অনুভুতিহীন ভালবাসার শূন্য এক পৃথিবী

বিমূর্ত রাত্রি তুমি আমাকে সঙ্গে নেবে ?
বলো নেবে …
ঘন জঙ্গলে ঘুমিয়ে থাকা গভীর রাত্রির আদি রহস্য জানার
এক অদ্ভুত অনুভুতি গুলো আমি লিখব আধুনিক টানা গদ‍্য
কবিতার কোলাজ চিত্রে ;
দূরের পথ মাড়িয়ে হারাব অচেনা দেশের ভৌগলিক সীমারেখায়,
যতই কাঁটা তারের বেড়া থাকুক
মানব না সে বাঁধা; হাঁটব একা,
হোক সে গভীর রাত্রি — নিঃসঙ্গ আর নিস্তব্ধ
আমার মত :
আকাশে বাতাসে মেঘের ঘনঘটা
প্রকৃতিতে বিরহ সুরের মূর্ছনা ;
আমি ভেজা মেঘের বৃষ্টি মেখে নীল প্রজাপতি ডানায় রোজ একটা করে স্বপ্ন সাজাই!
আমার স্বপ্ন নীল পৃথিবীর কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে প্রায়শই; কখনো দুঃখ সুতোয় বাঁধা!
গোলাপের ঝরে পড়া কান্না:
শ্রাবণ রাতের বিরহী বৃষ্টির সুর
কদমের ডালে বিষণ্ন পাখির গান
ঝিঁঝিঁ পোকার টানা কোরাস!

গভীর রাতে পাখিদের ঘুম ভেঙেছে
দু’একটি ঘাস ফড়িং জেগেছে,
দশটা তারা লুকোচুরি খেলছে মেঘের আড়ালে,
ভাললাগা অনুভূতি ঢেউ খেলে যায় অজানা আবেগে !
অসংখ্য সমুদ্র আজ সঙ্গী বিহীন
ওদের জন্য আমার মন খারাপ ভীষণ,
আমি কবিতার কাছে ফিরে আসি
কবিতা এবং সমুদ্র এখন খুব কাছাকাছি :
সমুদ্রের জলে তোলপাড় করা জলোচ্ছ্বাস ঢেউ ভাঙছে একের পর এক
সে ধাক্কা এসে আছড়ে পড়ছে আমার চোখে মুখে
এত ঠান্ডা;
হীম করা হাওয়া
সমুদ্রের বুকে ভিজে হয়ে এসেছে মেঘ ,
গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝরছে তুষার বৃষ্টি!
একটা গোধূলি সন্ধ্যা একটু একটু করে ডুবছে সমুদ্রের নোনা জলে;
একটা গাংচিল সঙ্গী বিহীন,
গাংচিলের দু’চোখ জলে ভেজা
আমার ভীষণ কষ্ট হল এ দৃশ্য দেখে!

পৃথিবীটা অনেক সুন্দর!
কিন্তু হলে কি হবে ?
এই মায়া ভরা সুন্দর পৃথিবীতে
প্রতিদিন,প্রতিটি মুহূর্ত কত বিচিত্র সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে :
রাত না ফুরোতেই দিন আসছে
দিন না ফুরোতেই রাত !
কোন কোন জীবন রঙিন
আবার কেউ চির দুঃখী ;
হে সোনালী ডানার গাংচিল, তোমার দুঃখের কাছে আমি হার মেনেছি !
অনন্ত কাল আমরা খুঁজে ফিরব পৃথিবীর সাদা মায়া —
এ মায়া বড় বিষাদের !
কেউ এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে :

কেউ অচেনা পৃথিবীতে আসছে
কি বিচিত্র এই সৃষ্টির রহস্যখেলা ;
গভীর শূন্যতায় পড়ে আছে ফসল শূন্য ক্ষেত, মাঠ, ঘাস ; ঘাসফুলের শিশির !
জ‍্যোৎস্নাস্নাত নৈঃশব্দ্য রাত্রি মাঘের আকাশের কালো মেঘের সাথে গল্প জমিয়েছে বেশ,
হঠাৎ বৃষ্টিতে চাঁদের জ‍্যোৎস্না ধুয়ে গেছে!

সকালের আগুন রৌদ্রে শুকিয়েছে শিশির
এভাবে প্রতিদিন কত শত কোটি শিশির স্বপ্নের মৃত্যু ঘটছে, —
শিশিরের কান্নার শব্দ শূন্য বাতাসে মিলিয়ে যায় প্রতিনিয়ত:
কেউ কি বলতে পারে এই পৃথিবীতে ভাল আছি —–
এ পৃথিবীটা একটা রঙ্গমঞ্চ!
প্রতিনিয়ত সবাই যে যার মত করে কেবল অভিনয় করে যাচ্ছে
এখানে সবাই অভিনেতা।
মানুষ বলে কথা :—
এই মানুষ একবার পৃথিবীতে আসলে আর যেতে চায় না
অথচ শূন্য হাতে তাকে ফিরে যেতে হয় !
হায় বিধাতা! এ তোমার কেমন রহস্য ?
এত সুন্দর পৃথিবী কেন সৃষ্টি করেছ ?
আর কেনই বা মানুষ সৃষ্টি করেছ ?
কি বিচিত্র রহস্যময় সৃষ্টি তোমার !
একদিন এ পৃথিবী ধ্বংস হবে
আর মানুষ ও ; এই আসা যাওয়ার মাঝে
কি বোঝাতে চেয়েছ বিধাতা —
সে তুমিই ভাল জান !
এত যত্ন করে মানুষ সৃষ্টি করে সেই মানুষকেই তুমি শাস্তি দেবে ?
কেন বিধাতা? কেন …..
কেন বিধাতা ?
আমার পিতা গত হয়েছেন
নিজগুণে ক্ষমা করো তুমি আমার বাবাকে!
গত হয়েছেন স্বজন – আত্মীয় পরিজন…
হে বিধাতা! ক্ষমা করো তাঁদের তুমি ক্ষমা করো!
তুমি না ক্ষমা করলে …
আলোর দিশারী কি করে মিলবে :
ক্ষমা করো প্রভু আমার প্রাণ প্রিয় বাবাকে ,
ক্ষমা করো আমায় প্রাণের আলিফ সোনাকে …
তোমার সৃষ্টির একটা পিপীলিকা কিম্বা পাখিরাও নিঃসঙ্গ,
নীল নক্ষত্র নিঃসঙ্গ
রাত্রির নীড়ে আমি চেয়ে থাকি অবাক অপলক চোখে
নির্জন নিরালয় কতকথা ভাবি বসে !

