কাজী জুবেরি মোস্তাক এর সকল পোস্ট

আমার কাছে কবিতা

কবিতা মানে ফুলের মতো ফুটে উঠতে হবে ময়লার ভাগারে অনাদরে বেড়ে ওঠা গোলাপ গাছটার মতো সুগন্ধি ছড়াতে হবে।

কবিতা মানে সূর্যের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে, আলো ছড়াতে হবে আবার ক্রোধের উত্তাপেও পোড়াতে হবে।

কবিতা মানে শুধু কোকিলের মধুর কণ্ঠস্বর নয় ; কবিতা মাঝে মাঝে কিন্তু কাকের আর্তনাদের মতোই ঝাঝালোও হয়।

কবিতা মানে বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়ে অক্ষরের রক্তপাতে জন্ম দেওয়া এক একটা শব্দবোমা।

কবিতা মানে সমাজের অলিতেগলিতে বেআইনি ঘাঁটিগুলো সব বিদ্রোহের আগুনে পুড়িয়ে ফেলে নতুন সমাজ গড়া।

কবিতা হলো সেই বিদ্রোহী শক্তি ;যে তার আপনার রাস্তা আপনিই বানিয়ে সীমান্তের কাঁটাতার ছিঁড়ে ফেলে এক হয়।

কবিতাতো সেই ওজন যা অক্ষরকে শক্তিশালী করে, কারো পায়ের কাছে বসে না থেকে নিজের পা কেই শক্তিশালী করে।

কবিতা মানে মঞ্চে উঠে শুধু আবৃত্তি করলাম হাততালি পেলাম তা নয় ; কবিতা হলো হতভাগাদের জন্য নতুন শ্বাস।

তর্জনীটা উঁচিয়ে ধরো

বজ্র আওয়াজে নিয়ে নাও আজ রাজপথের দখল,
প্রয়োজনে ক্রাচ বা হুইল চেয়ারে হোক এই মিছিল ;
শ্লোগান ধরো দরাজ কণ্ঠে বল চীর উন্নত মম শির।

টিয়ার সেলের ঝাঁজালো ধোঁয়ার মতো ছড়িয়ে পরো,
নষ্টদের মেধা মগজে প্রতিবাদের ভাষা বপন করো ;
শ্লোগান ধরো সমস্বরে সবাই বলে উঠো জয় বাংলা।

ব্যারিকেট ভেঙে চলে এসো এই বিজয়ের মিছিলে,
গর্জে ওঠো যেন অত্যাচারীর মসনদই কেঁপে ওঠে ;
কণ্ঠে কণ্ঠে ধারণ করো বিপ্লবী শ্লোগান জয় বাংলা।

তাক করা বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাও,
পাড়ার মোড়ের চায়ের টেবিলেও হোক আলোচনা;
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার সোনার বাংলাদেশ নয়।

শহর জুড়ে তাকিয়ে আছে আজ বিদ্রোহী দু’চোখ,
বুকে জমা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতোই সব ক্ষোভ;
বাক্ স্বাধীনতা আর গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত হোক।

জয় বাংলা শ্লোগান ধরো আজ বিদ্রোহী ওই কণ্ঠে ;
তর্জনীটাও উঁচিয়ে ধরো এই সমাজ বদলের স্বার্থে।

মাংসাশী শহর

এ এক অদ্ভুত হত্যাযজ্ঞ!
এ শহর যেন আজ এক মাংসাশী শহর!
প্রতিনিয়ত এখানে রক্ত, মাংস, হাড়, মাথার খুলি পড়ে থাকে।
বিকট বিস্ফোরণের সাথে সাথে এখানে শুরু হয় মৃত্যুর উম্মাদ নৃত্য,
অস্ত্রের বজ্রধ্বনিতে এখানে বেজে যায় বিস্ফোরণের গান।

এ যুদ্ধে সবাই জয়ী হতে চায় এবং জয়ের জন্য সবাই আশাবাদী,
একটুকরো জমির জন্য এখানে আজ যুদ্ধ আর দাঙ্গাবাজী।
এ এক এমন আগ্রাসন এখানে ন্যায় নীতিও ভান ধরে থাকে,
স্বাধীনতা!

