মানব প্রেমিক তুমি যে দেবতা

বিশ্ব ইতিহাসে ধর্ম স্থাপনে বহু অবতার, নবী, মহাপুরুষ ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে অবিভক্ত ভারতের উত্তরবঙ্গে পাবনা জেলার পদ্মাবিধৌত অখ্যাত হিমাইতপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পরিবারে যে শিশুটি জন্মেছিলেন, তিনি এক কথায় অনবদ্য। যিনি পরবর্তীকালে আপন প্রজ্ঞায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের গুরুরূপে পূজিত হয়েছিলেন, তিনি বিংশ শতাব্দীর জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রাণের দেবতা-বিজ্ঞানী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকুল চন্দ্র। পিতা শিবচন্দ্র চক্রবর্ত্তী, মাতা মনমোহিনী দেবীর ঘর আলো করে ১২৯৫ সালের ৩০ ভাদ্র শুভ শুক্লা তাল নবমী তিথিতে শুক্রবার সকাল ৭:০৫ মি: তাঁর আর্বিভাব। বিশ্বের প্রতিটি জীবের দুঃখ-কষ্ট, আর্ত-পীড়িত ও সর্বহারা মানুষের পরম আশা ভরসার স্থল এই কুলমালিক।

পিতা-মাতার প্রতি ছিল তাঁর অপূর্ব ভক্তি ও শ্রদ্ধা। তাঁর অজস্র বাণী, ছড়া ও গদ্য সাহিত্যের মাধ্যমে, সুদীর্ঘ ঘটনা বহুল জীবনে মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিহিত ছিল। “আপনি আচরি প্রভু জীবেরে শিখান” তিনি নিজে সব আচরণ কওে, তা সবাইকে অনুসরণ করতে বলেছেন। তাঁর মানব কল্যাণমূখী সাহিত্য সত্যানুসরণ, আলোচনা প্রসঙ্গে, ইসলাম প্রসঙ্গে, নানাপ্রসঙ্গে, চলার সাথী, অনুশ্রুতি, পথের কড়ি, নারীর নীতি, স্বাস্থ্য ও সদাচার সূত্র, সম্বিতি, বিধিবিন্যাস, বিজ্ঞান বিভূতি, যতি অভিধর্ম, ইত্যাদি মহা গ্রন্থগুলি কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, বিচারক, মনস্তত্ত্ববিদ, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক, প্রযুক্তিবিদ তথা হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের সকল জনসাধারণকে ঐশী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই সব অমূল্য সম্পদ বাণীগুলো তিনি অজস্র কর্মব্যস্ততার মধ্যে শুধু মুখে মুখে বলেছেন, এ কথা ভাবতে অবাক লাগে। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব।
তিনি তাঁর অজস্র বাণীর মধ্যে মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইষ্ট আধিপত্য বজায় রাখা। ইষ্ট স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করা সর্ব সমস্যা সমাধানে এ এক অনন্য বিধান। জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মানুষকে স্বার্থকতার পরমতীর্থে পৌঁছে দিতে শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও হিমালয়সদৃশ সৎসঙ্গ আশ্রম সৃষ্টি করেছিলেন হিমাইতপুর গ্রামে। তাঁর সৎসঙ্গ ছিল Man Making Institution (মানুষ তৈরীর কারখানা)।

মৃত মানুষের গায়ে হাত দিলে রোগী বেঁচে উঠেছে, তাঁর সাময়িক ডাক্তারী পেশা জীবনে এমনতর বহু ঘটনায় পাবনা জেলার অনেক মানুষ ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রকে আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ হিসাবে জানতেন। ডাক্তারী পেশায় প্রাপ্ত অর্থ তিনি দুঃস্থ, আর্ত, পীড়িত, দরিদ্র, অসহায় মানুষকে আহার, পথ্য, অন্ন-বস্ত্র ও গৃহ নির্মাণাদির ব্যবস্থা করে দিতেন অথচ মায়ের সংসার চালানোর জন্য অনেক সময় মাকে সাহায্য করতে না পেরে অনুতপ্ত হতেন।

