জনারণ্যে পৃথিবীর জবানবন্দী

বয়ে চলা প্রথাগত পাণ্ডুলিপিতে সময়ের ঘুণপোকা খুরে খায় মানচিত্র
বদলে যায় দেশ,বদলে যায় সমাজ, বদলে যায় ভাষা বদলায় জীবনবোধ,
কখনো কখনো যাকে জীবনের অভিশাপ বলো তাও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে
সু- বাতাসে ভালোবাসতে না পারা লোকদের শিহরিত করে উদাহরণ হয়ে।

আমাকে যারা বসন্ত উৎসবে সাজিয়েছে আজ, কালকে তারাই
বিসর্জিত করবে দশমী উৎসব শেষে। লক্ষ, হাজার বছরের জীবনে জেনেছি
সু দীর্ঘ জীবন যাপনে কোন সুখ নেই, প্রতিটি প্রান খোলস বদলের খেলা
তা তুমি মানুষ থেকে মৃত মানুষ হও আর আমি হেমন্ত থেকে বর্ষাকাল।
শরতের সুখে যে মৌমাছির দল মধু পান করে উড়ছে আমার বুকে
সেই মৌমাছিই সুযোগ পেয়ে হুল ফুটিয়েছে জৈষ্ঠ মাসের গরমে। তাই বলি
আমি পৃথিবী, আমার বুকের মাঝে যে রক্তের বৃষ্টি ঝড়ে পড়ে তাও আমার।

আমি পৃথিবী বলেই নিশ্চুপ মৌনতায় দেখতে পাই
বোবা কান্নায় ভিজে যাওয়া দিগন্তের ঘাসফুলের চোখ,
কষ্টের খুশিতে হাসতে থাকা হাসনাহেনার মুখ,
বন্ধনহীন জীবনধারায় ঝরনার ছুটে চলার চপলতা,
গন্তব্যহীন অচল মুদ্রার মত পাহাড়ের স্থির কষ্ট নিয়ে জেগে থাকা
কিংবা বিহ্বল খুশিতে যে ভালোবাসা ছুঁয়ে দিয়েছিলো কোন একজনকে
সেই ভালোবাসার গভীরে জমে থাকা পাপবোধ।

কালের নিরব স্বাক্ষী হয়ে আমার মত নির্ঘুম কেউ জেগে থাকে না।
অামার হয়তো তোমার মত মরণ নেই কিন্তু জীবিত কি আছি?
তোমরা তোমাদের সময়ের আয়ু খরচ করে মৃতরূপে একটা পর্যায়ে চলে যেতে পার
কিন্তু আমি জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে তোমাদের ক্ষতগুলো দেখে যাই।
অপারগতার সনাতনী ধর্ম ছুঁয়ে আমি কিছুই পিছনে ফেরাতে পারি না ;
যে ছোঁয়ায় জীবনে ফিরে পায় নিরন্তন কুসুম কুসুম প্রেম আমি তেমন করে
ছুঁতে পারিনি কোন প্রজাপতির ডানা কিংবা সবুজ ঘাসের বুকে জমেথাকা শিশিরবিন্দু,
এনে দিতে পারিনি প্রেমিক পুরুষের প্রথম ছোঁয়ায় যে কম্পিত শিহরণ জাগে সেই অনুভুতি।
শুধু বুঝেছি মৃত প্রাণের স্বর্গ লাভ হয়ত একদিন হবে কিন্তু পৃথিবীর শেষ গন্তব্য ধংশে বিলীন হওয়া।

পূর্ণ বা অপূর্ণতার কথা বলে তোমরা মানুষ বা মৃত বাসনার জন্য
যে সুখ বা দুঃখ খুঁজে পাও তাতে তোমাদের অনুভূতির প্রকাশ হয়
কিন্তু অপার কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছা নিয়ে আমি আমার বুকে সবুজ খুঁজে পাই না
তোমাদের জীবনের জন্য আমি নিজেকে জাগিয়ে রাখি যতটা কষ্ট সয়ে
তোমরা ঠিক ততটা অামাকে অনুভূতিহীন অনুগত দাস করে রেখেছ
এই জাগতিক সংসারে তোমাদের প্রয়োজনে।

তবু আমি বলে যাই শেষ সত্যি কথা… এই পৃথিবীর বুকে
শেষ বলে কিছু নেই সময়ের পথে, তাই শুরু হোক… শুরু করো
নব রুপে নতুন দিনের পথ। তোমাদের চলার পথে তোমরাই
এঁকে দিতে পারো আগামী দিনের সুখরেখা যা তোমাদের
পরবর্তী বংশধর বহন করে পৌছে দেবে তাদের
পরের প্রজন্মের কাছে ধারাবাহিক ভাবে।

===============================

3 thoughts on “জনারণ্যে পৃথিবীর জবানবন্দী

  1. 'তোমাদের জীবনের জন্য আমি নিজেকে জাগিয়ে রাখি যতটা কষ্ট সয়ে
    তোমরা ঠিক ততটা অামাকে অনুভূতিহীন অনুগত দাস করে রেখেছ
    এই জাগতিক সংসারে তোমাদের প্রয়োজনে।'

    ___ ভীষণ আন্তরিক এই অনুভব। ভালো থাকুন কবি বন্ধু খেয়ালী মন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।