সেও এখানে আজ একটা নির্দিষ্ট সীমা রেখায় বন্দী হয়ে গেছে,
একটু বেপরোয়া হলেই তান্ডব নেমে আসবে প্রিয় মানচিত্র আর স্বাধীনতার উপর।

মৃত্যু

মৃত্যু এমন একটা শব্দ এই শব্দ শুনে যারা ভয় পায় তারা আসলেই মৃত এমনকি তারা নিজের জীবন নিয়ে নিজেকে বিভক্ত রাখে। যখন আমরা জন্মগ্রহণ করেছি ঠিক তখনই আমাদের মৃত্যুর কারণ ও সময়ও লেখা হয়ে গেছে । শুধুমাত্র আমাদের না জানার মধ্যে আছে আমরা কোথায় কখন কিভাবে মারা যাবো। কিন্তু আমাদের সব সময় প্রস্তুত থাকা উচিত এই ভেবে যে আমরা যেকোন সময় মারা যাবো।

মৃত্যুর ভয়ে বেঁচে থাকাটা সত্যিকারের বেঁচে থাকা নয়। বেঁচে থাকাটা হলো মৃত্যুকে জয় করা। আমরা কে কখন কোথায় কিভাবে মারা যাবো অসুস্থতায় মারা যাবো নাকি দুর্ঘটনায় আত্মহত্যায় নাকি খুন হবো এটা কিন্তু আমরা জানি না আমরা শুধু জানি যেভাবেই হোক আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবো্ মৃত্যুর স্বাদ কেউ এড়াতে পারবেনা।

কিন্তু আমরা যদি খুন হই বা অন্য কারো শত্রুতার কারনে আমাদের মৃত্যু হয় তাহলে তার সেই কর্মের প্রতিক্রিয়া সেই ব্যাক্তি কিম্বা সেই সব পক্ষগুলোর পক্ষে এর দায় এড়ানো সম্ভব না। এমনকি যদি আমার কারনে কারো মৃত্যুও হয় তা আমার জীবনে একটা আঁচর কেটে যাবে এবং নিজের বিবেকের কাছে থেকে কখনোই আমি নিজেকে মুক্ত করতে পারবো না।

আমরা বলি লোকটা হুট করেই মারা গেলো কিন্তু মৃত্যু কখনোই হুট করে আসেনা মৃত্যু তার নির্দিষ্ট সময়েই আসে কারণ আমরা জন্মের সময়ই আমরা মৃত্যুর হুলিয়া মাথায় নিয়েই পৃথিবীতে এসেছি।

মৃত্যু তো হলো সেই ঘটনা যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই যার সম্মুখীন হই। একটা নির্দিষ্ট সময় না আসা পর্যন্ত এটি আমাদের সামনে আসেন। মৃত্যুর ভয়ে বেঁচে থাকাটা আসলে বেঁচে থাকা নয়। তাই মৃত্যুকে ভয় না করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সাহস সঞ্চয় করতে হবে। কে জানে আমি কখন মারা যাবো আজ নাকি কাল নাকি বার্ধক্যের পরে? মৃত্যুর ভয়ে বেঁচে না থেকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সাহস রাখা ভালো।

সব তন্ত্রের একই মন্ত্র

কানের ঠিক কিছুটা উপরে একটা পিস্তল তাক করা,
সামনে সাজানো রয়েছে বিশাল এক পেটোয়া বাহিনী,
পিছনেও পড়ে আছে রাজ্যের তামাম রক্ষি বাহিনী;
কারনতো একটাই জনতাকে ওদের মতো
করতে না পারা।

