জীবনের অর্থ

জীবনের অর্থ

আজমল সাহেবের ছেলের নাম রাখা হলো ঝলমল।
তার স্ত্রী রেগে গিয়ে বললো, এটা কোনও নাম হলো?

আজমল সাহেব বললেন, আমি প্রফেশনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেও মূলত একজন কবি। কবিরা যখন কবিতা লেখেন তখন ওনারা অন্ত্যামিল রাখেন। আমি কবিতা লিখলেও জীবনের সব কিছুতেই অন্ত্যামিল রাখবো ভাবছি।

উনার স্ত্রী বললেন, আর কোথায় অন্ত্যামিল রেখেছো?

এই ধরো তোমাকে বিয়ে করতে গিয়ে আমাকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেক সুন্দরী মেয়ে, ধনি মেয়ে এসেছিলো কিন্তু আমি বিয়ে করি নি। আমি শুধু খুঁজে চলেছিলাম আমার নামের সাথে যে মেয়েটির নামের অন্ত্যামিল থাকবে আমি সেই মেয়েকেই বিয়ে করবো। অবশেষে খোঁজ পেলাম পুরানো ঢাকায় একটি মেয়ে আছে যার সাথে আমার নামের অন্ত্যামিল আছে। ব্যাস ওমনি আমি তোমাদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। তোমার বাবতো রাজিই হচ্ছিলেন না। আমি অন্যান্ন মেয়েদের বায়োডাটা দেখিয়ে বললাম, এই দেখুন কত সুন্দরী এবং ধনি মেয়েরা আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছে কিন্তু আমি বিয়ে করিনি।

তোমার বাবা জানতে চাইলো, কেন বিয়ে করছেন না?
আমি বললাম, দেখুন ওই সব মেয়েদের নামের সাথে আমার নামের অন্ত্যামিল নেই তাই বিয়ে করি নি।

তোমার বাবা জানতে চাইলেন, অন্ত্যামিল আবার কী জিনিষ?
আমি বললাম, এই যে দেখুন আমার নাম আজমল আর আপনার কন্যার নাম মখমল – এটাই অন্ত্যামিল।

তারপর তোমার বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কি যেনো ভাবছিলেন, তারপর বললেন, তুমি কী করো?

আমি আমার ভিজিটং কার্ড বের করে দেখালাম, সেখানে লেখা ছিলো, আজমল হোসেন, এডিএম।

আমি বললাম, এখনতো ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, আমি দ্রুতই সচিব হয়ে যাবো।

যাইহোক, অবশেষে বিয়ে হলো, এখন আমরা আজমল, মখমল এবং ঝলমল।

আজমল সাহেবের স্ত্রী আর কথা বললো না।

আজমল সাহেব বললেন, আমাদের এই বাড়ির কী নাম দিয়েছি দেখেছো?

স্ত্রী জবাব দিলো, দেখবো না কেন, নাম দিয়েছো নিরমল।

আজমল সাহেব বললেন, আর আমার ফেভারেট খেলার নামও ফুটবল, ছোট বেলায় আমার খেলা দেখে কাউ বলতো পেলে আবার কেউ বলতো ম্যারাডোনা হা হা হা!

তার স্ত্রী বললেন, আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু তুমি কি একটা বিষয় লক্ষ করেছো?

-কী বিষয়?

– এই যে আমাদের ঝলমল জন্মের পর থেকে কত হাসিখুশি এবং দূরন্ত ছিলো কিন্তু ওকে যখন চার বছরে স্কুলে ভর্তি করে দিলে তারপরই ও একদম চুপচাপ হয়ে গেল, সামনে যে এস সি পরীক্ষা, ক্লাসের পড়াতো পড়েই না সাড়াদিন শুধু গল্পের বই পড়ে।