সবুজ পাতাও একদিন হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে
দিনরাত ধাবিত হয় অসীমের পানে ,
ফুরোয় না কভু এ জীবনের সাধ !
নীল ধোঁয়ার মত নরম কুয়াশার শীত বিকেলও ব‍্যর্থ হয় কোন কোন জীবনে ,
ঘাসের গভীরে শিশিরের বিচরণ
সেই শিশির বিন্দু ও ক্ষণজন্মা !
সে ঘুমিয়েছে নীল স্বপ্ন বুকে নিয়ে —- রূঢ় রৌদ্দুরের তীক্ষ্ণ আঁচড়ে বারবার মৃত্যু হয়
সে মৃত্যু অনেক কষ্টের!

এ পৃথিবী থেকে একবার চলে গেলে
আর কোন দিন ভীড়ব না এ পথে
বঞ্চিত হব শীতের রৌদ্রের আনন্দ থেকে,
কেউ ছিল আপনার আপন ; সব ভুলিব তখন
ব‍্যথা ভরে রবে মনে
গোপনে গোপনে কি যে ব‍্যথা বেড়ে যাবে এই অন্তরে ;
রহস‍্যের ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাবে শূন্য পৃথিবী —
কত উদাস দুপুর নিঃসঙ্গ পড়ে রবে
ক্লান্ত বিকেলের ব‍্যথা ভরা রক্তিম নীড়ে।
আমার কৃষ্ণচূড়া রাত্রি গুলো পড়ে পড়ে কাঁদবে দিনরাত সারাবেলা আলো আঁধারে ঢাকা শৈশবে ;
আমার প্রিয় গোলাপের গন্ধ মিলাবে অন্ধকারে
আমার দুঃখ গুলো উল্টো পথে সাঁতার কাটবে সমুদ্রে ,
শরতের কাশফুল আমার কত প্রিয়!
খুঁজব না আর প্রিয় ফুল
খুজব না গন্ধ মাখা দিন
নরম রাত্রির বুকে : জ‍্যোৎস্নার নেমে আসা আর ছুঁয়ে দেখব না এ হাতে
জানালার ফাঁকে নীল আকাশ দেখব না এ চোখ মেলে ;
একদিন আমি নীরব নিঃশব্দ হয়ে যাব।
সেদিন মৃত্যু আমাকে ছুঁয়ে যাবে
আমি পড়ে রব অসাড় শূন্যতায়,
অন্ধকারে শান্ত ঘুম ঘোরে চলে যাব অনন্ত কালের কাছে।
বিদায় দেবে পৃথিবী —-
একমুঠো সোনালী রৌদ্দুর এসে খেলা করবে আমার দেহের প্রতিটা কণিকায় :
আমি জানি মৃত্যু একদিন আসবেই আসবে —–
এক্ষুণিই নয় এমন ঘোর অমানিশা সন্ধ্যা!

আমার অনেক কাজ বাকি
কবিতার কাছে —
ফেরার বড় তাড়া আছে,
আমি কখনোই ভুলব না কবিতা তোমাকে
কথা দিলাম !
কবিতা, তুমি কি কথা রাখবে ?
ভুলে যাবে এই আমাকে?
কিছু গল্প, উপন্যাসের কাছে আমার শত জন্মের ঋণ আছে
শূন্য মনে;
শোধিতে চাই সে ঋণ!

মেঘভেজা শূন্য বাতাসের ডানায় ভেসে যায় স্মৃতিময় কুয়াশার সরল সমুদ্র অশ্রুসিক্ত আমার কবিতার গল্প ;

সত‍্যিই এ গল্প বড় বেশি ব‍্যথিত !

07.09.2020

4 thoughts on “অনুভুতিহীন ভালবাসার শূন্য এক পৃথিবী

  1. দীর্ঘ এই কবিতাটি পড়তে বা মনযোগ ধরে রাখতে হয়তো চোখে সমস্যা হতে পারে এমনটাই ভেবেছিলাম। বাট আই থিংক, আমার কোন সমস্যা হয়নি। অসামান্য ভাবে গড়ে তুলেছেন বক্তব্য। শুভেচ্ছা নেবেন কবি হাসনাহেনা রানু। শুভ সকাল এবং ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. যতই কাঁটা তারের বেড়া থাকুক

    মানব না সে বাঁধা; হাঁটব একা,

    হোক সে গভীর রাত্রি — নিঃসঙ্গ আর নিস্তব্ধ

    আমার মত :

    অসাধারণ একটা কবিতা পরলাম। কবিকে শুভেচ্ছা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।