গণতন্ত্র নামক এক দিল্লিকা লাড্ডু ঝুলিয়ে রাখা সামনে,
একনায়কতন্ত্রকেও বৈধতা দিয়ে ; নাম তার আজ গণতন্ত্র,
স্বার্বভৌমত্ব ভেবে ছিনিয়ে নিয়ে দেখি সেও এক ষড়যন্ত্র,
সব তন্ত্রেরই ঠিক একই মন্ত্র যা জনতার
কাপর খোলে।

স্বৈরাতন্ত্রের নিয়মিত চলাচল আজকে আমার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে,
স্বাধীনতা’তো হলো এক ট্রাম তার কার্ড জুয়ার টেবিলে বসে,
সব তন্ত্রকেই দেখি দিনের শেষে স্বার্থতন্ত্রেই
গিয়ে মিশে,
বাম ঘরামী স্বভাব আমার সেতো শুধুই আপন দম্ভে।

ছন্ন ছাড়া

আমাদের পা আছে, অথচ !
আমাদের সবগুলো পা একত্রিত হয়ে আজ মিছিলে হাঁটে না।

আমাদের হাত আছে, অথচ !
আমাদের সবগুলো হাত একত্রিত হয়ে এখন আর গর্জে উঠেনা।

আমাদের মুখ আছে, অথচ !
আমাদের সবগুলো মুখ একত্রিত হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না।

আমাদের মাথা আছে, অথচ !
আমাদের সবগুলো মাথা একত্রিত হয়ে
উঁচু হয়ে দাঁড়ায় না।

ঋতুস্রাব এবং আমাদের মস্তিষ্ক

মেয়েটির পিরিয়ডের আজ দ্বিতীয় দিন। তার আজকে পায়ে হাঁটার মতো শক্তি নেই, তার ঊরুগুলো পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। মেয়েটি পেটের ব্যথা ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে এবং সেই যন্ত্রণায় মেয়েটি কাঁদছে। মেয়েটি দাঁতের উপরে দাঁত দিয়ে প্রচন্ড ব্যথা সহ্য করে আছে। ফার্মেসি ভর্তি মানুষগুলোর নিথর চোখের মাঝেও গতকাল মেয়েটি যখন সাহস করে ফার্মেসিতে গিয়ে প্যাডের নাম ফিসফিস করে বলছিল, দোকানদার তাকে একটা কালো ব্যাগে প্যাডটি এমনভাবে মুড়িয়ে দিল যেন মেয়েটি এমন কোন কিছু চেয়েছে যা নিষিদ্ধ এবং তা সমাজ বা রাস্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এবং মেয়েটিকে সেই প্যাড লুকিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অথচ দেদারসে বিড়ি সিগারেট মাদক প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।

আজ মেয়েটির সমস্ত শরীরে নেশার মতো করে ব্যথা আঁকড়ে ধরে আছে। এমনকি মেয়েটি আজ তার অফিসে চেয়ারে দু’দন্ড স্থির বসে থাকতে পারেনি।

প্রতি মাসের এই পাঁচ দিনের রুটিনে মেয়েটি কখনো ছুটি নেননি শুয়ে থাকেননি। আজকে তার সহকর্মীরা তার দিকে আঁড় চোখে তাকিয়ে আছে, এবং মাঝে মাঝে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, অন্যদের সাথে কথা বলে কিন্তু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই গল্প তোলে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গতকালের অসমাপ্ত কাজের জন্য মেয়েটিকে যাচ্ছে তাই বলে তিরস্কার করে অথচ মেয়েটি তার সকল কাজেই পারদর্শী কিন্তু গতকাল থেকে সে পিরিয়ডের ব্যাথায় কাতর।