আজমল সাহেব ঝলমলকে ডাক দিলেন।

ঝলমল এসে বললো, জি বাবা, বলো কী হয়েছে?
– তোমার না সামনে যে এস সি পরীক্ষা?
– হ্যাঁ
– তাহলে তুমি ক্লাসের বই বাদ দিয়ে গল্পের বই পড়ছো কেন?
– বাবা, আমার এক বই বার বার পড়তে ভালো লাগে না।
– মানে?
– তুমি যেমন আমাকে এখন গল্পের বই পড়তে দেখছো তেমনই আমি ক্লাসের সব বই গল্পের বইয়ের মতো পড়ে শেষ করে ফেলেছি।
– গল্পের বই আর ক্লাসের বই একই নিয়মে পড়লে কি হবে?
– আমার কাছে এটাই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি মনে হয়।
– কেন?
-আমি একটা গল্পের বই শেষ করার পর ওটা হুবহু মনে থাকে, যেখান থেকে প্রশ্ন করবে আমি উত্তর দিতে পারবো
– কিন্তু…
– না বাবা, তোমাদের এইসব মুখস্ত করার নিয়ম আমার ভালো লাগে না।
-তাহলেতো পরীক্ষায় খারাপ করবি!
– আমি পি এস সি তে কী পেয়েছিলাম?
– জি পি এ ৫
-জে এস সি তে কী পেয়েছিলাম?
-গোল্ডেন এ
– আমাকে কী ক্লাসের বই পড়তে দেখেছো?
– না, তা অবশ্য দেখিনি।
– স্কুল থেকে যেদিন বই দিয়েছিলো তার দুই সপ্তাহের মধ্যে আমি সব বই গল্পের বই হিসেবে পড়ে শেষ করে ফেলেছিলাম।
– ও
– তাই যে প্রশ্নই এসেছিলো আমি উত্তর দিতে পেরেছিলাম।
– আচ্ছা!
– আমার মনে হয় আমাদের দেশে ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাসের বইএর ওপর মুখস্ত করার চাপ দেয়া ঠিক না বরং ওদের বলা প্রয়োজন এগুলো গল্পের বইয়ের মতো করে পড়, কোনও চাপ নেই।
– তাহলে কী হবে?
– তাহলে তারা পরীক্ষায় ভালো করবে।
– আচ্ছা! তুই ছোট বেলায় বেশ দূরন্ত এবং চঞ্চল ছিলি কিন্তু এখন এমন চুপচাপ হয়ে গেলি কেন?
– আমি ছোট বেলা থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছি।
– কী প্রশ্ন?
– জীবনের মানে কী?
– আরে! জীবনের মানে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা এবং ভালো চাকুরী পাওয়া।
ঝলমল আর কোনও কথা বলে নি।

এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে সে তার বাবকে বললো, আমাকে পঞ্চাশ লাখ টাকা দাও।
আজমল সাহেব একটু আশ্চর্য্য হয়ে বললেন, এতো টাকা দিয়ে কী করবি?
– জীবনের মানে খুঁজে বের করবো।
– জীবনের মানে খুঁজে বের করবার দরকার নেই, পরীক্ষা শেষ হয়েছে, চল আমরা বরং গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।

কিন্তু ঝলমল গ্রামের বাড়িতে গেলো না। ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে এমিরিকার একটি স্কুলে স্কলারশিপ পেয়ে গেলো।

তারপর একদিন উধাও। সপ্তাহ খানেক পর মায়ের কাছে ফোন করে বললো, আমি এমিরিকার একটি স্কুলে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হয়েছি কিন্তু আমার উদ্দেশ্য জীবনের মানে খুঁজে বের করা।

ওখানে একদিন সাবিনা ইয়াসমিন এর সাথে দেখা হয়ে গেলো।
ঝলমল জানতে চাইলো, আপনি যে “এখনই সময়” নামক একটি সিনেমায় গান গেয়েছিলেন, জীবন মানে যন্ত্রনা – এই গানের লেখকের নাম মনে আছে কি?

