পিতার প্রতি সন্তানের অবহেলা সহ্য হলোনা তোমার সেই শোক সইতে না পেরে তুমিও চলে গেলে আমাকে আরো অন্ধকারের অতল গহবরে রেখে ৷ এখন আমার সময় কাটে ৫’×৪’ ফুটের একটা ছোট্ট ঘরে যা কিনা তোমার আদরের সন্তানদের ষ্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার হয় সেখানে অপ্রয়োজনীয় সব কিছুই অযত্নে অবহেলায় পরে থাকে আমিওতো এখন এই বৃদ্ধ বয়সে তোমার আদরের খোকার এই সংসারে অপ্রয়োজনীয় তাই আমারও জায়গা এই ষ্টোর রুমে ৷ খোকার মা তুমি তো মরে বেঁচে গেছো কিন্তু আমি? আমিতো আর পারছিনা মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে বুকটাতে হাহাকার এসে ভীড় করে যে সন্তান কে বড় করতে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করতে দিনরাত সব একাকার করে হার ভাঙা পরিশ্রম করে তিলে তিলে বড় করে তুলেছিলাম দুজনে মিলে ৷ আমার বুকে না শুলে যার ঘুমই আসতো না ক্লান্ত শ্রান্ত সেই আমি বিরক্ত না হয়ে বরং আদর করে বুকে রেখে ঘুম পারাতাম মাঝে মাঝে তুমি রাগ করতে খোকাকে বকাঝকা করতে বলতে তোমার বাবা ক্লান্ত তাকে বিরক্ত করোনা সেই খোকা কিনা আজ বড় হয়েছে মস্ত অফিসার হয়েছে, খোকার মা জানো তোমার আদরের সেই দাদুমনিও আজ খোকার মতো জেদ করে খোকার বুকে ঘুমানোর জন্য তখন আমার চোখ বেয়ে একাই পানি চলে আসে এই দেখ তুমি যেনো আবার কেঁদোনা আমার কথা শুনে, তুমি চলে যাওয়ার পরতো আরো একা হয়ে গেছি কারো সংগে কথা বলতে পারিনাতো তাই লিখছি খোকার মা আমি কিসে লিখছি তুমি জানো? দাদুভাইয়ের পুরোনো বাতিল খাতায় যেখানে তোমার দাদুভাইয়ের লেখা আছে তার উপর দিয়েই লিখছি সেদিন বউমাকে বললাম বউমা একটা পুরোনো কলম দিতে পারো? বউমা কি বললো জানো? কলম কিনতে টাকা লাগে কলম নষ্ট করার জন্যে না তোমার দাদুভাই চুরি করে একটা কলম দিয়ে গেছে আর তাতেই আমার না বলা কথাগুলো তোমাকে বলতে পারছি ৷ খোকার মা একবার ভেবে দেখেছো নিজেদের সব শখ আহ্লাদ জলাঞ্জলী দিয়ে যে খোকাকে বড় করলাম সেই খোকা কিনা ! যাকগে বাদ দাও , খোকার মা কষ্ট লাগে কখন জানো যখন দেখি তোমার চলে যাওয়ার দিনটাও তোমার খোকার মনে নেই বরং সেদিন বাড়িতে আরো হৈ হুল্লোর করে পার্টি করে আর আমি তোমার শোকে একা একাই কাঁদি ৷ আচ্ছা খোকার মা আমরা কি খুব বড় কোন পাপ করেছিলাম? তা না হলে এই শেষ বয়সে কেনো এরকম ভাবে কাঁদতে হবে বলোতো ৷ খোকার মা আমাকে কেনো এই কষ্ট আর অবহেলার নদীতে একা ফেলে গেলে ? তুমি যেনো আবার খোকাকে কোন অভিশাপ করোনা আমিও করবোনা বরং দোয়া করো যেনো খোকা আরো বড় হয় , আর দোয়া করো আল্লাহ যেনো আমাকে তারাতারি মৃত্যু দিয়ে এই অবহেলা থেকে মুক্তি দেয় ৷
15 thoughts on “অবহেলা”
মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।
বাস্তবতা ফুটে উঠল।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা নেবেন।
ভালোবাসা অহর্ণিশ প্রিয়
কবিতার পর সম্ভবত এমন ঘরানার লিখা আপনার এই প্রথম পড়লাম। মি. জুবেরী মোস্তাক, আমি জানিনা আপনার লিখায় কতটা বাস্তবতা, তবে আমরা যারা সঠিক ভাবেই যেমন আপনার বর্ণনায়, স্তরে রয়েছি, আমরা বুঝি আমাদের একেকটি দিন কেমন। মানুষ যখন একা হয়ে যায়, তখন তাকে অতীতের স্মৃতি এভাবেই তাড়িত করে। সময় ধীরে ধীরে আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নেয়। ফেরত দেয় কম। সম্বল শুধু স্মৃতি।
শুধুই স্মৃতি
বাব্বাহ্ দাদা ভাই। আপনি তো কবিতা বাদেও দারুণ লেখেন !!
ধন্যবাদ দিদিভাই আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য
আবেগঘন লিখা। তবে লিখাটিতে দু চার জায়গায় প্যারার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান পরামর্শের জন্য
অসাধারন
ধন্যবাদ মান্যবর
কবিতাতো পছন্দ করিই, আজকের গদ্যটিও অসাধারণ কবি মোস্তাক ভাই।
অনুপ্রাণিত হলাম প্রিয় দাদাভাই
হৃদয়স্পর্শী।
জীবন
কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের
প্রতিচ্ছবিকে তুলে ধরা হয়েছে।
লেখককে অভিনন্দন জানাই অভিনব প্রয়াসের জন্য।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!