গতকালের অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করে টেবিলে দিতে বলেন অথচ মেয়েটির গত পঁচিশ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা বেমালুম ভুলে যায়। মেয়েটিকে ধমকের সুরে বলে দিলো কাজটা দ্রুত শেষ করার জন্য। মেয়েটির মুখের ফ্যাকাশে, ক্লান্তি আর শরীরের অলসতা-দুর্বলতা চলতেই থাকে। কয়েক দিনের মধ্যে মেয়েটি কোন কাজে মন বসাতে পারেনি। মেয়েটি তার কেবিন ছেড়ে উঠতে পারেনি তার মনে ক্রমশ অস্বস্তির একটা ঢেউ উঠেছিল।
না এটা অন্য কোন উদ্বেগ ছিল না তার পোশাকের পেছনে কোনো ‘দাগ’ ছিলনা উঠতে বসতে মেয়েটি স্বস্তিতেই ছিল কারন আটটি প্যাড যে সে আশি টাকায় কিনেছে। সে এই ভেবে অস্বস্তিতে ছিল যে এখন পর্যন্ত তার পেছনে সেই নোংরা চোখগুলো পড়েছিল এবং কানাকানি করছিল আর হাসছিল।

ওহে পুরুষ! সেই মেয়েটি কি করে তোমার ভাবনায় ? পুরুষগুলো বেমালুম ভুলে যায় তার মায়ের, বোনেরও প্রতিমাসে পিরিয়ড হয় এবং তারাও অসহ্য রকম যন্ত্রণা সহ্য করে। পিরিয়ডের মতো একটা স্বাভাবিক ঘটনাই জানিয়ে দেয় আমাদের মন মানসিকতা কোন পর্যায়ে আছে।

মাসিকের ব্যথা থেকে মেয়েটি শিক্ষা নেয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তাই তাকে নিয়ে হাসবেন না যখন সে এই যন্ত্রণার দ্বারা যন্ত্রণাদায়ক অবস্থায় থাকে কারণ এই ঋতুস্রাবেই কারনেই ‘ভ্রুণ’ তৈরির মাঠ তৈরি হয়।

তুমি বদলে যাবে

আমি বলেছিলাম ভালোবাসার পথ কষ্টের হয়;
সে সুদীর্ঘ পথে তুমি আমার পাশে হাঁটতে পারবেনা,
তুমি একটা সময়ে ঠিকঠাক বদলে যাবে।
ভালোবাসার পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে অজস্র কাঁটা
তাই তুমি অন্য পথ ধরে হেঁটে যাবে একটা সময়।

আজ ভালোবাসার পূর্নতায় ভরিয়ে দিলে ঠিক,
কিন্তু আগামীকাল আজকের মতো ভালোবাসতে পারবেনা।
হৃদয় কোন খেলনা নয় যে প্রতিনিয়ত ভাঙবে গড়বে;
আর তাই একটা সময় তুমি বদলেই যাবে।

আমি জানি তুমি এক জায়গায় থাকতে অভ্যস্ত না,
তুমি চলে যাবে এবং নিজেকে বদলে নিবে।
তুমি আমার সাথে দুঃখের আগুনে জ্বলতে পারবেনা
তোমাকে জ্বলতে হবে এই পৃথিবীর আগুনে।

লাশ

কোন এক আততায়ীর হাতে একদিন আমি খুন হয়ে যাবো।
পাথরের আঘাতে থেঁতলে দেয়া হবে আমার মুখমণ্ডল ;
যেন পরিচিত স্ব-জনরা আমাকে চিনতে না পারে।
পাশেই কোথাও পরে থাকবে জিহ্বার কাটা অংশটুকু ;
কারন একটাই যে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলাম।
আমার হাতটা খুঁজে পাওয়া যাবে কোন এক ডাস্টবিনে ;
কারন এই হাত দিয়েই আমি সত্যের পক্ষে লিখতাম।
পা দুটোকে ওরা দুমরে মুচরে ভেঙে ফেলে দিয়েছিল ;
ওরা জানতো এই পা নিয়েই তুমি বিরোধী মিছিলে গিয়ছিলাম।
রক্তের কাফনে জড়িয়ে ফেলে রাখবে আমার লাশ।