সাবিনা ইয়াসমিন উত্তর দিলেন, সেতো অনেক আগে গেয়েছিলাম, গানের লেখক যে কে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।

ঝলমল চলে গেলো বিল গেটস এর বাসায়।
সিকিউরিটি পরিচয় জানতে চাইলো এবং আগে যোগাযোগ করে এসেছেন কি না এইসব প্রশ্ন করতে লাগলো। ঠিক এই সময় বিল গেটস বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবেন কিন্তু উঠলো না।
সিকিউরিটির কাছে এসে জানতে চাইলো কী হয়েছে?
সিকিউরিটি বললো, এই ছেলেটি আপনার সাথে দেখা করতে চায়।

বিলগেটস ঝলমলকে বাসার ড্রয়িংরুমে নিয়ে বসালো। এরই মধ্যে কফি সহ নানান ধরনের ফুড আইটেম চলে আসলো।
বিলগেটস বললেন, আমি সাধারণত কাউকে তেমন সময় দিতে পারি না কিন্তু তোমার চোখে আমি অন্য কিছু দেখেছি,মাইক্রোসফট এ জয়েন করতে চাও?
ঝলমল বললো, না স্যার!
– তাহলে কী জানতে চাও বলো।
– স্যার জীবনের মানে কী?
– শোন, জীবনের মানে হচ্ছে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত টাকা কামানো, তোমার মৃত্যুর পর মানুষ যেনো এসে দ্যাখে তুমি টাকা গুনতে গুনতে মারা গেছো।

ঝলমল বললো, স্যার! আমার স্কুলের টাইম হয়ে গেছে, আমি আজ উঠি।
বিলগেটস বললেন, তুমি ট্রিপল ই নিয়ে পড়ালেখা করো আর পড়ালেখা শেষ হলে মাইক্রোসফটে জয়েন করতে পারো।
– বেতন কত দিবেন স্যার?
– ওটা কোনও সমস্যা না, ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে দেবো, তোমার যা প্রয়োজন সেই অঙ্ক বসিয়ে নেবে।
ঝলমল বললো, স্যার এটা আপনার মহানুভাবতা।

এরপর ঝলমল বেরিয়ে গেলো।

দুদিন পর হোয়াইট হাউজে গিয়ে হাজির। সিকিউরিটিরা বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলো। এক সিকিউরিটি বললো, তুমি মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কাছে কী জানতে চাও?
ঝলমল বললো, আমি উনার কাছে জানতে জীবনের অর্থ কী?

ডোনাল্ড ট্রাম্প সিসি ক্যামেরায় সব শুনছিলেন। তারপর একটা ক্যামন যেন আওয়াজ হলো।
এক সিকিউরিটি এসে ঝলমলকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালো।