উপবাস ছিল তাঁর নিত্য সহচর। জীবনে বহুদিন নিজে উপবাস থেকে ক্ষুধার্তের মুখে নিজের খাবার তুলে দিয়েছেন। এর জন্য তিনি কখনও দুঃখ পাননি বরং সবার মঙ্গলের জন্য পরম পিতার কাছে তিনি শান্তি ও স্বস্তি প্রার্থনা করতেন।

তিনি নিজে কখনও কারোর সেবা নিতে চাইতেন না। তবে তার লোকতৃষ্ণা প্রবল ছিল। লোক ছাড়া তিনি থাকতে পারতেন না। কত চোর, গুন্ডা, বদমায়েশ তাঁর দিব্য সান্নিধ্যের সংস্পর্শে দেবত্বে রূপান্তরিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আগ্রার চতুর্থ সন্তুগুরু সরকার সাহেবের নির্দেশে মাতা মনমোহিনী দেবী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রকে দীক্ষা দেন।

বিশ্বের আধ্যাত্মিক ইতিহাসে এ এক বিষ্ময়কর অবস্থা তাঁর মহাভাব সমাধি। আমরা পূর্ববর্তী সকল মহামতি অবতারগণকে দেখেছি তাঁরা খুব সাধন ভজন ও তপস্যা করে- বাহ্যদশা, অর্দ্ধ বাহ্যদশা ও অন্তর্দশার মাধ্যমে লোকচক্ষে অবতারের পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু ভাবাবস্থায় তাঁদের শ্রীমুখ থেকে কোন বাণী নির্গত হয় নাই। পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র যেন এঁদের থেকে ভিন্ন। ভাবসমাধি অবস্থায় তাঁর শ্রীমুখ দিয়ে অনর্গলভাবে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য বাণী তড়িৎ গতিতে নির্গত হত। তার মধ্যে শুধুমাত্র ৭১ দিনের বাংলা ও কিছু ইরেজীবাণীগুলো দিয়ে “পূণ্য পুঁথি” নামে একটি মহাগ্রন্থ তৈরী হয়েছে।

পরাধীন ভারতবর্ষে শ্রীশ্রীঠাকুরের আবির্ভাব হওয়ায় পরাধীনতার মর্ম অনুভব করে, স্বাধীন ও আত্মনির্ভর হওয়ার পথ বাতলিয়ে কৃষ্টি, ঐতিহ্য এবং জাগরণের মাধ্যমে পুরয়মান আদর্শে দীক্ষার গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন “আদেশ ছেড়ে খুঁজলে দেশ, হবি নাকাল, পাবি ক্লেশ” তিনি আরও বলেছিলেন “ইষ্ট নাই নেতা যেই, যমের দালাল কিন্তু সেই”। পরম দয়ালের ঐশী বাণী যে কত সুদূর প্রসারী আমরা আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

মানুষ চায় বাঁচতে ও বাড়তে। শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবাদর্শের মূলকথা হল অস্তিত্ববাদ। সব বাদের সেরা বাদ ও পরিপূরক। সত্তার আদিমতম আকুতি বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা। স্বপারিপার্শ্বিক বাঁচা বাড়ার নামই হল ধর্ম। “অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে, ধর্ম বলে জানিস তাকে”। ধর্মের সাথে সাম্প্রদায়িকতার কোন সম্পর্ক নেই। আর এই ধর্ম মূর্ত্ত হয় আদর্শে অর্থাৎ –রক্ত মাংস সঙ্কুল ইষ্টে, বাঞ্চিতে ও প্রিয় পরমে। আর তাঁর প্রতি অকাট্য টানে হয় আত্ম নিয়ন্ত্রণ। সত্তাবাদের মূল সুর হল-“মরো না, মেরো না, পারতো মৃত্যুকে অবলুপ্ত কর”।