মানা

প্রশ্ন করা মানা,
এ যেন এক আজব কারখানা;
প্রশ্ন যদি করো তবে হারাবে ঠিকানা।

প্রশ্ন করা মানা,
দেখবে শুধু বলতে কিন্তু মানা;
বলতে যদি চাও জেল হবে ঠিকানা।

প্রশ্ন করা মানা,
এ কিন্তু এক আজব জামানা;
প্রশ্ন যদি করো তবে তুমি ভালো না।

প্রশ্ন করা মানা,
আইন অন্ধ চোখেও দেখেনা;
আইনের কিন্তু চশমা পড়তে মানা।

প্রশ্ন করা মানা,
আমায় জ্ঞান দিতে এসোনা;
আমি সর্বজ্ঞাণী এটা কি জানোনা।

প্রশ্ন করা মানা,
আবার কানে শোনা যাবেনা;
কানটা নিবে চিল খুঁজেও পাবেনা।

প্রশ্ন করা মানা,
আবার চোখে দেখা যাবেনা;
ছানি যদি পড়তো দেখতে হতোনা।

নিষিদ্ধ করো

তার চেয়ে বরং আমাকে নিসিদ্ধ করো,
আর আমার কবিতাগুলো বাজেয়াপ্ত করে দাও ;
আমার কাটা মাথার মূল্যটাও নির্ধারণ করে দাও ;
সাথে রাষ্ট্রর প্রান্তর জুড়ে হুলিয়া জারি করে দাও।

তার চেয়ে বরং আমাকে মিথ্যা মামলা দাও,
রাষ্ট্রের অলি গলিতে আজ তল্লাশি চৌকি বসাও ;
আর রাষ্ট্রের সব রক্ষি বাহিনীকে পাহারায় বসাও ;
রাষ্ট্রের দেয়ালে আমার ছবি আর পোষ্টার লাগাও।

তার চেয়ে বরং আমার মাথাটা কেটে নাও,
এ মাথা গণতন্ত্রর জন্য দিয়ে দিলাম কেটে নাও ;
এ মাথা আমার উত্তরসূরীদের জন্য দিলাম নাও ;
নাহয় মাথা তুলে দাঁড়াব যত হামলা মামলা দাও।

তার চেয়ে বরং আমার আঙুল কেটে নাও,
নয়তো অন্যায় অবিচারে আঙুলটা তুলতে দাও ;
তুমি জুলুমবাজ ফ্যাসিস্ট নাহলে কেন ভয় পাও ;
মনে রেখো অন্যায়ের প্রতিবাদীদের দেখবে তাও।

তার চেয়ে বরং আমার পা’দুটো কেটে নাও,
যেন আমাকে তুমি বিরোধীর মিছিলেও না পাও ;
তামাম রক্ষীবাহিনী সাথে তবু আমাকে ভয় পাও ;
মনে রেখো প্রতিবাদীরা থামবেনা যতই বাধা দাও।

প্রত্যয়ী

পুরোনো চুক্তিটার মেয়াদ পেরিয়ে গেছে,
তাই পাওয়া না পাওয়া জলাঞ্জলি দিয়ে
পথচলা শুরু নব উদ্যমের নতুন চুক্তিতে।

বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে সকালটা,
এ যেনো প্রেয়সীর জন্য প্রিয়’র অপেক্ষা
আর মন ভোলানোর হরেক স্বপ্নের কথা।

পুরোনো চুক্তি ভেস্তে নতুন চুক্তি হয়েছে ,
স্বপ্ন আর সুখে’রা চাপা বাকির খোলসে
নব উদ্যমে সেও আজ খোলস ছাড়িয়ে।

নতুন দিনে নতুন সূর্যটাকে মাথায় নিয়ে,
স্বপ্নগুলো ধরার প্রস্তুতি নতুন আঙ্গিকে
স্বপ্নগুলো সত্যি হবেই সব বাধা পেরিয়ে।