কিছুক্ষণ পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে বললেন, শোন, ইউ এস এ এর প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে আমার কাছে জীবনের অর্থ ছিলো ভিন্ন কিন্তু এখন তা পাল্টে গেছে।
ঝলমল বললো, এখন আপনার জীবনের অর্থ কী স্যার?
– ওই যে কোরিয়ায় কিম দায় জুং নামক একটা লোক আছে, তাকে শায়েস্তা করাই এখন আমার জীবনের অর্থ
– কেন স্যর?
– এমিরিকার জন্য প্রথমে হুমকী ছিলো সৌভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু আমাদের বুদ্ধির কাছে সৌভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে।
– আচ্ছা!
-তারপর হুমকী হয়ে দাড়ালো চীন কিন্তু তাকেও বিভিন্ন কৌশলে আঁটকে রেখেছি।
– ও
– তারপর সাদ্দাম একটু বাড়াবাড়ি করছিলো কিন্তু ওটাকে বেহেস্তে পাঠিয়ে দিয়েছে আমার আগের প্রেসিডেন্টরা
– বুঝলাম স্যার, কিন্তু কিম দায় জুং……
– সে কথাতে আসছি, এরপর ইরাণকে হুমকী মনে হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে এখুনি কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।
– কেন স্যার?
– ইরান নিজেরাই যুদ্ধ বিমান বানায় এবং যার সংখ্যা ইসরাইলের চেয়ে বেশি এবং পারমাণবিক শক্তিও ইসরাইলের চেয়ে বেশি, ওরা রেগে গেলে এক ঘন্টার মধ্যে ইসরাইলকে তুলাধুনা করে দিতে পারে।
– ইসরাইলকে তূলাধুনা করলে ইউ এস এ এর কী?
– শোন, শতকরা ১০% এমিরিকানদের মাথায় কটুবুদ্ধি আছে আর ৯০% এমিরিকানরা হচ্ছে সহজ সরল।
– তাই নাকি?
– হ্যাঁ, এটা অনেকেই জানে না, তাই বিশ্ব চালানোর জন্য আমাদের নির্ভর করতে হয় ইসরাইলদের ওপর।
-কেন স্যার?
– ফারাও জনগোষ্ঠীর নাম শুনেছো?
– জি শুনেছি
– তুমি মুসলিম, তাহলেতো জানই তোমাদের মূসা নবী ফারাওদের শায়েস্তা করতে এসেছিল কারণ ফারাও এর রাজা নিজেকে স্রষ্টা হিসেবে ঘোষণা করেছিলো।
– হ্যাঁ, তা জানি।
– কিন্তু তোমাদের মূসা নবী ফারাওদের শায়েস্তা করতে না পেরে নিজেরাই তার জ্ঞাতি গোষ্ঠী নিয়ে রাতে আঁধারে পালিয়ে গিয়েছিলো।
– কিন্তু স্যার, মূসা নবীকে ফারাও’রা ধরতে গিয়ে ফারাওএর রাজাতো নিজেই নীল নদে ডুবে মরলো।
– ওটা আসলে ব্যাডলাক,ফারাও’রা নীল নদ পার হতে গিয়ে হঠাত সুনামী শুরু হয়ে গেলো তা না হলে ঠিকই তোমাদের ওই মূসা নবীকে শায়েস্তা করে ছাড়তো।
-ও
– এর পরের ঘটনা নিশ্চয় জানো!
– জি।
– ওই মূসা নবীর সাথে যারা ছিলো তারা আসলে ফারাওদের বংশধর, তারা কাউকে বিশ্বাস করে না, নিজের চোখে দেখলে বিশ্বাস করে।
– হ্যাঁ, আমি পবিত্র কোরআনে পড়েছি, মূসা নবীর উম্মতরা মূসা নবীকে এবং তাঁর সৃষ্টিকর্তাকে সংশয়ের চোখে দেখতো।
– ওই ফারাও এর বংশধর হচ্ছে ইসরাইলিরা।
-ও
– ওদের সন্তানদের বয়স যখন তিন বছর হয় তখন টেবিলের ওপর দাড় করিয়ে তাদের মা বাবারা একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলে, আসো, একলাফে পিতার কোলে আসো, মাতার কোলে আসো।
– তারপর?
– সন্তানটি যখন লাফ দেয় তখন তাদের পিতা-মাতা সড়ে যায়।
-কেন স্যার?সন্তানটি তাহলে তো নিচে পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে!
– আরে! এজন্যইতো ওরা এগুলো করে যেন ছোট বেলা থেকেই শিক্ষা পায়, নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না, পিতা-মাতাকেউ না।
-ও মাই গড!
-তাই এই মুহূর্তে ইরানকে কিছু বললে ইরান ইসরাইলকে শেষ করে দেবে যা ইউ এস এ এর জন্য হিতকর হবে না।
– আর তোমাদের মিডিল ইষ্টে কিছু মানুষ ধনী হয়েছে তেলের কারনে কিন্তু এখন মিডিল ইষ্টের সব ক্ষনির তেল এক করলেও ইউ এস এ যে তেলের রিজার্ভ আছে তার সমান হবে না
– এতো তেল কিনলেন কী দিয়ে?
– অস্ত্র দিয়ে।
– তা আপনাদের রিজার্ভে কী পরিমাণ তেল আছে?
– এই ধরো তোমাদের বাংলাদেশের মতো আয়তন অর্থাৎ ৬০ হাজার বর্গমাইল আয়তন এবং ২ হাজার মাইল গভীরতার এক বিশাল সাগরের মতো তেলের ট্যাঙ্কি আছে
– এতো তেল দিয়ে কী করবেন?
– যখন সবার তেল শেষ হয়ে যাবে তখন ইউ এস এ চওড়া দামে তেল বিক্রি করবে।
– এটা কী ওই ইসরাইলদের বুদ্ধি?
– হ্যাঁ। ওদের বুদ্ধিতেই ইউ এস এ পৃথিবী চালাচ্ছে কিন্তু ওই কিম দায় জুং নামক লোকটাকে কোনও ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না, সে কিছুই ভয় পায় না।
– ও
– তাই আমার এখন জীবনের একটাই অর্থ আর তা হচ্ছে কিম দায় জুংকে শায়েস্তা করা, অবশ্য প্রেসিডেন্ট এর পদ থেকে চলে গেলে আমার জীবনের অর্থ বদলেও যেতে পারে।

