমরা সকালের
শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে পড়ে থাকতে দেখে
আমরা খুবই উদ্বুদ্ব হতাম।
প্রিয় সাহেব
ছোটবেলার সেই গল্পকথাগুলো
আজ বড্ড মনে পড়ে
আপনাকে সঙ্গে নিয়ে সেই
শৈশবে যেতে ইচ্ছে করে
আমি বড্ড অভিমানে
যখন আপনার দিকে তাকিয়ে থাকব
তখন আলতো ছোঁয়ায় যখন
শক্ত করে হাতটা চেপে ধরবেন
তখন আমার সব কষ্ট সব অভিমান
আনন্দে পরিবর্তিত হবে
আমি জানি সাহেব’
আপনি তাই করবেন
আমার আঁচলের ভাজে
যে স্বপ্নগুলো বাঁধা রয়েছে
এ যেন আমার হাজার জনমের চাওয়া
আপনি ছাড়া সেই চাওয়া গুলো
পূরণ করার কেউ নেই।
প্রিয় সাহেব
কেমন হতো, এমন হলে?
যখন আমার ছোট ছোট আবদার গুলো
ছোট ছোট প্রাপ্তি গুলো আমার
অজান্তেই আপনাআপনি
যখন নিয়ে হাজির হবেন
স্বপ্নপূরণের এই অসীম আনন্দটুকু
পূরণ হলে
আপনার চোখে চোখ রেখে
একটু স্বস্তি পেতে দিবেন…
আমি আপনার সাথে হাজার
বছরের নির্ঘুম রাত চোখের পলকে
পাড়ি দিতে চাই
প্রত্যেকটি প্রহরগুলো যেন
স্বর্ণলতা হয়ে বটবৃক্ষের শরীরের
শরীরে লেফটে থেকে জীবনটাকে
অসীম সময়ের অনুগ্রহ নিয়ে
প্রত্যহ প্রলুব্ধ প্রলেপে
নিজেকে ফিরে পেতে চাই।
শৈশবের সেই বেড়ে উঠা গ্রাম, মেঠোপথ,
আর অভাবনীয় দুরন্তপনা
আজ আমাকে শিহরিত করে
সন্ধ্যার আকাশে মেঘ মল্লার দলের বুকে
দৃষ্টি নিক্ষেপ, শরতের আগে
হেমন্তের মাঝামাঝিতে বসন্তের অগ্রিম
শুভেচ্ছা যখন নিয়ে আসে
তখনকার সেই ফসলহীন জমির বুকে
বউসি’ সিবুড়ি খেলার সেই স্মৃতিগুলো আজও চোখের সামনে ভাসমান।
তোমার হাতে হাত রেখে সেই ভুমি
সেই মেঠো পথে সেই শৈশবের পথে
সেই নদীর বুকে আর একবার ছুটতে চাই
আবার সেই স্বপ্নলৌকে তোমার হাত ধরে
নতুন পদচারণায় নিজেকে মুখরিত করতে চাই
সেই অতীতকে ফেলে আজ
নতুন একটা জগতে এসেছি সেই স্মৃতি
আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়
শৈশবের সেই দিনগুলোতে
আর গাড়ল নদীর পাড় ধরে যে বৃক্ষগুলো
নদীর স্রোতস্বিনী জলকে ছায়া দিত
দুরন্ত সেই শৈশবে,
সেই দীর্ঘকায় বৃক্ষের মগডালে বসে
কারণ নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তাম
একদল দুরন্ত ছেলে মেয়েকে নিয়ে
তখন বেশ ভালোই লাগতো
তখন তো আর জানা ছিল না
এই নদী একদিন পিছমোড়া হয়ে শুকিয়ে যাবে
মৃত্যুর দিকে পতিত হবে তার জলহীন বুক
আমি আজ বড্ড ক্লান্ত বড্ড
বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে
এই পৃথিবীর পথে হেঁটে চলছি
জানো সাহেব
তোমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে
ইচ্ছে করে’ সেই গাড়ল নদীর পথ ধরে
গ্রামের সেই মেঠো পথ আমাকে কাছে টানে
আর একবার সেই পথ তোমার হাত ধরে
পাড়ি দিতে চাই আপনার হাতে হাত
রেখে আমার ছোট দু’হাত
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছে গুলো
সত্যিই পূরণ করবে কি তুমি?
প্রিয় সাহেব, কেমন হত, এমন হলে?
সাহেব
চাতক পাখি দেখেছেন নিশ্চয়ই
আজ আপনি আমার সেই চাতক পাখি
আপনি আমার ইচ্ছা পূরণের
সেই চাতক পাখি
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছেগুলো পূরণের
আপনি আমার সাথী
কোন এক জনমে আমি যদি চাতক পাখি
হয়েই থাকি তাহলে নিশ্চয়ই আপনি
সেই চাতক পাখির উদ্ধারকর্তা।
প্রিয় সাহেব
কেমন হতো এমন হলে
আমি তোমার হাত ধরে এই বহমান
পথ পাড়ি দেবো, তোমার হাত ধরে
এই পৃথিবীর প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে
চলবো’ সেই জন্মের দায় মেটাতেই
বুঝি এই নতুন জন্মে আপনাকে হবে পাওয়া।
যখন আমার ফুরাবার আগেই
ফুরিয়ে যায় সময় তখন নতুন একজনমের
দায় নিয়ে আপনার পাশে পাশে আসা
এটা আমার সৌভাগ্য
এরকম হাজার জনম বুঝি আপনার
অপেক্ষাতেই আমার কেটেছে জীবন।
অস্তিত্বের এই লড়াইয়ে
আপনার হাত ধরে পূর্ণ শক্তি দিয়ে
নিজেকে গড়ে চলেছি এক তৃষ্ণার্ত জনম।
আপনাকে পেয়ে এই
এক জনমে আমার সাধ মিটবে না
আপনাকে যে এই এক জনমে
আমার হাজার জনমের তৃষ্ণার্ত
জীবনকে উন্মুক্ত করব।
প্রিয় সাহেব
আমার বেশি কিছু চাওয়ার নেই
সেখানে শুধু তুমি পাশে থাকলেই চলবে…
আপনার সাহস শক্তি সততা
আর আপনার সুতীব্র অস্তিত্ব
আমাকে সাহসী করবে প্রতিটি মুহূর্তে।
আপনার তীব্র অস্তিত্ব
তোমার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায়
আমাকে গ্রাস করে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।।
.
কবিতা “প্রিয় সাহেব” তৃতীয় পর্ব। এর দ্বিতীয় পর্ব হাতের কাছে না থাকায় এই পর্বটিকেই আপাতত দ্বিতীয় পর্ব নামকরণ করলাম। শুক্রবার ২৩.০৭.২০২১ ইং।
‘জীবন বিহঙ্গের পাখায় জাপ্টে না চললেও চলতে পারি যেন আমাদের পবিত্রতায় আমাদের অস্তিত্বের সে বাগানে যেন সদা ফুল ফোটে’ …. ঠিক এই ধরণের শুভ কামনা রাখি আপনার জন্যও প্রিয় কবি প্রিয় শব্দশিল্পী হ্যাপি সরকার। যেখানে যেভাবে থাকুন; ভালো থাকুন এবং আনন্দে থাকুন।
“প্রিয় সাহেব” দ্বিতীয় পর্ব পড়তে পেরে গর্ববোধ করছি। কবির জন্য শুভকামনা থাকলো।
পড়ে খুব ভালো লাগলো।