পুরোনো সূর্যতেই আলোকিত পূর্বাকাশ,
তবুও সে সূর্যতে যেন নতুনত্বের আভাস
যে আলোয় আলোকিত স্বপ্নের আকাশ।

স্বপ্নরা আজ সফল হওয়ার নব প্রত্যয়ে,
ঠিক কচ্ছপের মতোই খোলস ছাড়িয়ে
নব উদ্যমেই আজ দিয়েছে পা বাড়িয়ে।

হায় জীবন

এই যে আজও আমি বেঁচে আছি
ঠিক যেনো এক লাশের মতো বেঁচে আছি
চারপাশে শকুনেরা ঘুড়ছে তবুও বেঁচে আছি।

এই যে আমি আজ যা কিছু বলছি
সেতো শুধু মাত্র মূকাভিনয় করে চলেছি
অন্যের দেয়া খুৎবা নিয়ে আলোচনাটা করছি।

এই যে আজও হেঁটে বেড়াই যে শহরে
জীবন্ত লাশের মর্গ আজ সেই শহর জুড়ে
রক্তপঁচা লাশের গন্ধ শহরের অলিগলি জুড়ে।

মৃত শরীরেরা ছড়িয়ে আছে চতুর্দিকে
আমার দু’পা দাপিয়ে বেড়ায় লাশের বুকে
তবু স্বার্থপরের মতো বেঁচে থাকা শহরের বুকে।

শব্দের গ্রাফিতি

পৃথিবীর দেয়াল জুড়ে ছড়িয়ে দাও শব্দের গ্রাফিতি
প্রতিবাদী শব্দতে ধ্বংস করো সকল অন্যায় দূর্নীতি,
মনে রেখো তুমিই চে ফিদেল কাস্ত্রো কিম্বা অরুন্ধতি।

দগদগে ঘা এর মতো আজ পৃথিবী হচ্ছে সংক্রামিত
স্বাধীনতা আর ন্যায় বিচার শব্দগুলো আজ নিস্তব্ধ,
মুখ থুবড়ে পৃথিবীটাও পরে আছে বৃদ্ধকালের মতো।

সারা বিশ্বের নোংরা সিস্টেমটা দেখে জনতাও ক্লান্ত
দামি পোশাকে অপরাজনীতি দেখে বিশ্ব ক্লান্ত শ্রান্ত,
অপরাধের সীমা অতিক্রম দেখে জনতা আজ ক্লান্ত।

দুর্নীতিবাজ লোভী আজ পৃথিবীটাকে দখল করেছে
আর দলীয় আইনে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে,
জনতাও টিভির হেডলাইন দেখে আফসোস করছে।

তোমাদের নোংরা সিস্টেম দেখে দেখে জনতা ক্লান্ত
আর পোশাকী রাজনীতিতে প্রতিনিয়তই হয় বিভ্রান্ত,
তোমাদের অতিক্রান্ত সীমা দেখে জনতাও যে ক্লান্ত।

রাষ্ট্রের সামনেই ক্ষমতার দাপটে গণতন্ত্রও ধর্ষণ হয়
আর গণতন্ত্রও যৌনাঙ্গ চিরে ভোটতন্ত্রের জন্ম দেয়,
জনতা ওসব দেখে শুনে চা-এ টোস্ট ভিজিয়ে খায়।

ছায়া

তোমার কথা;
ভেজা ঠোঁট একান্তই তোমার,
কিন্তু নীরবতার সবটাই আমার।
তোমার চোখ;
তোমার দৃষ্টি একান্তই তোমার,
আর ভাঙাচোরা স্বপ্নরা আমার।
তোমার হাত;
আর আঙুলও শুধুই তোমার,
তবে হাতে হাত রাখাটা আমার।
তোমার হৃদয়;
হৃদয়ের রক্তক্ষরণও তোমার,
কিন্তু হৃদয়ের ঘন্টাধ্বনি আমার;
আর ভালোবাসা সেও শুধুই আমার।