ঝলমল মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে চাইলো কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, এতো রাতে আর যাবে কোথায়! তুমি না হয় আজ রাতে আশেপাশের কোনও হোটেলে থেকে যাও।
– কিন্তু স্যর!
– এগুলো খুব ভালো হোটেল আর ভাড়া এবং সিকিউরিটি আমার, তাই তোমার টেনশন নেই।
– কিন্তু স্যার, আমাকে না হয় আমার কলেজে নামিয়ে দিতে বলুন, শুধু শুধু হোটেলে রাখছেন কেন?
– না, আসলে তুমি যে প্রশ্ন আজ আমাকে করেছো এই প্রশ্ন এর আগে কেউ আমাকে করে নি এবং এটা একটা গুরুত্বপুর্ন প্রশ্নই বটে।
– কিন্তু স্যার………
– শোন, যে এই প্রশ্ন করতে পারে সেই ব্যাক্তিও নিশ্চিত একজন গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তি এবং এই ধরনের মানুষের মুল্যায়ন করা আমাদের কর্তব্য।
– স্যার……
– আমি হোয়াইট হাউজেই তোমাকে রাখতে ছেয়েছিলাম কিন্তু জাতিসংঘের একটা কনফারেন্স এর জন্য রাখতে পারছি না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প একটা ফোন করলেন।

সাথে সাথে একটা রোডস রয়েলস গাড়ি চলে এলো। সেখানে ঝলমলকে বসানো হলো আর সামনে পেছনে পুলিশ দিয়ে এক হোটেলে পৌঁছে দিলো।
ঝলমলের বাবার কথা মনে পড়ে গেল কারণ ওর নামও ঝলমল আবার হোটেলটাও বেশ ঝলমল – এখানে একটা খাঁটি অন্ত্যামিল পাওয়া গেছে।

ঝলমল হোটেলে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই বিছানায় দেখতে পেলো একটি সুন্দরী মেয়ে শুয়ে আছে।
ভুল করে অন্য রুমে ঢুকে গেছে ভেবে ঝলমল দ্রুত বেরিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু মেয়েটি ঝলমলের হাত টেনে ধরলো।
মুহূর্তেই ঝলমল আঁতকে উঠলো। আঁতকে ওঠার কারণ হচ্ছে ওই মেয়েটিকে সে চেনে এবং বেশীরভাগ মানুষই চেনে।

ঝলমল বললো, আপনি এখানে কেন?
মেয়েটি বললো, তুমি আমাকে চেনো?
– আপনাকে চেনে না এমন মানুষ কি এই দুনিয়ায় আছে?
– আমার নাম কী বলোতো?
– ঝলমল বললো, আপনার নামটা বাঙলায় বলি?
– বলো!
-রৌদ্রোজ্জ্বল লিওন
-বাহ! তুমি তাহলে আমাকে চেনো।
– হ্যাঁ, আপনি এখানে কেন?
– এটা আমার অন্তর্বাস খুললেই বুঝতে পারবে।
– ও মাই গড! না ওটা খোলার প্রয়োজন নেই।
– আরে! তোমাদের দেশেতো বেশীরভাগ খয়েরি এবং কালো, আজ পিংক কালার ওপেন করে দ্যাখো!
– না, মানে আপনাকে এখানে কে পাঠিয়েছে?
– তুমি একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছো না?
– হ্যাঁ, আমি আসলে জানতে চাইছিলাম জীবনের অর্থ কী?
– সেটাই আজ তোমাকে হাতে কলমে এমন উত্তর দিয়ে দেবো যে এরপর থেকে তুমি আর জীবনের অর্থ খুঁজতে চাইবে না।
– কেন?
– জীবনের কী অর্থ তা আজই তুমি পেয়ে যাবে।