বর্তমানে বিশ্বের বিজ্ঞানীরা জীব বৈচিত্রের রক্ষণ ও জীব হননের বিরোধিতা করছেন। পরম দয়ালের কথা আজ হোক আর কাল, তা সবাইকে মানতে হবে, যদি আমরা বাঁচতে চাই। এমন ভাগবত দলিল অমান্য করে কার সাধ্য। ঈশ্বর এক, ধর্ম এক, প্রেরিতগণ একেরই বার্ত্তাবাহী। অবতারে অবতারে কোন বিভেদ নেই। ধর্মান্তরিতকরণ ধর্মের কোন ভাষ্য নয়। খাঁটি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বর্তমানে প্রেরিতকে ধরে চললেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

আসুন, আমরা সকলেই শ্রী শ্রী ঠাকুরের নির্দেশক্রমে সত্দীক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলি মনুষ্যত্বের মহান আদর্শে। সকলেই তার জয়গান গেয়ে উঠি। বন্দে পুরুষোত্তমম। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

মানব প্রেমিক তুমি যে দেবতা
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

মানব প্রেমিক তুমি যে দেবতা
তুমি সর্বশক্তিমান।
জাগ্রত ভগবান সদা জাগ্রত ভগবান।

আপনি আচরি শিখাইলে ধর্ম
নাম তব দেশে দেশে,
সত্দীক্ষা দিয়ে জাগালে চেতনা
মানুষেরে ভালবেসে।

সত্যে শ্রীহরি ত্রেতায় রাম
যুগে যুগে অধিষ্ঠান।
মানব প্রেমিক তুমি যে দেবতা
তুমি সর্বশক্তিমান।
জাগ্রত ভগবান সদা জাগ্রত ভগবান।

যুগে যুগে তুমি এসেছো ধরায়
মানবে করিতে ত্রাণ,
তব নাম লয়ে সুখী হয় জীবন
পাপী পায় পরিত্রাণ।

মানব প্রেমিক তুমি যে দেবতা
তুমি সর্বশক্তিমান।
জাগ্রত ভগবান সদা জাগ্রত ভগবান।

সত্দীক্ষা দিয়ে সবাকারে তুমি
দেখাইলে নতুন পথ,
অজ্ঞান নাশি জ্ঞানের আলোকে
চলে অগ্রগতির রথ।

বিশ্বপ্রেমিক তুমি যে ঠাকুর
তুমি যে আমার প্রাণ,
অজ্ঞান অন্ধকার ঘুচায়ে প্রভু
জ্ঞান অঞ্জন কর দান।

মানব প্রেমিক তুমি যে দেবতা
তুমি সর্বশক্তিমান।
জাগ্রত ভগবান সদা জাগ্রত ভগবান।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “মানব প্রেমিক তুমি যে দেবতা

  1. যুগে যুগে তুমি এসেছো ধরায় মানবে করিতে ত্রাণ,
    তব নাম লয়ে সুখী হয় জীবন পাপী পায় পরিত্রাণ।

    আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ অনুকূল চন্দ্র এর প্রতি প্রণাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. আপনার সুমন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।  প্রিয়কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
      পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের শুভাশীর্বাদ বর্ষিত হোক।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

    1. আপনার সুমন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।  প্রিয়কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
      পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের শুভাশীর্বাদ বর্ষিত হোক।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

    1. আপনার সুমন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।  প্রিয়কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
      পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের শুভাশীর্বাদ বর্ষিত হোক।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

    1. আপনার সুমন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।  প্রিয়কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
      পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের শুভাশীর্বাদ বর্ষিত হোক।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

  2. শেয়ার এর জন্য শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন মি. ভাণ্ডারী।

  3. আপনার সুমন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।  আন্তরিক শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞচিত্তে জ্ঞাপন করি।
    পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের শুভাশীর্বাদ বর্ষিত হোক।
    সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
    জয়গুরু!

    1. মানুযের গান গাই। মানুষের জ্ঞান চাই। মানুষেরা ভাই-ভাই।
      পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের শুভাশীর্বাদ বর্ষিত হোক।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।