মেয়েটি ঝলমলকে ধরে নিজের দিকে একটা হ্যাঁচকা টান দিলো, তারপর অন্তর্বাস খুলতে লাগলো।

ঝলমল দুই হাত দিয়ে চোখ ঢেকে আছে। চোখ থেকে একটা আঙুল সরাতেই রুমের চাবিটা দেখলো, তারপর দড়জা খুলে একটা দৌড় দিলো।

নিচে নেমে দ্যাখে সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে । ঝলমল বললো, আমার হোস্টেলে এক বন্ধু মারাত্নক অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে।

তারপর সোজা চলে গেলো ওর কলেজের হলে।

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে জীবনের অর্থ খোঁজা আর ঠিক হবে না এই শহরে।

পরদিন স্কলারশিপ এর কিছু টাকা দিয়ে একটি ট্যালিপ্যাথিক ডিভাইস কিনলো। মৃত মানুষের কাছে গিয়ে কিছু টেলিপ্যাথিক কোড ইউজ করলে ওই মৃত ব্যাক্তির কাছ থেকে কিছু ট্যা্লিপ্যাথিক কোড আসে যার মাধ্যমে ঝলমল যে প্রশ্ন করে তার উত্তর পাওয়া যায়।
ঝলমল চলে আসলো গ্রীসে। সক্রেটিস এর কবরের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে কিছু ট্যালিপ্যাথিক কোড ইউজ করলো।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে যে কোড ফেরত আসলো তার অর্থ হচ্ছে, জীবনের অর্থ হচ্ছে সাহসের সাথে সত্যকে তুলে ধরা যেনো সমাজের কলুষিত অধ্যায় ভেঙে পড়ে এবং এজন্য যদি হেমলক পান করতে হয় তাও স্বাচ্ছন্দে পান করতে হবে।
ঝলমল আবার কোড ইউজ করে জানতে চাইলো, সত্য তুলে ধরতে গিয়ে যদি নিজের জীবনই শেষ হয়ে যায় তাহলে কেউ কী আমাকে মনে রাখবে? আর যে সত্য আমি তুলে ধরবো আমার মৃত্যু হলেতো সে সত্য হারিয়ে যাবে
– তোমাদের দেশে রিসেন্টলি নুসরাত নামের একটি মেয়ে সত্যকে তুলে ধরার জন্য আগুনে পুড়ে মরেছে না?
– জি
-ওই নুসরাতকে কী কেউ ভুলে গেছে?
– না
– ওই কলুষিত অধ্যায়কে তোমাদের সরকার এখন ভেঙে দিচ্ছে না?
– জি
– তোমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছো?
-জি

এরপর ঝলমল চলে গেলো ইংল্যান্ডে এবং নিউটনের কবরের পাশে গিয়ে কোড ইউজ করে জীবনের অর্থ জানতে চাইলো।
যে উত্তর এলো তা হচ্ছে, আসলে দ্যাখো আপেল গাছের নিচে ঝিম মেরে বসে থেকে আমি অভিকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম কিন্তু জীবনের অর্থ বলতে গেলে আমার আরও কিছু জিনিষের ওপর ঝিম মেরে বসে থাকা উচিৎ ছিলো।
– আরও কিছু জিনিষ বলতে কীসের ওপর ঝিম মেরে বসে থাকা উচিৎ ছিলো?
– এই যেমন ধরো পানির ওপর, বাতাসের ওপর, পাহাড়ের ওপর।
– তাহলে কী হতো?
– পানির ওপর বসে থেকে আর্কিমিডিস পানির প্লবতা আবিষ্কার করেছে যার কারনে এখন সাগরে জাহাজ চলে।
– বাতাসের ওপর বসে থাকলে কী হতো?
– ওখানে বসে থেকে অলিভার রাইট এবং উইলবার রাইট প্লেন আবিষ্কার করেছে।
– পাহাড়ের ওপর বসে থাকলে কী হতো?
– যেহেতু বসা হয় নি তাই কী আবিষ্কার হতো তা এখন বলতে পারছি না।

এরপর ঝলমল চলে গেলো জার্মানীতে। হিটলারের কবরের পাশে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
হিটলার উত্তর দিলো, আসলে আমার আত্নহত্যা করাটা ভুল হয়েছে বরং জীবনের অর্থ হচ্ছে প্রয়োজন হলে সপ্তম বিশ্বযুদ্ধ করেও সব ইহুদি মেরে ফ্যালা এবং বিশ্বজয় করে একক আধিপত্য বিস্তার করা।

ঝলমল এবার আইনস্টাইনের কবরে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
উত্তর এলো, জীবন আসলে একটা ভ্রম যা একটূ দির্ঘস্থায়ী।

ঝলমল এবার গৌতম বুদ্ধের কবরে এসে একই প্রশ্ন করলো।
উত্তর এলো, জীবন আসলে একটা বাবল, একটা ইলুশন, একটা বিভ্রম।
– তাহলে আপনি ডুমুর গাছের নিছে বসেছিলেন কেন?
– সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে বের করার জন্য।
– উনাকে পেয়েছিলেন?
– নাহ! আমি প্রায় নাইন্টি পারসেন্ট মৃত হয়ে গিয়েছিলাম তারপর একদিন একটি মেয়ে এসে আমাকে জাগিয়ে তুলে পায়েস খাওয়ালো, তারপর আমি বেঁচে উঠলাম।
– আপনি কী বোধি না কি যেনো বলে, ওটা কি লাভ করেছিলেন?
– বোধি আসলে এই পৃথিবীর সত্যকে জানা, সেটা আমি পেয়েছিলাম।
– কী সেই বোধি?
– আসলে যেহেতু এই জীবন একটা বিভ্রম, এ সত্যটা আমি জেনেছিলাম।
– তাহলে আপনি ওই চার সত্য কেন বানালেন?
– যেহেতু এই জীবন একটা বিভ্রম তাই মানুষ যেনো হিংসা বিবাদে লিপ্ত না হয় তাই ওই চার সত্য বানিয়েছি।

এরপর ঝলমল ভারতে এসে রবীন্দ্রনাথের কবরে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
উত্তর এলো, এই পৃথিবীতে যত জন্তু জানোয়ার আছে তারা কী করে?
– দুটি কাজ করে।
– কী কী?
– খাদ্য সংগ্রহ এবং বংশ বিস্তার।
– আর মানুষ কী করে?
– বেশীরভাগ মানুষ এ দুটো কাজই করে
– তাহলে জন্তু জানোয়ার আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য কী?
– জানি না।
– শোন, মানব জীবনের অর্থ হচ্ছে, মানুষ এমন কিছু সৃষ্টিকর্ম করে যাবে যেনো মানুষকে জন্তু জানোয়ারের কাজ থেকে পৃথক করা যায়।

ঝলমল এবার সৌদী আরব গিয়ে এক মসজিদের খতীবকে সরাসরি একই প্রশ্ন করলো।
তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা জিন এবং ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদাত করার জন্য।

এরপর ঝলমল বাংলাদেশে চলে এলো। এক ভালো আলেম সাহেবের কাছে একই প্রশ্ন করলো।
তিনি বললেন, জীবন আসলে পরীক্ষা কেন্দ্র।
– কীসের পরীক্ষা কেন্দ্র?
– ঈমান এর পরীক্ষা কেন্দ্র
– প্ররীক্ষার প্রশ্নগুলো কী কী?
– আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ধন দিয়ে পরীক্ষা করেন, গরীব করে পরীক্ষা করেন, সন্তানের মৃতু দিয়ে পরীক্ষা করেন।

এরপর ঝলমল সাড়া বিশ্ব ঘুড়ে বেড়াতে লাগলো। আধুনিক সভ্য অনেক মানুষের কাছে জীবনের অর্থ জানতে চাইলো।
বেশীরভাগ উত্তর দিলো, ইটস মিনিংলেস।

তারপর হলিউডের এক অভিনেত্রীর কাছে একই প্রশ্ন করলো।
তিনি বললেন, জীবনের অর্থ হচ্ছে অস্কার পুরুষ্কার লাভ করা।

আবার বাংলাদেশে এসে ধ্যান-আত্মা নামক এক ভদ্রলোককে একই প্রশ্ন করলো।
সে উত্তর দিলো, জীবনের অর্থ আসলে অভিনয় করা।
– অভিনয়তো সিনেমায় অভিনেতারা করবে।
– আরে! ওগুলো অভিনয় নয়, বিনোদনের জন্য কিছু কৌশলগত কাজ
– তাহলে অভিনয় কোনটা?
– জীবনে যখন যেটা প্রয়োজন সেটা পাওয়ার জন্য বাস্তবে সবাই অভিনয় করে।
– আপনি কী বাস্তবে অভিনয় করেন?
– শুধু আমি নয় সবাই অভিনয় করে, যে শিশুটি আজ জন্ম নিলো তার ক্ষুদা লাগলে কী সে কথা বলতে পারবে বা বলতে পারবে আমার ক্ষুদা পেয়েছে?
– না
– তাহলে সে কী করে?
– জানি না
– তার ক্ষুদা পেয়েছে এটা বুঝানোর জন্য কান্না শুরু করে দেয়, এই কান্না কিন্তু কোনও ব্যথা পাওয়ার কারণে প্রকৃত কান্না নয়, এটা খাদ্য পাওয়ার জন্য অভিনয়ের কান্না।

এরপর ঝলমল, এক ক্রিকেটার এর কাছে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
সে উত্তর দিলো, জীবনের অর্থ আসলে বিশ্বকাপ জেতা।

এবার ঝলমল এশিয়ার এক রাজনীতিবিদের কাছে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
সে উত্তর দিলো জীবন আসলে একটি খেলা, লাইফ ইজ এ জাস্ট গেম।
– কী খেলা?
– মানুষ ঠকানোর খেলা, মানুষ মারার খেলা, মানুষের সম্পদ দখলের খেলা, ক্ষমতা দখলের খেলা, টাকার খেলা, প্রেমের খেলা ইত্যাদি।

ঝলমল এবার তার পরিবারের কাছে ফেরত এলো। তার বাবাকে বললো, বাবা আমি জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছি।
তার বাবা জানতে চাইলো, জীবনের অর্থ কী?
– তুমি যা করছো তাই।
– তারমানে?
– জীবনের অর্থ হলো এমন কিছু সৃষ্টিশীল কাজ করা যা মানুষকে জন্তু জানোয়ারের চেয়ে পৃথক করতে পারে।
– কী সেই সৃষ্টশীল কাজ?
– এটা বিভিন্ন রকম হতে পারে।
– যেমন?
– গল্প, কবিতা, উপন্যাস লেখা বা গান, সিনেমা, নাটক করা বা মানব কল্যান মূলক কাজ করা।
– আমার নাম আজমল, তোর মায়ের নাম মখমল, তোর নাম ঝলমল, আমাদের বাড়ির নাম নিরমল, আমার পছন্দের খেলা ফুটবল, কী? অন্ত্যামিল পেয়েছিস।
-হ্যাঁ, পেয়েছি।

5 thoughts on “জীবনের অর্থ

  1. জীবনের গল্প পড়লাম ইলহাম ভাই। মন্তব্যের উত্তর দেন না তাই বিশদ বললাম না। 

  2. বহুমূখী গোত্রের লিখা। শুভেচ্ছা রইলো কবি মি. ইলহাম।

  3. জীবনের অর্থ খুঁজে ফেরা। এই পথ ভীষণ কঠিন প্রিয় কবি ইলহাম ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  4. আপনার জন্য শুভকামনা কবি ইলহাম দা। ভাল থাকুন। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।